"এই বাংলার মাঠে
বিশীর্ণ বটের নিচে শুয়ে রবো; পশমের মতো লাল ফল
ঝরিবে বিজন ঘাসে,-------------
বট গাছ,( ফিকাস বেংগালেনসিস) আমাদের জাতীয় গাছ। এর শাখা থেকে শিকড় বেড়িয়ে নতুন গাছের আকারে বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে যায়। শিকড় থেকে আবার গুঁড়ি এবং শাখা বেরিয়ে নতুন গুঁড়ি এবং শাখার জন্ম দেয়। এই বৈশিষ্ট্যর জন্য এবং বহু দিন বাঁচার ফলে এই গাছকে অমর মনে করা হয় এবং পুরাণ ও গল্পে একে বিশেষ স্থান দেওয়া হয়। আজও বট গাছ গ্রামীণ জীবনের কেন্দ্রবিন্দু এবং গ্রামসভা এই গাছের ছায়াতেই বসে।
" কী শোভা ,কি ছায়া গো,কী স্নেহ কী মায়া গো -----
কী আঁচল বিছায়েছ ,বটের মূলে ,নদীর কূলে।" .............
বটগাছ নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন “লুটিয়ে পড়ে জটিল জটা, ঘন পাতায় গহন ঘটা, হেথা-হোথায় রবির ছটা পুকুর ধারে বট।” জীবনানন্দ দাশ বটের ছায়ায় বিজন ঘাসে শুয়ে প্রকৃতিকে কাছে পেয়েছেন। ভাওয়াইয়া গানের কথায় ‘বট বৃক্ষের ছায়া যেমন রে মোর বন্ধুর মায়া তেমন রে...।’দেশাত্মবোধক গানেও এসেছে বট ‘আবার জমবে মেলা বটতলা হাটখোলা অঘ্রাণে নবান্নের উৎসবে...।’ গ্রীষ্মের দুপুরে কৃষক ও গ্রামের লোকের যখন হাঁসফাঁস অবস্থা তখন প্রকৃতির এ বটগাছই তাদের দিত স্বস্তি।নগরে-মহানগরে উচ্চবিত্তের অনেকে বহু টাকা ব্যয়ে বনসাই বটগাছ কিনে এনে ড্রইংরুমে রেখে দেন।
ফাইকাস বা (ডুমুর জাতীয়) গোত্রের ইউরোস্টিগ্মা উপগোত্রের সদস্য। এর আদি নিবাস হল বঙ্গভূমি (বাংলাভাষী অঞ্চল)। এটি একটি বৃহদাকার বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। বট গাছ খুব বড় জায়গা জুড়ে জমির সমান্তরাল শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে যারা স্তম্ভমূলের উপর ভর দিয়ে থাকে। স্তম্ভমূল প্রথমে সরু সরু ঝুরি হিসবে বাতাসে ঝোলে। পরে মাটিতে প্রেথিত হলে স্তম্ভমূলের মাটির উপরের অংশ বিটপে পরিবর্তিত হয়।
বটের পাতা একান্তর, ডিম্বাকৃতি, মসৃণ ও উজ্জ্বল সবুজ। কচি পাতা তামাটে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে পাতার আয়তনের বিভিন্নতা একাধারে বটের বৈশিষ্ট্য তথা প্রজাতি শনাক্তকরণের পক্ষে জটিলতার কারনও। পরিণত গাছের পাতা আকারে কিছুটা ছোট হয়ে আসে। বটের কুঁড়ি পাংশুটে হলুদ এবং এর দুটি স্বল্পায়ু উপপত্র পাতা গজানোর পরই ঝরে পড়ে। খুব অল্প বয়স থেকেই বট গাছের ঝুরি নামতে শুরু করে। মাটির সমান্তরালে বাড়তে থাকা ডালপালার ঝুরিগুলো একসময় মাটিতে গেঁথে গিয়ে নিজেরাই একেকটা কান্ডে পরিণত হয়। এভাবেই বট গাছ ধীরে ধীরে চারপাশে বাড়তে থকে এবং একসময় মহীরুহে পরিণত হয়। বসন্ত ও শরৎ বট গাছে নতুন পাতা গজানোর দিন। এসময় কচি পাতার রং উজ্জ্বল সবুজ থাকে। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত হলো ফল পাকার সময়।
বট ও বট জাতীয় গাছের বংশ বৃদ্ধির পদ্ধতি ও কৌশল প্রধাণত অভিন্ন। মঞ্জরির গর্ভে ফুলগুলো লুকানো থাকে। ফুলগুলো খুবই ছোট এবং ফলের মতোই গোল। একলিঙ্গিক এই ফুলগুলো পরাগায়নের জন্য বিশেষ জাতের পতঙ্গের উপর নির্ভরশীল। পাখিরা ফল খেয়ে বীজ ছড়িয়ে দেয়। পাখিবাহিত এই বীজ দালানের কার্নিশ, পুরানো দালানের ফাটল ও অন্য কোন গাছের কোটরে সহজেই অঙ্কুরিত হয় এবং আশ্রয়কে গ্রাস করে। এ কারনে উপগাছা হিসেবেও বটের বেশ খ্যাতি আছে। উপযুক্ত পরিবেশে একটি বট গাছ ৫ থেকে ৬ শত বছর বেঁচে থাকতে পারে।
বট বাংলা অঞ্চলের আদিমতম বৃক্ষ। বট গাছকে ঘিরে বাংলা অঞ্চলের রয়েছে শত-সহস্র বছরের ঐতিহ্য। উষ্ণ আবহাওয়ায় বিশাল আয়তনের এই ছায়াবৃক্ষটি অনেক উপকারে আসে। প্রাচীনকাল থেকেই বটবৃক্ষের ছায়ায় হাট-বাজার বসে, মেলা হয়, লোকগানের আসর বসে, জনসভা হয়। কারন হিসেবে বলা যায়, বাংলার গ্রামাঞ্চলে বড় বড় সুশীতল হলরুম নেই। আর তাই বড় বড় অনুষ্ঠান ও জনসভাগুলো ছায়াসুনিবিড় বটতলায় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।এই গাছকে ভারতে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়,এবং প্রায়ই এই গাছের নিচে মন্দির বানানো হয়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে ধর্মীয় কারনে বট গাছ কাটা নিষিদ্ধ। এ গাছের উপকারিতা ও ধর্মীয় গুরুত্বের কারনে বট গাছ ভারতের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।
বিশীর্ণ বটের নিচে শুয়ে রবো; পশমের মতো লাল ফল
ঝরিবে বিজন ঘাসে,-------------
বট গাছ,( ফিকাস বেংগালেনসিস) আমাদের জাতীয় গাছ। এর শাখা থেকে শিকড় বেড়িয়ে নতুন গাছের আকারে বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে যায়। শিকড় থেকে আবার গুঁড়ি এবং শাখা বেরিয়ে নতুন গুঁড়ি এবং শাখার জন্ম দেয়। এই বৈশিষ্ট্যর জন্য এবং বহু দিন বাঁচার ফলে এই গাছকে অমর মনে করা হয় এবং পুরাণ ও গল্পে একে বিশেষ স্থান দেওয়া হয়। আজও বট গাছ গ্রামীণ জীবনের কেন্দ্রবিন্দু এবং গ্রামসভা এই গাছের ছায়াতেই বসে।
" কী শোভা ,কি ছায়া গো,কী স্নেহ কী মায়া গো -----
কী আঁচল বিছায়েছ ,বটের মূলে ,নদীর কূলে।" .............
বটগাছ নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন “লুটিয়ে পড়ে জটিল জটা, ঘন পাতায় গহন ঘটা, হেথা-হোথায় রবির ছটা পুকুর ধারে বট।” জীবনানন্দ দাশ বটের ছায়ায় বিজন ঘাসে শুয়ে প্রকৃতিকে কাছে পেয়েছেন। ভাওয়াইয়া গানের কথায় ‘বট বৃক্ষের ছায়া যেমন রে মোর বন্ধুর মায়া তেমন রে...।’দেশাত্মবোধক গানেও এসেছে বট ‘আবার জমবে মেলা বটতলা হাটখোলা অঘ্রাণে নবান্নের উৎসবে...।’ গ্রীষ্মের দুপুরে কৃষক ও গ্রামের লোকের যখন হাঁসফাঁস অবস্থা তখন প্রকৃতির এ বটগাছই তাদের দিত স্বস্তি।নগরে-মহানগরে উচ্চবিত্তের অনেকে বহু টাকা ব্যয়ে বনসাই বটগাছ কিনে এনে ড্রইংরুমে রেখে দেন।
ফাইকাস বা (ডুমুর জাতীয়) গোত্রের ইউরোস্টিগ্মা উপগোত্রের সদস্য। এর আদি নিবাস হল বঙ্গভূমি (বাংলাভাষী অঞ্চল)। এটি একটি বৃহদাকার বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। বট গাছ খুব বড় জায়গা জুড়ে জমির সমান্তরাল শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে যারা স্তম্ভমূলের উপর ভর দিয়ে থাকে। স্তম্ভমূল প্রথমে সরু সরু ঝুরি হিসবে বাতাসে ঝোলে। পরে মাটিতে প্রেথিত হলে স্তম্ভমূলের মাটির উপরের অংশ বিটপে পরিবর্তিত হয়।
বটের পাতা একান্তর, ডিম্বাকৃতি, মসৃণ ও উজ্জ্বল সবুজ। কচি পাতা তামাটে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে পাতার আয়তনের বিভিন্নতা একাধারে বটের বৈশিষ্ট্য তথা প্রজাতি শনাক্তকরণের পক্ষে জটিলতার কারনও। পরিণত গাছের পাতা আকারে কিছুটা ছোট হয়ে আসে। বটের কুঁড়ি পাংশুটে হলুদ এবং এর দুটি স্বল্পায়ু উপপত্র পাতা গজানোর পরই ঝরে পড়ে। খুব অল্প বয়স থেকেই বট গাছের ঝুরি নামতে শুরু করে। মাটির সমান্তরালে বাড়তে থাকা ডালপালার ঝুরিগুলো একসময় মাটিতে গেঁথে গিয়ে নিজেরাই একেকটা কান্ডে পরিণত হয়। এভাবেই বট গাছ ধীরে ধীরে চারপাশে বাড়তে থকে এবং একসময় মহীরুহে পরিণত হয়। বসন্ত ও শরৎ বট গাছে নতুন পাতা গজানোর দিন। এসময় কচি পাতার রং উজ্জ্বল সবুজ থাকে। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত হলো ফল পাকার সময়।
বট ও বট জাতীয় গাছের বংশ বৃদ্ধির পদ্ধতি ও কৌশল প্রধাণত অভিন্ন। মঞ্জরির গর্ভে ফুলগুলো লুকানো থাকে। ফুলগুলো খুবই ছোট এবং ফলের মতোই গোল। একলিঙ্গিক এই ফুলগুলো পরাগায়নের জন্য বিশেষ জাতের পতঙ্গের উপর নির্ভরশীল। পাখিরা ফল খেয়ে বীজ ছড়িয়ে দেয়। পাখিবাহিত এই বীজ দালানের কার্নিশ, পুরানো দালানের ফাটল ও অন্য কোন গাছের কোটরে সহজেই অঙ্কুরিত হয় এবং আশ্রয়কে গ্রাস করে। এ কারনে উপগাছা হিসেবেও বটের বেশ খ্যাতি আছে। উপযুক্ত পরিবেশে একটি বট গাছ ৫ থেকে ৬ শত বছর বেঁচে থাকতে পারে।
বট বাংলা অঞ্চলের আদিমতম বৃক্ষ। বট গাছকে ঘিরে বাংলা অঞ্চলের রয়েছে শত-সহস্র বছরের ঐতিহ্য। উষ্ণ আবহাওয়ায় বিশাল আয়তনের এই ছায়াবৃক্ষটি অনেক উপকারে আসে। প্রাচীনকাল থেকেই বটবৃক্ষের ছায়ায় হাট-বাজার বসে, মেলা হয়, লোকগানের আসর বসে, জনসভা হয়। কারন হিসেবে বলা যায়, বাংলার গ্রামাঞ্চলে বড় বড় সুশীতল হলরুম নেই। আর তাই বড় বড় অনুষ্ঠান ও জনসভাগুলো ছায়াসুনিবিড় বটতলায় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।এই গাছকে ভারতে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়,এবং প্রায়ই এই গাছের নিচে মন্দির বানানো হয়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে ধর্মীয় কারনে বট গাছ কাটা নিষিদ্ধ। এ গাছের উপকারিতা ও ধর্মীয় গুরুত্বের কারনে বট গাছ ভারতের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন