শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

আমাদের  বাড়িতে বাগান  সেই বাবার আমল থেকে, ছোটবেলা থেকে ফুল আর পাখিদের মধ্যেই বড় হয়েছি।  আমার মেয়ে তিতলিও তাই, খুব ছোট্ট  থেকে গাছ ফুল আর পাখিদের  সাথে থাকতে থাকতে এরা ছিলো ওর বড়ো প্রিয়।
এর সাথে ছিল ওর পোষ্যপ্রেম ,চিরকালই আমাদের বাড়ি 'ওঙ্কার ধাম 'এর গাছগাছালি পাখিদের নিশ্চিন্ত আশ্রয়, আমাদের বাড়িতে প্রচুর পাখি আসে রোজ,ছোটবেলা থেকে দেখেছি,পাশেই পুকুরের ধারে গম্ভীরমুখে  বসে থাকতো মাছরাঙা ,কি অপূর্ব রূপ,...... মুগ্ধ হওয়ার মতোই ,এছাড়াও আসতো টিয়া,কুবোপাখী ,কোকিল,ফিঙে,দোয়েল,পায়রা,বৌ কথা কও ,বসন্ত বৌরি,শালিক  আরো কত কি।   ছাতারে পাখিগুলো খুব ঝগড়ুটে,এক মুহূর্ত চুপ থাকতে পারে না,সবসময় কাচর মাচর করে যাচ্ছে ,আর চড়ুই পাখির কথা আর কি বলবো,ওদের মতো দুস্টু পাখি কমই দেখেছি। আর আছে টুনটুনি,ভারী চঞ্চল,সবসময় ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে উড়ে বাড়াচ্ছে।.....
স্কুল থেকে ফিরেই তিতলির প্রথম কাজ ছিল বাগানে আর বাড়ির ছাদের বাগানের গাছগুলোর পরিচর্যা ,ওর মায়ের বকুনির মধ্যেই শেষ হতো এই পর্ব।  ভোরে উঠে ওর গাছে কোনো নতুন ফুল বা ফল ধরলে আমাকে ডেকে না দেখানো পর্যন্ত ওর শান্তি হতো না না।

প্রতি বছর ওর জন্মদিন বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে গাছই ছিল ওর সবচেয়ে প্রিয় উপহার।  আগেই বলেছি ছুটি পেলেই আমরা বেরিয়ে পড়তাম,কোনো নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য না নিয়েই,এইভাবেই কত নতুন ফুল আর গাছেদের সাথে পরিচয় হতো আমাদের, তাদের কাউকে কাউকে আপন করে নিয়ে আসতাম আমার বাগানে আবার কারো কারো রূপ দেখেই মোহিত হতাম।এইভাবেই তিতলির বায়নায় আমার বাগানে এসেছে জারুল,পলাশ,ঝুমকোলতা বা প্যাসিফ্লোরারা ,.........
 গত বছর এইভাবেই আমার এক বন্ধুর বাড়িতে আমাদের সাথে দেখা হল রূপসী চন্দ্রপ্রভার ! থোকা থোকা  ফুলে সারা শরীর জুড়ে রূপের জ্বেলে দাঁড়িয়ে ছিল সে।

যথারীতি তিতলীর বায়না ,বাবা এই গাছটা আমার চাই।  নার্সারীতে খোঁজ করেও পেলাম না গাছটা,তিতলীও নাছোড়বান্দা,গাছটা ওর চাই ই চাই ।  তারপর আমার চেনা এক নার্সারীর মালিক বললো, 'আমি জোগাড় করে আপনার বাড়িতে পৌঁছে দেব ' এই কথা শুনেই আমরা বাড়ী ফিরলাম।
তারপর এল সেই অভিশপ্ত দিন,২৫শে মার্চ তিতলীর এক্সিডেন্ট ,.! হসপিটালের এমার্জেন্সি তারপর সুপার স্প্যাসিলিটি ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ৩ দিনের অসম-যুদ্ধে ২৮ শে হার মানলো আমার একমাত্র সোনা মেয়েটা ,..............
ওকে নিয়ে যখন শেষবারের মতো বাড়ি ফিরছি, আমার শহর জুড়ে শোকের ছায়া , আমার বাড়িতে কয়েক হাজার লোকে, তাদের অনেকের হাতেই ফুল,সবাই শেষ বারের মতো দেখতে এসেছে আমার পাগলী মেয়েটাকে। ....
  তখন গোধূলীবেলা, তিতলিকে রেখে বুকফাটা কান্না নিয়ে বাগানের দিকে তাকিয়ে দেখি, এক কোণে একটা প্যাকেট এ রাখা রয়েছে,একটা চন্দ্রপ্রভা গাছ,তাতে থোকা থোকা ফুল ফুটেছে,............... (পরে দারোয়ানের কাছে জেনেছিলাম সে দিন দুপুরে নার্সারীর থেকে দিয়ে গেছে গাছটা ) গাছটা দেখে বুক ফেটে যাচ্ছে,....... ভাবলাম ফেলেই দেব, তারপর কি ভেবে একথোকা ফুল ছিঁড়ে নিয়ে রাখলাম আমার মেয়ের ফুলে ফুলে ঢাকা বুকের ওপর , তিতলির মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো মুখটা কি একটু হাসি হাসি লাগলো,.............. না কি এ আমার মনের ভুল ,...........!!!

এই গ্রূপের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাক্তিগত ছবি বা ঘটনা পোস্ট করা উচিত নয়, কিন্তু আমার প্রথম পোস্ট (প্যাসিফ্লোরা) এর কমেন্ট করে এই গ্রূপের আমার ভাই বোন ও বন্ধুরা যে সমব্যাথিতা ,সহমর্মিতা ও সবুজ মনের পরিচয় দিয়েছেন তাতে আপনাদের একান্ত আপনজন ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছি না ,.......! তাই নিয়মের বাইরে গিয়ে আমার ফুলের কথা আমার ভাই,বোন ও আপনজনের কাছে শেয়ার করলাম, অপরাধ মার্জনা করবেন,এই আশা রাখি।
সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রার্থনা করি।

দাদ-মর্দন \অঙ্গনা

আগেই বলেছি ছুটি পেলেই আমরা বেড়িয়ে পরতাম কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য না নিয়েই , কাজের কথা ভুলে গিয়ে, ফোন অফ করে দিনটা একান্তভাবেই আমার হত । ওই দিনটা হত আমার মনের বাউন্দুলে সত্তার ।
   ২০১৫ সালের অগাস্ট মাস ,এমনই এক দিনে সারাদিন ঘুরে বাড়ি  ফিরছি , গ্রামের পাশ দিয়ে সিঙ্গেল রাস্তা , আনমনে গাড়ি চালাচ্ছি, তিতলি বলল ' বাবা একটু দাঁড়াও, দ্যাখো কি সুন্দর ফুল্ গুলো,...!" তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে , দেখলাম রাস্তার পাশের ঝোপগুলি বাসন্তী রঙে যেন হাসছে,.........।।
   গাড়ি দাড় করিয়ে কাছে গিয়ে দেখি, সূর্যাস্তের সোনালী আভা গায়ে মেখে যেন লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উপেক্ষিতা ফুলগুলি ......।। রাস্তার পাশের ঝোপগুলো হলুদ হয়ে আছে.........! এ যেন এক অকাল-বসন্ত । ওদের কামেরাবন্দি করতে করতে তিতলির বলল, ' বাবা ,এই ফুলগুলোর নাম কি ?' তা তো জানি না ! ওদের ছবি আর একটি নিয়ে হাজির হলাম আমার অনুজপ্রতিম উদ্ভিদ-বিজ্ঞানের অধ্যাপক অরিন্দমের বাড়ি । ওর কাছেই জানলাম এই অনাম্নি সুন্দরীর নাম দাদ-মর্দন , শুধু রূপ নয়, এর গুণ ও আছে,প্রাচীনকালে চর্ম্ম-রোগের চিকিৎসায় এর ব্যবহার হত । বনে জঙ্গলে,রাস্তার পাশে জন্মায় , জুলাই থেকে  নভেম্বর পর্যন্ত চলে ফুলেল-পর্ব তারপর আগাছার ভীরে হারিয়ে যায় এরা ।


     বাড়ি ফেরার পথে দেখলাম তিতলি ঠিক খুশি নয়, আমি বললাম কি হয়েছে মা ? ফুলের নাম তো জানা হল তবু খুশী নয় কেন ? ও বলল ' বাবা এত সুন্দর একটা ফুলের কি বিশ্রী নাম , আমি এই অনাম্নি ফুলটার নাম দেব অঙ্গনা '...।।
  রাস্তা থেকে তুলে আনা অনাম্নি অঙ্গনার ঠাঁই হল বাগানে , মাম চলে জাবার পর অজত্নে অবহেলায় হয়ত অভিমানে মামের অনেক গাছ,পাখিদের মতই ও চলে গেল মামের ছাদবাগান ছেড়ে ......।।
 

সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৬

কেমন আছিস মা,কতদিন তোকে দেখিনি,..... সোনা মা আমার। আমি জানি বাপিকে আর মা কে ছাড়া তোর ও মন খারাপ , আমরাও একটুও ভালো নেই রে মা।  কালীপুজোর পর বৃষ্টি হয়ে দু দিন ধরে বেশ ঠান্ডা পড়েছে, এটা কিন্তু তোর পক্ষে খুব খারাপ , প্রতিবার এই সময় তোর ঠান্ডা লাগে, সাবধানে থাকিস মা,ওখানে কিন্তু বাপী নেই যে সব সামলে নেবে। একদম দুস্টুমি করবে না কিন্তু,ঠাম্মি দাদুর সব কথা শুনে চলবে, ওদের দুজনেরই কিন্তু পা ভাঙা, তোমার সাথে দৌড়োতে পারবে না ,সব কথা শুনে একদম সোনা মেয়ে হয়ে থাকবে।
    জানিস মা,কাল হাতি এসেছিলো, তোর মনে আছে মা একবার হাতি দেখতে দেখতে কতদূর চলে গিয়েছিলি, মা খুঁজে এনেছিল,........ তিতান আর তিতাস কে ডেকে হাতি দেখিয়েছি ,পুচু ঘুমাচ্ছিলো তাই দেখতে পায়নি।  জানিস মা, পুচু অনেক বড় হয়ে গেছে ,অনেক কথা বলতে পারে, গান শুনলেই নাচে, তোর ফটো দেখলেই বলে" তেললি " ........  ছাদের রেলিং এ বসে তুই যে গাছটার কুল পেড়ে খেতিস,সেই কুল গাছটাও অনেক কাছে চলে এসেছে, আজ দেখলাম, ছাদ থেকেই কুল পাড়া যাবে আর রেলিং এ চড়তে হবে না। কিন্তু তুই না থাকলে কে  আর কুল পারবে।
     মা, দুর্গাপুজো,কালীপুজো সব চলে গেল, আমরা কেউ বেরোইনি ,আমার সোনা মা কে ছাড়া কি বেরোনো যায় ? আমার তিতলি মা কাছে নেই তাই আমি আর তোর মা আর  কোথাও বেরোবো না , কোনোদিন না।
  মা তুই রাতে নিশ্চই ঠাম্মির কাছে শুস্, ঠাম্মির সাথেই বকবক করিস তো?চুপিচুপি তোকে বলি, ঠাম্মি অনেক ভালো ভালো গল্প জানে, ছড়া জানে, ছোটবেলায় তুই চুপ করে শুনতিস , ঠাম্মি কে বলবি,অনেক গল্প বলবে।......
মাম,তুই যেদিন চলে গেলি , সেদিন তোর বায়না করা চন্দ্রপভা গাছটা এসেছিলো,ফুলগুলো তোকে দিয়েছিলাম ,মনে আছে? আজ দেখলাম আবার সেই গাছটায় কুড়ি ধরেছে। তোর ভালো লাগছে মাম ? ভেবেছিলাম আর কোনোদিন ফুল গাছ লাগাবো না, সেদিন ভীড়ের চাপে তোর বাগান তছনছ হয়ে গিয়েছিল,আজ দেখলাম,তোর হাসনুহেনায় কচি পাতায় ভরে  উঠেছে, হয়তো কয়েকদিন পরেই ফুল ফুটবে , রঙ্গন,রাজরঙ্গন,ঝুমকোলতা ,মাধবীলতা,সব গাছে ফুল ফুটেছে।
আমি ঠিক করেছি, আবার ফুল ফুটবে তোর বাগানে, ঠিক আগের মতোই। আমি আজ সারাদিন বেরোই নি , শিশিরকাকাকে  ডেকে আজ তোর বাগান রেডি করলাম মা, তুই খুশি তো মা ?
   সামনে শীত আসছে, খুব সাবধানে থাকতে হবে মা, আমি তো নেই ওখানে ,আগের মতো ঠান্ডা লাগিয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ঠাম্মি দাদু খুব মুস্কিলে পরে যাবে।  সোনা মেয়ে হয়ে থাকিস মা, কাতুমা , ঠাম্মি দাদু, সবার কথা শুনবে।  কষ্ট পাস্ না মা, আমি আর তোর মা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওখানে চলে যাবো, তখন সবাই মিলে খুব মজা করবো,আবার আগের মতো ঘুরে বেড়াবো।
ভালো থাকিস মা,তোর প্রিয় চাঁদ,তারা,ফুল,পাখি আর প্রজাপতিদের সাথে।  আমাদের অনেক আদর আর চুমু রইলো তোর জন্য ,.................... 


শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬



দীপাবলির আগের দিন ভূতচতু্র্দশী,এই দিন  বাঙালি গৃহস্থবাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয় ,  সঙ্গে নিয়ম রয়েছে, খেতে হয় ১৪ রকম শাক-ও৷ভূতচতু্র্দশীতে, ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে এদিন দুপুরে ভাতের সঙ্গে খেতে হয় ১৪ রকম শাকভাজা। কথিত আছে, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে এবং অতৃপ্ত আত্মাদের তুষ্ট করতে এই দিনে ১৪ শাক খাওয়া হয় এবং সন্ধ্যায় ১৪ টি প্রদীপ জ্বালানো হয়।
ঘোর অমাবস্যায় অন্ধকার দূর করতেই দীপ জ্বালানোর রেওয়াজ। আর ১৪টি শাক খাওয়ার নিয়মটি এসেছে প্রধানত স্বাস্থ্যরক্ষার্থে। কারণ ঠান্ডার আমেজ এসে যায় এই সময়। মরসুম বদলের সময় প্রধানত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতেই ১৪টি শাক খাওয়া দরকার। অন্তত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাতে বিষয়টি তাই দাঁড়ায়। এই শাকগুলি হল যথাক্রমে— ওল, কেঁউ, বেতো, সর্ষে, , নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা এবং শুষণী।শরীর ভালো রাখতে গ্রিন ভেজিটেবিলস এর বিকল্প যে কিছু হতে পারে না, তা তো সকলেই জানেন৷ বিশেষত আয়ুর্বেদ এবং কবিরাজি শাস্ত্রে এই শাকগুলির গুণ অসীম। পঞ্জিকায় নির্দেশিত এই চোদ্দ শাক, বা আয়ুর্বেদ মতে প্রাচীন বাংলায় চোদ্দো শাকগুলি ছিল পালং শাক, লাল শাক, সুষণি শাক, পাট শাক, ধনে শাক, পুঁই শাক, কুমড়ো শাক, গিমে শাক, মূলো শাক, কলমি শাক, সরষে শাক, নোটে শাক, মেথি শাক, লাউ শাক অথবা হিঞ্চে শাক। বিধিমতো খাওয়া উচিত। তবে তরুণ  প্রজন্মের একটা বড় অংশ এসব নিয়মের ধার ধারে না, তা বলাই বাহুল্য।
ওল :-ভেষজ হিসেবে উৎকৃষ্ট ওল। এটি অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ খাবার। এটি অর্শ্বরোগ সারায় বলে সংস্কৃত ভাষায় ওলকে অর্শ্বঘ্ন বলা হয়। এটি খিদে বাড়ায়, রুচিকারক, পিত্ত ও কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করে ও রক্ত পরিষ্কারক। ওল কৃমি, পেটের পীড়া, পেটের বায়ু ও কফ নাশ করে, পিলের অসুখ ছাড়াও অনেক রোগের মহাষৌধ দিসেবে কাজ করে ওল।


বেতশাকঃ- আমাদের বাসভূমির আশেপাশে জন্মায় বলে এই বেতো শাকের আরেক নাম বাস্তক। এর গাছ হয় ছোট, গাছের পাতা অনেকটা তুলসী পাতার মতো, কিন্তু পাতাগুলোর ধার বেশ ঢেউ খেলানো। বোটানিক্যাল নাম- Chenopodium album Linn. এই গাছ সাধারণত জ্বরনাশক। লাল রংয়ের পাতাওয়ালা এক ধরনের বেতো পাওয়া যায়। চন্দন বেতো নামে আর এক ধরনের বেতো শাক পাওয়া যায়। বেতো শাক বায়ু, পিত্ত ও কফনাশক এবং অগ্নিবল বৃদ্ধিকারক। এটি ক্ষারধর্মী। এর মধ্যে কৃমিনাশক শক্তি রয়েছে।
 পুষ্টিকর শাক হিসেবে সর্ষে শাকও কিন্তু বেশ পরিচিত। এতে আছে ভিটামিন সি, কে, এ, সালফার। এতে থাকা ভিটামিন সিতে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহকে ভাইরাল অসুখ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন এ ভালো রাখে দৃষ্টিশক্তি আর ভিটামিন কে হাড় এবং মস্তিষ্ককে রাখে সচল। সালফার দেহে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। এটি দেহে হার্ট অ্যাটাক, আর্থ্রাইটিস ও ক্রনিক রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনে। এর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

সর্ষে শাকঃ-এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত সর্ষে শাক খায় তাদের বিভিন্ন রকম ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। এটি রক্তে কোলস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে আনে। সেই সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতেও কার্যকর। এটি হজম শক্তি বাড়াতে সরাসরি কাজ করে। এই শাক ত্বক ও চুল ভালো রাখে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। সর্ষে শাক গর্ভবতী মায়েদের সুস্থ শিশু জন্মদানের সম্ভাবনা বাড়ায়।

 কালাকাসুন্দে :-
কালা কাসুন্দেঃ বর্ষজীবী গাছ, এক মানুষ সমান উচুঁ হয়। ঝাড়দার গাছ, বর্ষার প্রারম্ভে বীজ থেকে গাছ জন্মায়। এর পাতা সবুজ, এক একটা লম্বা বোটায় ৫-৬ জোড়া পাতা, চটকালে কটুগন্ধ বের হয়। ফুলের রং লালচে হলদে। ফলগুলি বরবটির মত গুটি হয়, প্রত্যেক গুটিতে ২০-২৫টি বীজ পাওয়া যায়। এই গাছের পাতার শির এবং গাছের উপরের অংশটা একটু বেগুনি রং এর হয়। একে কালা কাসুন্দে  বলে। এই গাছের পাতা, ফুল, মূল অর্থ্যাৎ সমগ্র গাছ ঔষধার্থে ব্যবহার হয়।

 

যেসব রোগে কালা কাসুন্দে ব্যবহার হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-অরুচী, গলাভাঙ্গা, গলা-বুক জ্বালা, পাতলা পায়খানা, হুপিং কাশি,মূর্ছা, ঘুসঘুসে জ্বর, হাঁপানী এবং শরীরের চাকা চাকা ফুলে উঠা এলার্জি।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পাতা সিদ্ধকরে অল্প পরিমাণ খেতে হয় অথবা পাতা এবং ফুলের রস ১-২ চা চামচ পরিমাণ খেতে হয়। আবার অনেক সময় মূলের ছাল বেঁটে খেতে হয়। 

নিমপাতা :-
জেনে নিন নিমপাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা
ভেষজ উদ্ভিদের নামের তালিকায় সবসময় নিমপাতা শীর্ষে থাকে। অনেকে বলে থাকেন সর্বরোগের ঔষধ হল এই নিমপাতা। শতশত বছর ধরে আয়ুর্বেদিক ঐতিহ্যে নিমপাতার হরেক রকমের ব্যবহার হয়ে আসছে। নিমপাতার বিভিন্ন ধরণের কার্যকারিতা নিম্নে আলোচনা করা হল-
১. নিম আমাদের অতি পরিচিত একটি গাছ। এটি আয়ুর্বেদের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। নিমপাতা হতে তৈরিকৃত ঔষধ চুল ও ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হয়।
২. নিমের পাতায় অ্যান্টি-ফুঙ্গাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। যা চুলের খুশকি দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৩. এটি চুলকানি, শুষ্কতা ও মানসিক অস্থিরতা দূর করে। যার ফলে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
৪. নিমপাতা দিয়ে তৈরিকৃত পেস্ট চুল ও মাথার স্ক্যাল্পের জন্য কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
৫. এটি ত্বকের জ্বালা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৬. নিমের ডি-টক্সিফাইং বৈশিষ্ট্যের জন্য ত্বকের রোগ চিকিত্সায় সকল আয়ুর্বেদিক ফর্মুলেশনে এর উল্লেখ করা হয়।
৭. ব্রণ বৃদ্ধি করে যে সকল ব্যাকটেরিয়া নিমপাতা তা দূর করে।
৮. নিমের তেল ও নিমের পাতায় চমৎকার উপাদান রয়েছে যা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। তেল শুষ্ক ত্বক, মানসিক স্থিরতা ও চুলকানি, লালভাব এবং জ্বালা দূর করে।
৯. আলসারের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বিরোধিতা এবং অনাক্রম্যতা উন্নতি করতে সাহায্য করে।
১০. নিমপাতার অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য কোন সংক্রমণ বা পচনশীল অবস্থার ক্ষত আরোগ্য করতে সাহায্য করে।
১১. ব্রণের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে নিম অসাধারণ সাহায্য করে।
১২. এটা কাউর এবং ছোটখাট চামড়া সংক্রমণের মত ত্বকের রোগের জন্য বিশেষ উপকারী।
১৩. এতে গ্যাস্ট্রো প্রতিরক্ষামূলক উপাদান রয়েছে, যা আলসার নিরাময়ে কার্যকর।
১৪. এতে উচ্চ পর্যায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ রয়েছে যা পরিবেশগত ক্ষতি এবং সুপরিণতি থেকে ত্বক রক্ষা করতে সাহায্য করে।
১৫. নিমের তেলে বিভিন্ন ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন ‘ই’ রয়েছে। এটি ত্বক কোষের পুনর্যৌবন এবং স্থিতিস্থাপকতা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
১৬. এটি একটি প্রদীপ্ত চামড়া ও চামড়ার স্বনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
১৭. নিমপাতা ছত্রাকের সংক্রমণ দূর করতে পারে।–সূত্র: টাইম্‌স অফ ইন্ডিয়া।
জয়ন্তী শাক :-জয়ন্তী মাঝারি আকারের বৃক্ষ। হুবহু ধইঞ্চার মত দেখতে ফুল, পাতা, ফল সব কিছুই। এর চারা গাছ দেখে অনেক অভিজ্ঞও ধইঞ্চা বলে ভুল করতে পারেন। উচ্চতা ৮ মিটার পর্যন্ত হয়। কাণ্ডে খুব অল্প ব্যবধানে ঘন ঘন ডাল বের হয়। দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষণজীবী বৃক্ষ এটি। বাঁচে প্রায় তিন চার বছর। থোকা থোকা সনালী ফুলের বাহার খুব মনোমুগ্ধকর। ফুলের আকার এক সেন্টিমিটার প্রায়। পাপড়ির ওপরের ভাগ হলুদ রঙের, নিচের দিক বাদামি রঙের ওপর ছোট ছোট কালো অসংখ্য ছিটেফোঁটা থাকে। কুঁড়ি অবস্থায় শুধু কালো ছিটেফোঁটা বাদামি রংটিই দেখা যায়। ফুল ফোটে শীতের শুরু হতে গরমের আগে পর্যন্ত, তবে বছর জুড়েই একটি দুটি ফুল দেখা যায়। ফল চিকন লম্বাটে, কাঁচা অবস্থায় সবুজ। শুকিয়ে গেলে বাদামি বর্ণ। দুর্গা পূজায় নবপত্রিকা তৈরিতে জয়ন্তী লাগবেই। নবপত্রিকা বাংলার দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। এখানে নবপত্রিকা মানে ৯ টি উদ্ভিদ। এই নয়টি উদ্ভিদের একটি এই জয়ন্তী।
সাঞ্চে \শাঞ্চে:-





  
অবশ্য
তাতে যে খুব অমঙ্গল কিছু ঘটে, তেমনটাও নয়। তবে শরীরের কথা মাথায় রেখে এই শাক খাওয়া যেতেই পারে, কি বলেন?

মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১৬

ফুলের কথা

ফুলের প্রতি কোনোরূপ আকর্ষণ নেই, ধারণা করি পৃথিবীতে এমন রুক্ষ-শুষ্ক মানুষ খুব কমই আছে। বরং নেই বললেই চলে। চার বছরের শিশু থেকে ৮০  বছরের বৃদ্ধ, কমবেশি সবার মধ্যেই ফুলের প্রতি আকর্ষণ আছে। ফুলের সৌন্দর্য আর সৌরভের কাছে পরাস্ত হয়নি, এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরল।
ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। মানুষের সৌন্দর্যপ্রেম সহজাত। সহজাত সৌন্দর্যপ্রেম থেকেই সৌন্দর্যের প্রতীক ফুলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ। এর পাপড়ির বিন্যাস, রঙের বৈচিত্র্য ও গন্ধের মাধুর্য মানুষের মনকে ভরে তোলে স্বর্গীয় আনন্দে। ফুল পবিত্রতার প্রতীক। ফুল নিষ্পাপতার প্রতীক। কোনো মানুষের পবিত্রতা বোঝানোর জন্য আমরা বলি, ‘ফুলের মতো পবিত্র।’ শিশুকে আমরা ভালো মানুষ হতে ও নিষ্পাপ-নিষ্কলঙ্ক হতে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে বলি, ‘ফুলের মতো পবিত্র হও।’ শিশু নিষ্পাপ, পবিত্র। তাই শিশুকে ফুলের সঙ্গে উপমা দেয়া হয়। বলা হয়- পুষ্পশিশু।
ফুল ভালোবাসার প্রতীক। ভালোবাসার মানুষকে ফুল দেয়ার রীতি পৃথিবীতে দীর্ঘকাল থেকে চলে আসছে। বলা হয়ে থাকে, ১৮৪০ সালে ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার বিয়ের সময় প্রিয় মানুষকে ফুল দেয়ার রীতি প্রথম চালু হয়। সে হিসেবে ভালোবাসাবাসিতে ফুলচর্চার বয়স পৌনে ২০০ বছর।
মানব-সংস্কৃতির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে ফুল। বাঙালির জীবনাচারেও ফুলের ব্যবহার বহুবিধ। ভালোবাসার অর্ঘ্য হোক অথবা ধর্মালোচনার সভা - ফুল আছে সর্বত্রই। অবোধ বালিকার বেণীতে, নবদম্পতির ফুলশয্যায়, রাজনৈতিক দলের জনসভায়, করপোরেট অফিসের টেবিলে- ফুল আছে সবখানেই ।

হিন্দু ধর্মে ফূল :-


 হিন্দু সনাতন ধর্মে পূজার্চনায় ফলের ব্যবহার অনিবার্য। প্রায় প্রতিটি দেবতার পূজাবিদি এবং মন্ত্রে পুষ্পের উল্লেখ রয়েছে। রয়েছে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের সুনির্দিষ্ট বিধি। পুষ্প সুন্দর, সুগন্ধযুক্ত। কেবল কি সেই কারণেই তার স্থান দেবতার পায়ে? নাকি আরও কোনও কারণ রয়েছে পুষ্পার্পণের পিছনে?
শাস্ত্র জানাচ্ছে—
• ফুলও ত্রিগুণসম্পন্ন। এদের মধ্যেও সত্ব, তম ও রজ-ভাদ রয়েছে। এই বিভাজন তাদের বর্ণ, গন্ধ এবং উৎসের নিরিখে কৃত।
• সত্ত্বগুণসম্পন্ন ফুল প্রতিদিনের পূজায় ব্যবহার্য। তমগুণ সম্পন্ন পুষ্প বিশেষ পূজার জন্য।
• সত্ত্বগুণস্পন্ন ফুলের মধ্যে রয়েছে, অর্ক, দ্রোণ, জুঁই, শ্বেতপদ্ম ইত্যাদি।
• রজগুণস্পন্ন ফুলের উদাহরণ রক্তপদ্ম, কল্কে ফুল।
• তমগুণসম্পন্ন ফুল চিনে জবা, কেতকী ইত্যাদি।
• মনে করা হয়, প্রতিটি ফুলের বিশেষ বিশেষ শক্তিকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা রয়েছে।
• সেই ক্ষমতা অনুযায়ী তাদের জন্য নির্দিষ্ট দেবতাও রয়েছেন। যেমন, সাদা ধুতুরা শিবের জন্য নির্দিষ্ট।
• ফুলের সঙ্গে বিল্বপত্রের প্রয়োগও শাস্ত্রানুগ। বিল্বপত্র একই রকম ভাবে শক্তিকে আকর্ষণ করে।
• ফুল ও বেলপাতার যোগ সম্ভবত এক প্রাচীন জৈবরসায়ণের সূত্রকে ব্যক্ত করে।
• তুলসি পাতার ব্যবহারও একই জৈবরাসায়নিক ভাবনার ফল।

পবিত্র কোরআনে ফুল:-
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে নানা প্রসঙ্গে ফুলের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা- ‘আমি এদের বিভিন্ন ধরনের লোককে পরীক্ষা করার জন্য পার্থিব জীবনের ফুলস্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তুমি সেসব বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করো না। তোমার পালনকর্তার দেয়া রিজিক উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।’ (সূরা ত্বহা : ১৩১)। এখানে ‘জীবনের ফুল’ (জাহরাতুল-হায়াত) বাক্যাংশে ‘ফুল’ শব্দটি সৌন্দর্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আরেক সূরায় এরশাদ হয়েছে, ‘যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে, তখন সেটি গোলাপ বর্ণে রঞ্জিত চামড়ার মতো হয়ে যাবে।’ (সূরা আর-রাহমান : ৩৭)।


কবিতায় ফুলঃ-

কবিতা লিখেছেন, কিন্তু ফুল নিয়ে কবিতা লিখেননি, ফুল দিয়ে উপমা দেননি, এমনটা বিরল। সব কবিই কমবেশি ফুল নিয়ে কবিতা লিখেছেন, উপমায় ফুলের ব্যবহার করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এ পর্যন্ত ফুল নিয়ে কবিরা কত শত-সহস্র কবিতা লিখেছেন, তার ইয়ত্তা নেই।বস্তুত  বাংলা ভাষায় ফুল নিয়ে যতো  কবিতা লেখা হয়েছে তার কথা লেখার সামর্থ আমার নেই।   বিশ্ব কবি  রবীন্দ্রনাথ,নজরুল,জীবনানন্দ থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক কবিরা পর্যন্ত সব কবি ও লেখকদের লেখায় ফুলের কথা বর্তমান , কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন-
‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা
খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি’
দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার
ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!
বাজারে বিকায় ফল ত-ুল
সে শুধু মিটায় দেহের ক্ষুধা,
হৃদয়-প্রাণের ক্ষুধা নাশে ফুল
দুনিয়ার মাঝে সেই তো সুধা!’
প্রচলিত আছে, কবিতাটি নাকি কোনো এক হাদিসের অনুবাদ। প্রচলিত কথাটি ভুল। এ মর্মে কোনো হাদিস আছে বলে আমাদের জানা নেই।
কবি জসীমউদ্দীন ‘হলুদ বরণী’ কবিতায় লিখেছেন। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত’ কবিতাংশটুকু প্রবাদে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের কবি আল মাহমুদ ফুল নিয়ে অনেক কবিতা লিখেছেন। তার কবিতাগুলো থেকে একটি উদাহরণ,
‘দীঘির কথায় উঠলো হেসে ফুলপাখিরা সব
কাব্য হবে কাব্য হবে জুড়লো কলরব
কী আর করি পকেট থেকে খুলে ছড়ার বই
পাখির কাছে ফুলের কাছে মনের কথা কই।’
ফুল নিয়ে রচিত এ ধরনের হাজারও উদাহরণ দিতে চাইলেও দেয়া সম্ভব।


সঙ্গীতে ফুলের ব্যবহার:-
কবিতার মতো গানেও ফুলের ব্যবহার অধিক। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ , কবি কাজী নজরুল ইসলাম গানে ফুলের ব্যবহার সম্ভবত আর সব গীতিকারের চেয়ে বেশি করেছেন। উপমহাদেশে পাওয়া যায়, এমন প্রায় সব ফুলের কথাই তার গানে কোনো না কোনোভাবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি যেসব ফুলের প্রতি মানুষের কোনোরূপ আগ্রহ নেই, নজরুল সেসব নিয়েও অনবদ্য সঙ্গীত রচনা করেছেন। যথা- ‘দূর দ্বীপবাসিনী’ গানে এলাচির ফুল-
‘… তব কবরী মূলে, নব এলাচীর ফুল
দুলে কুসুম বিলাসিনী।’
অন্য একটি গানে বেলের ফুল-
‘বেল ফুল এনে দাও চাই না বকুল।
চাই না হেনা আনো আমের মুকুল।’
ফুলের নামে নামকরণ
ফুল মানুষ পছন্দ করে। একারণেই হয়তো মানুষ প্রিয় সন্তানের নাম ফুলের নামে রাখে। মেয়েদের নাম নিম্নোক্ত ফুলগুলোর নামে রাখতে খুব দেখা যায়, শিউলি, চামেলি, শেফালি, কামিনী, মালতী, শিরীন, নার্গিস, কনকচাঁপা, অপরাজিতা, যূথী, বকুল, জুঁই, টিউলিপ, হাসনাহেনা, ডালিয়া, মলি্লকা, হেনা, ঝুমকা, জবা, পারুল, মহুয়া, চম্পা, বকুল, কেয়া, টগর, গোলাপ, বকুল, পিয়াল, গোলাপ, শিমুল, পলাশ ইত্যাদি ।

ফুলগুলি যেন কথা :- মজার মজার নামের গাছ

ফুলগুলি যেন কথা,
     পাতাগুলি যেন চারি দিকে তার
               পুঞ্জিত নীরবতা॥    
                       --------- রবীন্দ্রনাথ 

প্রতিটি গাছপালারই সাধারণত একটি ল্যাটিন নাম থাকে, যদিও সেসব গাছ বা ফুলকে ভিন্ন ভিন্ন দেশে আলাদা আলাদা নামে ডাকা হয়৷ কিছু ফুলের ক্ষেত্রে জার্মানদের দেয়া নামগুলো খুব  মজার......।।


১)‘ম্যানারট্রয়’ বা বিশ্বস্ত পুরুষ

এই ছোট ছোট মিষ্টি নীল রঙের ফুল ফোটে শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালে, জুন থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত৷ অর্থাৎ খুবই অল্প সময়ের জন্য ফুলপ্রেমীদের আনন্দ দেয় এই ফুল৷ আর সেই রসবোধ থেকেই হয়ত জার্মানিতে ফুলটির ল্যাটিন নাম ‘লোবেলিয়া’-কে পাল্টে রাখা হয়েছে ‘ম্যানারট্রয়’ বা বিশ্বস্ত পুরুষ৷



২)‘ফ্লাইসিগেস লিশেন’ বা পরিশ্রমী লিশেন

এই ফুলটির উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের দেয়া ল্যাটিন নাম ‘ইমপেশেন্স’ বা অধৈর্য৷ ফুলটি ফোটে মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত৷ শুধু তাই নয়, কোনো রকম বিরতি ছাড়াই এক নাগাড়ে এ সময় নতুন নতুন ফুল ফুটতে থাকে৷ আর সে কারণেই হয়ত জার্মানরা এই ফুলকে ‘ফ্লাইসিগেস লিশেন’ বা পরিশ্রমী লিশেন বলে ডাকে৷

৩)‘রোটার ফিঙারহুট’ বা লাল ফিঙারহ্যাট

বাঁদিকের ফুলগুলো দেখুন, কী সুন্দর! ঠিক যেন লম্বা চিকন টুপির মতো৷ মনে হয় আঙুলে পরা যাবে, তাই না? এই ভাবনা থেকেই হয়ত ‘রোটার ফিঙারহুট’ বা আঙুলের টুপি নাম পেয়েছে ফুল গাছটা৷ তবে এই সুন্দর চেহারার আকর্ষণীয় ফুলগুলো অত্যন্ত বিষাক্ত বলে একে ছোঁয়া বা মুখে দেওয়া কিন্তু একেবারেই নিষিদ্ধ৷এমন বিষাক্ত সুন্দরীকে দূর থেকে দেখাই ভালো।

৪)‘ফেরগিসমাইননিষ্ট’ বা আমায় ভুলে যেও না

এই ফুলের গ্রিক নাম দিয়েছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা৷ নামটি বেশ মজার – ‘মিয়োসোটিস’, যার বাংলা অর্থ ইঁদুরের কান৷ তবে জার্মানিতে এই ফুলটির নাম ‘আমায় ভুলে যেওনা’৷ এই নামকরণের পর থেকেই ফুলগাছটিকে ভালোবাসার সম্পর্কে বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়ে আসছে৷"তবু মনে রেখো ".................


৫)‘স্টিফম্যুটারশেন’ বা সৎ মা

ছবিতে সৎ মা ফুলের পাপড়িগুলো দেখুন৷ নীচের ছোট ফুল বা পাপড়িগুলোকে (সৎ মেয়ে) বড় ফুলগুলো (সৎ মা) কেমন আড়াল করে ঢেকে রেখেছে৷ এ কারণেই হয়ত ‘স্টিফম্যুটারশেন’ বা সৎ মা বা সৎ মামনি নাম রাখা হয়েছে৷নামটা বেশ মজার, তাই না ! এ সব নানা রঙের সুন্দর ফুলগুলোর কিন্তু খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না৷


৬)‘টয়ফেল্সক্রালে’ বা শয়তানের নখ

গাছটির দিকে তাকিয়ে দেখুন, যেন মনে হবে ওটাতে হাত দিলেই ধারালো নখগুলো আপনাকে আচড় দেবে৷ দেখে এরকমটা মনে হলেওবা এমন বীভৎস নামে ডাকা হলেও ইনিও কিন্তু আমাদের উপকারী কবিরাজমশাই , বাতের ব্যথা বা হজমে সাহায্য করার মতো বিস্ময়কর অনেক গুণ রয়েছে এই গাছের৷

 আজ এইটুকুই থাক ,পরে আবার মজার মজার নামের গাছের কথা শোনাবো। 'সবুজে থাকুন,সবুজে বাঁচুন '