গাছগাছালি মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। শুধু মানুষই নয়,
গাছপালা ছাড়া কোনো প্রাণীই জীবন ধারণ করতে পারবে না। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা
বেড়ে পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার পেছনে প্রধানত দায়ী বৃক্ষহীনতা। দিন
দিন কমে যাচ্ছে গাছের সংখ্যা। গাছপালার স্বল্পতার কারণে ভূপৃষ্ঠে
কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ভয়াবহভাবে বেড়ে যাচ্ছে। গাছগাছালির উপকারের
কোনো শেষ নেই। একটি গাছ বছরে প্রায় ১৩ কেজি কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে।
ইসলাম ধর্মে গাছ ঃ- মানুষের জীবন-সংশ্লিষ্ট প্রকৃতিগত ধর্ম ইসলামও বৃক্ষরোপণ এবং পরিচর্যার প্রতি জোরালো তাগিদ করেছে। বৃক্ষরোপণকে ইসলামে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যে গাছ লাগাবে এবং তা পরিচর্যা করবে, সে অনবরত পুণ্য পেতে থাকবে। মহানবী (সা.) বৃক্ষের শোভামণ্ডিত সুশোভিত পরিবেশ ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে একজন বৃক্ষপ্রেমী। জীবনে বহুসংখ্যক গাছ তিনি নিজ হাতে রোপণ করেছেন। অসংখ্য হাদিসে তিনি বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করেছেন তাঁর অনুসারীদের। বৃক্ষরোপণকারী মরে যাওয়ার পরও এর সওয়াব অনবরত পেতে থাকবে। সওয়াবের উদ্দেশে কোনো গাছের চারা রোপণ করলে যতদিন গাছটি থেকে উপকৃত হওয়া যাবে ততদিনই এর সওয়াব রোপণকারী পাবেন। ইসলামের আলোকে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করা ইবাদতেরও একটি অংশ। নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ করা রাসুলের সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তুমি যদি নিশ্চিতভাবে জান কিয়ামত এসে গেছে, তবুও তোমার হাতে কোনো গাছের চারা থাকলে তা রোপণ করবে।’ এ হাদিস থেকেই বোঝা যায় ইসলাম বৃক্ষরোপণকে কত গুরুত্ব দিয়েছে। বৃক্ষরোপণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তা পরিচর্যা করাও অপরিহার্য। এ জন্য ইসলামে বৃক্ষের পরিচর্যার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গাছ লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ নয়; বরং এর যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে পুষ্প-পল্লবে বিকশিত হওয়ার সব ব্যবস্থা করতে হবে। আপনার যতেœ যদি একটি বৃক্ষ ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়, পথিক এর ছায়ায় বসে, পশু-পাখি বিশ্রামের সুযোগ পায়, ফুল-ফল খেয়ে উপকৃত হয় এরা সবাই আপনার জন্য দোয়া করবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইসলাম কাউকে গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দেয় না। এক কথায় গাছের ক্ষতি হতে পারে, এমন কোনো কর্মকাণ্ডই ইসলাম সমর্থন করে না। গাছপালা আল্লাহর অন্যতম সেরা দান। বৃক্ষরোপণ ও তা পরিচর্যা করা মুসলমানদের ধর্মীয় দায়িত্ব। এ জন্য সবার উচিত ব্যাপক বনায়নের মাধ্যমে সবুজাভ প্রকৃতিকে মানুষের বাসযোগ্য করে তোলা।
হিন্দুধর্মে গাছ ঃ-সনাতন ধর্মে গাছ উপাস্য। বর্তমানের মতো প্রাচীন বাংলায়ও নারীদের মধ্যে ভোরে উঠে তুলসি, শেওড়া ও বটগাছ পূজার প্রচলন ছিল। গ্রাম-দেবতার সাথে গাছ পূজার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। একেকটি গ্রামে যে গাছের নিচে আঞ্চলিক দেবতার পূজা হতো কোনো কোনো সময় সেই গাছটিরও পূজা করা হতো। ভারতবর্ষের এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানে বট-পাকুড় কিংবা প্রাচীন গাছকে ভক্তিভরে পূজা করা হয়। সিঁদুর পড়ায় নানা ধরনের মানত করে। সূতা বাঁধে মনের ইচ্ছা পূরণ হওয়ার জন্য।
প্রাচীনকালে পুকুর খনন, পানীয় জলের জন্য কূপ খনন ও গাছ রোপণ ধর্মীয় কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ধারণা করা হতো গাছ হচ্ছে ঈশ্বরের আশ্রয়স্থল। বট ও পাকুড় গাছ লাগালে পুণ্য হয়। পিপল গাছকে প্রজাপতির আশ্রয়স্থল বলা হতো। আমগাছকে পঞ্চপাল্লাভা বলা হতো। আগনীপুরাণে একটি বৃক্ষকে ১০ জন পুত্রের সমান বলে অভিহিত করা হয়েছে।
সনাতন ধর্মবলম্বীদের তুলসি, কদম, নিম, বেল, চন্দন, তমালসহ নানা গাছের ওপর দুর্বলতা রয়েছে। এ সব গাছকে তারা শ্রদ্ধা করেন। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন মন্দিরগুলোর পাশে এসব গাছের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে তুলসিকে সীতাস্বরূপা, স্কন্দপুরাণে লক্ষ্মীস্বরূপা, চরকসংহিতায় বিষ্ণুর মতো ভূমি, পরিবেশ ও আমাদের রক্ষাকারী বলে বিষ্ণুপ্রিয়া, ঋগ্বেদে কল্যাণী বলা হয়েছে। স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু তুলসিদেবীকে পবিত্রা বৃন্দা বলে আখ্যায়িত করে এর সেবা করতে বলেছেন। তাই হাজার হাজার বছর ধরে সাধারণত কৃষ্ণ ও রাধা তুলসি এই দুই ধরনের তুলসি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়ে আসছে। সংরক্ষিত হয়ে আসছে।
“না পুড়াইও রাধা-অঙ্গ,
না ভাসাইও জলে,
মরিলে তুলিয়া রেখো
তমালেরই ডালে।”
রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের সুখ-দুঃখের সাথী ছিল তমাল গাছ। রাধা এবং কৃষ্ণ অনেক অনুযোগ, অভিযোগ, ভালোবাসার কথা এই তমাল গাছের কাছে বলেছেন। এই কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তমাল গাছকে পবিত্র গাছ হিসেবে মনে করে থাকে।
বরষার কদম গাছও শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম সঙ্গী ছিল। বৃন্দাবনে কদম গাছের নিচে বসে কৃষ্ণ বাঁশিতে রাধাকে ডাকতেন। তাই এ গাছের কদর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে কম নয়।
শাস্ত্রীয় মতে ‘বিল্ব’ বা বেলগাছ লাগালে সেই বাড়িতে পুরুষানুক্রমে ধনসম্পদে পরিপূর্ণ থাকে। এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বেলপাতা ছাড়া কোনো পূজা-অর্চনা হয় না। হোম-যজ্ঞ করার সময়ও বেলকাঠের প্রয়োজন হয়। বেলগাছ পবিত্র গাছ হিসেবে তারা এটিকে সংরক্ষণ করে থাকে।
নিম গাছ যেমন ওষুধি গাছ হিসেবে পরিচিত তেমন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র গাছ হিসেবে পরিচিত। এর কাঠ দিয়ে বিভিন্ন যজ্ঞের আয়োজন করা হয়। এছাড়া চন্দন গাছ, বিভিন্ন ফুলের গাছ, দুর্বা ঘাসসহ নানাভাবে সনাতন ধর্ম প্রকৃতিকে আগলে রেখেছে। এছাড়া ভারতবর্ষে সনাতন ধর্মালম্বীরা অশ্বত্থ, ডুমুর, বট, পাকুড় ও আমকে পঞ্চবৃক্ষের মধ্যে গণ্য করে থাকে।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে এর মধ্যে অশ্বত্থের স্থান সর্বশীর্ষে। অশ্বত্থ গাছ কাটলে বংশহানি হয়। তবে হোম-যজ্ঞের মতো পবিত্র কাজের জন্য অশ্বত্থ গাছের কাঠ কাটলে কোনো দোষ হয় না, বরং অক্ষয় স্বর্গ লাভ হয়। অশ্বত্থ গাছ পূজা করলে সকল দেবতার পূজা করা হয়।
খ্রিস্টান ধর্মে গাছ ঃ- দু'হাজার বছর আগে বেথেলহ্যাম নগরী। তখন নগরীর প্রত্যেক বাড়িতে নাইট কুইন গাছ ছিল। এক রাতে ঘটল আশ্চর্যজনক ঘটনা। প্রতিটি বাড়ি নাইট কুইন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল। এ ঘটনায় কৌতূহলী নগরবাসী এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে দৌড়াতে লাগল। তারা কেউই বুঝে উঠতে পারল না প্রকৃতি কেন এই অজানা উৎসবে মেতে উঠেছে। পরে অবশ্য সবাই আসল ঘটনা বুঝতে পেরেছিল। সেই রাতে বেথেলহ্যামের এক ঘোড়ার আস্তাবলে জন্ম হয়েছিল এক মহাপুরুষের, তিনি যিশু খ্রিস্ট। বেথেলহ্যামের সব নাইট কুইন সে রাতে মেতে উঠেছিল যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসবে। এ জন্য আজো অনেকের কাছে এ ফুলটি 'বেথেলহ্যাম ফ্লাওয়ার' নামে পরিচিত।আজ ও পৃথিবীর সর্বত্র যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব পালনের মুল উপাদান একটি গাছ খ্রিস্ট মাস ট্রি ।
মানুষেরই কিছু অবিমৃশ্যকারী কাজের ফল জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বের উপর যার প্রভাব মারাত্মক৷ অবশ্য আজ মানুষ ধীরে ধীরে তার কাজের পরিণাম উপলব্ধি করতে পারছে, তাই পরিবেশ সুরক্ষায় সুচেতনার জাগরণও ঘটছে৷ শিশুদের মধ্যেও যে পরিবেশ সংরক্ষণের চেতনা জাগছে৷
কিন্তু মুশকিল হলো, এই শিশুরাই আমাদের মতো বড়দের কাজকর্ম দেখে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে৷ মাটিতে মিশে না যাওয়া ( নন বায়ো ডিগ্রেডেবল) আবর্জনা পরিবেশের ভীষণ ক্ষতি করে৷ একথা আমরা বাচ্চাদেরও শেখাই৷ কিন্তু তারপরই আমাদের বাচ্চারা দেখে, আমরা পলিথিন প্যাকেটে করে বাজার থেকে জিনিসপত্র নিয়ে আসছি, আর সেই পলিথিন যত্রতত্র ফেলে দিচ্ছি৷ এ থেকে শিশুরা শিখছে, ‘এমন অনেক বিষয় আছে, যেগুলি সম্বন্ধে যা শেখানো হয়, তার উল্টোটাই করতে হয়'৷ সমুদ্রসৈকত হোক বা পাহাড়, আমরা পিকনিক করতে যাই, আর বিভিন্ন ক্ষতিকর আবর্জনা আমরা সেখানে ফেলে আসি৷ এমনকি আজ হিমালয়ের উচ্চতম স্থানগুলিও রেহাই পাচ্ছে না৷ একটা ব্যক্তিগত কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার কথা বলি৷ আমার বাচ্চাকে শিখিয়েছি, গাছ কাটতে নেই, লাগাতে হয়৷
বছর তিনেক আগে হঠাৎ দেখলাম আমাদের আসাম রোড (এস টি কে কে রোড ) চওড়া করার জন্য শতাব্দী প্রাচীন ( হয়ত বা কয়েক শতাব্দী প্রাচীন ) বিরাট বিরাট শিরীষ গাছগুলিকে নির্মমভাবে কেটে ফেলা হলো কোনো নতুন গাছ না লাগিয়েই৷ আমার মেয়ে তিতলি আমাকে প্রশ্ন করেছিল, ‘‘বাবা , গাছ কাটা তো খারাপ কাজ, তাহলে এতগুলো গাছ কেটে ফেলল কেন?'' বিশ্বাস করুন, আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি৷ কীভাবে তাকে আমি বলব যে, বড় হলে আমাদের মধ্যে একটা জিনিস জন্ম নেয় যার নাম ‘হিপোক্রেসি'৷ যতক্ষণ না আমরা এই হিপোক্রেসির হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছি, ততক্ষণ আমাদের কথা আর কাজের মধ্যে রয়ে যাবে বিস্তর ফারাক৷ আমরা অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে চলি, ‘কর্তব্য বিষয়ে ভালো ভালো কথার জন্ম হয়েছে আমার বলার জন্য, আর অন্যদের করার জন্য', অন্তত আমার দেশে৷ তাই আমরা স্লোগান দিই, ‘গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান'৷ কখনোই বলি না, ‘এসো গাছ লাগাই, প্রাণ বাঁচাই'৷ আমাদের বাসের পিছনে লেখা থাকে না, ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলি', লেখা থাকে ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলুন'৷ অর্থাৎ আমার কোনো দায় নেই! আজ আমাদের এস টি কে কে রোড ঝাঁ চকচকে,গাড়ী চলে সাবলীল ভাবে ,বান্ডেল থেকে কাটোয়া পর্যন্ত রাস্তা শুয়ে আছে একটা বড়ো অজগরের মতো,গাড়ি চলছে সাঁ সাঁ করে ,.........ঠা ঠা রোদ্দুরে অজগরের পিঠ চক চক করছে ,আমরা হারিয়ে ফেলেছি আমাদের সেই ছায়া - সুনিবিড় পথ। খামারগাছী পেরোলেই চোখে পড়ে রাস্তার ধারে পরে আছে শিরীষ ,বাবলা,জারুল,কৃষ্ণচূড়াদের টুকরো টুকরো লাশ।
তবুও আশার কথা, সর্বত্রই কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ থাকেন, কথা নয়, কাজই যাঁদের জীবনাদর্শ৷ তাঁদের কাজের ফলেই সভ্যতা কালো থেকে আলোর দিকে, মন্দ থেকে ভালোর দিকে এগিয়ে চলে৷ তাঁদের কথা মনে রেখেই আমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততির জন্য আগামীদিনে একটু অন্যরকম পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে সাহস পাই৷
আমি গর্বিত আমার পরিচয়ে যে আমি একজন বাঙালি , আমার মাতৃভাষা পৃথিবীর মধুরতম ভাষা বাংলা । রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, এর মত প্রকৃতি-প্রেমিক কবি আমার ভাষার কবি ।
"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে ব'সে আছে
ভোরের দোয়েল পাখি- চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশ্বত্থের ক'রে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ
দেখেছিলো; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে-
কৃষ্ণা দ্বাদশীর জ্যোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায়-
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিলো- একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়
আমার জ্ঞান খুব কম তবে অন্তত এতটুকু জানি বাংলা ধর্ম মানে হচ্ছে ধারন করা। সেই ক্ষেত্রে আস্তিক মানে হচ্ছে হ্যাঁ-ঈশ্বরে ধর্মে বিশ্বাসী তেমনি নাস্তিকেরা না-ঈশ্বর ধর্মে বিশ্বাসী। এই ক্ষেত্রে দুই দলই দুই বিপরীত ধর্মী বিশ্বাসকে ধারন করে। সেই অর্থে কেউই ধর্মের বাইরে নয়।
(তাহলে এই দেশে পালিত একমাত্র Valentines Day ছাড়া অন্য কোন উৎসবই সার্বজনীন নয়।) সব শেষে একটা লাইন দিয়ে শেষ করছি- ‘শুন হে মানুষ ভাই সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।’
নিজস্ব একটি গাছের খোঁজে শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গেছে-
শত জনমের আকাঙ্ক্ষা ছিলো আমার একটি স্বতন্ত্র গাছ থাকবে
যে গাছে অবলা ইচ্ছেগুলো সগৌরবে প্রতিফলিত হবে বারেবারে
নিশিদিন এক করে গাছের সাম্রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছি, এখনো ঘুরে বেড়াই
অথচ একান্ত নিজের কোনো গাছ আজ অবধি পেলাম না ।
সারি সারি গাছ সমুন্নত বুকে শির উঁচু করে চারিধারে ঘুরে বেড়ায়
আমার স্বপ্নে দেখা ফলবতী গাছ আসবাব হয়ে অন্য কারো শোবার
ঘরের শোভা বাড়াচ্ছে অথবা অন্যের চুলোর লাকড়ি হয়ে জ্বলছে-
খুব বেশি চাওয়ার ছিলো না আমার -
শুধু একটা একান্ত আপন স্বতন্ত্র গাছই চেয়েছি মাত্র।
আজো নির্ঘুম রাতে অদৃশ্য হাতে ঝাড়ু দেয়া পরিচ্ছন্ন আকাশের
নিচে বসে ভাবনার পৃথিবীতে গাছের অবয়ব আঁকি -
ঘুঁটঘুঁটে অমাবস্যায় গাছেদের খুব কাছে যেতে ইচ্ছে জাগে
তবু অজান্তেই সুখের মোড়কে পুষে রাখি দুঃখের দহন-জ্বালা।
একান্ত নিজের একটি গাছের স্বপ্ন আমি দেখতেই পারি-
এতে কারো ক্ষতি-টতি হবে না নিশ্চয়!
ইসলাম ধর্মে গাছ ঃ- মানুষের জীবন-সংশ্লিষ্ট প্রকৃতিগত ধর্ম ইসলামও বৃক্ষরোপণ এবং পরিচর্যার প্রতি জোরালো তাগিদ করেছে। বৃক্ষরোপণকে ইসলামে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যে গাছ লাগাবে এবং তা পরিচর্যা করবে, সে অনবরত পুণ্য পেতে থাকবে। মহানবী (সা.) বৃক্ষের শোভামণ্ডিত সুশোভিত পরিবেশ ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে একজন বৃক্ষপ্রেমী। জীবনে বহুসংখ্যক গাছ তিনি নিজ হাতে রোপণ করেছেন। অসংখ্য হাদিসে তিনি বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করেছেন তাঁর অনুসারীদের। বৃক্ষরোপণকারী মরে যাওয়ার পরও এর সওয়াব অনবরত পেতে থাকবে। সওয়াবের উদ্দেশে কোনো গাছের চারা রোপণ করলে যতদিন গাছটি থেকে উপকৃত হওয়া যাবে ততদিনই এর সওয়াব রোপণকারী পাবেন। ইসলামের আলোকে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করা ইবাদতেরও একটি অংশ। নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ করা রাসুলের সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তুমি যদি নিশ্চিতভাবে জান কিয়ামত এসে গেছে, তবুও তোমার হাতে কোনো গাছের চারা থাকলে তা রোপণ করবে।’ এ হাদিস থেকেই বোঝা যায় ইসলাম বৃক্ষরোপণকে কত গুরুত্ব দিয়েছে। বৃক্ষরোপণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তা পরিচর্যা করাও অপরিহার্য। এ জন্য ইসলামে বৃক্ষের পরিচর্যার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গাছ লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ নয়; বরং এর যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে পুষ্প-পল্লবে বিকশিত হওয়ার সব ব্যবস্থা করতে হবে। আপনার যতেœ যদি একটি বৃক্ষ ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়, পথিক এর ছায়ায় বসে, পশু-পাখি বিশ্রামের সুযোগ পায়, ফুল-ফল খেয়ে উপকৃত হয় এরা সবাই আপনার জন্য দোয়া করবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইসলাম কাউকে গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দেয় না। এক কথায় গাছের ক্ষতি হতে পারে, এমন কোনো কর্মকাণ্ডই ইসলাম সমর্থন করে না। গাছপালা আল্লাহর অন্যতম সেরা দান। বৃক্ষরোপণ ও তা পরিচর্যা করা মুসলমানদের ধর্মীয় দায়িত্ব। এ জন্য সবার উচিত ব্যাপক বনায়নের মাধ্যমে সবুজাভ প্রকৃতিকে মানুষের বাসযোগ্য করে তোলা।
হিন্দুধর্মে গাছ ঃ-সনাতন ধর্মে গাছ উপাস্য। বর্তমানের মতো প্রাচীন বাংলায়ও নারীদের মধ্যে ভোরে উঠে তুলসি, শেওড়া ও বটগাছ পূজার প্রচলন ছিল। গ্রাম-দেবতার সাথে গাছ পূজার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। একেকটি গ্রামে যে গাছের নিচে আঞ্চলিক দেবতার পূজা হতো কোনো কোনো সময় সেই গাছটিরও পূজা করা হতো। ভারতবর্ষের এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানে বট-পাকুড় কিংবা প্রাচীন গাছকে ভক্তিভরে পূজা করা হয়। সিঁদুর পড়ায় নানা ধরনের মানত করে। সূতা বাঁধে মনের ইচ্ছা পূরণ হওয়ার জন্য।
প্রাচীনকালে পুকুর খনন, পানীয় জলের জন্য কূপ খনন ও গাছ রোপণ ধর্মীয় কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ধারণা করা হতো গাছ হচ্ছে ঈশ্বরের আশ্রয়স্থল। বট ও পাকুড় গাছ লাগালে পুণ্য হয়। পিপল গাছকে প্রজাপতির আশ্রয়স্থল বলা হতো। আমগাছকে পঞ্চপাল্লাভা বলা হতো। আগনীপুরাণে একটি বৃক্ষকে ১০ জন পুত্রের সমান বলে অভিহিত করা হয়েছে।
সনাতন ধর্মবলম্বীদের তুলসি, কদম, নিম, বেল, চন্দন, তমালসহ নানা গাছের ওপর দুর্বলতা রয়েছে। এ সব গাছকে তারা শ্রদ্ধা করেন। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন মন্দিরগুলোর পাশে এসব গাছের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে তুলসিকে সীতাস্বরূপা, স্কন্দপুরাণে লক্ষ্মীস্বরূপা, চরকসংহিতায় বিষ্ণুর মতো ভূমি, পরিবেশ ও আমাদের রক্ষাকারী বলে বিষ্ণুপ্রিয়া, ঋগ্বেদে কল্যাণী বলা হয়েছে। স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু তুলসিদেবীকে পবিত্রা বৃন্দা বলে আখ্যায়িত করে এর সেবা করতে বলেছেন। তাই হাজার হাজার বছর ধরে সাধারণত কৃষ্ণ ও রাধা তুলসি এই দুই ধরনের তুলসি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়ে আসছে। সংরক্ষিত হয়ে আসছে।
“না পুড়াইও রাধা-অঙ্গ,
না ভাসাইও জলে,
মরিলে তুলিয়া রেখো
তমালেরই ডালে।”
রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের সুখ-দুঃখের সাথী ছিল তমাল গাছ। রাধা এবং কৃষ্ণ অনেক অনুযোগ, অভিযোগ, ভালোবাসার কথা এই তমাল গাছের কাছে বলেছেন। এই কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তমাল গাছকে পবিত্র গাছ হিসেবে মনে করে থাকে।
বরষার কদম গাছও শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম সঙ্গী ছিল। বৃন্দাবনে কদম গাছের নিচে বসে কৃষ্ণ বাঁশিতে রাধাকে ডাকতেন। তাই এ গাছের কদর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে কম নয়।
শাস্ত্রীয় মতে ‘বিল্ব’ বা বেলগাছ লাগালে সেই বাড়িতে পুরুষানুক্রমে ধনসম্পদে পরিপূর্ণ থাকে। এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বেলপাতা ছাড়া কোনো পূজা-অর্চনা হয় না। হোম-যজ্ঞ করার সময়ও বেলকাঠের প্রয়োজন হয়। বেলগাছ পবিত্র গাছ হিসেবে তারা এটিকে সংরক্ষণ করে থাকে।
নিম গাছ যেমন ওষুধি গাছ হিসেবে পরিচিত তেমন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র গাছ হিসেবে পরিচিত। এর কাঠ দিয়ে বিভিন্ন যজ্ঞের আয়োজন করা হয়। এছাড়া চন্দন গাছ, বিভিন্ন ফুলের গাছ, দুর্বা ঘাসসহ নানাভাবে সনাতন ধর্ম প্রকৃতিকে আগলে রেখেছে। এছাড়া ভারতবর্ষে সনাতন ধর্মালম্বীরা অশ্বত্থ, ডুমুর, বট, পাকুড় ও আমকে পঞ্চবৃক্ষের মধ্যে গণ্য করে থাকে।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে এর মধ্যে অশ্বত্থের স্থান সর্বশীর্ষে। অশ্বত্থ গাছ কাটলে বংশহানি হয়। তবে হোম-যজ্ঞের মতো পবিত্র কাজের জন্য অশ্বত্থ গাছের কাঠ কাটলে কোনো দোষ হয় না, বরং অক্ষয় স্বর্গ লাভ হয়। অশ্বত্থ গাছ পূজা করলে সকল দেবতার পূজা করা হয়।
খ্রিস্টান ধর্মে গাছ ঃ- দু'হাজার বছর আগে বেথেলহ্যাম নগরী। তখন নগরীর প্রত্যেক বাড়িতে নাইট কুইন গাছ ছিল। এক রাতে ঘটল আশ্চর্যজনক ঘটনা। প্রতিটি বাড়ি নাইট কুইন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল। এ ঘটনায় কৌতূহলী নগরবাসী এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে দৌড়াতে লাগল। তারা কেউই বুঝে উঠতে পারল না প্রকৃতি কেন এই অজানা উৎসবে মেতে উঠেছে। পরে অবশ্য সবাই আসল ঘটনা বুঝতে পেরেছিল। সেই রাতে বেথেলহ্যামের এক ঘোড়ার আস্তাবলে জন্ম হয়েছিল এক মহাপুরুষের, তিনি যিশু খ্রিস্ট। বেথেলহ্যামের সব নাইট কুইন সে রাতে মেতে উঠেছিল যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসবে। এ জন্য আজো অনেকের কাছে এ ফুলটি 'বেথেলহ্যাম ফ্লাওয়ার' নামে পরিচিত।আজ ও পৃথিবীর সর্বত্র যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব পালনের মুল উপাদান একটি গাছ খ্রিস্ট মাস ট্রি ।
মানুষেরই কিছু অবিমৃশ্যকারী কাজের ফল জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বের উপর যার প্রভাব মারাত্মক৷ অবশ্য আজ মানুষ ধীরে ধীরে তার কাজের পরিণাম উপলব্ধি করতে পারছে, তাই পরিবেশ সুরক্ষায় সুচেতনার জাগরণও ঘটছে৷ শিশুদের মধ্যেও যে পরিবেশ সংরক্ষণের চেতনা জাগছে৷
কিন্তু মুশকিল হলো, এই শিশুরাই আমাদের মতো বড়দের কাজকর্ম দেখে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে৷ মাটিতে মিশে না যাওয়া ( নন বায়ো ডিগ্রেডেবল) আবর্জনা পরিবেশের ভীষণ ক্ষতি করে৷ একথা আমরা বাচ্চাদেরও শেখাই৷ কিন্তু তারপরই আমাদের বাচ্চারা দেখে, আমরা পলিথিন প্যাকেটে করে বাজার থেকে জিনিসপত্র নিয়ে আসছি, আর সেই পলিথিন যত্রতত্র ফেলে দিচ্ছি৷ এ থেকে শিশুরা শিখছে, ‘এমন অনেক বিষয় আছে, যেগুলি সম্বন্ধে যা শেখানো হয়, তার উল্টোটাই করতে হয়'৷ সমুদ্রসৈকত হোক বা পাহাড়, আমরা পিকনিক করতে যাই, আর বিভিন্ন ক্ষতিকর আবর্জনা আমরা সেখানে ফেলে আসি৷ এমনকি আজ হিমালয়ের উচ্চতম স্থানগুলিও রেহাই পাচ্ছে না৷ একটা ব্যক্তিগত কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার কথা বলি৷ আমার বাচ্চাকে শিখিয়েছি, গাছ কাটতে নেই, লাগাতে হয়৷
বছর তিনেক আগে হঠাৎ দেখলাম আমাদের আসাম রোড (এস টি কে কে রোড ) চওড়া করার জন্য শতাব্দী প্রাচীন ( হয়ত বা কয়েক শতাব্দী প্রাচীন ) বিরাট বিরাট শিরীষ গাছগুলিকে নির্মমভাবে কেটে ফেলা হলো কোনো নতুন গাছ না লাগিয়েই৷ আমার মেয়ে তিতলি আমাকে প্রশ্ন করেছিল, ‘‘বাবা , গাছ কাটা তো খারাপ কাজ, তাহলে এতগুলো গাছ কেটে ফেলল কেন?'' বিশ্বাস করুন, আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি৷ কীভাবে তাকে আমি বলব যে, বড় হলে আমাদের মধ্যে একটা জিনিস জন্ম নেয় যার নাম ‘হিপোক্রেসি'৷ যতক্ষণ না আমরা এই হিপোক্রেসির হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছি, ততক্ষণ আমাদের কথা আর কাজের মধ্যে রয়ে যাবে বিস্তর ফারাক৷ আমরা অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে চলি, ‘কর্তব্য বিষয়ে ভালো ভালো কথার জন্ম হয়েছে আমার বলার জন্য, আর অন্যদের করার জন্য', অন্তত আমার দেশে৷ তাই আমরা স্লোগান দিই, ‘গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান'৷ কখনোই বলি না, ‘এসো গাছ লাগাই, প্রাণ বাঁচাই'৷ আমাদের বাসের পিছনে লেখা থাকে না, ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলি', লেখা থাকে ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলুন'৷ অর্থাৎ আমার কোনো দায় নেই! আজ আমাদের এস টি কে কে রোড ঝাঁ চকচকে,গাড়ী চলে সাবলীল ভাবে ,বান্ডেল থেকে কাটোয়া পর্যন্ত রাস্তা শুয়ে আছে একটা বড়ো অজগরের মতো,গাড়ি চলছে সাঁ সাঁ করে ,.........ঠা ঠা রোদ্দুরে অজগরের পিঠ চক চক করছে ,আমরা হারিয়ে ফেলেছি আমাদের সেই ছায়া - সুনিবিড় পথ। খামারগাছী পেরোলেই চোখে পড়ে রাস্তার ধারে পরে আছে শিরীষ ,বাবলা,জারুল,কৃষ্ণচূড়াদের টুকরো টুকরো লাশ।
তবুও আশার কথা, সর্বত্রই কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ থাকেন, কথা নয়, কাজই যাঁদের জীবনাদর্শ৷ তাঁদের কাজের ফলেই সভ্যতা কালো থেকে আলোর দিকে, মন্দ থেকে ভালোর দিকে এগিয়ে চলে৷ তাঁদের কথা মনে রেখেই আমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততির জন্য আগামীদিনে একটু অন্যরকম পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে সাহস পাই৷
আমি গর্বিত আমার পরিচয়ে যে আমি একজন বাঙালি , আমার মাতৃভাষা পৃথিবীর মধুরতম ভাষা বাংলা । রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, এর মত প্রকৃতি-প্রেমিক কবি আমার ভাষার কবি ।
"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে ব'সে আছে
ভোরের দোয়েল পাখি- চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশ্বত্থের ক'রে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ
দেখেছিলো; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে-
কৃষ্ণা দ্বাদশীর জ্যোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায়-
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিলো- একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার
কেঁদেছিলো পায়।"
ঈদ, পুজা, কিম্বা যীশু এর জন্মদিনের দিন- জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ঈদ মুবারাক,
শারদীয় পুজার শুভেচ্ছা কিম্বা মারী খ্রিস্মাস মানবতারই ফল । আমি মনে করি মানুষের একতাই ধর্ম যার নাম হল মানবধর্ম ।মূলত সব ধর্মই মানবতার কথা বলে ।আমার জ্ঞান খুব কম তবে অন্তত এতটুকু জানি বাংলা ধর্ম মানে হচ্ছে ধারন করা। সেই ক্ষেত্রে আস্তিক মানে হচ্ছে হ্যাঁ-ঈশ্বরে ধর্মে বিশ্বাসী তেমনি নাস্তিকেরা না-ঈশ্বর ধর্মে বিশ্বাসী। এই ক্ষেত্রে দুই দলই দুই বিপরীত ধর্মী বিশ্বাসকে ধারন করে। সেই অর্থে কেউই ধর্মের বাইরে নয়।
(তাহলে এই দেশে পালিত একমাত্র Valentines Day ছাড়া অন্য কোন উৎসবই সার্বজনীন নয়।) সব শেষে একটা লাইন দিয়ে শেষ করছি- ‘শুন হে মানুষ ভাই সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।’
গাছের খোঁজে গাছের কাছে
- সায়াদাত চমননিজস্ব একটি গাছের খোঁজে শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গেছে-
শত জনমের আকাঙ্ক্ষা ছিলো আমার একটি স্বতন্ত্র গাছ থাকবে
যে গাছে অবলা ইচ্ছেগুলো সগৌরবে প্রতিফলিত হবে বারেবারে
নিশিদিন এক করে গাছের সাম্রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছি, এখনো ঘুরে বেড়াই
অথচ একান্ত নিজের কোনো গাছ আজ অবধি পেলাম না ।
সারি সারি গাছ সমুন্নত বুকে শির উঁচু করে চারিধারে ঘুরে বেড়ায়
আমার স্বপ্নে দেখা ফলবতী গাছ আসবাব হয়ে অন্য কারো শোবার
ঘরের শোভা বাড়াচ্ছে অথবা অন্যের চুলোর লাকড়ি হয়ে জ্বলছে-
খুব বেশি চাওয়ার ছিলো না আমার -
শুধু একটা একান্ত আপন স্বতন্ত্র গাছই চেয়েছি মাত্র।
আজো নির্ঘুম রাতে অদৃশ্য হাতে ঝাড়ু দেয়া পরিচ্ছন্ন আকাশের
নিচে বসে ভাবনার পৃথিবীতে গাছের অবয়ব আঁকি -
ঘুঁটঘুঁটে অমাবস্যায় গাছেদের খুব কাছে যেতে ইচ্ছে জাগে
তবু অজান্তেই সুখের মোড়কে পুষে রাখি দুঃখের দহন-জ্বালা।
একান্ত নিজের একটি গাছের স্বপ্ন আমি দেখতেই পারি-
এতে কারো ক্ষতি-টতি হবে না নিশ্চয়!