রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬

গাছগাছালি মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। শুধু মানুষই নয়, গাছপালা ছাড়া কোনো প্রাণীই জীবন ধারণ করতে পারবে না। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বেড়ে পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার পেছনে প্রধানত দায়ী বৃক্ষহীনতা। দিন দিন কমে যাচ্ছে গাছের সংখ্যা। গাছপালার স্বল্পতার কারণে ভূপৃষ্ঠে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ভয়াবহভাবে বেড়ে যাচ্ছে। গাছগাছালির উপকারের কোনো শেষ নেই। একটি গাছ বছরে প্রায় ১৩ কেজি কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে।
ইসলাম ধর্মে গাছ ঃ- মানুষের জীবন-সংশ্লিষ্ট প্রকৃতিগত ধর্ম ইসলামও বৃক্ষরোপণ এবং পরিচর্যার প্রতি জোরালো তাগিদ করেছে। বৃক্ষরোপণকে ইসলামে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যে গাছ লাগাবে এবং তা পরিচর্যা করবে, সে অনবরত পুণ্য পেতে থাকবে। মহানবী (সা.) বৃক্ষের শোভামণ্ডিত সুশোভিত পরিবেশ ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে একজন বৃক্ষপ্রেমী। জীবনে বহুসংখ্যক গাছ তিনি নিজ হাতে রোপণ করেছেন। অসংখ্য হাদিসে তিনি বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করেছেন তাঁর অনুসারীদের। বৃক্ষরোপণকারী মরে যাওয়ার পরও এর সওয়াব অনবরত পেতে থাকবে। সওয়াবের উদ্দেশে কোনো গাছের চারা রোপণ করলে যতদিন গাছটি থেকে উপকৃত হওয়া যাবে ততদিনই এর সওয়াব রোপণকারী পাবেন। ইসলামের আলোকে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করা ইবাদতেরও একটি অংশ। নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ করা রাসুলের সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তুমি যদি নিশ্চিতভাবে জান কিয়ামত এসে গেছে, তবুও তোমার হাতে কোনো গাছের চারা থাকলে তা রোপণ করবে।’ এ হাদিস থেকেই বোঝা যায় ইসলাম বৃক্ষরোপণকে কত গুরুত্ব দিয়েছে। বৃক্ষরোপণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তা পরিচর্যা করাও অপরিহার্য। এ জন্য ইসলামে বৃক্ষের পরিচর্যার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গাছ লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ নয়; বরং এর যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে পুষ্প-পল্লবে বিকশিত হওয়ার সব ব্যবস্থা করতে হবে। আপনার যতেœ যদি একটি বৃক্ষ ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়, পথিক এর ছায়ায় বসে, পশু-পাখি বিশ্রামের সুযোগ পায়, ফুল-ফল খেয়ে উপকৃত হয় এরা সবাই আপনার জন্য দোয়া করবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইসলাম কাউকে গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দেয় না। এক কথায় গাছের ক্ষতি হতে পারে, এমন কোনো কর্মকাণ্ডই ইসলাম সমর্থন করে না। গাছপালা আল্লাহর অন্যতম সেরা দান। বৃক্ষরোপণ ও তা পরিচর্যা করা মুসলমানদের ধর্মীয় দায়িত্ব। এ জন্য সবার উচিত ব্যাপক বনায়নের মাধ্যমে সবুজাভ প্রকৃতিকে মানুষের বাসযোগ্য করে তোলা।
হিন্দুধর্মে গাছ ঃ-সনাতন ধর্মে গাছ উপাস্য। বর্তমানের মতো প্রাচীন বাংলায়ও নারীদের মধ্যে ভোরে উঠে তুলসি, শেওড়া ও বটগাছ পূজার প্রচলন ছিল। গ্রাম-দেবতার সাথে গাছ পূজার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। একেকটি গ্রামে যে গাছের নিচে আঞ্চলিক দেবতার পূজা হতো কোনো কোনো সময় সেই গাছটিরও পূজা করা হতো। ভারতবর্ষের এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানে বট-পাকুড় কিংবা প্রাচীন গাছকে ভক্তিভরে পূজা করা হয়। সিঁদুর পড়ায় নানা ধরনের মানত করে। সূতা বাঁধে মনের ইচ্ছা পূরণ হওয়ার জন্য।
প্রাচীনকালে পুকুর খনন, পানীয় জলের জন্য কূপ খনন ও গাছ রোপণ ধর্মীয় কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ধারণা করা হতো গাছ হচ্ছে ঈশ্বরের আশ্রয়স্থল। বট ও পাকুড় গাছ লাগালে পুণ্য হয়। পিপল গাছকে প্রজাপতির আশ্রয়স্থল বলা হতো। আমগাছকে পঞ্চপাল্লাভা বলা হতো। আগনীপুরাণে একটি বৃক্ষকে ১০ জন পুত্রের সমান বলে অভিহিত করা হয়েছে।
সনাতন ধর্মবলম্বীদের তুলসি, কদম, নিম, বেল, চন্দন, তমালসহ নানা গাছের ওপর দুর্বলতা রয়েছে। এ সব গাছকে তারা শ্রদ্ধা করেন। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন মন্দিরগুলোর পাশে এসব গাছের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে তুলসিকে সীতাস্বরূপা, স্কন্দপুরাণে লক্ষ্মীস্বরূপা, চরকসংহিতায় বিষ্ণুর মতো ভূমি, পরিবেশ ও আমাদের রক্ষাকারী বলে বিষ্ণুপ্রিয়া, ঋগ্বেদে কল্যাণী বলা হয়েছে। স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু তুলসিদেবীকে পবিত্রা বৃন্দা বলে আখ্যায়িত করে এর সেবা করতে বলেছেন। তাই হাজার হাজার বছর ধরে সাধারণত কৃষ্ণ ও রাধা তুলসি এই দুই ধরনের তুলসি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়ে আসছে। সংরক্ষিত হয়ে আসছে।
“না পুড়াইও রাধা-অঙ্গ,
না ভাসাইও জলে,
মরিলে তুলিয়া রেখো
তমালেরই ডালে।”
রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের সুখ-দুঃখের সাথী ছিল তমাল গাছ। রাধা এবং কৃষ্ণ অনেক অনুযোগ, অভিযোগ, ভালোবাসার কথা এই তমাল গাছের কাছে বলেছেন। এই কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তমাল গাছকে পবিত্র গাছ হিসেবে মনে করে থাকে।
বরষার কদম গাছও শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম সঙ্গী ছিল। বৃন্দাবনে কদম গাছের নিচে বসে কৃষ্ণ বাঁশিতে রাধাকে ডাকতেন। তাই এ গাছের কদর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে কম নয়।
শাস্ত্রীয় মতে ‘বিল্ব’ বা বেলগাছ লাগালে সেই বাড়িতে পুরুষানুক্রমে ধনসম্পদে পরিপূর্ণ থাকে। এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বেলপাতা ছাড়া কোনো পূজা-অর্চনা হয় না। হোম-যজ্ঞ করার সময়ও বেলকাঠের প্রয়োজন হয়। বেলগাছ পবিত্র গাছ হিসেবে তারা এটিকে সংরক্ষণ করে থাকে।
নিম গাছ যেমন ওষুধি গাছ হিসেবে পরিচিত তেমন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র গাছ হিসেবে পরিচিত। এর কাঠ দিয়ে বিভিন্ন যজ্ঞের আয়োজন করা হয়। এছাড়া চন্দন গাছ, বিভিন্ন ফুলের গাছ, দুর্বা ঘাসসহ নানাভাবে সনাতন ধর্ম প্রকৃতিকে আগলে রেখেছে। এছাড়া ভারতবর্ষে সনাতন ধর্মালম্বীরা অশ্বত্থ, ডুমুর, বট, পাকুড় ও আমকে পঞ্চবৃক্ষের মধ্যে গণ্য করে থাকে।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে এর মধ্যে অশ্বত্থের স্থান সর্বশীর্ষে। অশ্বত্থ গাছ কাটলে বংশহানি হয়। তবে হোম-যজ্ঞের মতো পবিত্র কাজের জন্য অশ্বত্থ গাছের কাঠ কাটলে কোনো দোষ হয় না, বরং অক্ষয় স্বর্গ লাভ হয়। অশ্বত্থ গাছ পূজা করলে সকল দেবতার পূজা করা হয়।
খ্রিস্টান ধর্মে গাছ ঃ-    দু'হাজার বছর আগে বেথেলহ্যাম নগরী। তখন নগরীর প্রত্যেক বাড়িতে নাইট কুইন গাছ ছিল। এক রাতে ঘটল আশ্চর্যজনক ঘটনা। প্রতিটি বাড়ি নাইট কুইন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল। এ ঘটনায় কৌতূহলী নগরবাসী এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে দৌড়াতে লাগল। তারা কেউই বুঝে উঠতে পারল না প্রকৃতি কেন এই অজানা উৎসবে মেতে উঠেছে। পরে অবশ্য সবাই আসল ঘটনা বুঝতে পেরেছিল। সেই রাতে বেথেলহ্যামের এক ঘোড়ার আস্তাবলে জন্ম হয়েছিল এক মহাপুরুষের, তিনি যিশু খ্রিস্ট। বেথেলহ্যামের সব নাইট কুইন সে রাতে মেতে উঠেছিল যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসবে। এ জন্য আজো অনেকের কাছে এ ফুলটি 'বেথেলহ্যাম ফ্লাওয়ার' নামে পরিচিত।আজ ও পৃথিবীর সর্বত্র যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব পালনের মুল উপাদান একটি গাছ খ্রিস্ট মাস ট্রি ।

মানুষেরই কিছু অবিমৃশ্যকারী কাজের ফল জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বের উপর যার প্রভাব মারাত্মক৷ অবশ্য আজ মানুষ ধীরে ধীরে তার কাজের পরিণাম উপলব্ধি করতে পারছে, তাই পরিবেশ সুরক্ষায় সুচেতনার জাগরণও ঘটছে৷ শিশুদের মধ্যেও যে পরিবেশ সংরক্ষণের চেতনা জাগছে৷
কিন্তু মুশকিল হলো, এই শিশুরাই আমাদের মতো বড়দের কাজকর্ম দেখে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে৷  মাটিতে মিশে না যাওয়া ( নন বায়ো ডিগ্রেডেবল) আবর্জনা পরিবেশের ভীষণ ক্ষতি করে৷ একথা আমরা বাচ্চাদেরও শেখাই৷ কিন্তু তারপরই আমাদের বাচ্চারা দেখে, আমরা পলিথিন প্যাকেটে করে বাজার থেকে জিনিসপত্র নিয়ে আসছি, আর সেই পলিথিন যত্রতত্র ফেলে দিচ্ছি৷ এ থেকে শিশুরা শিখছে, ‘এমন অনেক বিষয় আছে, যেগুলি সম্বন্ধে যা শেখানো হয়, তার উল্টোটাই করতে হয়'৷ সমুদ্রসৈকত হোক বা পাহাড়, আমরা পিকনিক করতে যাই, আর বিভিন্ন ক্ষতিকর আবর্জনা আমরা সেখানে ফেলে আসি৷ এমনকি আজ হিমালয়ের উচ্চতম স্থানগুলিও রেহাই পাচ্ছে না৷ একটা ব্যক্তিগত কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার কথা বলি৷ আমার বাচ্চাকে শিখিয়েছি, গাছ কাটতে নেই, লাগাতে হয়৷
     বছর তিনেক আগে হঠাৎ দেখলাম আমাদের আসাম রোড (এস টি কে কে রোড )  চওড়া করার জন্য শতাব্দী প্রাচীন ( হয়ত বা কয়েক শতাব্দী প্রাচীন ) বিরাট বিরাট শিরীষ গাছগুলিকে নির্মমভাবে কেটে ফেলা হলো কোনো নতুন গাছ না লাগিয়েই৷ আমার মেয়ে তিতলি আমাকে প্রশ্ন করেছিল, ‘‘বাবা , গাছ কাটা তো খারাপ কাজ, তাহলে এতগুলো গাছ কেটে ফেলল কেন?'' বিশ্বাস করুন, আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি৷ কীভাবে তাকে আমি বলব যে, বড় হলে আমাদের মধ্যে একটা জিনিস জন্ম নেয় যার নাম ‘হিপোক্রেসি'৷ যতক্ষণ না আমরা এই হিপোক্রেসির হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছি, ততক্ষণ আমাদের কথা আর কাজের মধ্যে রয়ে যাবে বিস্তর ফারাক৷ আমরা অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে চলি, ‘কর্তব্য বিষয়ে ভালো ভালো কথার জন্ম হয়েছে আমার বলার জন্য, আর অন্যদের করার জন্য', অন্তত আমার দেশে৷ তাই আমরা স্লোগান দিই, ‘গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান'৷ কখনোই বলি না, ‘এসো গাছ লাগাই, প্রাণ বাঁচাই'৷ আমাদের বাসের পিছনে লেখা থাকে না, ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলি', লেখা থাকে ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলুন'৷  অর্থাৎ আমার কোনো দায় নেই! আজ আমাদের এস টি কে কে রোড ঝাঁ চকচকে,গাড়ী চলে সাবলীল ভাবে ,বান্ডেল থেকে কাটোয়া পর্যন্ত রাস্তা শুয়ে আছে একটা বড়ো অজগরের মতো,গাড়ি চলছে সাঁ সাঁ করে ,.........ঠা ঠা রোদ্দুরে অজগরের পিঠ চক চক করছে ,আমরা হারিয়ে ফেলেছি আমাদের সেই ছায়া - সুনিবিড় পথ। খামারগাছী পেরোলেই চোখে পড়ে রাস্তার ধারে পরে আছে শিরীষ ,বাবলা,জারুল,কৃষ্ণচূড়াদের টুকরো টুকরো লাশ।
       তবুও আশার কথা, সর্বত্রই কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ থাকেন, কথা নয়, কাজই যাঁদের জীবনাদর্শ৷ তাঁদের কাজের ফলেই সভ্যতা কালো থেকে আলোর দিকে, মন্দ থেকে ভালোর দিকে এগিয়ে চলে৷ তাঁদের কথা মনে রেখেই আমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততির জন্য আগামীদিনে একটু অন্যরকম পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে সাহস পাই৷
আমি গর্বিত আমার পরিচয়ে যে আমি একজন বাঙালি , আমার মাতৃভাষা পৃথিবীর মধুরতম ভাষা বাংলা । রবীন্দ্রনাথ,  নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, এর মত প্রকৃতি-প্রেমিক কবি আমার ভাষার কবি ।

"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ

খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে ব'সে আছে
ভোরের দোয়েল পাখি- চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশ্বত্থের ক'রে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ

দেখেছিলো; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে-
কৃষ্ণা দ্বাদশীর জ্যোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায়-
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিলো- একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিলো পায়।"
 ঈদ, পুজা, কিম্বা যীশু এর জন্মদিনের দিন- জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ঈদ মুবারাক, শারদীয় পুজার শুভেচ্ছা কিম্বা মারী খ্রিস্মাস  মানবতারই ফল । আমি মনে করি মানুষের একতাই ধর্ম যার নাম হল মানবধর্ম ।মূলত সব ধর্মই মানবতার কথা বলে ।
আমার জ্ঞান খুব কম তবে অন্তত এতটুকু জানি বাংলা ধর্ম মানে হচ্ছে ধারন করা। সেই ক্ষেত্রে আস্তিক মানে হচ্ছে হ্যাঁ-ঈশ্বরে ধর্মে বিশ্বাসী তেমনি নাস্তিকেরা না-ঈশ্বর ধর্মে বিশ্বাসী। এই ক্ষেত্রে দুই দলই দুই বিপরীত ধর্মী বিশ্বাসকে ধারন করে। সেই অর্থে কেউই ধর্মের বাইরে নয়।
(তাহলে এই দেশে পালিত একমাত্র Valentines Day ছাড়া অন্য কোন উৎসবই সার্বজনীন নয়।) সব শেষে একটা লাইন দিয়ে শেষ করছি- ‘শুন হে মানুষ ভাই সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।’

গাছের খোঁজে গাছের কাছে

- সায়াদাত চমন

  নিজস্ব একটি গাছের খোঁজে শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গেছে-
শত জনমের আকাঙ্ক্ষা ছিলো আমার একটি স্বতন্ত্র গাছ থাকবে
যে গাছে অবলা ইচ্ছেগুলো সগৌরবে প্রতিফলিত হবে বারেবারে
নিশিদিন এক করে গাছের সাম্রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছি, এখনো ঘুরে বেড়াই
অথচ একান্ত নিজের কোনো গাছ আজ অবধি পেলাম না ।

সারি সারি গাছ সমুন্নত বুকে শির উঁচু করে চারিধারে ঘুরে বেড়ায়
আমার স্বপ্নে দেখা ফলবতী গাছ আসবাব হয়ে অন্য কারো শোবার
ঘরের শোভা বাড়াচ্ছে অথবা অন্যের চুলোর লাকড়ি হয়ে জ্বলছে-
খুব বেশি চাওয়ার ছিলো না আমার -
শুধু একটা একান্ত আপন স্বতন্ত্র গাছই চেয়েছি মাত্র।

আজো নির্ঘুম রাতে অদৃশ্য হাতে ঝাড়ু দেয়া পরিচ্ছন্ন আকাশের
নিচে বসে ভাবনার পৃথিবীতে গাছের অবয়ব আঁকি -
ঘুঁটঘুঁটে অমাবস্যায় গাছেদের খুব কাছে যেতে ইচ্ছে জাগে
তবু অজান্তেই সুখের মোড়কে পুষে রাখি দুঃখের দহন-জ্বালা।

একান্ত নিজের একটি গাছের স্বপ্ন আমি দেখতেই পারি-
এতে কারো ক্ষতি-টতি হবে না নিশ্চয়!

রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

হায়াসিন্থ

গ্রিক উপকথায় স্নেহের ফুল হায়াসিন্থ , অপত্যস্নেহ চিরকালীন ,এর মৃত্যু নেই ।

হায়াসিন্থাস ছিল গ্রিক উপকথার এক সুদর্শন তরুণ।
আলোর দেবতা অ্যাপোলো;- তিনি তরুণ হায়াসিন্থাস কে ভারি স্নেহ করতেন, ডিসকাস নিয়ে হায়াসিন্থাস-এর সঙ্গে খেলতেন। পশ্চিমা বায়ূ জেইফার;- সে ঈর্ষা করত। সে চাইত হায়াসিন্থাস কেবল তার সঙ্গেই খেলুক।
একদিন।
হায়াসিন্থাস ও অ্যাপোলো ডিসকাস নিয়ে খেলছিল।
জেইফার এসে উপস্থিত হল; ওদের সঙ্গে খেলতে চাইল। কিন্তু, হায়াসিন্থাস ও অ্যাপোলো কেউই তাতে সম্মত হল না। তখন জেইফার ক্রদ্ধ হল ও অদৃশ্য হয়ে গেল; এবং প্রবল ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে অ্যাপোলোর নিক্ষিপ্ত ডিসকাসটির গতিপথ বাতাসে সুকৌশলে ঘুরিয়ে দিল।
এবং তাতে হায়াসিন্থাস মাথায় প্রবল আঘাত পেল। এবং সে মারা গেল ।
হায়াসিন্থাস-এর মৃতদেহের পাশে শিশুর মতন কাঁদতে লাগলেন অ্যাপোলো।
হায়াসিন্থাস এর মাথা থেকে দরদর করে রক্ত বেরুচ্ছিল। শোকগ্রস্থ অ্যাপোলো হায়াসিন্থাস-এর নাম চিরদিনের মতন অমর করে রাখবেন ঠিক করলেন।
হায়াসিন্থাস এর রক্ত দিয়ে একটি ফুলের জন্ম দিলেন আলোর দেবতা।
সেই ফুলের নামই হল হায়াসিন্থ।


সূত্র: ফরহাদ খান রচিত প্রতীত্য পুরাণ।ছবি ঃ গুগল সৌজন্যে

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

আমাদের  বাড়িতে বাগান  সেই বাবার আমল থেকে, ছোটবেলা থেকে ফুল আর পাখিদের মধ্যেই বড় হয়েছি।  আমার মেয়ে তিতলিও তাই, খুব ছোট্ট  থেকে গাছ ফুল আর পাখিদের  সাথে থাকতে থাকতে এরা ছিলো ওর বড়ো প্রিয়।
এর সাথে ছিল ওর পোষ্যপ্রেম ,চিরকালই আমাদের বাড়ি 'ওঙ্কার ধাম 'এর গাছগাছালি পাখিদের নিশ্চিন্ত আশ্রয়, আমাদের বাড়িতে প্রচুর পাখি আসে রোজ,ছোটবেলা থেকে দেখেছি,পাশেই পুকুরের ধারে গম্ভীরমুখে  বসে থাকতো মাছরাঙা ,কি অপূর্ব রূপ,...... মুগ্ধ হওয়ার মতোই ,এছাড়াও আসতো টিয়া,কুবোপাখী ,কোকিল,ফিঙে,দোয়েল,পায়রা,বৌ কথা কও ,বসন্ত বৌরি,শালিক  আরো কত কি।   ছাতারে পাখিগুলো খুব ঝগড়ুটে,এক মুহূর্ত চুপ থাকতে পারে না,সবসময় কাচর মাচর করে যাচ্ছে ,আর চড়ুই পাখির কথা আর কি বলবো,ওদের মতো দুস্টু পাখি কমই দেখেছি। আর আছে টুনটুনি,ভারী চঞ্চল,সবসময় ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে উড়ে বাড়াচ্ছে।.....
স্কুল থেকে ফিরেই তিতলির প্রথম কাজ ছিল বাগানে আর বাড়ির ছাদের বাগানের গাছগুলোর পরিচর্যা ,ওর মায়ের বকুনির মধ্যেই শেষ হতো এই পর্ব।  ভোরে উঠে ওর গাছে কোনো নতুন ফুল বা ফল ধরলে আমাকে ডেকে না দেখানো পর্যন্ত ওর শান্তি হতো না না।

প্রতি বছর ওর জন্মদিন বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে গাছই ছিল ওর সবচেয়ে প্রিয় উপহার।  আগেই বলেছি ছুটি পেলেই আমরা বেরিয়ে পড়তাম,কোনো নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য না নিয়েই,এইভাবেই কত নতুন ফুল আর গাছেদের সাথে পরিচয় হতো আমাদের, তাদের কাউকে কাউকে আপন করে নিয়ে আসতাম আমার বাগানে আবার কারো কারো রূপ দেখেই মোহিত হতাম।এইভাবেই তিতলির বায়নায় আমার বাগানে এসেছে জারুল,পলাশ,ঝুমকোলতা বা প্যাসিফ্লোরারা ,.........
 গত বছর এইভাবেই আমার এক বন্ধুর বাড়িতে আমাদের সাথে দেখা হল রূপসী চন্দ্রপ্রভার ! থোকা থোকা  ফুলে সারা শরীর জুড়ে রূপের জ্বেলে দাঁড়িয়ে ছিল সে।

যথারীতি তিতলীর বায়না ,বাবা এই গাছটা আমার চাই।  নার্সারীতে খোঁজ করেও পেলাম না গাছটা,তিতলীও নাছোড়বান্দা,গাছটা ওর চাই ই চাই ।  তারপর আমার চেনা এক নার্সারীর মালিক বললো, 'আমি জোগাড় করে আপনার বাড়িতে পৌঁছে দেব ' এই কথা শুনেই আমরা বাড়ী ফিরলাম।
তারপর এল সেই অভিশপ্ত দিন,২৫শে মার্চ তিতলীর এক্সিডেন্ট ,.! হসপিটালের এমার্জেন্সি তারপর সুপার স্প্যাসিলিটি ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ৩ দিনের অসম-যুদ্ধে ২৮ শে হার মানলো আমার একমাত্র সোনা মেয়েটা ,..............
ওকে নিয়ে যখন শেষবারের মতো বাড়ি ফিরছি, আমার শহর জুড়ে শোকের ছায়া , আমার বাড়িতে কয়েক হাজার লোকে, তাদের অনেকের হাতেই ফুল,সবাই শেষ বারের মতো দেখতে এসেছে আমার পাগলী মেয়েটাকে। ....
  তখন গোধূলীবেলা, তিতলিকে রেখে বুকফাটা কান্না নিয়ে বাগানের দিকে তাকিয়ে দেখি, এক কোণে একটা প্যাকেট এ রাখা রয়েছে,একটা চন্দ্রপ্রভা গাছ,তাতে থোকা থোকা ফুল ফুটেছে,............... (পরে দারোয়ানের কাছে জেনেছিলাম সে দিন দুপুরে নার্সারীর থেকে দিয়ে গেছে গাছটা ) গাছটা দেখে বুক ফেটে যাচ্ছে,....... ভাবলাম ফেলেই দেব, তারপর কি ভেবে একথোকা ফুল ছিঁড়ে নিয়ে রাখলাম আমার মেয়ের ফুলে ফুলে ঢাকা বুকের ওপর , তিতলির মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো মুখটা কি একটু হাসি হাসি লাগলো,.............. না কি এ আমার মনের ভুল ,...........!!!

এই গ্রূপের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাক্তিগত ছবি বা ঘটনা পোস্ট করা উচিত নয়, কিন্তু আমার প্রথম পোস্ট (প্যাসিফ্লোরা) এর কমেন্ট করে এই গ্রূপের আমার ভাই বোন ও বন্ধুরা যে সমব্যাথিতা ,সহমর্মিতা ও সবুজ মনের পরিচয় দিয়েছেন তাতে আপনাদের একান্ত আপনজন ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছি না ,.......! তাই নিয়মের বাইরে গিয়ে আমার ফুলের কথা আমার ভাই,বোন ও আপনজনের কাছে শেয়ার করলাম, অপরাধ মার্জনা করবেন,এই আশা রাখি।
সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রার্থনা করি।

দাদ-মর্দন \অঙ্গনা

আগেই বলেছি ছুটি পেলেই আমরা বেড়িয়ে পরতাম কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য না নিয়েই , কাজের কথা ভুলে গিয়ে, ফোন অফ করে দিনটা একান্তভাবেই আমার হত । ওই দিনটা হত আমার মনের বাউন্দুলে সত্তার ।
   ২০১৫ সালের অগাস্ট মাস ,এমনই এক দিনে সারাদিন ঘুরে বাড়ি  ফিরছি , গ্রামের পাশ দিয়ে সিঙ্গেল রাস্তা , আনমনে গাড়ি চালাচ্ছি, তিতলি বলল ' বাবা একটু দাঁড়াও, দ্যাখো কি সুন্দর ফুল্ গুলো,...!" তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে , দেখলাম রাস্তার পাশের ঝোপগুলি বাসন্তী রঙে যেন হাসছে,.........।।
   গাড়ি দাড় করিয়ে কাছে গিয়ে দেখি, সূর্যাস্তের সোনালী আভা গায়ে মেখে যেন লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উপেক্ষিতা ফুলগুলি ......।। রাস্তার পাশের ঝোপগুলো হলুদ হয়ে আছে.........! এ যেন এক অকাল-বসন্ত । ওদের কামেরাবন্দি করতে করতে তিতলির বলল, ' বাবা ,এই ফুলগুলোর নাম কি ?' তা তো জানি না ! ওদের ছবি আর একটি নিয়ে হাজির হলাম আমার অনুজপ্রতিম উদ্ভিদ-বিজ্ঞানের অধ্যাপক অরিন্দমের বাড়ি । ওর কাছেই জানলাম এই অনাম্নি সুন্দরীর নাম দাদ-মর্দন , শুধু রূপ নয়, এর গুণ ও আছে,প্রাচীনকালে চর্ম্ম-রোগের চিকিৎসায় এর ব্যবহার হত । বনে জঙ্গলে,রাস্তার পাশে জন্মায় , জুলাই থেকে  নভেম্বর পর্যন্ত চলে ফুলেল-পর্ব তারপর আগাছার ভীরে হারিয়ে যায় এরা ।


     বাড়ি ফেরার পথে দেখলাম তিতলি ঠিক খুশি নয়, আমি বললাম কি হয়েছে মা ? ফুলের নাম তো জানা হল তবু খুশী নয় কেন ? ও বলল ' বাবা এত সুন্দর একটা ফুলের কি বিশ্রী নাম , আমি এই অনাম্নি ফুলটার নাম দেব অঙ্গনা '...।।
  রাস্তা থেকে তুলে আনা অনাম্নি অঙ্গনার ঠাঁই হল বাগানে , মাম চলে জাবার পর অজত্নে অবহেলায় হয়ত অভিমানে মামের অনেক গাছ,পাখিদের মতই ও চলে গেল মামের ছাদবাগান ছেড়ে ......।।
 

সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৬

কেমন আছিস মা,কতদিন তোকে দেখিনি,..... সোনা মা আমার। আমি জানি বাপিকে আর মা কে ছাড়া তোর ও মন খারাপ , আমরাও একটুও ভালো নেই রে মা।  কালীপুজোর পর বৃষ্টি হয়ে দু দিন ধরে বেশ ঠান্ডা পড়েছে, এটা কিন্তু তোর পক্ষে খুব খারাপ , প্রতিবার এই সময় তোর ঠান্ডা লাগে, সাবধানে থাকিস মা,ওখানে কিন্তু বাপী নেই যে সব সামলে নেবে। একদম দুস্টুমি করবে না কিন্তু,ঠাম্মি দাদুর সব কথা শুনে চলবে, ওদের দুজনেরই কিন্তু পা ভাঙা, তোমার সাথে দৌড়োতে পারবে না ,সব কথা শুনে একদম সোনা মেয়ে হয়ে থাকবে।
    জানিস মা,কাল হাতি এসেছিলো, তোর মনে আছে মা একবার হাতি দেখতে দেখতে কতদূর চলে গিয়েছিলি, মা খুঁজে এনেছিল,........ তিতান আর তিতাস কে ডেকে হাতি দেখিয়েছি ,পুচু ঘুমাচ্ছিলো তাই দেখতে পায়নি।  জানিস মা, পুচু অনেক বড় হয়ে গেছে ,অনেক কথা বলতে পারে, গান শুনলেই নাচে, তোর ফটো দেখলেই বলে" তেললি " ........  ছাদের রেলিং এ বসে তুই যে গাছটার কুল পেড়ে খেতিস,সেই কুল গাছটাও অনেক কাছে চলে এসেছে, আজ দেখলাম, ছাদ থেকেই কুল পাড়া যাবে আর রেলিং এ চড়তে হবে না। কিন্তু তুই না থাকলে কে  আর কুল পারবে।
     মা, দুর্গাপুজো,কালীপুজো সব চলে গেল, আমরা কেউ বেরোইনি ,আমার সোনা মা কে ছাড়া কি বেরোনো যায় ? আমার তিতলি মা কাছে নেই তাই আমি আর তোর মা আর  কোথাও বেরোবো না , কোনোদিন না।
  মা তুই রাতে নিশ্চই ঠাম্মির কাছে শুস্, ঠাম্মির সাথেই বকবক করিস তো?চুপিচুপি তোকে বলি, ঠাম্মি অনেক ভালো ভালো গল্প জানে, ছড়া জানে, ছোটবেলায় তুই চুপ করে শুনতিস , ঠাম্মি কে বলবি,অনেক গল্প বলবে।......
মাম,তুই যেদিন চলে গেলি , সেদিন তোর বায়না করা চন্দ্রপভা গাছটা এসেছিলো,ফুলগুলো তোকে দিয়েছিলাম ,মনে আছে? আজ দেখলাম আবার সেই গাছটায় কুড়ি ধরেছে। তোর ভালো লাগছে মাম ? ভেবেছিলাম আর কোনোদিন ফুল গাছ লাগাবো না, সেদিন ভীড়ের চাপে তোর বাগান তছনছ হয়ে গিয়েছিল,আজ দেখলাম,তোর হাসনুহেনায় কচি পাতায় ভরে  উঠেছে, হয়তো কয়েকদিন পরেই ফুল ফুটবে , রঙ্গন,রাজরঙ্গন,ঝুমকোলতা ,মাধবীলতা,সব গাছে ফুল ফুটেছে।
আমি ঠিক করেছি, আবার ফুল ফুটবে তোর বাগানে, ঠিক আগের মতোই। আমি আজ সারাদিন বেরোই নি , শিশিরকাকাকে  ডেকে আজ তোর বাগান রেডি করলাম মা, তুই খুশি তো মা ?
   সামনে শীত আসছে, খুব সাবধানে থাকতে হবে মা, আমি তো নেই ওখানে ,আগের মতো ঠান্ডা লাগিয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ঠাম্মি দাদু খুব মুস্কিলে পরে যাবে।  সোনা মেয়ে হয়ে থাকিস মা, কাতুমা , ঠাম্মি দাদু, সবার কথা শুনবে।  কষ্ট পাস্ না মা, আমি আর তোর মা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওখানে চলে যাবো, তখন সবাই মিলে খুব মজা করবো,আবার আগের মতো ঘুরে বেড়াবো।
ভালো থাকিস মা,তোর প্রিয় চাঁদ,তারা,ফুল,পাখি আর প্রজাপতিদের সাথে।  আমাদের অনেক আদর আর চুমু রইলো তোর জন্য ,.................... 


শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬



দীপাবলির আগের দিন ভূতচতু্র্দশী,এই দিন  বাঙালি গৃহস্থবাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয় ,  সঙ্গে নিয়ম রয়েছে, খেতে হয় ১৪ রকম শাক-ও৷ভূতচতু্র্দশীতে, ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে এদিন দুপুরে ভাতের সঙ্গে খেতে হয় ১৪ রকম শাকভাজা। কথিত আছে, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে এবং অতৃপ্ত আত্মাদের তুষ্ট করতে এই দিনে ১৪ শাক খাওয়া হয় এবং সন্ধ্যায় ১৪ টি প্রদীপ জ্বালানো হয়।
ঘোর অমাবস্যায় অন্ধকার দূর করতেই দীপ জ্বালানোর রেওয়াজ। আর ১৪টি শাক খাওয়ার নিয়মটি এসেছে প্রধানত স্বাস্থ্যরক্ষার্থে। কারণ ঠান্ডার আমেজ এসে যায় এই সময়। মরসুম বদলের সময় প্রধানত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতেই ১৪টি শাক খাওয়া দরকার। অন্তত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাতে বিষয়টি তাই দাঁড়ায়। এই শাকগুলি হল যথাক্রমে— ওল, কেঁউ, বেতো, সর্ষে, , নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা এবং শুষণী।শরীর ভালো রাখতে গ্রিন ভেজিটেবিলস এর বিকল্প যে কিছু হতে পারে না, তা তো সকলেই জানেন৷ বিশেষত আয়ুর্বেদ এবং কবিরাজি শাস্ত্রে এই শাকগুলির গুণ অসীম। পঞ্জিকায় নির্দেশিত এই চোদ্দ শাক, বা আয়ুর্বেদ মতে প্রাচীন বাংলায় চোদ্দো শাকগুলি ছিল পালং শাক, লাল শাক, সুষণি শাক, পাট শাক, ধনে শাক, পুঁই শাক, কুমড়ো শাক, গিমে শাক, মূলো শাক, কলমি শাক, সরষে শাক, নোটে শাক, মেথি শাক, লাউ শাক অথবা হিঞ্চে শাক। বিধিমতো খাওয়া উচিত। তবে তরুণ  প্রজন্মের একটা বড় অংশ এসব নিয়মের ধার ধারে না, তা বলাই বাহুল্য।
ওল :-ভেষজ হিসেবে উৎকৃষ্ট ওল। এটি অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ খাবার। এটি অর্শ্বরোগ সারায় বলে সংস্কৃত ভাষায় ওলকে অর্শ্বঘ্ন বলা হয়। এটি খিদে বাড়ায়, রুচিকারক, পিত্ত ও কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করে ও রক্ত পরিষ্কারক। ওল কৃমি, পেটের পীড়া, পেটের বায়ু ও কফ নাশ করে, পিলের অসুখ ছাড়াও অনেক রোগের মহাষৌধ দিসেবে কাজ করে ওল।


বেতশাকঃ- আমাদের বাসভূমির আশেপাশে জন্মায় বলে এই বেতো শাকের আরেক নাম বাস্তক। এর গাছ হয় ছোট, গাছের পাতা অনেকটা তুলসী পাতার মতো, কিন্তু পাতাগুলোর ধার বেশ ঢেউ খেলানো। বোটানিক্যাল নাম- Chenopodium album Linn. এই গাছ সাধারণত জ্বরনাশক। লাল রংয়ের পাতাওয়ালা এক ধরনের বেতো পাওয়া যায়। চন্দন বেতো নামে আর এক ধরনের বেতো শাক পাওয়া যায়। বেতো শাক বায়ু, পিত্ত ও কফনাশক এবং অগ্নিবল বৃদ্ধিকারক। এটি ক্ষারধর্মী। এর মধ্যে কৃমিনাশক শক্তি রয়েছে।
 পুষ্টিকর শাক হিসেবে সর্ষে শাকও কিন্তু বেশ পরিচিত। এতে আছে ভিটামিন সি, কে, এ, সালফার। এতে থাকা ভিটামিন সিতে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহকে ভাইরাল অসুখ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন এ ভালো রাখে দৃষ্টিশক্তি আর ভিটামিন কে হাড় এবং মস্তিষ্ককে রাখে সচল। সালফার দেহে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। এটি দেহে হার্ট অ্যাটাক, আর্থ্রাইটিস ও ক্রনিক রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনে। এর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

সর্ষে শাকঃ-এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত সর্ষে শাক খায় তাদের বিভিন্ন রকম ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। এটি রক্তে কোলস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে আনে। সেই সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতেও কার্যকর। এটি হজম শক্তি বাড়াতে সরাসরি কাজ করে। এই শাক ত্বক ও চুল ভালো রাখে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। সর্ষে শাক গর্ভবতী মায়েদের সুস্থ শিশু জন্মদানের সম্ভাবনা বাড়ায়।

 কালাকাসুন্দে :-
কালা কাসুন্দেঃ বর্ষজীবী গাছ, এক মানুষ সমান উচুঁ হয়। ঝাড়দার গাছ, বর্ষার প্রারম্ভে বীজ থেকে গাছ জন্মায়। এর পাতা সবুজ, এক একটা লম্বা বোটায় ৫-৬ জোড়া পাতা, চটকালে কটুগন্ধ বের হয়। ফুলের রং লালচে হলদে। ফলগুলি বরবটির মত গুটি হয়, প্রত্যেক গুটিতে ২০-২৫টি বীজ পাওয়া যায়। এই গাছের পাতার শির এবং গাছের উপরের অংশটা একটু বেগুনি রং এর হয়। একে কালা কাসুন্দে  বলে। এই গাছের পাতা, ফুল, মূল অর্থ্যাৎ সমগ্র গাছ ঔষধার্থে ব্যবহার হয়।

 

যেসব রোগে কালা কাসুন্দে ব্যবহার হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-অরুচী, গলাভাঙ্গা, গলা-বুক জ্বালা, পাতলা পায়খানা, হুপিং কাশি,মূর্ছা, ঘুসঘুসে জ্বর, হাঁপানী এবং শরীরের চাকা চাকা ফুলে উঠা এলার্জি।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পাতা সিদ্ধকরে অল্প পরিমাণ খেতে হয় অথবা পাতা এবং ফুলের রস ১-২ চা চামচ পরিমাণ খেতে হয়। আবার অনেক সময় মূলের ছাল বেঁটে খেতে হয়। 

নিমপাতা :-
জেনে নিন নিমপাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা
ভেষজ উদ্ভিদের নামের তালিকায় সবসময় নিমপাতা শীর্ষে থাকে। অনেকে বলে থাকেন সর্বরোগের ঔষধ হল এই নিমপাতা। শতশত বছর ধরে আয়ুর্বেদিক ঐতিহ্যে নিমপাতার হরেক রকমের ব্যবহার হয়ে আসছে। নিমপাতার বিভিন্ন ধরণের কার্যকারিতা নিম্নে আলোচনা করা হল-
১. নিম আমাদের অতি পরিচিত একটি গাছ। এটি আয়ুর্বেদের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। নিমপাতা হতে তৈরিকৃত ঔষধ চুল ও ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হয়।
২. নিমের পাতায় অ্যান্টি-ফুঙ্গাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। যা চুলের খুশকি দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৩. এটি চুলকানি, শুষ্কতা ও মানসিক অস্থিরতা দূর করে। যার ফলে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
৪. নিমপাতা দিয়ে তৈরিকৃত পেস্ট চুল ও মাথার স্ক্যাল্পের জন্য কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
৫. এটি ত্বকের জ্বালা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৬. নিমের ডি-টক্সিফাইং বৈশিষ্ট্যের জন্য ত্বকের রোগ চিকিত্সায় সকল আয়ুর্বেদিক ফর্মুলেশনে এর উল্লেখ করা হয়।
৭. ব্রণ বৃদ্ধি করে যে সকল ব্যাকটেরিয়া নিমপাতা তা দূর করে।
৮. নিমের তেল ও নিমের পাতায় চমৎকার উপাদান রয়েছে যা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। তেল শুষ্ক ত্বক, মানসিক স্থিরতা ও চুলকানি, লালভাব এবং জ্বালা দূর করে।
৯. আলসারের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বিরোধিতা এবং অনাক্রম্যতা উন্নতি করতে সাহায্য করে।
১০. নিমপাতার অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য কোন সংক্রমণ বা পচনশীল অবস্থার ক্ষত আরোগ্য করতে সাহায্য করে।
১১. ব্রণের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে নিম অসাধারণ সাহায্য করে।
১২. এটা কাউর এবং ছোটখাট চামড়া সংক্রমণের মত ত্বকের রোগের জন্য বিশেষ উপকারী।
১৩. এতে গ্যাস্ট্রো প্রতিরক্ষামূলক উপাদান রয়েছে, যা আলসার নিরাময়ে কার্যকর।
১৪. এতে উচ্চ পর্যায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ রয়েছে যা পরিবেশগত ক্ষতি এবং সুপরিণতি থেকে ত্বক রক্ষা করতে সাহায্য করে।
১৫. নিমের তেলে বিভিন্ন ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন ‘ই’ রয়েছে। এটি ত্বক কোষের পুনর্যৌবন এবং স্থিতিস্থাপকতা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
১৬. এটি একটি প্রদীপ্ত চামড়া ও চামড়ার স্বনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
১৭. নিমপাতা ছত্রাকের সংক্রমণ দূর করতে পারে।–সূত্র: টাইম্‌স অফ ইন্ডিয়া।
জয়ন্তী শাক :-জয়ন্তী মাঝারি আকারের বৃক্ষ। হুবহু ধইঞ্চার মত দেখতে ফুল, পাতা, ফল সব কিছুই। এর চারা গাছ দেখে অনেক অভিজ্ঞও ধইঞ্চা বলে ভুল করতে পারেন। উচ্চতা ৮ মিটার পর্যন্ত হয়। কাণ্ডে খুব অল্প ব্যবধানে ঘন ঘন ডাল বের হয়। দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষণজীবী বৃক্ষ এটি। বাঁচে প্রায় তিন চার বছর। থোকা থোকা সনালী ফুলের বাহার খুব মনোমুগ্ধকর। ফুলের আকার এক সেন্টিমিটার প্রায়। পাপড়ির ওপরের ভাগ হলুদ রঙের, নিচের দিক বাদামি রঙের ওপর ছোট ছোট কালো অসংখ্য ছিটেফোঁটা থাকে। কুঁড়ি অবস্থায় শুধু কালো ছিটেফোঁটা বাদামি রংটিই দেখা যায়। ফুল ফোটে শীতের শুরু হতে গরমের আগে পর্যন্ত, তবে বছর জুড়েই একটি দুটি ফুল দেখা যায়। ফল চিকন লম্বাটে, কাঁচা অবস্থায় সবুজ। শুকিয়ে গেলে বাদামি বর্ণ। দুর্গা পূজায় নবপত্রিকা তৈরিতে জয়ন্তী লাগবেই। নবপত্রিকা বাংলার দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। এখানে নবপত্রিকা মানে ৯ টি উদ্ভিদ। এই নয়টি উদ্ভিদের একটি এই জয়ন্তী।
সাঞ্চে \শাঞ্চে:-





  
অবশ্য
তাতে যে খুব অমঙ্গল কিছু ঘটে, তেমনটাও নয়। তবে শরীরের কথা মাথায় রেখে এই শাক খাওয়া যেতেই পারে, কি বলেন?

মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১৬

ফুলের কথা

ফুলের প্রতি কোনোরূপ আকর্ষণ নেই, ধারণা করি পৃথিবীতে এমন রুক্ষ-শুষ্ক মানুষ খুব কমই আছে। বরং নেই বললেই চলে। চার বছরের শিশু থেকে ৮০  বছরের বৃদ্ধ, কমবেশি সবার মধ্যেই ফুলের প্রতি আকর্ষণ আছে। ফুলের সৌন্দর্য আর সৌরভের কাছে পরাস্ত হয়নি, এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরল।
ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। মানুষের সৌন্দর্যপ্রেম সহজাত। সহজাত সৌন্দর্যপ্রেম থেকেই সৌন্দর্যের প্রতীক ফুলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ। এর পাপড়ির বিন্যাস, রঙের বৈচিত্র্য ও গন্ধের মাধুর্য মানুষের মনকে ভরে তোলে স্বর্গীয় আনন্দে। ফুল পবিত্রতার প্রতীক। ফুল নিষ্পাপতার প্রতীক। কোনো মানুষের পবিত্রতা বোঝানোর জন্য আমরা বলি, ‘ফুলের মতো পবিত্র।’ শিশুকে আমরা ভালো মানুষ হতে ও নিষ্পাপ-নিষ্কলঙ্ক হতে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে বলি, ‘ফুলের মতো পবিত্র হও।’ শিশু নিষ্পাপ, পবিত্র। তাই শিশুকে ফুলের সঙ্গে উপমা দেয়া হয়। বলা হয়- পুষ্পশিশু।
ফুল ভালোবাসার প্রতীক। ভালোবাসার মানুষকে ফুল দেয়ার রীতি পৃথিবীতে দীর্ঘকাল থেকে চলে আসছে। বলা হয়ে থাকে, ১৮৪০ সালে ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার বিয়ের সময় প্রিয় মানুষকে ফুল দেয়ার রীতি প্রথম চালু হয়। সে হিসেবে ভালোবাসাবাসিতে ফুলচর্চার বয়স পৌনে ২০০ বছর।
মানব-সংস্কৃতির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে ফুল। বাঙালির জীবনাচারেও ফুলের ব্যবহার বহুবিধ। ভালোবাসার অর্ঘ্য হোক অথবা ধর্মালোচনার সভা - ফুল আছে সর্বত্রই। অবোধ বালিকার বেণীতে, নবদম্পতির ফুলশয্যায়, রাজনৈতিক দলের জনসভায়, করপোরেট অফিসের টেবিলে- ফুল আছে সবখানেই ।

হিন্দু ধর্মে ফূল :-


 হিন্দু সনাতন ধর্মে পূজার্চনায় ফলের ব্যবহার অনিবার্য। প্রায় প্রতিটি দেবতার পূজাবিদি এবং মন্ত্রে পুষ্পের উল্লেখ রয়েছে। রয়েছে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের সুনির্দিষ্ট বিধি। পুষ্প সুন্দর, সুগন্ধযুক্ত। কেবল কি সেই কারণেই তার স্থান দেবতার পায়ে? নাকি আরও কোনও কারণ রয়েছে পুষ্পার্পণের পিছনে?
শাস্ত্র জানাচ্ছে—
• ফুলও ত্রিগুণসম্পন্ন। এদের মধ্যেও সত্ব, তম ও রজ-ভাদ রয়েছে। এই বিভাজন তাদের বর্ণ, গন্ধ এবং উৎসের নিরিখে কৃত।
• সত্ত্বগুণসম্পন্ন ফুল প্রতিদিনের পূজায় ব্যবহার্য। তমগুণ সম্পন্ন পুষ্প বিশেষ পূজার জন্য।
• সত্ত্বগুণস্পন্ন ফুলের মধ্যে রয়েছে, অর্ক, দ্রোণ, জুঁই, শ্বেতপদ্ম ইত্যাদি।
• রজগুণস্পন্ন ফুলের উদাহরণ রক্তপদ্ম, কল্কে ফুল।
• তমগুণসম্পন্ন ফুল চিনে জবা, কেতকী ইত্যাদি।
• মনে করা হয়, প্রতিটি ফুলের বিশেষ বিশেষ শক্তিকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা রয়েছে।
• সেই ক্ষমতা অনুযায়ী তাদের জন্য নির্দিষ্ট দেবতাও রয়েছেন। যেমন, সাদা ধুতুরা শিবের জন্য নির্দিষ্ট।
• ফুলের সঙ্গে বিল্বপত্রের প্রয়োগও শাস্ত্রানুগ। বিল্বপত্র একই রকম ভাবে শক্তিকে আকর্ষণ করে।
• ফুল ও বেলপাতার যোগ সম্ভবত এক প্রাচীন জৈবরসায়ণের সূত্রকে ব্যক্ত করে।
• তুলসি পাতার ব্যবহারও একই জৈবরাসায়নিক ভাবনার ফল।

পবিত্র কোরআনে ফুল:-
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে নানা প্রসঙ্গে ফুলের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা- ‘আমি এদের বিভিন্ন ধরনের লোককে পরীক্ষা করার জন্য পার্থিব জীবনের ফুলস্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তুমি সেসব বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করো না। তোমার পালনকর্তার দেয়া রিজিক উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।’ (সূরা ত্বহা : ১৩১)। এখানে ‘জীবনের ফুল’ (জাহরাতুল-হায়াত) বাক্যাংশে ‘ফুল’ শব্দটি সৌন্দর্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আরেক সূরায় এরশাদ হয়েছে, ‘যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে, তখন সেটি গোলাপ বর্ণে রঞ্জিত চামড়ার মতো হয়ে যাবে।’ (সূরা আর-রাহমান : ৩৭)।


কবিতায় ফুলঃ-

কবিতা লিখেছেন, কিন্তু ফুল নিয়ে কবিতা লিখেননি, ফুল দিয়ে উপমা দেননি, এমনটা বিরল। সব কবিই কমবেশি ফুল নিয়ে কবিতা লিখেছেন, উপমায় ফুলের ব্যবহার করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এ পর্যন্ত ফুল নিয়ে কবিরা কত শত-সহস্র কবিতা লিখেছেন, তার ইয়ত্তা নেই।বস্তুত  বাংলা ভাষায় ফুল নিয়ে যতো  কবিতা লেখা হয়েছে তার কথা লেখার সামর্থ আমার নেই।   বিশ্ব কবি  রবীন্দ্রনাথ,নজরুল,জীবনানন্দ থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক কবিরা পর্যন্ত সব কবি ও লেখকদের লেখায় ফুলের কথা বর্তমান , কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন-
‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা
খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি’
দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার
ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!
বাজারে বিকায় ফল ত-ুল
সে শুধু মিটায় দেহের ক্ষুধা,
হৃদয়-প্রাণের ক্ষুধা নাশে ফুল
দুনিয়ার মাঝে সেই তো সুধা!’
প্রচলিত আছে, কবিতাটি নাকি কোনো এক হাদিসের অনুবাদ। প্রচলিত কথাটি ভুল। এ মর্মে কোনো হাদিস আছে বলে আমাদের জানা নেই।
কবি জসীমউদ্দীন ‘হলুদ বরণী’ কবিতায় লিখেছেন। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত’ কবিতাংশটুকু প্রবাদে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের কবি আল মাহমুদ ফুল নিয়ে অনেক কবিতা লিখেছেন। তার কবিতাগুলো থেকে একটি উদাহরণ,
‘দীঘির কথায় উঠলো হেসে ফুলপাখিরা সব
কাব্য হবে কাব্য হবে জুড়লো কলরব
কী আর করি পকেট থেকে খুলে ছড়ার বই
পাখির কাছে ফুলের কাছে মনের কথা কই।’
ফুল নিয়ে রচিত এ ধরনের হাজারও উদাহরণ দিতে চাইলেও দেয়া সম্ভব।


সঙ্গীতে ফুলের ব্যবহার:-
কবিতার মতো গানেও ফুলের ব্যবহার অধিক। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ , কবি কাজী নজরুল ইসলাম গানে ফুলের ব্যবহার সম্ভবত আর সব গীতিকারের চেয়ে বেশি করেছেন। উপমহাদেশে পাওয়া যায়, এমন প্রায় সব ফুলের কথাই তার গানে কোনো না কোনোভাবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি যেসব ফুলের প্রতি মানুষের কোনোরূপ আগ্রহ নেই, নজরুল সেসব নিয়েও অনবদ্য সঙ্গীত রচনা করেছেন। যথা- ‘দূর দ্বীপবাসিনী’ গানে এলাচির ফুল-
‘… তব কবরী মূলে, নব এলাচীর ফুল
দুলে কুসুম বিলাসিনী।’
অন্য একটি গানে বেলের ফুল-
‘বেল ফুল এনে দাও চাই না বকুল।
চাই না হেনা আনো আমের মুকুল।’
ফুলের নামে নামকরণ
ফুল মানুষ পছন্দ করে। একারণেই হয়তো মানুষ প্রিয় সন্তানের নাম ফুলের নামে রাখে। মেয়েদের নাম নিম্নোক্ত ফুলগুলোর নামে রাখতে খুব দেখা যায়, শিউলি, চামেলি, শেফালি, কামিনী, মালতী, শিরীন, নার্গিস, কনকচাঁপা, অপরাজিতা, যূথী, বকুল, জুঁই, টিউলিপ, হাসনাহেনা, ডালিয়া, মলি্লকা, হেনা, ঝুমকা, জবা, পারুল, মহুয়া, চম্পা, বকুল, কেয়া, টগর, গোলাপ, বকুল, পিয়াল, গোলাপ, শিমুল, পলাশ ইত্যাদি ।

ফুলগুলি যেন কথা :- মজার মজার নামের গাছ

ফুলগুলি যেন কথা,
     পাতাগুলি যেন চারি দিকে তার
               পুঞ্জিত নীরবতা॥    
                       --------- রবীন্দ্রনাথ 

প্রতিটি গাছপালারই সাধারণত একটি ল্যাটিন নাম থাকে, যদিও সেসব গাছ বা ফুলকে ভিন্ন ভিন্ন দেশে আলাদা আলাদা নামে ডাকা হয়৷ কিছু ফুলের ক্ষেত্রে জার্মানদের দেয়া নামগুলো খুব  মজার......।।


১)‘ম্যানারট্রয়’ বা বিশ্বস্ত পুরুষ

এই ছোট ছোট মিষ্টি নীল রঙের ফুল ফোটে শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালে, জুন থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত৷ অর্থাৎ খুবই অল্প সময়ের জন্য ফুলপ্রেমীদের আনন্দ দেয় এই ফুল৷ আর সেই রসবোধ থেকেই হয়ত জার্মানিতে ফুলটির ল্যাটিন নাম ‘লোবেলিয়া’-কে পাল্টে রাখা হয়েছে ‘ম্যানারট্রয়’ বা বিশ্বস্ত পুরুষ৷



২)‘ফ্লাইসিগেস লিশেন’ বা পরিশ্রমী লিশেন

এই ফুলটির উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের দেয়া ল্যাটিন নাম ‘ইমপেশেন্স’ বা অধৈর্য৷ ফুলটি ফোটে মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত৷ শুধু তাই নয়, কোনো রকম বিরতি ছাড়াই এক নাগাড়ে এ সময় নতুন নতুন ফুল ফুটতে থাকে৷ আর সে কারণেই হয়ত জার্মানরা এই ফুলকে ‘ফ্লাইসিগেস লিশেন’ বা পরিশ্রমী লিশেন বলে ডাকে৷

৩)‘রোটার ফিঙারহুট’ বা লাল ফিঙারহ্যাট

বাঁদিকের ফুলগুলো দেখুন, কী সুন্দর! ঠিক যেন লম্বা চিকন টুপির মতো৷ মনে হয় আঙুলে পরা যাবে, তাই না? এই ভাবনা থেকেই হয়ত ‘রোটার ফিঙারহুট’ বা আঙুলের টুপি নাম পেয়েছে ফুল গাছটা৷ তবে এই সুন্দর চেহারার আকর্ষণীয় ফুলগুলো অত্যন্ত বিষাক্ত বলে একে ছোঁয়া বা মুখে দেওয়া কিন্তু একেবারেই নিষিদ্ধ৷এমন বিষাক্ত সুন্দরীকে দূর থেকে দেখাই ভালো।

৪)‘ফেরগিসমাইননিষ্ট’ বা আমায় ভুলে যেও না

এই ফুলের গ্রিক নাম দিয়েছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা৷ নামটি বেশ মজার – ‘মিয়োসোটিস’, যার বাংলা অর্থ ইঁদুরের কান৷ তবে জার্মানিতে এই ফুলটির নাম ‘আমায় ভুলে যেওনা’৷ এই নামকরণের পর থেকেই ফুলগাছটিকে ভালোবাসার সম্পর্কে বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়ে আসছে৷"তবু মনে রেখো ".................


৫)‘স্টিফম্যুটারশেন’ বা সৎ মা

ছবিতে সৎ মা ফুলের পাপড়িগুলো দেখুন৷ নীচের ছোট ফুল বা পাপড়িগুলোকে (সৎ মেয়ে) বড় ফুলগুলো (সৎ মা) কেমন আড়াল করে ঢেকে রেখেছে৷ এ কারণেই হয়ত ‘স্টিফম্যুটারশেন’ বা সৎ মা বা সৎ মামনি নাম রাখা হয়েছে৷নামটা বেশ মজার, তাই না ! এ সব নানা রঙের সুন্দর ফুলগুলোর কিন্তু খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না৷


৬)‘টয়ফেল্সক্রালে’ বা শয়তানের নখ

গাছটির দিকে তাকিয়ে দেখুন, যেন মনে হবে ওটাতে হাত দিলেই ধারালো নখগুলো আপনাকে আচড় দেবে৷ দেখে এরকমটা মনে হলেওবা এমন বীভৎস নামে ডাকা হলেও ইনিও কিন্তু আমাদের উপকারী কবিরাজমশাই , বাতের ব্যথা বা হজমে সাহায্য করার মতো বিস্ময়কর অনেক গুণ রয়েছে এই গাছের৷

 আজ এইটুকুই থাক ,পরে আবার মজার মজার নামের গাছের কথা শোনাবো। 'সবুজে থাকুন,সবুজে বাঁচুন '

মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৬

হৈমন্তী শোভা

শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে
অলস গেঁয়োর মতো এইখানে কার্তিকের ক্ষেতে
মাঠের ঘাসের গন্ধ বুকে তার — চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ,
তাহার আস্বাদ পেয়ে অবসাদে পেকে ওঠে ধান,
দেহের স্বাদের কথা কয় –
বিকালের আলো এসে (হয়তো বা) নষ্ট করে দেবে তার সাধের সময়!
চারি দিকে এখন সকাল –
রোদের নরম রঙ শিশুর গালের মতো লাল!
মাঠের ঘাসের পরে শৈশবের ঘ্রাণ –
পাড়াগাঁর পথে ক্ষান্ত উৎসবের পড়েছে আহ্বান!

চারি দিকে নুয়ে প’ড়ে ফলেছে ফসল,
তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল!
প্রচুর শস্যের গন্ধ থেকে থেকে আসিতেছে ভেসে
পেঁচা আর ইঁদুরের ঘ্রাণে ভরা আমাদের ভাঁড়ারের দেশে!
শরীর এলায়ে আসে এই খানে ফলন্ত ধানের মতো করে
যেই রোদ একবার এসে শুধু চলে যায় তাহার ঠোটের চুমো ধ’রে
আহ্লাদের অবসাদে ভরে আসে আমার শরীর,
চারি দিকে ছায়া — রোদ — ক্ষুদ — কুঁড়া — কার্তিকের ভিড়:
চোখের সকল ক্ষুধা মিটে যায় এই খানে, এখানে হতেছে স্নিগ্ধ কান,
পাড়াগাঁর গায় আজ লেগে আছে রূপাশালি ধান ভানা রূপসীর শরীরের ঘ্রাণ!
আমি সেই সুন্দরীরে দেখে লই — নুয়ে আছে নদীর এপারে
বিয়োবার দেরি না — রূপ ঝরে পড়ে তার –
শীত এসে নষ্ট করে দিয়ে যাবে তারে!

আজও তবুও ফুরায় নি বৎসরের নতুন বয়স,
মাঠে মাঠে ঝ’রে পড়ে কাঁচা রোদ, ভাড়ারের রস!

মাছির গানের মতো অনেক অলস শব্দ হয়
সকালবেলা রৌদ্রে; কুঁড়িমির আজিকে সময়।

গাছের ছায়ার তলে মদ লয়ে কোন্‌ ভাঁড় বেঁধেছিল ছড়া!
তার সব কবিতার শেষ পাতা হবে আজ পড়া;
ভুলে গিয়ে রাজ্য — জয় — সাম্রাজ্যের কথা
অনেক মাটির তলে যেই মদ ঢাকা ছিল তুলে লব তার শীতলতা;
ডেকে লব আইবুড় পাড়াগাঁর মেয়েদের সব –
মাঠের নিস্তেজ রোদের নাচ হবে –
শুরু হবে হেমন্তের নরম উৎসব।

হাতে হাত ধরে ধরে গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে ঘুরে
কার্তিকের মিঠা রোদে আমাদের মুখ যাবে পুড়ে;
ফলন্ত ধানের গন্ধে — রঙে তার — স্বাদে তার ভরে যাবে আমাদের সকলের দেহ;
রাগ কেহ করিবে না — আমাদের দেখে হিংসা করিবে না কেহ।
আমাদের অবসর বেশি নয — ভালোবাসা আহ্লাদের অলস সময়
আমাদের সকলের আগে শেষ হয়
দূরের নদীর মতো সুর তুলে অন্য এক ঘ্রাণ — অবসাদ –
আমাদের ডেকে লয় — তুলে লয় আমাদের ক্লান্ত মাথা — অবসন্ন হাত।

তখন শস্যের গন্ধ ফুরায়ে গিয়েছে ক্ষেতে — রোদ গেছে পড়ে,
এসেছে বিকালবেলা তার শান্ত শাদা পথ ধরে;
তখন গিয়েছে থেমে অই কুঁড়ে গেঁয়োদের মাঠের রগড়
হেমন্ত বিয়ায়ে গেছে শেষ ঝরা মেয়ে তার শাদা মরা শেফালির
বিছানার পর;
মদের ফোঁটার শেষ হয়ে গেছে এ মাঠের মাটির ভিতর!
তখন সবুজ ঘাস হয়ে গেছে শাদা সব, হয়ে গেছে আকাশ ধবল,
চলে গেছে পাড়াগাঁর আইবুড়ো মেয়েদের দল!
         --------------জীবনানন্দ দাশ

আকাশজুড়ে নীল মেঘের ছড়াছড়ি। প্রকৃতিতে মিষ্টি রোদের ঝিলিক। সবুজ পাতায় উপর খেলা করে সকালের সোনারোদ। নরম সকালে দূর্বাঘাসের ডগায় ফুটে ছোট ছোট শিশিরবিন্দু। দিগন্ত প্রসারিত মাঠে হলুদ ধানের জড়াজড়ি।আকাশে বাতাসে হৈমন্তী শোভা ,........... আসছেন ঋতুরাজকন্যা হেমন্ত। কবি জসিমউদ্দীন লিখেছেন-
‘সবুজ হলুদে সোহাগ ঢুলায়ে ধান ক্ষেত,
পথের কিনারে পাতা দোলাইয়া করে সাদা সঙ্কেত।
ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে,
ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়া পাখিগুলি শুয়েছে মাঠের পরে।
কৃষাণ কনের বিয়ে হবে হবে তার হলদি কোটার শাড়ি,
হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কচি রোদ রেখা-নাড়ি।’
ঝিমিয়ে থাকা লাউ গাছটা লকলকিয়ে বাড়তে থাকে। শিমগাছে সাদার ভেতর বেগুনি রঙের ফুল ফোটে। পাকা ধানের গন্ধে মৌ মৌ করে উত্তরের বাতাস। কানা বক মাছ ধরতে আসে নদীর তীরে। মাছরাঙা বসে থাকে পুকুরের গাছের ডালে। কাশফুল শরতের নিজস্ব ফুল হলেও হেমন্তে উঁচু টিলায় সাদা সাদা কাশফুল ফুটতে দেখা যায়। খালে-বিলে, হাওড়-বিলে, পুকুরে শাপলা ফুটে। গ্রাম্য কিশোর-কিশোরীরা দলবেঁধে ফুল তুলতে আসে। শরতে ফোটা শেফালি, স্থলপদ্ম হেমন্তেও রূপের বাহার দেখায়। বাতাসে ফুলের সৌরভ ছড়ায়।
 হেমন্ত কালে মাঠে মাঠে ধান কাটার ধূম৷ চারদিকে নতুন ধানের কেমন আবেশ করা গন্ধ৷ আকাশে ছিন্ন ভিন্ন মেঘের উপস্থিতি৷ ফুলের বনে তখনও শরতের আবেশ৷ এ সময় ফোটে ওঠে হাস্নাহেনা, মধুমঞ্জরি আর কুন্দ৷ হাস্নাহেনার নলাকার সাদাটে ফুল ফোটে সন্ধ্যায়৷ চারদিকে ছড়িয়ে দেয় সুগন্ধি আবেশ৷ সুগন্ধবাহী সাদা ও লাল রঙের মধু মঞ্জুরির ফুল ফোটে ঝুলন্ত থোকায়৷ কুন্দের ডালে দেখা মেলে গন্ধহীন গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা রঙের ফুল৷
hasna
 বাগানে ফোটে  নয়নাভিরাম ছাতিম ফুল। ছাতিমের তীব্র গন্ধবাহী ফুল গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে এর উপস্থিতির জানান দেয়৷ চারদিকে তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে এ সময় ফোটে দেব কাঞ্চনের হালকা বেগুনী বা সাদাটে ফুল৷
  সি্নগ্ধতায় মোড়ানো এই হেমন্ত আসে যেন চুপি চুপি, আমাদের অলক্ষ্যে। কিন্তু হেমন্তের চিরচেনা গন্ধই আমাদের জানিয়ে দেয় তার আগমন বারতা। ছাতিমের প্রলোভনেই কি হেমন্ত আসে? না হেমন্তের হাত ধরে আসে ছাতিম? তবে এ কথা সত্যি, ছাতিমফুল ছাড়া হেমন্ত যেন নিষ্প্রাণ, ছন্দহীন, গন্ধহীন। ভাগ্যিস,  ছাতিম এখনও দুর্লভ হয়ে ওঠেনি।
রাতে পথ চলতে চলতে হঠাৎ হেমন্তের বাতাসে ছাতিমের উদ্দাম গন্ধপ্রবাহ আপনাকে ব্যাকুল করতে পারে। 'শ্যামলী নিসর্গ' গ্রন্থে অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা (বাংলাদেশ ) লিখেছেন, 'ছাতিমই বোধহয় একমাত্র বৃক্ষ যে হেমন্তের অঙ্গনে দাঁড়িয়ে প্রস্ফুটন আর সুগন্ধের পল্গাবনে এই দুরন্ত শীতকে অভ্যর্থনা জানায়। প্রস্ফুটনের এমন অবারিত উচ্ছ্বাস, ফুলের অক্লান্ত নির্ঝর এবং দূরবাহী প্রবল উগ্র গন্ধের ঐশ্বর্য আর কোনো হৈমন্তী তরুরই নেই'।

 বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় 'আরণ্যক' গ্রন্থেও ছাতিমের উল্লেখ করেছেন। 'কিছুদূর উঠতেই কিসের মধুর সুবাসে মনপ্রাণ মাতিয়া উঠিল। গন্ধটা অত্যন্ত পরিচিত ... চারিদিকে চাহিয়া দেখি ধনঝরি পাহাড়ে যে এত ছাতিম গাছ আছে তাহা পূর্বে লক্ষ্য করি নাই। এখন প্রথম হেমন্তে ছাতিম গাছে ফুল ধরিয়াছে, তাহারই সুবাস। ... ছাতিম ফুলের সুবাস আরও ঘন হইয়া উঠিল, ছায়া গাঢ় হইয়া নামিল শৈলসানুর বনস্থলীতে ... ভানুমতী একগুচ্ছ ছাতিম ফুল পাড়িয়া খোপায় গুঁজিল (পৃ. ১৩৯)।'
 ছাতিম ফুল নিয়ে চমৎকার কবিতা লিখেছেন কবি গোলাম মোহাম্মদ।
‘ছাতিম ফুলের গন্ধে ভাসে পথ
উঠোন ভরে ভরলো ঘরের কোণ
জোছনা মেখে হচ্ছে আরো মিহি
সেই সোহাগে উঠলো ভরে মন।
....
গন্ধে কাঁপে ছাতিম ফুলের রাত
হাতের ভেতর মধুমতির হাত।’
গাছের ডালে বসে পাখি গান ধরে।  এসব হেমন্তেরই নিদর্শন। হেমন্ত বাংলার নিজস্ব ঋতু হলেও এটি কখন আসে কখন যায় তা আমরা অনেকেই জানিনা। এটি শরৎ থেকে খুব একটা পৃথক নয়; শীত থেকে আবার খুব একটা দূরেও নয়। হেমন্তের রঙ ধূসর। বর্ষার মতো রুক্ষ নয় তার রূপ। তবে শীতের মতো শান্তও নয়। উদাসীন পথিকের মতো হেমন্তের হাঁটাচলা। আবার হেমন্ত একগুচ্ছ প্রিয় ঝারাপাতার বাহারও বটে। তাইতো হেমন্তের রূপে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু লিখেছেন-
‘আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে
জনশূণ্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে
শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার
রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার।’
অন্যান্য ঋতুর তুলনায় হেমন্তে খুব সামান্যই ফুল ফোটে। অনিন্দ্যসুন্দর হিমঝুরি, দেবকাঞ্চন, রাজ অশোক হেমন্তের প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে।
হেমন্তের সকালে শিশিরভেজা ঘাসের ডগাকে মনে হয় মুক্তোর মালা। বাংলা সাহিত্যের একটা অংশ জুড়ে আছে শিশিরের নরম স্পর্শের বর্ণনা। কখন কোথা থেকে শিশির এসে ঘাসের ডগায় গাছের পাতায় মুক্তোর মালা পরিয়ে দিয়ে যায় তা কেউ জানেনা। আর সূর্যদয়ের সাথে সাথেই প্রকৃতিকে কাঁদিয়ে কোন সুদূরে মিলিয়ে যায় তাও মানুষের দৃষ্টির বাইরে। এ এক অবাক করার বিষয় রহস্যময়ও বটে। হেমন্তের সকালে শিশিরভেজা সকাল, দুপুরের রোদের স্নিগ্ধতা, সন্ধ্যায় বাঁশ ঝাড়ের শিরশির ধ্বনি প্রকৃতিতে ভিন্ন এক মাধুরীর সৃষ্টি করে।
হেমন্তের মেঘমুক্ত আকাশে রাতের জোছনার আলো অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশিই পরিলক্ষিত হয়। এ সময় রাতের পথে, ঘাটে, বনে, বাদাড়ে জোছনার আলো ঠিকরে পড়ে। এ সময় চাঁদের শরীর থেকে মোমের মত গলে পড়ে জোছনার আলো। হেমন্ত আসে ধীর পদক্ষেপে। শীতের পরশ গায়ে মেখে। তাইতো হেমন্তের রাতে শীত শীত অনুভব হয়।
হেমন্ত ঋতুর দু’টি মাস কার্তিক ও অগ্রহায়ণ। ‘কৃত্তিকা’ ও ‘আদ্রা’ তারার নামানুসারে নাম রাখা হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস। নদীমাতৃক  এক সময় বাংলা বছরের গণনা শুরু হতো হেমন্ত মাস দিয়ে। কারণ, ধান কাটার মওসুম এ হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমন-আউশ ধান বেড়ে উঠে শরতে। হেমন্তের প্রথম দিকে পাক ধরে। কার্তিকের শেষ দিকে গ্রামের মাঠে কৃষকেরা দলবেঁধে ধান কাটে।


পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় রে চলে,   আ য় আ য় আয়।
ডালা যে তার ভরেছে আজ পাকা ফসলে,   মরি   হায়   হায়   হায়॥
          হাওয়ার নেশায় উঠল মেতে   দিগ্‌বধূরা ধানের ক্ষেতে--
রোদের সোনা ছড়িয়ে পড়ে মাটির আঁচলে,   মরি   হা য়   হা য়   হায়॥
          মাঠের বাঁশি শুনে শুনে আকাশ খুশি হল।
          ঘরেতে আজ কে রবে গো,   খোলো   খোলো দুয়ার খোলো।
          আলোর হাসি উঠল জেগে   ধানের শিষে শিশির লেগে--
ধরার খুশি ধরে না গো, ওই-যে উথলে,   মরি     হা য়   হা য়   হায়॥


রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬

মাকাল ফল

 


‘ওপরে ভালো ভেতরে কালো’-প্রবাদটার সংক্ষিপ্ত রূপ মাকাল ফল। ছোটবেলায় ঠাকমা -দিদিমার মুখে কতবার একথা শুনেছি।
‘কেন এমন বলা হয়?’ এর জবাবে ঠাকমার কাছে শোনা একটা গল্প বলি :-
'এক গ্রামে এক পরমা সুন্দরী বৌ, তার রূপের ভারী দেমাক ।দেখতে অপূর্ব সুন্দরী কিন্তু তার ব্যবহার খুবই তেতো (খারাপ ), তার বুকের ভিতরটা ছিল বিষে ভরা, এটা বিশেষ কেউ জানতোও না। একদিন সেই সুন্দরী বৌ চুপি চুপি শাশুড়ির খাবারে বিষ মিশিয়ে দিলো ,...... শাশুড়ী না জেনে খেয়েও নিলো সেই খাবার।বিষক্রিয়া শুরু হতেই শাশুড়ির কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল ব্যাপারটা। শাশুড়ি বৌমাকে ডেকে বললো, তুমি এত শ্রীময়ী কিন্তু তোমার বুকের ভিতর কথা কেউ জানে না,আমি অভিশাপ দিচ্ছি তুমি যতই সুন্দরী হও তোমার তিক্ততা আর বিষের কথা আজ থেকে সবাই জানবে  আর ঘৃনায় তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে  নেবে,.........., তারপরে সেখানেই জন্মালো একটি লতা গাছ , আর সেই গাছে যে ফলটি ফললো,সেটি দেখতে আপেলের চেয়ে ও সুন্দর,কিন্তু ভিতরে কালো,তেতো আর বিষাক্ত।  এই ফলটির নাম হলো মাকাল। '



বাংলা নাম: মাকাল
ইংরেজী নাম: Colocynth, Cucumber.
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae
বিভাগ: Angiosperms
শ্রেণী: Eudicots
(unranked): Rosids
বর্গ: Cucurbitales
পরিবার: Cucurbitaceae
গণ: Citrullus
প্রজাতি: C. colocynthis
দ্বিপদী নাম: Citrullus colocynthis (L.) Schrad.
undefined
শুকনো ফল
পরিচিতি: একটি বহুবর্ষজীবী মাকাল ফলের গাছ লতানো আকৃতির উদ্ভিদ। এই গাছ অন্য বড় বৃক্ষকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে। লম্বায় প্রায় ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত হয়।
গাছের পাতা তেখতে হাতের তালুর মত। প্রতিটি পাতায় ৩-৭টি কারে খাঁজ থকে। পাতাগুলো একান্তরভাবে সজ্জিত। প্রতিটি পর্ব থেকে একটি করে পাতা ও আকর্ষি বের হয়। এই আকর্ষির সাহায্যেই মাকাল গাছ অন্য গাছকে আকড়িয়ে ধরে। পাতার কক্ষে ফুল ফোটে। ফূল ছোট সাদা রঙের এবং একলিঙ্গ। ফল দেখতে অনেকটা ডিমের মত কিন্তু আকারে ডিম থেকে বড় হয়। কাঁচা অবস্থায় সবুজ তার পর হলুদ ও পাকলে গাঢ় লাল হয়। ফলে প্রচুর পরিমাণে বীজ থাকে। শাঁস ধূসর বর্ণের এবং স্বাদ খুব তিতা। বর্ষাকালে ফুল ও ফল হয়।

বাংলায়  মাকাল ফল নিয়ে অনেক প্রবাদ প্রচলিত আছে , 'মাকাল ফল' প্রবাদটি কমবেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু ফলটিকে চেনেন তো? অকর্মণ্য মানুষকে 'মাকাল ফল' বলে গালি দিলেও মাকাল ফল কিন্তু অতটা খারাপ নয়! খাওয়া না গেলেও এ ফল একটি উপকারী ভেষজ এবং পরিবেশবান্ধব বিষ। এক সময় মাকাল ফল গ্রামে-গঞ্জে দেখা গেলেও এটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। 

  মাকাল শব্দটি বাংলা প্রবাদে বাজে অর্থে ব্যবহৃত হলেও এর প্রাচিন নাম ছিল মহাকাল যা ভেষজ গুণে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই নামটি বিকৃত হয়ে কালে কালে মাকাল হয়েছে বলে ভারতীয় চিকিৎসকরা মনে করেন।মাকাল ফল এক সময় হাঁপানি, নাক-কানের ঘা এমন কি কুষ্ঠ রোগেও ব্যবহৃত হয়েছে। যুগ যুগ পুরনো মাথা ব্যথার জন্যে তেল দিয়ে মিশ্রিত মাকালের শিকড় খুব উপযোগী। গাছে ধরা অবস্থায় মাকাল ফলের মতো সুন্দর ফল সত্যি খুব কম দেখা যায়, তবে ভেতরটা খুবই কদর্য।

 

মাকাল ফলের ইংরেজি নাম Colocynth, bitter cucumber। এর বৈজ্ঞানিক নাম Citrullus colocynthis। এর আদি নিবাস তুরস্ক। তুরস্ক থেকে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে গাছটি বিস্তার লাভ করে। সারা পৃথিবীতে এর ৪২টি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে আমাদের দেশে দেখতে পাওয়া যায় প্রায় ১২টি প্রজাতি।

 ফলটিকে আরবিতে হানজাল, সংস্কৃতে দেব দালিকা এবং হিন্দিতে ইন্দ্রায়ন বলা হয়। উদ্যানতত্ত্ববিদ উইলিয়াম মিথিউস মাকালকে অন্তঃসারশূন্য ফলে বলে অবিহিত করেছেন।
মাকাল ফলের গাছ একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি জঙ্গল বা বাড়ির বড় বড় গাছকে আশ্রায় করে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। মাকাল গাছ লম্বায় ৩০ থেক ৪০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর পাতায় থাকে অনেকগুলো খাঁজ। মাকাল ফল কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ, কিছুদিন পর হলুদ ও পাকলে লাল বর্ণ ধারণ করে। সাধারণত বর্ষাকালে মাকাল ফলের ফুল ও ফল হয়।


মাকাল ফল ও গাছের বেশ কিছু ভেষজ গুণও আছে। ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়াতে এই গাছের ব্যবহারের উল্লেখ আছে। আধুনিক ওষুধশিল্পে এ ফলের নির্যাস থেকে তৈরি ওষুধ ল্যাক্সেটিভ হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে

।>> পারগেটিভ বা নির্মলকারক হিসেবে: কাঁচা ফলের শুকনো শাঁস শক্তিশালী কোষ্ট পরিস্কারক হসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়ার অফিসিয়াল অনুমোদন প্রাপ্ত। মাকাল খুবই তিতা স্বাদযুক্ত এবং আধুনিক ঔষধ শিল্পে এই ফলের নির্যাস দিয়ে কোষ্ঠ পরিষ্কারক ক্যাপসুল তৈরী করা হয়। শুকনো এবং পাউডার ফর্মে মাত্র ২-৮ দানা কোষ্ঠ পরিষ্কারক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জন্ডিস রোগ নিরাময়ে এই ফলের নির্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দেহের জল নিষ্কাশন করে

কাঁচা ফলের শুকনো শ্বাস শক্তিশালী কোষ্ঠ পরিষ্কারক। মাকাল ফলের নির্যাস দিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ তৈরি করা হয়। এর শেকড় দিয়ে বদহজমের ওষুধ তৈরি করা হয়।

লিভারের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে

জার্মানির এক গবেষণা থেকে জানা যায়, মাকাল ফলের নির্যাস লিপিড পার-অক্সিডেশনে বাধা প্রদান করে, লিভার থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে
দেহে কোনো কারণে জল  জমলে অর্থাত্‍ শোথ রোগে দেহ থেকে জল  দূর করতে মাকাল ফলের নির্যাস খুবই শক্তিশালী ওষুধ হিসেবে কাজ করে।

জরায়ুর সমস্যায়

মাকাল ফল থেকে তৈরি ওষুধ নারীদের জরায়ুর বিভিন্ন সমস্যায় ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে নারীদের ঋতুবদ্ধতা নিরাময়ের ক্ষেত্রে এটি দারুণ কার্যকর।
এছাড়া স্তনের প্রদাহ, প্রস্রাবের সমস্যা, বাতের ব্যথা, কাশি, শিশুদের অ্যাজমা নিরাময়ে মাকাল গাছের ফল-মূল-কাণ্ড বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বীজের তেল সাপের কামড়, পেটের সমস্যা, মৃগীরোগ এবং চুলের বৃদ্ধি ও চুল কালো করতে কার্যকর।

রাসায়নিক উপাদান: ফলে থাকে গ্লাইকোসাইড এবং তিতা উপাদান যেমন- কলোসিন্থ, কলোসিন্থিনিন, ইলাটিরিন, সাইট্রুলুইন, সাইট্রুলুয়েন, সাইট্রুলেন। আরও থাকে সাইট্রুলিক এসিড, ফাইটোস্টেরল, ফ্যাটি এসিডের মিশ্রণ, রেজিন, হেপাটিকোসানল এবং সাইট্রুলোল(JCS, 1965; JPS 1967; JICS, 1955; IJP, 1970; IJC, 1979)। বীজে থাকে ফিক্সড অয়েল, ফাইটোস্টেরোলিন, ফাইটোস্টেরল, হাইড্রোকার্বন এবং স্যাপোনিন। এ ছাড়া গাছের অন্যন্য অংশে থাকে কোলন, এবং দুটি এলকালয়েড, গ্লাইকোসাইড এবং ট্যানিন( Planta Med, 1973 & 1974)। তেলে থাকে সাইট্রুনাল(CA, 1976)মূলে থাকে আলফা-ইলাটেরিন, হেনট্রিয়কনটেক এবং স্যাপোনিন।
ব্যবহার্য অংশ: ফল, বীজ, মূল।


বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়ায়: ইঁদুরের উপর এক গবেষণা থেকে জানা যায়, মাকাল ফলের পেট্রোলিয়াম ইথার নির্যাস থেকে স্টেরয়েড জাতীয় উপাদান আলাদা করে ইঁদুরের দেহে প্রয়োগ করা হয়। এবং পরীক্ষা শেষে দেখা যায় ইঁদুরের প্রোস্টেটের ওজন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমেছে।

স্তন প্রদাহে: এই গাছের মূল বেটে পেস্ট করে স্তনে লাগালে স্তনের প্রদাহ কমে।
এছাড়া গাছের মূল জন্ডিস, পেটে পানি জমা, প্রস্রাবের সমস্যা, বাতব্যথা, কাশি, পেট বড় হয়ে যাওয়া এবং শিশুদের এ্যাজমা নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
বীজের তেল সাপের কামড়, বিছার কামড়, পেটের সমস্যা( আমাশয়, ডায়রিয়া), মৃগীরোগ এবং সাবান উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়।
চুলের বৃদ্ধি ও চুল কালো করে: বীজের তেল চুলের বৃদ্ধি ও চুল কালো করতে কার্যকর।
ফল গুঁড়ো করে নারকেল তেলের সঙ্গে ফুটিয়ে নাক ও কানের ঘায়ে প্রয়োগ করলে আরাম হয়। কথিত আছে_ মাকালের ফল বিষাক্ত। অনেকে বলেন এ ফল ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে কাককে খেতে দিলে কাক মরে যায়। গবাদিপশুর বক্ষপ্রদাহে ও হৃদযন্ত্রের রোগে ফল ব্যবহৃত হয়। মূল সমপরিমাণ ত্রিফলা (আমলকি, বহেরা ও হরীতকী একসঙ্গে ত্রিফলা নামে পরিচিত) ও হলুদ মিশিয়ে যে অরিষ্ট তৈরি হয়, তা মধু মিশিয়ে সেবন করলে গনোরিয়া রোগে উপকার পাওয়া যায়। ফলের রস কিংবা মূলের বাকল তিল তেলের সঙ্গে গরম করে গোসলের সময় তেল হিসেবে ব্যবহার করলে বহুক্ষণ স্থায়ী মাথাধরা আরাম হয়। কানে পুঁজ হলে একই উপায়ে তৈরি করা তেল কানে দিলে আরাম হয়।
সতর্কতা: তবে গর্ভবতী মহিলাদের এই ঔষধ ব্যবহার না করাই ভাল। বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে এটা বিষ হয়ে যায় এবং ইউরোপে মৃত্যুবরণ করার ঘটনাও ঘটেছে। এক বা আধা চামচ পরিমান (প্রায় ৯০টি বিজ) পাউডার খেলে তার মৃত্যু হবে এটা প্রমানিত। এক মহিলা ১২০ দানা (Grains) পাউডার গ্রহণ করেন গর্ভপাতের জন্য এবং তিনি ৫০ ঘন্টার মধ্যে মারা জান। এক ঘটনা থেকে জানা যায়, ৩ আউন্স পরিমাণ পাউডারের বিষাক্ততা থেকে পুরনুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে মাকাল ফলের বিষাক্ত মাত্রা হল ০.৬ থেকে ১ গ্রাম এবং প্রায় ৮ গ্রাম হলে প্রাণনাশক।
এই গাছের সমস্ত অংশ তিতা এবং এর শুকনো পাউডার যখন নাকে বা চোখে প্রবেশ করে তখন চুলকায়।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া,
জাতীয় ই-তথ্যকোষ

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৬

শহুরে জীবনে সবুজের ছোঁয়া ---- Indoor plants


কিছুদিন আগেই আমার সম্পর্কিত বোন সোমার সাথে কথা হচ্ছিল।  কথাপ্রসঙ্গে ও বলছিলো ,ওর ও বললো ওর ও ভীষণ সবুজের শখ, কিন্তু ওর ফ্ল্যাটে জায়গার বড়ো অভাব।  আমার মনে হলো এ সমস্যা শুধু আমার বোন সোমার নয় , আজকের এই নাগরিক সভ্যতায় এ সমস্যা শহরে বাস করা প্রতিটি প্রতিটি মানুষের।
মানুষ স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতিপ্রেমী। সবুজের প্রতি সবার আলাদা একটা আকর্ষণ রয়েছে। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বনানী দেখে বিমুগ্ধ হন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সবুজের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার সহজ স্বীকারোক্তি প্রতিটি প্রকৃতিপ্রেমীর মাঝেই দেখা যায়। যদিও ইট কংক্রিটের প্রাচীরে ঘেরা এ কৃত্রিম শহরে সবুজের দেখা পাওয়া দুষ্কর। ফলে প্রকৃতি প্রেমীর মনের অনুভূতিগুলোও যেন গুমরে কাঁদে এ চার দেয়ালের মাঝেই। ইট-কংক্রিটের ফাঁক গলিয়ে একটু সবুজ উঁকি দিলে, তা-ই পাওয়ার অনাবিল আনন্দে ভরে ওঠে মন। এ পাওয়ার আনন্দকে উপভোগ করতেই আজকাল অনেক মানুষই  কৃত্রিমতার মাঝে প্রাণের স্পন্দন সৃষ্টি করছেন নিজ আঙ্গিনা বা ঘরের কোণটিকে সাজিয়ে।
শুধু সৌন্দর্য নয়, আজকের দূষিত পরিবেশে আপনার ঘরকে দূষণমুক্ত রাখতে কিছু কিছু গাছের ভূমিকা অপরিসীম।  এই সবুজের সমাবেশে কিভাবে আপনার ঘরে ইন্টেরিয়রে প্রকৃতির ছোঁয়া লাগবে তা আলোকপাত করার চেষ্টা করেই এই প্রতিবেদনের অবতারণা।

বেডরুম
নিজের বেডরুম  সবার কাছেই একান্ত  আপন ভুবন হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। নিজের  ছোট্ট এ ভুবনটিকে নিজের মতো করে সাজানোর বাসনা কম-বেশি প্রতিটি মানুষের মধ্যেই থাকে। তবে বেডরুমটিতে  কিভাবে সবুজের ছোঁয়া দেবেন  তা অনেকটাই নির্ভর করবে এটির  আকার কেমন তার ওপর। এটির  আকৃতি যদি একটু বড় হয় তাহলে বড় মাটির টবে রাখতে পারেন ফাইকাস ইলাস্টিকা (রবার গাছ), পাতা বাহার কিংবা একটু বড় আকৃতির ফান। ঘরের জানালার ধার ঘেঁষে একটু জায়গা থাকলে সেখানে রাখা যেতে পারে ইউফরবিয়া, ক্যালাথিয়া কেলিয়াস ব্রম্নমাই বা সারমেটাসা। ঘরের আকৃতি তুলনামূলক ছোট হলে ছোট্ট মাটির টবে রাখতে পারেন ছোট ফার্ন গাছ কিংবা পাথরকুচি । ভিন্নতা আনতে বড় পাতার বাহারি গাছ যেমনু কার্ডিলাইনে টার্মিনালিস, কেলিয়াস ব্রম্নমাই, ফরকেরিয়ার মতো গাছের সমারোহ ঘটাতে পারেন আপনার ছোট্ট ঘরটিতে । কাঁচের জারে বা বোতলে রাখতে পারেন মানি প্লান্ট , বাহারি ক্রোটন কিংবা ফাইকাস জাতীয় গাছ। বাড়িতে বাগান থাকলে বেডরুমের  ফুলদানিটিকে সাজাতে পারেন নিজ বাগানের ফুলে যা আমোদিত করে রাখবে আপনাকে এবং আপনার চারপাশকে।


ড্রইংরুম
একটি সাদামাটা ড্রইংরুমের  আর্টিস্টিক ভাব ফুটে উঠতে পারে মাটির পটারি ও সবুজের  সম্মিলনে। আপনার ড্রইংরুমের  কোণ ঘেঁষে বিভিন্ন আকৃতির মাটির পটারিতে শোভা পেতে পারে অ্যানুথরিয়াম, কার্ডিলাইনে পেপেরোমিয়া, ফাইকাস, বিগোনিয়া রেঙ্ বা সাইপেয়াস। ড্রইংরুমের  জানালায় ঝুলন্ত টবে  রাখতে পারেন অ্যাডিয়ান্টাম, অ্যাসপারাগাস, জেব্রিনা, ট্রাডেসকানসিয়া, সিন্দাপাস নেফ্রোলেপিসের মতো বিশেষ প্রজাতির গাছ। জায়গার অপ্রতুলতা থাকলে দেয়ালের সঙ্গে কার্ভ করে লাগিয়ে নিতে পারেন রড আয়রনের সেলফ। সেলফের ওপর রাখতে পারেন বনসাই, ব্যাম্বো ট্রি কিংবা ছোট্ট ফণিমনসার গাছ।

বারান্দা
বাড়ির সামনে বড় আঙ্গিনা থাকবে, সে আঙ্গিনা ভরে থাকবে শুধুমাত্র ফুলের গাছে। শহুরে জীবনে এ ধরনের চিন্তা যদিও অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে এ অলীক কল্পনাতেও কিছুটা বাস্তবতার  ছোঁয়া লাগতে পারে বারান্দাটা কাজে লাগাতে পারলে। ঘরের সামনের ছোট্ট বারন্দাটিতে রাখতে পারেন গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা , ডালিয়া ইত্যাদি ফুল। ফুলের পাশাপাশি আপনার সংগ্রহে থাকতে পারে পাতাবাহার, মানিপ্লান্ট , পাথরকুঁচি, আলো, ক্যালাডিয়াম, কোডিয়াম ভ্যারিগেটাম, বাহারি ক্রোটন, ইরান্থেমাম, রিয়ো বিগেনিয়া, অ্যাডিয়েন্টাম প্রভৃতি গাছ।
বাগান : আপনার বাড়ির সামনে যদি খালি জায়গা থাকে সেখানে গড়ে তুলতে পারেন চমৎকার ছোট্ট একটি বাগান। সে বাগানে লাগাতে পারেন ফাইকাস গণ ও অ্যাসপারাগাসের বেশ কিছু প্রজাতি যেমন ইলাস্টিকা, ট্রাঙ্গুলারিস, ড্রাসিনা, মহাত্মা ড্রসিনা গ্রীন, অ্যালপাইন, বেঞ্জামিন, লাইরাটা, ফ্যাতসিয়া, জাপনিকা, অ্যারোলিয়া ব্রড লিফ, গ্রেভেলিয়া রোবাস্টার ধরনের গাছ-গাছালি। এগুলোর মধ্যে এমন কিছু গাছ আছে যা বড় টবে রাখা যায়।

উইন্ডো গার্ডেন
অনেক বাড়িতে বাগান না থাকলেও জানালার সামনে বেশ খানিকটা জায়গা খালি থাকে। ঐ জায়গাটিকে গ্রিল দিয়ে ঘিরে তৈরি করতে পারেন উইন্ডো গার্ডেন। এই উইন্ডো গার্ডেনে থাকতে পারে অ্যানথুরিয়াম, কার্ডিলাইনে, পেপে রোমিয়া, ফাইকাস, বিগোনিয়া রেঙ্, সাইপেরাস প্রভৃতি গাছ।

