সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৬

নীল আকাশে কে ভাসাল সাদা মেঘের ভেলা

"আজি শরৎ তপনে প্রভাত স্বপনে কী জানি পরান কী যে চায়।
ওই শেফালির শাখে কী বলিয়া ডাকে বিহগ বিহগী কী যে গায় গো।।
আজি মধুর বাতাসে হৃদয় উদাসে, রহে না আবাসে মন হায়
কোন্‌ কুসুমের আশে কোন্‌ ফুলবাসে সুনীল আকাশে মন ধায় গো।।
আজি কে যেন গো নাই, এ প্রভাতে তাই জীবন বিফল হয় গো
তাই চারি দিকে চায়, মন কেঁদে গায় “এ নহে, এ নহে, নয় গো’।
কোন্‌ স্বপনের দেশে আছে এলোকেশে কোন্‌ ছায়াময়ী অমরায়।
আজি কোন্‌ উপবনে, বিরহবেদনে আমারি কারণে কেঁদে যায় গো।।
আজি যদি গাঁথি গান অথিরপরান, সে গান শুনাব কারে আর।
আমি যদি গাঁথি মালা লয়ে ফুলডালা, কাহারে পরাব ফুলহার।।
আমি আমার এ প্রাণ যদি করি দান, দিব প্রাণ তবে কার পায়।
সদা ভয় হয় মনে পাছে অযতনে মনে মনে কেহ ব্যথা পায় গো।।"

নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো ভাসছে সাদা মেঘ,হালকা হাওয়ায় কাশ ফুলের দোলা,বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ, জানিয়া দিলো মা আসছেন। 
ফটোঃ- রীতা নন্দী
 বাতাসে  শিউলি ফুলের গণ্ধ । হৃদয়ের গভীর গহনে সুর বাজে , 'আজি ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরির খেলা/ নীল আকাশে কে ভাসালো সাদা মেঘের ভেলা।' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাণে বেজে ওঠা তান বেজেছিল কাজী নজরুল ইসলামের মনেও। লিখেছিলেন তিনি, 'এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে/ এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ রথে।'
ফটোঃ- রীতা নন্দী
 ঋতুবদলের স্রোতে সেই শরৎ ফিরে এসেছে আবার। গ্রামাঞ্চল আর বহমান নদ-নদীর পাড়জুড়ে সাদা কাশ দুলে দুলে উঠছে। রৌদ্রালোকে আর বাতাসে বার্তা বইছে, শ্রাবণ ফুরিয়ে গেছে, এসেছে শরৎ।  ঋতুচক্রে বিচিত্র সব অনুভূতি-জাগানিয়া এই শরতের রঙ আজ গায়ে মেখেছে বাংলার প্রকৃতি। ভাদ্র মাসের নানা বৈশিষ্ট্য। তালপাকা গরম পড়ে এ মাসে। ভ্যাপসা, গুমোট তাপে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। অল্পবিস্তর বৃষ্টি হলেও দুঃসহ গরমে বাড়ে দুর্ভোগ। গ্রামগঞ্জে কাজের বেশ অভাব থাকে এ সময়ে। দিনমজুর ও সাধারণ মেহনতি মানুষকে তাই যথেষ্ট ভুগতে হয়।
ফটোঃ- রীতা নন্দী
 তবুও শরৎবন্দনা ছড়িয়ে আছে বাংলা সাহিত্যে। সেই বন্দনায় কবির লেখনীতে আক্ষেপও রয়েছে, 'এ সখী হামারি দুখের নাহি ওর/ এ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর।' শরতের আভাস স্পষ্ট করে পেতে অপেক্ষা করতে হবে সামনের আশ্বিন অবধি। নিত্যদিনের জীবনযাপনের ক্লান্তি ও বেঁচে থাকার প্রতিযোগিতার ফাঁকে কখন ভাদ্র এলো বা না এলো, সে খবর রাখার ফুরসত অনেকেরই নেই।   এই নীরব উপেক্ষা-অবহেলার পরও প্রকৃতি তার নিজের নিয়মে চলতে থাকে। বদলাতে থাকে। প্রকৃতির রূপবদলে সব সময়ই ফুলের ভূমিকা অনেকখানি। এই শরতে নানা রকম ফুলের বর্ণিল উচ্ছ্বাস, প্রস্ফুটন আর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সচরাচর বর্ষার ফুল ফোটাই অব্যাহত থাকে এই শরতে।  'শরতের ফুল মূলত _ কাশ,
ফটোঃ- রীতা নন্দী
 শিউলি
ফটোঃ- শ্রী মুখার্জি
  পদ্ম
ফটোঃ- গুগল সৌজন্যে
 শরতের শেষ দিকে ফোটে ছাতিম ফুল।
ফটোঃ- রীতা নন্দী
 খালে-বিলে-ঝিলে ফোটে  লাল শাপলা-শালুক।
ফটোঃ- গুগল সৌজন্যে
 আরও ফোটে কলমি ফুল।
ফটোঃ- তিতলি
  এই দুর্লভ দৃশ্য শুধু এই শরতে দেখা মেলে। কৃষ্ণচূড়া ফুল এখনও ফুটবে কিছু কিছু।
 এ সময়ের ফুলের মধ্যে রয়েছে হলুদ রঙা সোনালু ,



  জারুল, শ্বেতকাঞ্চন, এলামেন্ডা ইত্যাদি। 

বর্ষার ফুলের মধ্যে কামিনী তো আছেই। দু-চারটি গন্ধরাজও । ফুরুস (চেরি) ও থাকে  এই সময়টায়।'
  শরৎ মানেই ভিজে বাতাসে ভেসে আসা হাস্নুহানার বুনো গন্ধ।

 এই শরতে উদযাপিত হয় আমাদের  সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গোৎসব। মণ্ডপে মণ্ডপে বাজে ঢাক। সেই ঢাকের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয় কাশফুল। শীতের আগমনী বার্তা শুরু হয় এই শরতেই। এ ঋতুর শেষ দিকে ঘাসের ডগায় পড়তে থাকে শিশির বিন্দু।
  উমা আমাদের ঘরের মেয়ে,আমাদের বিশ্বাস দুর্গাপূজার কদিন উমা ছেলে- মেয়েদের নিয়ে আসে বাপের বাড়ি। প্রতি বছরের মত এ বছর," এসেছে শরৎ  হিমের পরশ লেগেছে হাওয়ার পরে ",.........।। আমার জীবনে সব ঋতু হারিয়ে গেছে   গত কয়েক মাস আগে হারিয়ে গেছে আমার স্বপ্ন,আমার জীীবন, আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন, আমার একমাত্র মেয়ে তিতলি,............ ও এখন চাঁদের দেশে মেঘ চাঁদ আর তারাদের সাথে । তোর প্রিয় চাঁদ আর তারাদের সাথে ভাল থাকিস মা ,............।


 শরতে উমা এসেছে বাপের বাড়ী , আমার উমা আসেনি আর কোনদিন আসবে না,........... আমার উমা তিতলি আর কোনদিন আর ওর বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বায়না করবে না,......... আমার জীবনে আর শরৎ  আসবে না কখনও।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন