মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭

'দারুণ আলাদা একা অভিমানী এই ক্যাকটাস
 যেন কোন বোবা রমণীর সখী ছিলো দীর্ঘকাল
 কিংবা আজন্ম শুধু দেখেছে আকাল
 এরকম ভাব-ভঙ্গি তার।
 ধ্রুপদী আঙিনা ব্যাপী কন্টকিত হাহাকার আর অবহেলা,
 যেন সে উদ্ভিদ নয়
 তাকালেই মনে হয় বিরান কারবালা।'
                            ------- হেলাল হাফিজ 

ক্যাকটাস সত্যি অন্য রকম। আর সব গাছের মতো, ফুলের মতো নয়। সাদা চোখে প্রাণহীন দেখায় বটে। বাস্তবে এর ভরপুর প্রাণ। বহু বছর বাঁচে। সৌন্দর্য বিলি করে। এভাবে বছরের পর বছর বাসার বারান্দা বা ছাদের টবে টিকে থাকে। ড্রইংরুমেও নির্ঝঞ্ঝাট ক্যাকটাস। সব মিলিয়ে সৌন্দর্যপ্রেমীদের ভীষণ প্রিয়।
   খুবসহজে চোখে পড়ে এর সৌন্দর্যটা। অবশ্য ক্যাকটাসের বেলায় খুব যে যত্নের  দরকার হয়, তাও নয়। বিশেষ পরিচর্যা  ছাড়াই দিব্যি বেঁচে থাকে। আলো-বাতাস-পানির তেমন দরকার হয় না। বৃদ্ধির জন্য জায়গায়ও লাগে কম। কাঁটা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। নিন্দুকেরা বলেন, ক্যাকটাস খুব স্বার্থপর! সহজে কারও উপকারে আসে না। গায়ে কোন পোকার মাকড় বসবে? খাদ্য খুঁজবে? না, সে সুযোগ দেয় না ক্যাকটাস। এর গায়ের ঘন কাঁটা তাদের রুখে দেয়। ক্যাকটাস শেকড় দিয়ে আশপাশের সব গাছের পানি নাকি একলা শুষে নেয়, আছে এমন অভিযোগও! এর ফলে ক্যাকটাসের পাশে অন্য কোন গাছ নাকি স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়ে উঠতে পারে না। তবে ক্যাকটাসের সৌন্দর্য এসব সমালোচনাকে পেছনে ফেলে দেয়। বিশেষ করে যখন ফুল ফোটে তখন অন্য রকম মুগ্ধতা নিয়ে তাকাতে হয় ক্যাকটাসের দিকে। তবে খুব স্থায়ী হয় না ক্যাকটাসের ফুল। অধিকাংশই দু’এক দিনের মধ্যে ঝরে পড়ে। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, কোন কোন গাছ বেঁচে থাকে তিন শ’ বছর পর্যন্ত! মূলত রাতে ফুল ফোটে। ফুলের রং সাধারণত সাদা। বাহারি ফুল ফোটে দিনের বেলায়। হলুদ, লাল, গোলাপি, বেগুনি আরো কত কত রং!
  বনসাইয়ের মতো ক্যাকটাস নিয়ন্ত্রণ করে বা প্রুনিং করে বছরের পর বছর ঘরের ভেতর রাখা যায়।
                            

তুলসী একটি চমকপ্রদ গাছ

তুলসী পাতার চমকপ্রদ কিছু গুণ

1. মানসিক চাপে অ্যান্টিস্ট্রেস এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক অবসাদ প্রশমনে এমনকি প্রতিরোধে তুলসী চমৎকার কাজ করে। কোনো সুস্থ ব্যক্তি যদি প্রতিদিন অন্তত ১২টি তুলসীপাতা দিনে দু’বার নিয়মিত চিবাতে পারেন তাহলে সেই ব্যক্তি কখনো মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হবেন না বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে মানসিক চাপ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে তুলসি পাতা। স্নায়ু শিথিল করে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী ফ্রি রেডিকলকে নিয়ন্ত্রণ করে। অতিরিক্ত অবসাদ এবং মানসিক চাপ অনুভূত হলে ১০ থেকে ১২টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেয়ে নিন, উপকৃত হবেন।তুলসীর স্ট্রেস কমানোর ক্ষমতা আছে। সুস্থ মানুষও প্রতিদিন ১২ টি তুলসী পাতা চিবালে স্ট্রেস মুক্ত থাকতে পারবেন।

2. রক্তের ইউরিক এসিড-এর লেভেলকে কমতে সাহায্য করে কিডনিকে পরিষ্কার করে তুলসী পাতা। তুলসীর অ্যাসেটিক এসিড এবং  এসেনশিয়াল অয়েল এর উপাদান গুলো কিডনির পাথর ভাঙতে সাহায্য করে ও ব্যাথা কমায়। কিডনির পাথর দূর করার জন্য প্রতিদিন তুলসী পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে হবে। এভাবে নিয়মিত ৬ মাস খেলে কিডনি পাথর দূর হবে।

3. চর্মরোগে তুলসী পাতা দূর্বাঘাসের ডগার সংগে বেটে মাখলে ভালো হয়ে যায়।

4. উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমিয়ে হূৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

5. অজীর্ণজনিত পেট ব্যথায় তুলসী পাতার বেশ উপকার সাধন করে থাকে। এটি হজমকারক। প্রতিদিন সকালে ১৮০ গ্রাম পরিমান তুলসী পাতার রস খেলে পুরাতন জ্বর, রক্তক্ষয়, আমাশয়, রক্ত অর্শ এবং অজীর্ণ রোগ সেরে যায়।

6. হাড়ের গাঁথুনিতে ব্যথা দূর করে এবং শরীরের কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকাতে অবদান রাখে।

7. ঠাণ্ডা মরসুমে ছোট বাচ্চাদের তুলসির পাতা খাওয়ালে কৃমি দূর হবে এবং মাংসপেশি ও হাড় হবে শক্তিশালী।

8. জ্বর হলে পানির মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করে নিন ৷ অথবা উপরিউক্ত তিনটে দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন ৷ দিনের মধ্যে তিন-চার বার ঐ বড়িটা পানি দিয়ে সেবন করুণ । জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।

9. কাশি হলে তুলসী পাতা এবং আদা একসাথে পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান ৷ এতে উপকার পাবেন ৷

10. ডাইরিয়া হলে ১০ থেকে বারোটি পাতা পিষে রস খেয়ে ফেলুন।

11. মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চেবান ।

12. আপনার শরীরে যদি কোনরকম ঘা যদি থাকে তাহলে তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান।

13. শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে জ্বালাপোড়া কমে যাবে। পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে এবং পোড়া দাগ ওঠে যাবে।

14. ত্বকের রোশনি বাড়ানোর জন্য, ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান।

15. প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন । তুলসি গাছের বীজও যথেষ্ট উপকারী। এর বীজ শুকিয়ে মিহি করে খেলে প্রস্রাবের ইনফেকশনজনিত সমস্যা ভালো হয়। পুরুষত্বহীনতা দূরীকরণে এই পাতার অবদান অপরিহার্য।

16. যদি কখনও বমি কিংবা মাথা ঘোরা শুরু করে, তাহলে তুলসী রসের মধ্যে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

17. সকালবেলা খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে রস পান করলে খাবার রুচী বাড়ে।

18. নিয়মিত তুলসীর রস পানে হৃদরোগেও উপকার পাওয়া যায়।

19. চোখের সমস্যা দূর করতে রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ওই পানি দিয়ে সকালে চোখ ধুয়ে ফেলুন।

20. তুলসীতে Eugenol অধিক পরিমাণে থাকায় তা Cox-2 Inhibitor রূপে কাজ করে বলে তা ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

21. Hypoglycemic drugs এর সাথে তুলসী খেলে তা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

22. তেজস্ক্রিয়তার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ কোষসমুহকে মেরামত করে।

23. চর্বিজনিত হৃদরোগে এন্টি অক্সিডেন্টের ভুমিকা পালন করে।

24. তুলসী একশেরও বেশি Phytochemicals (যেমন oleanolic acid, beta caryophyllene ইত্যাদি)বহন করে বলে ক্যান্সার চিকিত্সারয় ব্যবহৃত হয়।

25. তুলসীর অ্যালকোহলিক নির্যাস Immune system এর রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।

26. তুলসী স্নায়ুটনিক ও স্মৃতিবর্ধক।

27. শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্নরোগ যেমন ব্রঙ্কাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাঁপানি প্রভৃতি রোগের নিরাময়ক।

28. সর্দি, কাশি, জ্বর, বমি, ডায়ারিয়া, কলেরা, কিডনির পাথর, মুখের আলসারসহ চোখের বিভিন্ন রোগে ইহা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

29. পেট খারাপ হলে তুলসীর ১০ টা পাতা সামান্য জিরের সঙ্গে পিষে ৩-৪ বার খান ৷ পায়খানা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে!

30. তুলসী মূল শুক্র গাঢ় কারক। তুলসী পাতার ক্বাথ, এলাচ গুঁড়া এবং এক তোলা পরিমাণ মিছরী পান করলে ধাতুপুষ্টি সাধিত হয় যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রতিদিন এক ইঞ্চি পরিমাণ তুলসী গাছের শিকড় পানের সাথে খেলে যৌনদূর্বলতা রোগ সেরে যায়।

31. চর্মরোগে তুলসী পাতা দূর্বাঘাসের ডগার সংগে বেটে মাখলে ভালো হয়ে যায়।