সিঁড়িঘর
সিঁড়ি ঘরে আপনার দরজাটির কোণ ঘেঁষে ভিন্ন আকৃতির পটারি রাখতে পারেন। আর এসব পটারিতে রাখতে পারেন ফণিমনসা, পাতাবাহার, পাথরকুঁচি বা মানিপস্ন্যান্ট। দরজার দু'পাশের দেয়ালে মাটির পাত্র ঝুলিয়ে তাতে লাগাতে পারেন বাহারি রঙের গাছ-গাছালি। রড আয়রনের ছোট্ট তাকও বসাতে পারেন সিঁড়ি ঘরের এক কোণে বা মাঝখানে। তাকে রাখতে পারেন সুদৃশ্য ও ভিন্ন আকারের পাতাবাহার।
একটু চেষ্টা আর বুদ্ধি খাটিয়ে কংক্রিটের খাঁচার ভেতরেও রচনা করা যায় এক টুকরো সবুজ স্বর্গ। সবুজ মানুষের মনে প্রশান্তি  এনে দেয়। সজীব করে দেয় চারপাশ। বাড়ির ব্যালকনি কিংবা উইন্ডো বঙ্ইে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে  প্রথমে যেটা বিবেচনা করতে হবে সেটা হলো নির্বাচিত জায়গাটিতে কতটা সূর্যের আলো পাওয়া যাচ্ছে। পরিচর্যার জন্য বেশি সময় নেয় এমন গাছ পছন্দ না করাই ভাল। এতে বাড়তি সময় নষ্ট হতে পারে। গাছে কি ফুল ফোটাবেন তা আপনার নিজস্ব  ব্যাপার। তবে তার সঙ্গে ঘরের দেয়ালের রঙ, পর্দার রঙ এমনকি আসবাবপত্রের রঙেরও সামঞ্জস্য রাখতে পারেন। তবে সব মিলিয়ে ঘরে একটা ছবির মতো লুক আসবে।

জেনে রাখুন
০ এয়ার কন্ডিশন ঘরে বা পাখার নিচে গাছ রাখবেন না।
০ দুপুরের প্রখর - রোদে, খুব কম আলোয় বা প্রচুর আলোয় গাছ রাখবেন না।
০ সকালের হালকা আলোয় গাছ রাখবেন।
০ গাছে বছরে ২-৩ বার জৈবসার প্রয়োগ করবেন।
০ মানানসই টবে গাছ রাখবেন ও সময়মতো টব পরিবর্তন করবেন।
০ নোংরা, কম বা বেশি জল  দেয়া যাবে না গাছে। জলের  পরিমাণটা যাতে সঠিক থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
০ টবের মাটি সম্পূর্ণ শুকনো যেন না থাকে।
০ প্রতিটি গাছের আলাদা যত্ন নিতে হবে।
০ ধোঁয়া বা গ্যাসের কাছে গাছ রাখবেন না।
০ শুকনো পাতা কেটে ফেলবেন ও গাছে পোকা ধরলে কীটনাশক দিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ।
০ এসব গাছপালা লতাপাতার  যত্নআত্তি বা ঝক্কি-ঝামেলায় যারা নিজেদের জড়াতে চান না, তারা প্লাস্টিকের পাতাবাহার  দিয়েও সাজাতে পারেন আপনার নিজের প্রিয় ঘরকে।
০ ঘরের শোভা সবুজের সমারোহ সৃষ্টি করতে গিয়ে অনেকে রীতিমতো জঙ্গল বানিয়ে ফেলেন। সেখানে মশা, মাকড়সাসহ নানা পোকামাকড়ের বাসা হতে পারে। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশা যেন আপনার ঘরের মধ্যে বাসা বাঁধতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
০ ইনডোর প্লান্টের  মধ্যে এরিকা পাম, বাহারি ফার্ন, মানিপ্লান্ট , ওয়াটার বনসাই ইত্যাদি লাগাতে পারেন।
০ নিচু ব্যালকনিতে যেমন তালগাছ মানাবে না তেমনই ছোট অপরিসর স্থানে ঝাড়ওয়ালা গাছ না লাগানোই ভাল। মাঝারি উচ্চতার, সুন্দর আকৃতির পাতাওয়ালা গাছ বেছে নিন।
০ আপনার ব্যালকনির গ্রিলের সঙ্গে লতিয়ে থাকবে এ রকম গাছও সুন্দর দেখাবে।
০ ব্যালকনিতে কয়েকটি ঝুলন্ত  টবে ঝাড়ওয়ালা গাছ আর তার সঙ্গে কিছু মেটাল, বাঁশ বা সিরামিকের তৈরি উইন্ডচাইম ঝুলিয়ে দিন সঙ্গে। সবুজের সঙ্গে টুংটাং মিষ্টি আওয়াজ শুনতে বেশ ভাল লাগবে।
০ মাটিতে জল  দিতে দিতে সেখানে কেমন যেন কাদাকাদা হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে  মাটি খুঁড়ে তাতে সামান্য বালি মিশিয়ে দিলে ঝরঝরে হয়ে যাবে আর গাছের গোড়া পচবে না।
০ আপনার ব্যালকনিতে টেরাকোটার একটি ছোট গামলা রাখুন। এতে জল  ভরে এর মধ্যে কিছু ছোট প্রজাতির পদ্ম বা শালুক ফুল ভাসিয়ে দিন। দেখবেন ছোট জায়গাটিতেই কেমন রঙ বেরঙের পাখির মেলা বসে গেছে। আপনার বাগানটিতে যথাসম্ভব প্রাকৃতিক রূপ দেয়ার জন্য রকমারি নুড়ি পাথর দিয়ে সাজান। দেখতে ন্যাচারাল সুন্দর লাগবে।

ধনে পাতা


 নিত্যদিনের বিভিন্ন খাবারে ধনেপাতা ব্যবহার করে থাকেন খাবারের গন্ধ এবং স্বাদে একটা পরিবর্তন আনার জন্য। ধনেপাতার বৈজ্ঞানিক নাম হল কোরিয়ানড্রাম স্যাটিভাম।
ধনে পাতার স্বাদ ও গন্ধের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকেন না এমন ব্যক্তি কিন্তু খুব কম-ই আছে। প্রায় সব ধরনের তরকারিতেই ধনে পাতা স্বাদ বৃদ্ধি করে থাকে; সেই সাথে যুক্ত করে অসাধারণ ঘ্রাণ। ধনে পাতা কি শুধু স্বাদে গন্ধেই অনন্য? খাদ্য ও পুষ্টিগুণ বিচারে ধনে পাতার উপকারিতা বর্ণনাতীত।
ধনে পাতার পুষ্টিগুণ





ধনে পাতার উপকারিতা না জেনেই অধিকাংশ মানুষ নিয়মিত বিভিন্ন তরকারিতে এটি খেয়ে আসছে। ধনে পাতায় রয়েছে ১১ জাতের এসেনশিয়াল অয়েল, ৬ ধরণের অ্যাসিড (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড যা ভিটামিন সি নামেই বেশি পরিচিত), ভিটামিন, মিনারেল এবং অন্যান্য উপকারী পদার্থ।
ধনে পাতা কী কী উপকার করে থাকে?

  • ধনে পাতায় উপস্থিত সিনিওল এসেনশিয়াল অয়েল এবং লিনোলিক অ্যাসিড থাকে যার মধ্যে অ্যান্টিরিউম্যাটিক এবং অ্যান্টি-আর্থ্রাইটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এরা ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে।
  • ডিসইনফেকট্যান্ট, ডিটক্সিফাইং বা বিষাক্ততা রোধকারী, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকার কারণে এরা বিভিন্ন স্কিন ডিজঅর্ডার বা ত্বকের অসুস্থতা (একজিমা, ত্বকের শুষ্কতা এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন) সারাতে সাহায্য করে। ত্বক সুস্থ ও সতেজ রাখতে তাই ধনে পাতার উপকারিতা অনেক।
  • ধনে পাতায় থাকে লিনোলিক, অলিক, পাল্মিটিক, স্টেরিক এবং অ্যাসকরবিক অ্যাসিড যা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • বর্নেওল এবং লিনালোল অন্ত্রের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে যকৃত ও বাওয়েল সুস্থ থাকে এবং ডায়রিয়া কমাতেও সাহায্য করে। মাইক্রোবিয়াল এবং ফাঙ্গাল প্রতিক্রিয়ার কারণে ডায়রিয়া হোলে সেটা সারিয়ে তুলে। বমি বমি ভাব, বমি হওয়া এবং অন্যান্য পাকস্থলীর সমস্যা সমাধানে ধনে পাতার উপকারিতা অপরিসীম।
  • ক্যালসিয়াম আয়ন এবং কলিনার্জিক বা অ্যাসেটিকোলিন উপাদান মিলে আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • মুখের আলসার দূর করতে সহায়তা করে।
  • ধনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় এরা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টি হিস্টামিন উপাদান থাকায় এরা অ্যালার্জি বা এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে দূরে রাখে।
  • খাবারের মাধ্যমে সৃষ্ট সবচেয়ে ভয়াবহ রোগ সালমোনেলা। ধনে পাতায় উপস্থিত ডডেসিনাল উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে সালমোনেলা জাতীয় রোগ সারিয়ে তুলতে অ্যান্টিবায়টিকের থেকে দ্বিগুণ কার্যকর।
  • ধনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। হাড় মজবুত এবং সুস্থ রাখতে  ধনে পাতার উপকারিতা অনেক।
  • এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিইনফেকসাস্‌, ডিটক্সিফাইং, ভিটামিন সি এবং আয়রন গুটিবসন্ত প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করে।
  • মহিলাদের মাসিকের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
  • ধনে পাতায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং মিনারেল (যেমনঃ ফসফরাস) চোখের যত্নে খুবই উপকারী। এর মধ্যে থাকা মাইক্রোবিয়াল উপাদান ছোঁয়াচে রোগ (যেমনঃ কনজাংটিভাইটিস) থেকেও চোখকে রক্ষা করে।
  • এরা শরীরের ইনসুলিন নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তে সুগার এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
  • বিভিন্ন ভেষজ পদার্থের সাথে মিশিয়ে যৌনশক্তি বৃদ্ধি করতে ধনে পাতার উপকারিতা অনেক।
সতর্কতা
 কিন্তু কখনও কি কল্পনা করেছেন যে এই সুস্বাদু খাবারটির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে? অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি কথা হল, এই সুপরিচিত সবুজ সবজিটির অনেক ঔষধি গুণাগুণের পাশাপাশি অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বিদ্যমান। যা নিয়মিত খেলে আমাদের শরীর দিনদিন অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
অনেকের ক্ষেত্রে সূর্যরশ্মির সংবেদনশীলতা বা সানলাইট সেনসিটিভিটি দেখা দিতে পারে এবং অত্যাধিক মাত্রায় খাওয়া হোলে সানবার্ন হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে এরকম হতে থাকলে স্কিন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


লিভারের ক্ষতিসাধন অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে এটি লিভারের কার্যক্ষমতাকে খারাপভাবে প্রভাবিত করে থাকে। এতে থাকা এক ধরনের উদ্ভিজ তেল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে ফেলে। এছাড়া এটাতে এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যেটা সাধারণত লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে কিন্তু দেহের মাঝে এর অতিরিক্ত মাত্রার উপস্থিতি লিভারের ক্ষতিসাধন করে। নিম্ন রক্তচাপ অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার ফলে দেহের হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্য নষ্ট করে ফেলে, যার ফলে নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই ধনেপাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে নিম্ন রক্তচাপের উদ্ভব ঘটতে পারে। এছাড়া এটি হালকা মাথাব্যথারও উদ্রেক করতে পারে।
পেট খারাপ স্বাভাবিকভাবে ধনেপাতা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল বিষয়ক সমস্যা দূর করে থাকে কিন্তু বেশি পরিমাণে ধনেপাতা সেবন পাকস্থলীতে হজমক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি করে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এক সপ্তাহে ২০০ এমএল ধনেপাতা আহারে গ্যাসের ব্যথা ওঠা, পেটে ব্যথা, পেট ফুলে ওঠা, বমি হওয়া হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা যায়। ডায়রিয়া ধনেপাতা অল্প খেলে পেটের সমস্যা দূর হয় কিন্তু এটি বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এছাড়া এর ফলে ডিহাইড্রেশন হতে থাকে। ফলে ডায়রিয়ার সমস্যাটি হতেই থাকে। তাই এই ধরনের সমস্যা এড়াতে প্রতিদিনের খাবারে ধনেপাতা কম পরিমাণে ব্যবহার করুন।
নিঃশ্বাসের সমস্যা আপনি যদি শ্বাসকষ্টের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে এই ধনেপাতা আহার থেকে বিরত থাকুন। কেননা এটি আপনার শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা করে থাকে যার ফলে ফুসফুসে অ্যাজমার সমস্যা হতে পারে। এই ধনেপাতা খেলে মাঝে মাঝে ছোট ছোট নিশ্বাস নিতেও সমস্যা তৈরি হয়। বুকে ব্যথা অতিরিক্ত ধনেপাতা আহারে বুকে ব্যথার মত জটিল সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এটা শুধুমাত্র অস্বস্তিকর ব্যথাই সৃষ্টি করে না তা দীর্ঘস্থায়ীও হয়ে থাকে।
এজন্য এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে দৈনন্দিন আহারে কম করে এই ধনেপাতা খেতে পারেন। ত্বকের সংবেদনশীলতা সবুজ ধনেপাতাতে মোটামুটিভাবে কিছু ঔষধি অ্যাসিডিক উপাদান থাকে যেটি ত্বককে সূর্যরশ্মি থেকে বাঁচিয়ে সংবেদনশীল করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত সেবনে সূর্যের রশ্মি একেবারেই ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না ফলে ত্বক ভিটামিন কে থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া ধনেপাতা ত্বকের ক্যান্সার প্রবণতাও তৈরি করে থাকে। অ্যালার্জীর সমস্যা ধনেপাতার প্রোটিন উপাদানটি শরীরে আইজিই নামক অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানকে সমানভাবে বহন করে থাকে।
কিন্তু এর অতিরিক্ত মাত্রা উপাদানগুলোর ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে। ফলে অ্যালার্জীর তৈরি হয়। এই অ্যালার্জীর ফলে দেহে চুলকানি, ফুলে যাওয়া, জ্বালাপোড়া করা, র্যা শ ওঠা এই ধরনের নানা সমস্যা হয়ে থাকে। প্রদাহ অতিরিক্ত ধনেপাতা সেবনের আরেকটি বিশেষ পার্শ্ব প্রতক্রিয়া হল মুখে প্রদাহ হওয়া। এই ঔষধিটির বিভিন্ন এসিডিক উপাদান যেটি আমাদের ত্বককে সংবেদনশীল করে থাকে পাশাপাশি এটি মুখে প্রদাহেরও সৃষ্টি করে। বিশেষ করে এর ফলে ঠোঁট, মাড়ি এবং গলা ব্যথা হয়ে থাকে।
এর ফলে সারা মুখ লাল হয়েও যায়। ভ্রূণের ক্ষতি গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া ভ্রূণের বা বাচ্চার শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকারক। ধনেপাতাতে থাকা কিছু উপাদান মহিলাদের প্রজনন গ্রন্থির কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে ফেলে যার ফলে মহিলাদের বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা লোপ পায় এবং বাচ্চা ধারণ করলেও গর্ভকালীন ভ্রূণের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।

বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৬

নবপত্রিকা (কলাবউ )

আজ সকালে আমার ভাত্রিপ্রতিম বন্ধু অনুপ আমার বাড়িতে এসে বললো ,'দাদা,একটা দরকারে এলাম, আগামীকাল বাড়ীতে লক্ষী পুজো , পারিবারিক রীতি অনুযায়ী আমাদের মূর্তির পরিবর্তে কলাবৌ  লক্ষীরূপে পূজিতা হন।  প্রতি বছরই আমার মেজদা সবকিছু জোগাড় করেন, এ বছর দাদা বাইরে থাকায় দায়িত্ব আমার ঘাড়ে।  আমি জানি এখানে অশোকে গাছ আছে, বাকি সব জোগাড় হয়ে গেছে, অশোক গাছের জন্যই এখানে আসা ' আমি অত্যন্ত ব্যাথিত হয়ে জানালাম যে সাম্প্রতিক ঝরে আমাদের  অশোক গাছটি ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। 

বিজয়া সম্ভাষণ ও চা পর্ব মিটিয়ে অনুপ চলে যেতেই মনে হলো দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিভিন্ন পুজো ,সামাজিক অনুষ্ঠান এ সবের সাথে বিভিন্ন গাছ-গাছালি ,কৃষি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। আমাদের জীবন যতই ইট পাথর লোহার নগরসভ্যতায় জড়িয়ে যাই না কেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষণেই গাছ-গাছালি জড়িয়ে আছে..... এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই এই প্রতিবেদনের অবতারণা।

  কৃত্তিবাস ওঝা বিরচিত রামায়ণে রামচন্দ্র কর্তৃক নবপত্রিকা পূজার উল্লেখ রয়েছে – “বাঁধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস।”
নবপত্রিকা  দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। তবে বাস্তবে নবপত্রিকা নয়টি পাতা নয়, নয়টি উদ্ভিদ। এগুলি হল: কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (ডালিম), অশোক, মান ও ধান।
একটি সপত্র কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে একজোড়া বেল সহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়; তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ ......... 



গ্রীক দেবী ‘রুহী’ বা রোমান দেবী ‘সিবিলি’র মতো দেবী দুর্গাও আমাদের ভূমির সঙ্গে তথা প্রকৃতির সঙ্গে জড়িয়ে মিশিয়ে আছেন | ড: শশিভূষণ দাশগুপ্তের মতে মূলত শস্যের দেবী হিসাবেই দেবী দুর্গা পূজিত হয়ে আসছেন | পণ্ডিত যোগেশচন্দ্র রায়ের মতে রামচন্দ্র যে অকালবোধন করেছিলেন তাও আসলে আরণ্যসভ্যতা থেকে কৃষিসভ্যতায় উত্তরণ | তাঁর মতে প্রাচীনকালে শরৎঋতুই নববৎসরের সূচনা করত‚ কারণ সে সময় দেশ শস্যশ্যামলে ভরে উঠত — কৃষকের ঘর থাকত ভরে |

নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে কল্পিত হয়ঃ
  1. কদলী বা রম্ভা: কদলি গাছ এর অধিষ্টাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী;
  2. কচু: কচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা;
  3. হরিদ্রা: হরিদ্রা গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী উমা;
  4. জয়ন্তী: জয়ন্তী গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কার্তিকী;
  5. বিল্ব: বিল্ব গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা;
  6. দাড়িম্ব: দাড়িম্ব গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা;
  7. অশোক: অশোক গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা;
  8. মান: মান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী চামুণ্ডা;
  9. ধান: ধান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী।
এই নয় দেবী একত্রে "নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা" নামে নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ মন্ত্রে পূজিতা হন।
রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা,
দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী

  ডঃ শশিভূষণ দাশগুপ্ত লিখেছেন, "এই শস্যবধূকেই দেবীর প্রতীক গ্রহণ করিয়া প্রথমে পূজা করিতে হয়, তাহার কারণ শারদীয়া পূজা মূলে বোধহয় এই শস্য-দেবীরই পূজা। পরবর্তীকালের বিভিন্ন দুর্গাপূজার বিধিতে এই নবপত্রিকার বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হইয়াছে। ... বলাবাহুল্য এই সবই হইল পৌরাণিক দুর্গাদেবীর সহিত এই শস্যদেবীকে সর্বাংশে মিলাইয়া লইবার একটা সচেতন চেষ্টা। এই শস্য-দেবী মাতা পৃথিবীরই রূপভেদ, সুতরাং আমাদের জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে আমাদের দুর্গাপূজার ভিতরে এখনও সেই আদিমাতা পৃথিবীর পূজা অনেকখানি মিশিয়া আছে।" ডঃ জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “Another important aspect of the Devi is her concept as the personification of vegetation spirit, which is emphasised by her name Sākambhari already noted. This finds clear corroboration in the present day Navapatrikāpraveśa ceremony in autumnal worship of Durgā in Bengal.” তবে হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য দুর্গাপূজার সঙ্গে শস্যদেবীর পূজার অনুষঙ্গটি স্বীকার করলেও, শাকম্ভরী তত্ত্বটিকে নবপত্রিকার উৎসরূপে মানেননি। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি লিখেছেন, “আমি নবপত্রিকার উৎপত্তি ও প্রয়োজন বিন্দুমাত্র বুঝিতে পারি নাই। নবপত্রিকা নবদুর্গা, ইহার দ্বারাও কিছুই বুঝিলাম না। দেবীপুরাণে নবদুর্গা আছে, কিন্তু নবপত্রিকা নাই।... নবপত্রিকা দুর্গাপূজার এক আগন্তুক অঙ্গ হইয়াছে।... বোধ হয় কোনও প্রদেশে শবরাদি জাতি নয়টি গাছের পাতা সম্মুখে রাখিয়া নবরাত্রি উৎসব করিত। তাহাদের নবপত্রী দুর্গা-প্রতিমার পার্শ্বে স্থাপিত হইতেছে।” উল্লেখ্য, মার্কণ্ডেয় পুরাণে নবপত্রিকার উল্লেখ নেই। কালিকাপুরাণে নবপত্রিকার উল্লেখ না থাকলেও, সপ্তমী তিথিতে পত্রিকাপূজার নির্দেশ রয়েছে।
 রামায়ণ ও কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে এমনকী চণ্ডীতেও দেখা যায় শস্যের দেবী হিসাবে দেবী দুর্গা পূজিত হতেন | দেবীও নিজেকে শাকম্ভরী হিসাবে প্রকাশ করেছেন | আজও তার চিহ্ন দেখতে পাই নবপত্রিকায় — সাধারণত লোকে যাকে কলাবউ বা গণেশের বউ বলে চিহ্নিত করে | প্রকৃতপক্ষে এটি গণেশের বউ নয়‚ দুর্গারই এক মূর্তি — ধরিত্রীমাতা বা শস্যবধূর প্রতীক |

 অর্গলাস্তোত্রম্‌
।। ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ ।।
ওঁ অস্য শ্রীঅর্গলাস্তোত্রমন্ত্রস্য বিষ্ণুর্ঋষিঃ অনুষ্টুপ্ছন্দঃ শ্রীমহালক্ষ্মীর্দেবতা শ্রীজগদম্বাপ্রীত্যর্থং সপ্তশতীপাঠাঙ্গজপে বিনিয়োগঃ।
এই অর্গলাস্তোত্রের ঋষি হলেন বিষ্ণু, ছন্দ হল অনুষ্টুপ ও দেবতা হলেন শ্রীমহালক্ষ্মী। জগজ্জননীর প্রীতির জন্য শ্রীশ্রীচণ্ডীপাঠের অঙ্গরূপে এই স্তোত্র পাঠ করা হয়।
ওঁ মার্কণ্ডেয় উবাচ।
মার্কণ্ডেয় বললেন–
ওঁ জয় ত্বং দেবি চামুণ্ডে জয় ভূতাপহারিণি।[*]
জয় সর্বগতে দেবি কালরাত্রি নমোঽস্তু তে।। ১
হে দেবী চামূণ্ডা, তোমার জয় হোক। হে দেবী, তুমি জীবের দুঃখনাশকারিণী; তুমি সর্বভূতে অবস্থিতা; আবার তুমিই প্রলয়ের অন্ধকার স্বরূপিণী কালরাত্রি। তোমায় নমস্কার করি।
জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।
দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে।। ২
হে দেবী, তুমি সর্বোৎকৃষ্টা জয়যুক্তা দেবী জয়ন্তী; তুমি জন্মমৃত্যুবিনাশিনী মোক্ষপ্রদায়িনী দেবী মঙ্গলা; তুমি সর্বসংহারকারিণী কালী; তুমি সুখদায়িনী ভদ্রকালী; আবার তুমিই প্রলয়কালে ব্রহ্মা প্রমুখের মাথার খুলি হস্তে নৃত্যরতা কপালিনী। তুমি দুর্গা, কারণ বহু কষ্ট স্বীকার করে তবে তোমায় লাভ করা যায়; তুমি চৈতন্যময়ী শিবা; তুমি করুণাময়ী ক্ষমা; তুমি বিশ্বধারিণী ধাত্রী; তুমি দেবগণের পোষণকর্ত্রী স্বাহা ও পিতৃগণের পোষণকর্ত্রী স্বধা। তোমায় নমস্কার করি।
মধুকৈটভবিধ্বংসি[†] বিধাতৃবরদে নমঃ।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৩
হে দেবী, তুমি মধুকৈটভ নামক দুই অসুরকে বিনাশ করেছিলে। তুমি ব্রহ্মাকে বরপ্রদান করেছিলে। তোমায় প্রণাম করি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
মহিষাসুরনির্ণাশি ভক্তানাং সুখদে নমঃ।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৪
হে দেবী, তুমি মহিষাসুরমর্দিনী। আবার তুমিই ভক্তগণে সুখ প্রদান করে থাকো। তোমায় প্রণাম করি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
ধূম্রনেত্রবধে দেবি ধর্মকামার্থদায়িনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৫
হে দেবী, তুমি ধূম্রলোচন অসুরকে বধ করেছিলে। আবার তুমিই ভক্তকে ধর্ম, অর্থ ও কাম প্রদান করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
রক্তবীজবধে দেবি চণ্ডমুণ্ডবিনাশিনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৬
হে দেবী, তুমি রক্তবীজ, চণ্ড ও মুণ্ড অসুরত্রয়কে বধ করেছিলে। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
শুম্ভনিশুম্ভনির্ণাশি ত্রৈলোক্যশুভদে নমঃ।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৭
হে দেবী, তুমি শুম্ভ ও নিশুম্ভ অসুরদ্বয়কে বধ করেছিলে। আবার তুমিই তিন লোকের কল্যাণকারিনী। তোমায় প্রণাম করি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
বন্দিতাঙ্ঘ্রিযুগে দেবি সর্বসৌভাগ্যদায়িনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৮
হে দেবী, ব্রহ্মা প্রমুখ দেবগণ তোমার পদযুগল বন্দনা করেন। তুমি সকল প্রকার সৌভাগ্য প্রদান করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
অচিন্ত্যরূপচরিতে সর্বশত্রুবিনাশিনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৯
হে দেবী, তোমার রূপ ও কার্য চিন্তার অগম্য। তুমি সকল শত্রুকে বিনাশ করে থাকো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
নতেভ্য সর্বদা ভক্ত্যা চাপর্ণে দুরিতাপহে।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ১০
হে অপর্ণা[§], তুমি আশ্রিত ভক্তের পাপ নাশ করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
স্তুবদ্ভ্যো ভক্তিপূর্বং ত্বাং চণ্ডিকে ব্যাধিনাশিনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি

তথ্যসুত্র ও  ফটো :- গুগল সৌজন্যে

বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬

গুই সাপ বা গোসাপ

" টিকটিকি, গিরগিটি, বহুরূপী, তক্ষক, গোসাপ এঁরা সকলে হলেন কুমিরের জ্ঞাতিবর্গ। পৃথিবীর যে-কোন দেশে যাও, এঁদের কোন না কোনটির সাক্ষাৎ পাবেই। কিন্তু সাক্ষাৎ পেলেই যে তাদের সব সময়ে তাদের চিনতে পারবে, তা মনে করো না। অস্ট্রেলিয়ার সেই কাঁটাওয়ালা ভীষণমূর্তি জানোয়ার যে নিতান্ত নিরীহ গিরগিটি মাত্র, এ কথা আগে থেকে না জানলে কি কেউ বুঝতে পারবে? কেবল চেহারা দেখে যদি এর সম্বন্ধে কোন মতামত দিতে হয়, তাহলে অনেকেই হয়ত বেচারির উপর অবিচার করবে। সমস্ত শরীরটি এর অস্ত্রে আর বর্মে ঢাকা, কিন্তু মেজাজটি যারপরনাই ঠাণ্ডা। দুপুরের রোদে শুকনো বালির উপর এরা পড়ে থাকে, ভয় পেলে তাড়াতাড়ি বালির মধ্যে ঢুকে যায়। অন্য জন্তুর অনিষ্ট করা দূরে থাকুক, সামান্য একটা পাখি দেখলেই এরা পালাবার জন্য ব্যস্ত হয়। এদের প্রধান খাদ্য পিঁপড়ে। সব চাইতে আশ্চর্য এই যে, এক বাটি জলের মধ্যে যদি এই গিরগিটিকে ছেড়ে দাও, তবে দেখতে দেখতে এর গায়ের চামড়া সমস্ত জল শুষে নেবে। শুকনো বালিতে থাকে কিনা সব সময়ে ত স্নানের সুবিধা হয় না, তাই একবার স্নান করলেই সে অনেকদিনের মতো জল বোঝাই করে নেয়।
ওঙ্কার ধামে গোসাপ


 খাঁটি গোসাপ-জাতীয় জন্তু আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। 'হিংস্র' বলতে যা বোঝায় গোসাপেরা ঠিক তা নয় কিন্তু একবার গোঁ ধরলে সেও ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। আমাদের দেশে কথায় বলে 'কচ্ছপের কামাড়', সাহেবেরা বলেন, 'বুলডগের কামড়'— কিন্তু গোসাপ খেপলে পরে তার কামড় ছাড়ানও বড় কম শক্ত নয়। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে যে, গিরগিটিটাকে খুব বড় করতে পারলেই বুঝি ঠিক গোসাপ হয়ে দাঁড়াবে, কিন্তু বাস্তবিক গিরগিটি আর গোসাপের গড়নে কিছু তফাৎ আছে। গোসাপের ঘাড়টা অনেকটা লম্বা গোছের, আর তার জিভটা সাপের মতো চেরা, চলতে ফিরতে লক্‌লক্‌ করে। গোসাপেরা আমিষখোর, সাপ, টিকটিকি, ইঁদুর, ব্যাং, পাখি, এইসব খেয়ে থাকে— তাদের বিশেষ প্রিয় খাদ্য নাকি কুমিরের ডিম। আমাদের দেশে গোসাপ ডাঙায়ও থাকে জলেও নামে, তাই সাঁতারের সুবিধার জন্য তাদের ল্যাজগুলি চ্যাটাল হয়। যেসব গোসাপ কেবল শুকনো ডাঙায় বা গাছে থাকে, তাদের ল্যাজ হয় চাবুকের মতো গোল।"  --------সুকুমার রায়


গুই সাপ বা গোসাপ, ( Monitor Lizard) কোনো সাপ নয়; এটি বড়সড় টিকটিকির মতো দেখতে কিন্তু সাপের মতো দ্বিখণ্ডিত জিভসম্পন্ন প্রাণী। এটি ভ্যারানিডি (Varanidae) গোত্রের সরীসৃপ। "গুই"/"গো" নামটি এসেছে "গোধিকা" থেকে।
বৃহত্তম গুই সাপ হল ইন্দোনেশিয়ার কোমোডো ড্রাগন। সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে কোমোডো ড্রাগনেরও বিষ আছে।
গুই সাপ বিভন্ন প্রকার হয়:
  • জলগোধিকা (water monitor)
  • স্থলগোধিকা (land monitor)
  • স্বর্ণগোধিকা (yellow monitor)
  •  
হিন্দু শাস্ত্রমতে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় এই স্বর্ণগোধিকা বা সোনা গোসাপ দেখা ঠিক শুভ নয়।