বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৬

আকাশমণি\ সোনাঝুরি

‘কেঁন্দ পিয়াল শেষেঁই ভেল .. মহুল কুসুম কাটি লেল ..
ফরেষ্টারে ফরেষ্টারে টাকাই দলান দেলে ..’
 ‘আকাশমনি সোনাঝুরি .. তর ল্যাগে গড় করি .. মরি গেলা ..
মরি গেলা গে ধনী .. ছেড়ি কেরীঘাস .. সে তো মরি গেলা ..’



জঙ্গলে নতুন গাছের নতুন আইন হয়েছে। ইউক্যালিপ্টাস আর সোনাঝুরি। সোনার গাছ। পাঁচবছরের মধ্যে সাইজ করে কেটে শহরের কাগজকলগুলোয় পাঠানো যায়। জঙ্গল-ব্যবসায়ীদের কাছে এ গাছগুলো ‘সোনার গাছ’। জঙ্গলের মানুষের কাছে এ গাছের কোনোই দাম নেই। এইসব গাছে মৌমাছি বসে না, পাখি বাসা বাঁধে না, পাতাগুলো থেকে ভালো করে জ্বালানিও হয় না। দ্রুত বেড়ে ওঠা ইউক্যালিপ্টাস আর সোনাঝুরি আসলে মরুভূমির গাছ। সামান্য জল পেলেই শুষে নিয়ে বড় হয়ে ওঠে, মাটির সামান্যতম আর্দ্রতাও শুষে নেয় তারা। কাছাকাছি কোনো গাছ বাঁচে না। গাছের পায়ের কাছে ঘাসও জন্মায় না।
শাল পিয়াল মহুয়া হরিতকী বহড়া আমলকি করঞ্জ নিম প্রায় শেষ। গাছ শুধু তো গাছ নয়, প্রকৃতির সন্তানরা এসব গাছ সঙ্গে নিয়েই বাঁচে। কত কাজে লাগে। খাবার দাবার থেকে পুজো-পার্বণ। ঘরের চাল ছাইতে, পোষাক হিসেবে কোমরে বাঁধতে, পাতা পেড়ে খেতে বসতে লাগে। লাগে অসুখ-বিসুখ ওষুধ-পালায়। শালপাতা, শালধুনো, শাল-দাঁতন, শাল-ফুল, শাল-ফল সবই নিত্য প্রয়োজনে লাগে। লাগে কেঁদুপাতা, কেঁদুফুল।  সব আক্ষেপ, সব না-পাওয়া গানের কথায়। এখানে গান মানেই প্রাণের আকুতি।গানটা শুনতে শুনতে এমনটাই মনে হল ।


আকাশমণি
অন্যান্য নাম : আকাশমণি, সোনাঝুরি
ইংরেজি নাম : Auri, Earleaf Acacia, Earpod Wattle, Northern Black Wattle, Papuan Wattle, Tan Wattle
বৈজ্ঞানিক নাম : Acacia auriculiformis
আকাশমণি একটি দ্রুতবৃদ্ধিসম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয় প্রজাতি। চিরসবুজ এই বৃক্ষটি ১৫-৩০মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত। গাছের বাকল পরিণত অবস্থায় ছাই, বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের এবং অমসৃণ ও ফাটল যুক্ত হয়।
এই গাছের যেটাকে আমরা অনেকেই পাতা বলি সেটি আসলে পাতা নয়, এটি মূলত পর্ণবৃন্ত। বীজ অঙ্কুরিত হবার পর পক্ষল যৌগিক পত্র ধারণ করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পত্রকগুলি ঝরে পড়ে। এর পর যৌগিক পত্রের বৃন্ত পরিবর্তিত হয়ে প্রসারিত, চ্যাপ্টা পাতার মত আকার ধারণ করে ও পাতার মত কাজ করে। সবুজ পর্ণবৃন্তগুলি ৮-২০ সেমি লম্বা ও ১-৪ সেমি চওড়া এবং মসৃণ। প্রতি পর্ণবৃন্তে ৩-৮ টি সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত শিরা থাকে।

গাঢ় হলুদ বা কমলা বর্ণের আকাশমনি ফুল থোকায় মঞ্জরীতে ফোটে। সত্যিই সুন্দর এর পুষ্পমঞ্জরি। কান্তাবর্ণা ঝুলন্ত মঞ্জরির শ্রীতে মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ এই গাছের নাম দিয়েছিলেন সোনাঝুরি। পুষ্পমঞ্জরী পাতার কক্ষ বা কান্ডের শীর্ষভাগ থেকে উৎপন্ন হয়। মঞ্জরীতে প্রচুর মুক্ত পুংকেশর থাকে যা পুষ্পমঞ্জরীকে একটি নির্দিষ্ট আকৃতি দেয়। ফুল উভকামী, ছোট, অবৃন্তক এবং সুবাসিত। বৃতি নলাকার, ০.১ সেমি লম্বা। দলমণ্ডল ৫ টি, আকারে ০.২ সেমি। গাছে ডিসেম্বর জানুয়ারী মাসে ফুল ধরে।

ফল চ্যাপ্টা, পরিপক্ক অবস্থায় প্যাঁচানো। ফলের বর্ণ কচি অবস্থায় সবুজ, পরিপক্ক অবস্থায় বাদামি। গাছে সাধারনত ফেব্রুয়ারী–মার্চ মাসে ফল ধরে। ফল প্রায় ৬.৫ সেমি লম্বা ও ১.৫ সেমি চওড়া। ০.৩-০.৪ সেমি চওড়া, উপবৃত্তাকার চকচকে কালো রঙের বীজ ফলের মধ্যে অনুপ্রস্থভাবে সাজানো থাকে।

কাঠ আসবাব ও চারকোল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। চা বাগানের ছায়াতরু হিসাবে এবং লাক্ষা চাষের কাজে এর ব্যবহার রয়েছে। বাকল থেকে নিষ্কাসিত রঙ বাটিক শিল্পে ব্যবহার করা হয়। এর বাকলে থাকে প্রচুর ট্যানিন (১৩-২৫%) যার কারনে এটি ট্যানিং এর কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
Kingdom: Plantae
Phylum: Spermatophyta
Subphylum: Angiospermae
Class: Dicotyledonae
Order: Fabales
Family: Fabaceae
Subfamily: Mimosoideae
Genus: Acaciaতথ্যসুত্র ঃ- গুগল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন