‘কেন এমন বলা হয়?’ এর জবাবে ঠাকমার কাছে শোনা একটা গল্প বলি :-
'এক গ্রামে এক পরমা সুন্দরী বৌ, তার রূপের ভারী দেমাক ।দেখতে অপূর্ব সুন্দরী কিন্তু তার ব্যবহার খুবই তেতো (খারাপ ), তার বুকের ভিতরটা ছিল বিষে ভরা, এটা বিশেষ কেউ জানতোও না। একদিন সেই সুন্দরী বৌ চুপি চুপি শাশুড়ির খাবারে বিষ মিশিয়ে দিলো ,...... শাশুড়ী না জেনে খেয়েও নিলো সেই খাবার।বিষক্রিয়া শুরু হতেই শাশুড়ির কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল ব্যাপারটা। শাশুড়ি বৌমাকে ডেকে বললো, তুমি এত শ্রীময়ী কিন্তু তোমার বুকের ভিতর কথা কেউ জানে না,আমি অভিশাপ দিচ্ছি তুমি যতই সুন্দরী হও তোমার তিক্ততা আর বিষের কথা আজ থেকে সবাই জানবে আর ঘৃনায় তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে,.........., তারপরে সেখানেই জন্মালো একটি লতা গাছ , আর সেই গাছে যে ফলটি ফললো,সেটি দেখতে আপেলের চেয়ে ও সুন্দর,কিন্তু ভিতরে কালো,তেতো আর বিষাক্ত। এই ফলটির নাম হলো মাকাল। '
বাংলা নাম: মাকাল
ইংরেজী নাম: Colocynth, Cucumber.
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae
বিভাগ: Angiosperms
শ্রেণী: Eudicots
(unranked): Rosids
বর্গ: Cucurbitales
পরিবার: Cucurbitaceae
গণ: Citrullus
প্রজাতি: C. colocynthis
দ্বিপদী নাম: Citrullus colocynthis (L.) Schrad.
গাছের পাতা তেখতে হাতের তালুর মত। প্রতিটি পাতায় ৩-৭টি কারে খাঁজ থকে। পাতাগুলো একান্তরভাবে সজ্জিত। প্রতিটি পর্ব থেকে একটি করে পাতা ও আকর্ষি বের হয়। এই আকর্ষির সাহায্যেই মাকাল গাছ অন্য গাছকে আকড়িয়ে ধরে। পাতার কক্ষে ফুল ফোটে। ফূল ছোট সাদা রঙের এবং একলিঙ্গ। ফল দেখতে অনেকটা ডিমের মত কিন্তু আকারে ডিম থেকে বড় হয়। কাঁচা অবস্থায় সবুজ তার পর হলুদ ও পাকলে গাঢ় লাল হয়। ফলে প্রচুর পরিমাণে বীজ থাকে। শাঁস ধূসর বর্ণের এবং স্বাদ খুব তিতা। বর্ষাকালে ফুল ও ফল হয়।
বাংলায় মাকাল ফল নিয়ে অনেক প্রবাদ প্রচলিত আছে , 'মাকাল ফল' প্রবাদটি কমবেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু ফলটিকে চেনেন তো? অকর্মণ্য মানুষকে 'মাকাল ফল' বলে গালি দিলেও মাকাল ফল কিন্তু অতটা খারাপ নয়! খাওয়া না গেলেও এ ফল একটি উপকারী ভেষজ এবং পরিবেশবান্ধব বিষ। এক সময় মাকাল ফল গ্রামে-গঞ্জে দেখা গেলেও এটি এখন বিলুপ্তপ্রায়।
মাকাল শব্দটি বাংলা প্রবাদে বাজে অর্থে ব্যবহৃত হলেও এর প্রাচিন নাম ছিল মহাকাল যা ভেষজ গুণে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই নামটি বিকৃত হয়ে কালে কালে মাকাল হয়েছে বলে ভারতীয় চিকিৎসকরা মনে করেন।মাকাল ফল এক সময় হাঁপানি, নাক-কানের ঘা এমন কি কুষ্ঠ রোগেও ব্যবহৃত হয়েছে। যুগ যুগ পুরনো মাথা ব্যথার জন্যে তেল দিয়ে মিশ্রিত মাকালের শিকড় খুব উপযোগী। গাছে ধরা অবস্থায় মাকাল ফলের মতো সুন্দর ফল সত্যি খুব কম দেখা যায়, তবে ভেতরটা খুবই কদর্য।
মাকাল ফলের ইংরেজি নাম Colocynth, bitter cucumber। এর বৈজ্ঞানিক নাম Citrullus colocynthis। এর আদি নিবাস তুরস্ক। তুরস্ক থেকে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে গাছটি বিস্তার লাভ করে। সারা পৃথিবীতে এর ৪২টি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে আমাদের দেশে দেখতে পাওয়া যায় প্রায় ১২টি প্রজাতি।
ফলটিকে আরবিতে হানজাল, সংস্কৃতে দেব দালিকা এবং হিন্দিতে ইন্দ্রায়ন বলা হয়। উদ্যানতত্ত্ববিদ উইলিয়াম মিথিউস মাকালকে অন্তঃসারশূন্য ফলে বলে অবিহিত করেছেন।মাকাল ফলের গাছ একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি জঙ্গল বা বাড়ির বড় বড় গাছকে আশ্রায় করে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। মাকাল গাছ লম্বায় ৩০ থেক ৪০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর পাতায় থাকে অনেকগুলো খাঁজ। মাকাল ফল কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ, কিছুদিন পর হলুদ ও পাকলে লাল বর্ণ ধারণ করে। সাধারণত বর্ষাকালে মাকাল ফলের ফুল ও ফল হয়।
মাকাল ফল ও গাছের বেশ কিছু ভেষজ গুণও আছে। ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়াতে এই গাছের ব্যবহারের উল্লেখ আছে। আধুনিক ওষুধশিল্পে এ ফলের নির্যাস থেকে তৈরি ওষুধ ল্যাক্সেটিভ হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
।>> পারগেটিভ বা নির্মলকারক হিসেবে: কাঁচা ফলের শুকনো শাঁস শক্তিশালী কোষ্ট পরিস্কারক হসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়ার অফিসিয়াল অনুমোদন প্রাপ্ত। মাকাল খুবই তিতা স্বাদযুক্ত এবং আধুনিক ঔষধ শিল্পে এই ফলের নির্যাস দিয়ে কোষ্ঠ পরিষ্কারক ক্যাপসুল তৈরী করা হয়। শুকনো এবং পাউডার ফর্মে মাত্র ২-৮ দানা কোষ্ঠ পরিষ্কারক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জন্ডিস রোগ নিরাময়ে এই ফলের নির্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।দেহের জল নিষ্কাশন করে
কাঁচা ফলের শুকনো শ্বাস শক্তিশালী কোষ্ঠ পরিষ্কারক। মাকাল ফলের নির্যাস দিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ তৈরি করা হয়। এর শেকড় দিয়ে বদহজমের ওষুধ তৈরি করা হয়।লিভারের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে
জার্মানির এক গবেষণা থেকে জানা যায়, মাকাল ফলের নির্যাস লিপিড পার-অক্সিডেশনে বাধা প্রদান করে, লিভার থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করেদেহে কোনো কারণে জল জমলে অর্থাত্ শোথ রোগে দেহ থেকে জল দূর করতে মাকাল ফলের নির্যাস খুবই শক্তিশালী ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
জরায়ুর সমস্যায়
মাকাল ফল থেকে তৈরি ওষুধ নারীদের জরায়ুর বিভিন্ন সমস্যায় ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে নারীদের ঋতুবদ্ধতা নিরাময়ের ক্ষেত্রে এটি দারুণ কার্যকর।এছাড়া স্তনের প্রদাহ, প্রস্রাবের সমস্যা, বাতের ব্যথা, কাশি, শিশুদের অ্যাজমা নিরাময়ে মাকাল গাছের ফল-মূল-কাণ্ড বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বীজের তেল সাপের কামড়, পেটের সমস্যা, মৃগীরোগ এবং চুলের বৃদ্ধি ও চুল কালো করতে কার্যকর।
রাসায়নিক উপাদান: ফলে থাকে গ্লাইকোসাইড এবং তিতা উপাদান যেমন- কলোসিন্থ,
কলোসিন্থিনিন, ইলাটিরিন, সাইট্রুলুইন, সাইট্রুলুয়েন, সাইট্রুলেন। আরও থাকে
সাইট্রুলিক এসিড, ফাইটোস্টেরল, ফ্যাটি এসিডের মিশ্রণ, রেজিন, হেপাটিকোসানল
এবং সাইট্রুলোল(JCS, 1965; JPS 1967; JICS, 1955; IJP, 1970; IJC, 1979)।
বীজে থাকে ফিক্সড অয়েল, ফাইটোস্টেরোলিন, ফাইটোস্টেরল, হাইড্রোকার্বন এবং
স্যাপোনিন। এ ছাড়া গাছের অন্যন্য অংশে থাকে কোলন, এবং দুটি এলকালয়েড,
গ্লাইকোসাইড এবং ট্যানিন( Planta Med, 1973 & 1974)। তেলে থাকে
সাইট্রুনাল(CA, 1976)মূলে থাকে আলফা-ইলাটেরিন, হেনট্রিয়কনটেক এবং
স্যাপোনিন।
ব্যবহার্য অংশ: ফল, বীজ, মূল।
বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়ায়: ইঁদুরের উপর এক গবেষণা থেকে জানা যায়,
মাকাল ফলের পেট্রোলিয়াম ইথার নির্যাস থেকে স্টেরয়েড জাতীয় উপাদান আলাদা
করে ইঁদুরের দেহে প্রয়োগ করা হয়। এবং পরীক্ষা শেষে দেখা যায় ইঁদুরের
প্রোস্টেটের ওজন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমেছে।
স্তন প্রদাহে: এই গাছের মূল বেটে পেস্ট করে স্তনে লাগালে স্তনের প্রদাহ কমে।
এছাড়া গাছের মূল জন্ডিস, পেটে পানি জমা, প্রস্রাবের সমস্যা, বাতব্যথা,
কাশি, পেট বড় হয়ে যাওয়া এবং শিশুদের এ্যাজমা নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন
করে।
বীজের তেল সাপের কামড়, বিছার কামড়, পেটের সমস্যা( আমাশয়, ডায়রিয়া), মৃগীরোগ এবং সাবান উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়।
চুলের বৃদ্ধি ও চুল কালো করে: বীজের তেল চুলের বৃদ্ধি ও চুল কালো করতে কার্যকর।
ফল গুঁড়ো করে নারকেল তেলের সঙ্গে ফুটিয়ে নাক ও কানের ঘায়ে প্রয়োগ করলে আরাম
হয়। কথিত আছে_ মাকালের ফল বিষাক্ত। অনেকে বলেন এ ফল ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে
কাককে খেতে দিলে কাক মরে যায়। গবাদিপশুর বক্ষপ্রদাহে ও হৃদযন্ত্রের রোগে ফল
ব্যবহৃত হয়। মূল সমপরিমাণ ত্রিফলা (আমলকি, বহেরা ও হরীতকী একসঙ্গে ত্রিফলা
নামে পরিচিত) ও হলুদ মিশিয়ে যে অরিষ্ট তৈরি হয়, তা মধু মিশিয়ে সেবন করলে
গনোরিয়া রোগে উপকার পাওয়া যায়। ফলের রস কিংবা মূলের বাকল তিল তেলের সঙ্গে
গরম করে গোসলের সময় তেল হিসেবে ব্যবহার করলে বহুক্ষণ স্থায়ী মাথাধরা আরাম
হয়। কানে পুঁজ হলে একই উপায়ে তৈরি করা তেল কানে দিলে আরাম হয়।
সতর্কতা: তবে গর্ভবতী মহিলাদের এই ঔষধ ব্যবহার না করাই ভাল। বেশি মাত্রায়
গ্রহণ করলে এটা বিষ হয়ে যায় এবং ইউরোপে মৃত্যুবরণ করার ঘটনাও ঘটেছে। এক বা
আধা চামচ পরিমান (প্রায় ৯০টি বিজ) পাউডার খেলে তার মৃত্যু হবে এটা
প্রমানিত। এক মহিলা ১২০ দানা (Grains) পাউডার গ্রহণ করেন গর্ভপাতের জন্য
এবং তিনি ৫০ ঘন্টার মধ্যে মারা জান। এক ঘটনা থেকে জানা যায়, ৩ আউন্স পরিমাণ
পাউডারের বিষাক্ততা থেকে পুরনুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে মাকাল ফলের বিষাক্ত
মাত্রা হল ০.৬ থেকে ১ গ্রাম এবং প্রায় ৮ গ্রাম হলে প্রাণনাশক।
এই গাছের সমস্ত অংশ তিতা এবং এর শুকনো পাউডার যখন নাকে বা চোখে প্রবেশ করে তখন চুলকায়।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া,জাতীয় ই-তথ্যকোষ
Tithracetrack - Titanium trim | TitaniumTitaniumTitaniumSite
উত্তরমুছুনTithracetrack has been designed to be a samsung galaxy watch 3 titanium reliable and t fal titanium pan trusted option for omega seamaster titanium you to run your own titanium water bottle Tithracetrack. black titanium rings Tithracetrack has been designed