"এসো নীপবনে ছায়াবিথী তলে
এসো করো স্নান নবধারা জলে
দাও আকুলিয়া ঘন কালো কেশ
পরো দেহ ঘেরি মেঘ নীল বেশ
কাজল নয়নে যূঁথী মালা গলে
এসো নীপবনে ছায়াবিথী তলে
এসো করো স্নান নবধারা জলে
আজি ক্ষণে ক্ষণে হাসিখানি সখী
আঁধারে নয়নে উঠুক চমকিয়া
আজি ক্ষণে ক্ষণে
মল্লারো গানে তব মধু স্বরে
দিক বাণী আনি বন মর্মরে
ঘন বরিষণে জল কলকলে"
আজ বর্ষার ফুলের কথা বলি -----
‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা,
খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি
দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার,
ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!’
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতায় ফুলের প্রতি কবির অনুরাগ গভীরভাবে ফুটে উঠেছে। শুধু কবি নন, প্রকৃতির সুন্দর এই সৃষ্টির প্রতি মানুষের ভালোলাগা নতুন নয়। দেশ-কাল ছাড়িয়ে এই ভালোলাগা পৃথিবীর সব জাতির মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। আর সে কারণেই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তবাসী মানুষ মুগ্ধতা, ভালোবাসা, শুভেচ্ছা এমনকি সহানুভূতি প্রকাশে যুগ যুগ ধরে ফুলের শরণাপন্ন হচ্ছেন।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত যখন `ফুলের ফসল` কবিতাটি লিখেছিলেন তখন ফুল কতটা বিক্রি হতো, আর হলেও ক্রেতা কারা ছিলেন সেটা গবেষণার বিষয়। ফুলের ক্রেতার সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে এটা বলা যায়। বিক্রেতারাও বসে নেই। তারা এ ব্যবসাটিকে বেশ গুছিয়ে এনেছেন। এবং ব্যবসায়ীক স্বার্থেই তারা বারো মাসে বারো রকমের ফুল ক্রেতার হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করছেন। ফলে বিভিন্ন জায়গায় ফুলের চাষ হচ্ছে।
ফুল সংস্কৃতির সূচনা কিন্তু আজ হয়নি। যখন ঘটা করে ফুলের চাষ হতো না, বিদেশী ফুল গাছে যখন ভরে যায়নি বারান্দায় রাখা টবের উর্বর মাটি, যখন বন্য ফুলই ছিল মৌমাছির মধু আহরণের প্রধান মাধ্যম, সেই দিনগুলোতেও দেশীয় বিভিন্ন ফুল দিয়ে মানুষ ঘর সাজাতো। ভালোবেসে প্রিয়জনের হাতে তুলে দিত বিলের পদ্ম বা শাপলা। অথবা প্রিয়জনের খোঁপায় গুজে দিত বৃষ্টিস্নাত কদম ফুল। কবিগুরুর কবিতায় আমরা এমন অনেক উপমা পাই। তিনি লিখেছেন, ‘অলকে কুসুম না দিও, শীতল কবরী বাঁধিও।’ এই কবরী হচ্ছে খোঁপা। মেয়েদের কবরী বেঁধে সৌন্দর্য প্রকাশের এই বিলাসিতা বহু বাগে থেকেই প্রচলিত। ফুল ছাড়া এই সৌন্দর্য একেবারেই অসম্পূর্ণ।
কদম, শাপলা এ দুটোই বর্ষার ফুল। ছয় ঋতুর এই দেশে ঋতুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুল ফোটে। অথবা এও বলা যায়, ফুল ফোটে বলেই আমরা বুঝতে পারি আজ বর্ষা, আজ বসন্ত। বর্ষার ফুল, শীতের ফুল, বসন্তের ফুল এমনকি কাঠ ফাটা রোদে মাটি যখন চৌচির তখন সেই মাটিতেও ফুটতে দেখা যায় গ্রীষ্মের ফুল। এখন বর্ষা, সে কারণে এ সময়ের ফুল নিয়েই এই লেখার আয়োজন।
আগেই বলেছি কদম বর্ষার ফুল। এই বর্ষায় আরো ফুল ফোটে। আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টি সেইসব ফুলের পাপড়ি বেয়ে নেমে আসে মাটিতে। সেই বৃষ্টির জলে মিশে থাকে ফুলের সুবাস। কদমের কথাই যদি বলি, তাহলে বলতে হয়, কদম ফুল বর্ষার আগমনী গান শোনায়। গ্রামে গ্রামে কদম গাছে ফুল ফুটতে দেখেই বুঝি পশ্চিমের আকাশে মেঘ এসে ভিড় করে। মেঘদল আয়োজন করে বৃষ্টির।
অথচ কদম কিন্তু আমাদের নয়, এই গাছের আদি নিবাস চীনে। আরেকটি ব্যাপার কদম একটিমাত্র ফুল নয়, কদমের মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র ফুলের বিন্যাস থাকে। কদম গাছের পাতা বেশি হলেও পাতার ফাঁকে উজ্জ্বল আর্কষণীয় কদম ফুল দূর থেকে চোখে পড়ে।আষাঢ়-শ্রাবণ দু’মাস বর্ষাকাল। বাংলা বর্ষপরিক্রমায় বর্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। বলা হয়ে থাকে, বর্ষা ঋতুতেই জীবনের প্রথম কাব্য রচনা করেন বাংলার কবিরা। আর বর্ষার এ আষাঢ়কে বরণ করতে এমন একদিন হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, যে দিন ‘কদম’ ছাড়াই আমাদের মাঝে আষাঢ় আসবে! তবে প্রকৃতির মাঝ থেকে কদম গাছ হারিয়ে গেলেও বাংলা সাহিত্যের রিমিঝিমি আষাঢ় কদম ফুলকে তার সঙ্গী করে রাখবে চিরতরে।
অলকানন্দা গুল্ম জাতীয় ফুল গাছ। এই ফুলের নিবাস ব্রাজিলে। ফুলটি দেখতে ঠিক ঘণ্টার মতো। আর এ কারণেই এই ফুলকে অনেকে ‘ঘণ্টাফুল’ বলেন। বর্ষা এলেই ফুলে ফুলে ভরে যায় গাছ। জাতভেদে ফুলের রঙ সোনালী, হলুদ, লালি এবং গোলাপীও হয়ে থাকে।
পদ্ম বর্ষার বড় আকর্ষণ। এটি আমাদের জাতীয় ফুল। এ সময় বিল, পুকুর ও পতিত জলাধারে জল জমে। সেই জলে পদ্ম ও শাপলা জন্মে।
পদ্মের কন্দ বা মূল জলের নিচে মাটিতে থাকে। এর পাতা বড় গোলাকার, বোঁটা লম্বা। আমাদের দেশে সাদা, গাঢ় লাল, নীল ও গোলাপী রঙের পদ্ম ও শাপলা দেখা যায়।
রঙ্গন শোভার্বধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে অতি জনপ্রিয়। এই ফুলের আদি নিবাস সিঙ্গাপুর।
রঙ্গন ঘন চিরসবুজ গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। থোকা থোকা রঙ্গন ফুল দূর থেকেই নজরে পড়ে। ফুল নলাকৃতি। পাপড়ির বিন্যাস তারার মতো। ফলে জোছনা রাতে এই ফুলের ওপর যখন বৃষ্টি ঝড়ে তখন সেগুলোকে আকাশের তারা বলে মনে হতে পারে। আর সেগুলো যদি সাদা রঙ্গন হয় তাহলে এই ভুল খুব সাধারণ ব্যাপার।
সন্ধ্যামালতির বাড়ি কোথায় কে জানে? তবে বইয়ের পাতা উল্টিয়ে যতটুকু জানা গেল এই ফুল এসেছে আমেরিকা ও পেরুর বনাঞ্চল থেকে।
অর্থাৎ এই ফুলটিকে সেখানে বন্য ফুল হিসেবেই ধরা হয়। অথচ তারা এদেশে এসে দিব্যি বাড়ির উঠানের পাশে অথবা টবে চড়ে বসেছে। বিকাল বা সন্ধ্যায় গাছে এই ফুল ফোটে বলে ‘সন্ধ্যামালতি’ বলা হয়। সাদা, হলুদ, গোলাপি ছাড়াও বিভিন্ন রঙের সন্ধ্যামালতি ফুল আমাদের দেশে দেখা যায়।
সন্ধ্যামালতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এক গাছেই বিভিন্ন রঙের ফুল ফুটতে দেখা যায়।
কামিনীর আদি নিবাস দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায়। গাছটি ঝোঁপের মতো ৩ থেকে ৫ মিটার লম্বা হয়। ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে প্রতি গুচ্ছে অসংখ্য ফুল থাকে। এ ফুলের মধুর মিষ্টি সুঘ্রাণ অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
বর্ষার আরেক সুন্দর গন্ধশ্রাবী ফুল বকুল। পাঁচ বৃন্তের এ ফুলে অসংখ্য পাপড়ি হয় । বর্ষায় বকুল বেশি ফোটে। ফুল শুকিয়ে গেলেও সুবাস থাকে অনেক দিন।
এই বর্ষায় ভালোলাগার আরেকটি ফুল হলো টগর।
ঝুমকোলতাও বর্ষার ফুল। ঝুমকোলতার আদি নিবাস ব্রাজিলে। সেখান থেকে এ দেশে এই ফুল কীভাবে এলো সে এক রহস্য বটে! এ ক্ষেত্রে সাধারণত যে ঘটনাটি ঘটে তা হলো, অতিথিদের উপহার বা তাদের সঙ্গে করে এদেশে নিয়ে আসা।
এই অতিথি আবার দু’রকম হতে পারে। অতিথি পাখি এবং মানুষ। ব্রিটিশ, পর্তুগিজ বা ফরাসিদের মাধ্যমে এ দেশে যে ফুল আসেনি তা বলা যাবে না। অতিথি পাখিদের ক্ষেত্রেও এ কথা বলা যায়। আর বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ভিনদেশ থেকে ফুল নিয়ে আসা ভিন্ন ব্যাপার। সে শুরু হয়েছে খুব বেশিদিনের কথা নয়।
যাই হোক, ঝুমকোলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের ত্রিশুল আকৃতির। ফুল খাঁজকাটা ও বেগুনী রঙের। এই ফুলের হালকা পরাগরেণু ফুলের বৈচিত্র্য অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। বর্ষার শুরুতে প্রচুর ঝুমকোলতা ফোটে।
বৃষ্টি ভেজা তাতে যার আমাদের আকুল করে তা হল গন্ধরাজ । গন্ধরাজ ফুলের ইংরেজি নামকরন করা হয়ে একজন বিখ্যাত আমেরিকান প্রকৃতিবিদ ড: আলেকজেন্ডার গার্ডেন (১৭১৩ – ১৭৯১) এর নাম অনুসারে।কফি গাছ প্রজাতির এই উদ্ভিদ চির সবুজ ১৫ মিটার পর্য়ন্ত উঁচু হয়।
এসো করো স্নান নবধারা জলে
দাও আকুলিয়া ঘন কালো কেশ
পরো দেহ ঘেরি মেঘ নীল বেশ
কাজল নয়নে যূঁথী মালা গলে
এসো নীপবনে ছায়াবিথী তলে
এসো করো স্নান নবধারা জলে
আজি ক্ষণে ক্ষণে হাসিখানি সখী
আঁধারে নয়নে উঠুক চমকিয়া
আজি ক্ষণে ক্ষণে
মল্লারো গানে তব মধু স্বরে
দিক বাণী আনি বন মর্মরে
ঘন বরিষণে জল কলকলে"
আজ বর্ষার ফুলের কথা বলি -----
বৃষ্টিভেজা ফুলের সাথে আমার তিতলি মা |
‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা,
খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি
দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার,
ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!’
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতায় ফুলের প্রতি কবির অনুরাগ গভীরভাবে ফুটে উঠেছে। শুধু কবি নন, প্রকৃতির সুন্দর এই সৃষ্টির প্রতি মানুষের ভালোলাগা নতুন নয়। দেশ-কাল ছাড়িয়ে এই ভালোলাগা পৃথিবীর সব জাতির মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। আর সে কারণেই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তবাসী মানুষ মুগ্ধতা, ভালোবাসা, শুভেচ্ছা এমনকি সহানুভূতি প্রকাশে যুগ যুগ ধরে ফুলের শরণাপন্ন হচ্ছেন।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত যখন `ফুলের ফসল` কবিতাটি লিখেছিলেন তখন ফুল কতটা বিক্রি হতো, আর হলেও ক্রেতা কারা ছিলেন সেটা গবেষণার বিষয়। ফুলের ক্রেতার সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে এটা বলা যায়। বিক্রেতারাও বসে নেই। তারা এ ব্যবসাটিকে বেশ গুছিয়ে এনেছেন। এবং ব্যবসায়ীক স্বার্থেই তারা বারো মাসে বারো রকমের ফুল ক্রেতার হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করছেন। ফলে বিভিন্ন জায়গায় ফুলের চাষ হচ্ছে।
ফুল সংস্কৃতির সূচনা কিন্তু আজ হয়নি। যখন ঘটা করে ফুলের চাষ হতো না, বিদেশী ফুল গাছে যখন ভরে যায়নি বারান্দায় রাখা টবের উর্বর মাটি, যখন বন্য ফুলই ছিল মৌমাছির মধু আহরণের প্রধান মাধ্যম, সেই দিনগুলোতেও দেশীয় বিভিন্ন ফুল দিয়ে মানুষ ঘর সাজাতো। ভালোবেসে প্রিয়জনের হাতে তুলে দিত বিলের পদ্ম বা শাপলা। অথবা প্রিয়জনের খোঁপায় গুজে দিত বৃষ্টিস্নাত কদম ফুল। কবিগুরুর কবিতায় আমরা এমন অনেক উপমা পাই। তিনি লিখেছেন, ‘অলকে কুসুম না দিও, শীতল কবরী বাঁধিও।’ এই কবরী হচ্ছে খোঁপা। মেয়েদের কবরী বেঁধে সৌন্দর্য প্রকাশের এই বিলাসিতা বহু বাগে থেকেই প্রচলিত। ফুল ছাড়া এই সৌন্দর্য একেবারেই অসম্পূর্ণ।
কদম, শাপলা এ দুটোই বর্ষার ফুল। ছয় ঋতুর এই দেশে ঋতুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুল ফোটে। অথবা এও বলা যায়, ফুল ফোটে বলেই আমরা বুঝতে পারি আজ বর্ষা, আজ বসন্ত। বর্ষার ফুল, শীতের ফুল, বসন্তের ফুল এমনকি কাঠ ফাটা রোদে মাটি যখন চৌচির তখন সেই মাটিতেও ফুটতে দেখা যায় গ্রীষ্মের ফুল। এখন বর্ষা, সে কারণে এ সময়ের ফুল নিয়েই এই লেখার আয়োজন।
আগেই বলেছি কদম বর্ষার ফুল। এই বর্ষায় আরো ফুল ফোটে। আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টি সেইসব ফুলের পাপড়ি বেয়ে নেমে আসে মাটিতে। সেই বৃষ্টির জলে মিশে থাকে ফুলের সুবাস। কদমের কথাই যদি বলি, তাহলে বলতে হয়, কদম ফুল বর্ষার আগমনী গান শোনায়। গ্রামে গ্রামে কদম গাছে ফুল ফুটতে দেখেই বুঝি পশ্চিমের আকাশে মেঘ এসে ভিড় করে। মেঘদল আয়োজন করে বৃষ্টির।
অথচ কদম কিন্তু আমাদের নয়, এই গাছের আদি নিবাস চীনে। আরেকটি ব্যাপার কদম একটিমাত্র ফুল নয়, কদমের মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র ফুলের বিন্যাস থাকে। কদম গাছের পাতা বেশি হলেও পাতার ফাঁকে উজ্জ্বল আর্কষণীয় কদম ফুল দূর থেকে চোখে পড়ে।আষাঢ়-শ্রাবণ দু’মাস বর্ষাকাল। বাংলা বর্ষপরিক্রমায় বর্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। বলা হয়ে থাকে, বর্ষা ঋতুতেই জীবনের প্রথম কাব্য রচনা করেন বাংলার কবিরা। আর বর্ষার এ আষাঢ়কে বরণ করতে এমন একদিন হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, যে দিন ‘কদম’ ছাড়াই আমাদের মাঝে আষাঢ় আসবে! তবে প্রকৃতির মাঝ থেকে কদম গাছ হারিয়ে গেলেও বাংলা সাহিত্যের রিমিঝিমি আষাঢ় কদম ফুলকে তার সঙ্গী করে রাখবে চিরতরে।
অলকানন্দা গুল্ম জাতীয় ফুল গাছ। এই ফুলের নিবাস ব্রাজিলে। ফুলটি দেখতে ঠিক ঘণ্টার মতো। আর এ কারণেই এই ফুলকে অনেকে ‘ঘণ্টাফুল’ বলেন। বর্ষা এলেই ফুলে ফুলে ভরে যায় গাছ। জাতভেদে ফুলের রঙ সোনালী, হলুদ, লালি এবং গোলাপীও হয়ে থাকে।
পদ্ম বর্ষার বড় আকর্ষণ। এটি আমাদের জাতীয় ফুল। এ সময় বিল, পুকুর ও পতিত জলাধারে জল জমে। সেই জলে পদ্ম ও শাপলা জন্মে।
পদ্মের কন্দ বা মূল জলের নিচে মাটিতে থাকে। এর পাতা বড় গোলাকার, বোঁটা লম্বা। আমাদের দেশে সাদা, গাঢ় লাল, নীল ও গোলাপী রঙের পদ্ম ও শাপলা দেখা যায়।
রঙ্গন শোভার্বধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে অতি জনপ্রিয়। এই ফুলের আদি নিবাস সিঙ্গাপুর।
রঙ্গন ঘন চিরসবুজ গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। থোকা থোকা রঙ্গন ফুল দূর থেকেই নজরে পড়ে। ফুল নলাকৃতি। পাপড়ির বিন্যাস তারার মতো। ফলে জোছনা রাতে এই ফুলের ওপর যখন বৃষ্টি ঝড়ে তখন সেগুলোকে আকাশের তারা বলে মনে হতে পারে। আর সেগুলো যদি সাদা রঙ্গন হয় তাহলে এই ভুল খুব সাধারণ ব্যাপার।
সন্ধ্যামালতির বাড়ি কোথায় কে জানে? তবে বইয়ের পাতা উল্টিয়ে যতটুকু জানা গেল এই ফুল এসেছে আমেরিকা ও পেরুর বনাঞ্চল থেকে।
অর্থাৎ এই ফুলটিকে সেখানে বন্য ফুল হিসেবেই ধরা হয়। অথচ তারা এদেশে এসে দিব্যি বাড়ির উঠানের পাশে অথবা টবে চড়ে বসেছে। বিকাল বা সন্ধ্যায় গাছে এই ফুল ফোটে বলে ‘সন্ধ্যামালতি’ বলা হয়। সাদা, হলুদ, গোলাপি ছাড়াও বিভিন্ন রঙের সন্ধ্যামালতি ফুল আমাদের দেশে দেখা যায়।
সন্ধ্যামালতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এক গাছেই বিভিন্ন রঙের ফুল ফুটতে দেখা যায়।
কামিনির সাথে আমার ফুলেরা |
কামিনীর আদি নিবাস দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায়। গাছটি ঝোঁপের মতো ৩ থেকে ৫ মিটার লম্বা হয়। ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে প্রতি গুচ্ছে অসংখ্য ফুল থাকে। এ ফুলের মধুর মিষ্টি সুঘ্রাণ অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
বৃষ্টিস্নাত কামিনী |
বর্ষার আরেক সুন্দর গন্ধশ্রাবী ফুল বকুল। পাঁচ বৃন্তের এ ফুলে অসংখ্য পাপড়ি হয় । বর্ষায় বকুল বেশি ফোটে। ফুল শুকিয়ে গেলেও সুবাস থাকে অনেক দিন।
এই বর্ষায় ভালোলাগার আরেকটি ফুল হলো টগর।
টগর |
ঝুমকোলতাও বর্ষার ফুল। ঝুমকোলতার আদি নিবাস ব্রাজিলে। সেখান থেকে এ দেশে এই ফুল কীভাবে এলো সে এক রহস্য বটে! এ ক্ষেত্রে সাধারণত যে ঘটনাটি ঘটে তা হলো, অতিথিদের উপহার বা তাদের সঙ্গে করে এদেশে নিয়ে আসা।
ঝুমকোলতা |
এই অতিথি আবার দু’রকম হতে পারে। অতিথি পাখি এবং মানুষ। ব্রিটিশ, পর্তুগিজ বা ফরাসিদের মাধ্যমে এ দেশে যে ফুল আসেনি তা বলা যাবে না। অতিথি পাখিদের ক্ষেত্রেও এ কথা বলা যায়। আর বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ভিনদেশ থেকে ফুল নিয়ে আসা ভিন্ন ব্যাপার। সে শুরু হয়েছে খুব বেশিদিনের কথা নয়।
যাই হোক, ঝুমকোলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের ত্রিশুল আকৃতির। ফুল খাঁজকাটা ও বেগুনী রঙের। এই ফুলের হালকা পরাগরেণু ফুলের বৈচিত্র্য অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। বর্ষার শুরুতে প্রচুর ঝুমকোলতা ফোটে।
বৃষ্টি ভেজা তাতে যার আমাদের আকুল করে তা হল গন্ধরাজ । গন্ধরাজ ফুলের ইংরেজি নামকরন করা হয়ে একজন বিখ্যাত আমেরিকান প্রকৃতিবিদ ড: আলেকজেন্ডার গার্ডেন (১৭১৩ – ১৭৯১) এর নাম অনুসারে।কফি গাছ প্রজাতির এই উদ্ভিদ চির সবুজ ১৫ মিটার পর্য়ন্ত উঁচু হয়।
বর্ষাকালের কিছু ফুলের কথা বলেছেন। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌদন্দের্য্যের দিকটা সুন্দর ভাবে ফুঠে উঠেছে। ঋতু ঋতু নিয়ে আরো লিখার আহবান রেখে ইতি টানলাম।
উত্তরমুছুননাইস হয়ছ।
মুছুন