সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৬

বিশল্যকরণী

"আর ঠিক তেমনি ,তোমার বুকের ঠিক মাঝখানটাতে ,
    শিরশিরিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে যন্ত্রণার যে বিষ-পোকাগুলো
        আমার শক্ত আঙুলের ফাঁকে ,তীক্ষ্ণ নখের পরে ,
            একটা একটা করে টিপে মারার জন্য যদি বলতে ,..........
সমুদ্র তোলপাড় করে, পাহাড়ের চুড়ো ডিঙিয়ে ,অরণ্যের বেড়া ভেঙে
    সেই বিশল্যকরণী -লতা ঠিক নিয়ে এসে ,
        পাতাগুলি তোমার পায়ে ঠেকিয়ে বলতাম,...
            এই দ্যাখো,......তুমি চাইলে কি না দিতে পারি আমি ,.....




 বিশল্যকরণী বি. (রামা.) শল্য-উন্মোচন ও ব্যথানিবারণের ওষুধরূপে বর্ণিত লতাবিশেষ।বানর বা ভল্লুক পুজকদের চিকিৎসা যে বেশ উন্নত তাও বাল্মিকীর রচনায় পাওয়া যায়।  রাম এবং লক্ষণের জন্য আনা বিশল্যকরণীর জ্ঞান এদের ছিল। কিন্তু বালিকে বিশ্বাসঘাতকতা করে সুগ্রীবের সাহায্যে রাম হত্যা করার পর থেকে সুগ্রীব শাসনের জন্য নিজেদের চিকিৎসক এই জরা গোষ্ঠীকে দমন করে।  রাজা বালির অনুরাগী ছিল এই গোষ্ঠী।  সেই জন্যই 'রামায়ণ' কাহিনী নির্মাণের সময়েও মহাকবি বাল্মিকীকে খেয়াল রাখতে হয় যে হনুমান চিনবে না বিশল্যকরণী।  বহু গাছ-পাতা তুলে আনতে হয় হিমালয় থেকে রাম-লক্ষণের চিকিৎসায়।  চারটি বিশেষ বৃক্ষ ছিল।  মৃত-সঞ্জীবনী,  বিশল্যকরণী,  সুবর্ণকরণী ও সন্ধানী।  মৃত সঞ্জীবনী মৃতকে প্রাণ দিতে পারে।  বিশল্যকরণী পারে অস্ত্রের ঘা সারিয়ে তুলতে।  সুবর্ণকরণীর পক্ষে সম্ভব অসুস্থতায় রং পাল্টে যাওয়া শরীরের রং ফেরানো।  আর কাটা অঙ্গ জোড়া বা ভাঙা হাড় জোড়ার কাজ করে সন্ধানী।  সে বৃক্ষের সন্ধান শুধু জানা ছিল হিমালয়নিবাসী রিক্ষরাজ জাম্বোবানের।  কথিত যে দেবতাদের থেকে অমৃত-মন্থনের সময় জাম্বোবান জেনেছিলেন এই বিশল্যকরণীর কথা।


"হয়তো বা মনে নেই ... না কি তুমি খেয়ালই করনি, এই বনে সমস্ত রেখেছ, মন্দার পারিজাত অশোক বকুল... শুধু নেই বিশল্যকরণী আমি তোর অনিবার্য জন্মজলে ভেসে যাওয়া ভ্রূণ অপ্রতিভ শব্দহীন আর্তনাদে ঝরে পড়া অরণ্যপ্রসূন! অসতর্ক ভ্রূণঘাতী সফরের পরে... প্রতিদিন ঢুকে যাই সারোগেট জননীজঠরে। প্রাণরস, মায়াময় অমরার কাছে... বিশল্যকরণী খুঁজি... এ অরণ্যে আনাচে কানাচে... আমাকে রেখেছে বাজি... কিতবের পাশা... ঘনশ্বাস ওঠাপড়া... কি জানি কে জেতে... বিলাসী অক্ষ ছিটকে পড়েছে মেঝেতে... এত জল... এত জল... তবু কেন এমন পিপাসা... অসময়ে বন্যা এসে ভাসিয়েছে সময়সরণি ভেসে গেছে স্বপ্নে দেখা প্রাণগুল্ম... বিশল্যকরণী... আপাততঃ বন্ধ রাখি ভাসানের ধারাবিবরণী। ঋত্বিকেরা সমবেত, ক্ষিতি স্থির বায়ু স্থির, যজ্ঞভূমি আগ্রহে অধীর... অরণ্য স্তব্ধবাক... হয়তো বা কিছুটা বধির... এরপর যা যা ঘটবে... ভেবে নিতে নেই অসুবিধে... আমাকে মিশিয়ে দিবি যজ্ঞকুন্ডে পবিত্র সমিধে। জ্বলবে অরণি... আগেই তো জেনে গেছি... তোর বনে নেই মাগো... বিশল্যকরণী..."

১১টি মন্তব্য:

  1. গাছটি অন্য নাম জানা থাকলে জানাবেন কি?

    উত্তরমুছুন
  2. আমি কুন্তল দে । আমাদের বাড়িতে বিশল্যকরণী গাছ আছে । আমি এই গাছের সম্পরকে জানতে চাই । 7001561703

    উত্তরমুছুন
  3. প্রকৃত নাম : কণ্ট বিশল‍্যকরণী
    ই‍ংরেজী নাম : Hop-headed Barleria
    বিজ্ঞানসম্মত নাম : Barleria lupulina

    উত্তরমুছুন