শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৬

শহুরে জীবনে সবুজের ছোঁয়া ---- Indoor plants


কিছুদিন আগেই আমার সম্পর্কিত বোন সোমার সাথে কথা হচ্ছিল।  কথাপ্রসঙ্গে ও বলছিলো ,ওর ও বললো ওর ও ভীষণ সবুজের শখ, কিন্তু ওর ফ্ল্যাটে জায়গার বড়ো অভাব।  আমার মনে হলো এ সমস্যা শুধু আমার বোন সোমার নয় , আজকের এই নাগরিক সভ্যতায় এ সমস্যা শহরে বাস করা প্রতিটি প্রতিটি মানুষের।
মানুষ স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতিপ্রেমী। সবুজের প্রতি সবার আলাদা একটা আকর্ষণ রয়েছে। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বনানী দেখে বিমুগ্ধ হন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সবুজের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার সহজ স্বীকারোক্তি প্রতিটি প্রকৃতিপ্রেমীর মাঝেই দেখা যায়। যদিও ইট কংক্রিটের প্রাচীরে ঘেরা এ কৃত্রিম শহরে সবুজের দেখা পাওয়া দুষ্কর। ফলে প্রকৃতি প্রেমীর মনের অনুভূতিগুলোও যেন গুমরে কাঁদে এ চার দেয়ালের মাঝেই। ইট-কংক্রিটের ফাঁক গলিয়ে একটু সবুজ উঁকি দিলে, তা-ই পাওয়ার অনাবিল আনন্দে ভরে ওঠে মন। এ পাওয়ার আনন্দকে উপভোগ করতেই আজকাল অনেক মানুষই  কৃত্রিমতার মাঝে প্রাণের স্পন্দন সৃষ্টি করছেন নিজ আঙ্গিনা বা ঘরের কোণটিকে সাজিয়ে।
শুধু সৌন্দর্য নয়, আজকের দূষিত পরিবেশে আপনার ঘরকে দূষণমুক্ত রাখতে কিছু কিছু গাছের ভূমিকা অপরিসীম।  এই সবুজের সমাবেশে কিভাবে আপনার ঘরে ইন্টেরিয়রে প্রকৃতির ছোঁয়া লাগবে তা আলোকপাত করার চেষ্টা করেই এই প্রতিবেদনের অবতারণা।

বেডরুম
নিজের বেডরুম  সবার কাছেই একান্ত  আপন ভুবন হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। নিজের  ছোট্ট এ ভুবনটিকে নিজের মতো করে সাজানোর বাসনা কম-বেশি প্রতিটি মানুষের মধ্যেই থাকে। তবে বেডরুমটিতে  কিভাবে সবুজের ছোঁয়া দেবেন  তা অনেকটাই নির্ভর করবে এটির  আকার কেমন তার ওপর। এটির  আকৃতি যদি একটু বড় হয় তাহলে বড় মাটির টবে রাখতে পারেন ফাইকাস ইলাস্টিকা (রবার গাছ), পাতা বাহার কিংবা একটু বড় আকৃতির ফান। ঘরের জানালার ধার ঘেঁষে একটু জায়গা থাকলে সেখানে রাখা যেতে পারে ইউফরবিয়া, ক্যালাথিয়া কেলিয়াস ব্রম্নমাই বা সারমেটাসা। ঘরের আকৃতি তুলনামূলক ছোট হলে ছোট্ট মাটির টবে রাখতে পারেন ছোট ফার্ন গাছ কিংবা পাথরকুচি । ভিন্নতা আনতে বড় পাতার বাহারি গাছ যেমনু কার্ডিলাইনে টার্মিনালিস, কেলিয়াস ব্রম্নমাই, ফরকেরিয়ার মতো গাছের সমারোহ ঘটাতে পারেন আপনার ছোট্ট ঘরটিতে । কাঁচের জারে বা বোতলে রাখতে পারেন মানি প্লান্ট , বাহারি ক্রোটন কিংবা ফাইকাস জাতীয় গাছ। বাড়িতে বাগান থাকলে বেডরুমের  ফুলদানিটিকে সাজাতে পারেন নিজ বাগানের ফুলে যা আমোদিত করে রাখবে আপনাকে এবং আপনার চারপাশকে।


ড্রইংরুম
একটি সাদামাটা ড্রইংরুমের  আর্টিস্টিক ভাব ফুটে উঠতে পারে মাটির পটারি ও সবুজের  সম্মিলনে। আপনার ড্রইংরুমের  কোণ ঘেঁষে বিভিন্ন আকৃতির মাটির পটারিতে শোভা পেতে পারে অ্যানুথরিয়াম, কার্ডিলাইনে পেপেরোমিয়া, ফাইকাস, বিগোনিয়া রেঙ্ বা সাইপেয়াস। ড্রইংরুমের  জানালায় ঝুলন্ত টবে  রাখতে পারেন অ্যাডিয়ান্টাম, অ্যাসপারাগাস, জেব্রিনা, ট্রাডেসকানসিয়া, সিন্দাপাস নেফ্রোলেপিসের মতো বিশেষ প্রজাতির গাছ। জায়গার অপ্রতুলতা থাকলে দেয়ালের সঙ্গে কার্ভ করে লাগিয়ে নিতে পারেন রড আয়রনের সেলফ। সেলফের ওপর রাখতে পারেন বনসাই, ব্যাম্বো ট্রি কিংবা ছোট্ট ফণিমনসার গাছ।

বারান্দা
বাড়ির সামনে বড় আঙ্গিনা থাকবে, সে আঙ্গিনা ভরে থাকবে শুধুমাত্র ফুলের গাছে। শহুরে জীবনে এ ধরনের চিন্তা যদিও অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে এ অলীক কল্পনাতেও কিছুটা বাস্তবতার  ছোঁয়া লাগতে পারে বারান্দাটা কাজে লাগাতে পারলে। ঘরের সামনের ছোট্ট বারন্দাটিতে রাখতে পারেন গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা , ডালিয়া ইত্যাদি ফুল। ফুলের পাশাপাশি আপনার সংগ্রহে থাকতে পারে পাতাবাহার, মানিপ্লান্ট , পাথরকুঁচি, আলো, ক্যালাডিয়াম, কোডিয়াম ভ্যারিগেটাম, বাহারি ক্রোটন, ইরান্থেমাম, রিয়ো বিগেনিয়া, অ্যাডিয়েন্টাম প্রভৃতি গাছ।
বাগান : আপনার বাড়ির সামনে যদি খালি জায়গা থাকে সেখানে গড়ে তুলতে পারেন চমৎকার ছোট্ট একটি বাগান। সে বাগানে লাগাতে পারেন ফাইকাস গণ ও অ্যাসপারাগাসের বেশ কিছু প্রজাতি যেমন ইলাস্টিকা, ট্রাঙ্গুলারিস, ড্রাসিনা, মহাত্মা ড্রসিনা গ্রীন, অ্যালপাইন, বেঞ্জামিন, লাইরাটা, ফ্যাতসিয়া, জাপনিকা, অ্যারোলিয়া ব্রড লিফ, গ্রেভেলিয়া রোবাস্টার ধরনের গাছ-গাছালি। এগুলোর মধ্যে এমন কিছু গাছ আছে যা বড় টবে রাখা যায়।

উইন্ডো গার্ডেন
অনেক বাড়িতে বাগান না থাকলেও জানালার সামনে বেশ খানিকটা জায়গা খালি থাকে। ঐ জায়গাটিকে গ্রিল দিয়ে ঘিরে তৈরি করতে পারেন উইন্ডো গার্ডেন। এই উইন্ডো গার্ডেনে থাকতে পারে অ্যানথুরিয়াম, কার্ডিলাইনে, পেপে রোমিয়া, ফাইকাস, বিগোনিয়া রেঙ্, সাইপেরাস প্রভৃতি গাছ।

সিঁড়িঘর
সিঁড়ি ঘরে আপনার দরজাটির কোণ ঘেঁষে ভিন্ন আকৃতির পটারি রাখতে পারেন। আর এসব পটারিতে রাখতে পারেন ফণিমনসা, পাতাবাহার, পাথরকুঁচি বা মানিপস্ন্যান্ট। দরজার দু'পাশের দেয়ালে মাটির পাত্র ঝুলিয়ে তাতে লাগাতে পারেন বাহারি রঙের গাছ-গাছালি। রড আয়রনের ছোট্ট তাকও বসাতে পারেন সিঁড়ি ঘরের এক কোণে বা মাঝখানে। তাকে রাখতে পারেন সুদৃশ্য ও ভিন্ন আকারের পাতাবাহার।
একটু চেষ্টা আর বুদ্ধি খাটিয়ে কংক্রিটের খাঁচার ভেতরেও রচনা করা যায় এক টুকরো সবুজ স্বর্গ। সবুজ মানুষের মনে প্রশান্তি  এনে দেয়। সজীব করে দেয় চারপাশ। বাড়ির ব্যালকনি কিংবা উইন্ডো বঙ্ইে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে  প্রথমে যেটা বিবেচনা করতে হবে সেটা হলো নির্বাচিত জায়গাটিতে কতটা সূর্যের আলো পাওয়া যাচ্ছে। পরিচর্যার জন্য বেশি সময় নেয় এমন গাছ পছন্দ না করাই ভাল। এতে বাড়তি সময় নষ্ট হতে পারে। গাছে কি ফুল ফোটাবেন তা আপনার নিজস্ব  ব্যাপার। তবে তার সঙ্গে ঘরের দেয়ালের রঙ, পর্দার রঙ এমনকি আসবাবপত্রের রঙেরও সামঞ্জস্য রাখতে পারেন। তবে সব মিলিয়ে ঘরে একটা ছবির মতো লুক আসবে।

জেনে রাখুন
০ এয়ার কন্ডিশন ঘরে বা পাখার নিচে গাছ রাখবেন না।
০ দুপুরের প্রখর - রোদে, খুব কম আলোয় বা প্রচুর আলোয় গাছ রাখবেন না।
০ সকালের হালকা আলোয় গাছ রাখবেন।
০ গাছে বছরে ২-৩ বার জৈবসার প্রয়োগ করবেন।
০ মানানসই টবে গাছ রাখবেন ও সময়মতো টব পরিবর্তন করবেন।
০ নোংরা, কম বা বেশি জল  দেয়া যাবে না গাছে। জলের  পরিমাণটা যাতে সঠিক থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
০ টবের মাটি সম্পূর্ণ শুকনো যেন না থাকে।
০ প্রতিটি গাছের আলাদা যত্ন নিতে হবে।
০ ধোঁয়া বা গ্যাসের কাছে গাছ রাখবেন না।
০ শুকনো পাতা কেটে ফেলবেন ও গাছে পোকা ধরলে কীটনাশক দিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ।
০ এসব গাছপালা লতাপাতার  যত্নআত্তি বা ঝক্কি-ঝামেলায় যারা নিজেদের জড়াতে চান না, তারা প্লাস্টিকের পাতাবাহার  দিয়েও সাজাতে পারেন আপনার নিজের প্রিয় ঘরকে।
০ ঘরের শোভা সবুজের সমারোহ সৃষ্টি করতে গিয়ে অনেকে রীতিমতো জঙ্গল বানিয়ে ফেলেন। সেখানে মশা, মাকড়সাসহ নানা পোকামাকড়ের বাসা হতে পারে। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশা যেন আপনার ঘরের মধ্যে বাসা বাঁধতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
০ ইনডোর প্লান্টের  মধ্যে এরিকা পাম, বাহারি ফার্ন, মানিপ্লান্ট , ওয়াটার বনসাই ইত্যাদি লাগাতে পারেন।
০ নিচু ব্যালকনিতে যেমন তালগাছ মানাবে না তেমনই ছোট অপরিসর স্থানে ঝাড়ওয়ালা গাছ না লাগানোই ভাল। মাঝারি উচ্চতার, সুন্দর আকৃতির পাতাওয়ালা গাছ বেছে নিন।
০ আপনার ব্যালকনির গ্রিলের সঙ্গে লতিয়ে থাকবে এ রকম গাছও সুন্দর দেখাবে।
০ ব্যালকনিতে কয়েকটি ঝুলন্ত  টবে ঝাড়ওয়ালা গাছ আর তার সঙ্গে কিছু মেটাল, বাঁশ বা সিরামিকের তৈরি উইন্ডচাইম ঝুলিয়ে দিন সঙ্গে। সবুজের সঙ্গে টুংটাং মিষ্টি আওয়াজ শুনতে বেশ ভাল লাগবে।
০ মাটিতে জল  দিতে দিতে সেখানে কেমন যেন কাদাকাদা হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে  মাটি খুঁড়ে তাতে সামান্য বালি মিশিয়ে দিলে ঝরঝরে হয়ে যাবে আর গাছের গোড়া পচবে না।
০ আপনার ব্যালকনিতে টেরাকোটার একটি ছোট গামলা রাখুন। এতে জল  ভরে এর মধ্যে কিছু ছোট প্রজাতির পদ্ম বা শালুক ফুল ভাসিয়ে দিন। দেখবেন ছোট জায়গাটিতেই কেমন রঙ বেরঙের পাখির মেলা বসে গেছে। আপনার বাগানটিতে যথাসম্ভব প্রাকৃতিক রূপ দেয়ার জন্য রকমারি নুড়ি পাথর দিয়ে সাজান। দেখতে ন্যাচারাল সুন্দর লাগবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন