প্রাঙ্গণে মোর শিরীষশাখায় ফাগুন মাসে
কী উচ্ছ্বাসে
ক্লান্তিবিহীন ফুল ফোটানোর খেলা।
ক্ষান্তকূজন শান্তবিজন সন্ধ্যাবেলা
প্রত্যহ সেই ফুল্ল শিরীষ প্রশ্ন শুধায় আমায় দেখি
'এসেছে কি-- এসেছে কি।'
আর বছরেই এমনি দিনেই ফাগুন মাসে
কী উচ্ছ্বাসে
নাচের মাতন লাগল শিরীষ-ডালে
স্বর্গপুরের কোন্ নূপুরের তালে।
প্রত্যহ সেই চঞ্চল প্রাণ শুধিয়েছিল, 'শুনাও দেখি
আসে নি কি-- আসে নি কি।'
আবার কখন এমনি দিনেই ফাগুন মাসে
কী আশ্বাসে
ডালগুলি তার রইবে শ্রবণ পেতে
অলখ জনের চরণ-শব্দে মেতে।
প্রত্যহ তার মর্মরস্বর বলবে আমায় কী বিশ্বাসে,
'সে কি আসে-- সে কি আসে।'
প্রশ্ন জানাই পুষ্পবিভোর ফাগুন মাসে
কী আশ্বাসে,
'হায় গো, আমার ভাগ্য-রাতের তারা,
নিমেষ-গণন হয় নি কি মোর সারা।'
প্রত্যহ বয় প্রাঙ্গণময় বনের বাতাস এলোমেলো--
'সে কি এল-- সে কি এল।'
বৈজ্ঞানিক নাম- Albizia lebbeck অন্যান্য নাম- কালো কড়ই, ভূত কড়ই, হারিশ, মড়ই, Woman's tongue, Saras सरस (Hindi), Khok (Manipuri), Lebbek Tree, Flea Tree, Frywood, Koko উল্লেখযোগ্য। শিরিষ আমাদের দেশি গাছ। অল্পবয়সে মাথাটা ছড়ানো থাকে, পরে লম্বাটে ও প্রকান্ড হয়ে উঠে। পাতা খসিয়ে ন্যাড়া হয়ে যায় শীতের শেষে। রোদে পুড়ে গ্রীষ্মের আগ অবধি। তখন ফুল ফোটে থোকা থোকা, তুলতুলে, ফ্যাকাশে হলুদ, সুগন্ধি। কবিরা শিরিষের খুব ভক্ত। প্রাচীনকালে মেয়েরা শিরিষ কানে পরতেন দুলের মতো করে। মহাকবি কালিদাসের লেখায় তেমন প্রমাণ আছেঃ "অলকচূড়ায় নবকুরুবক, চারু দুটি কানে শিরিষফুল।" শিরিষ গাছের উচ্চতা ১০০-১২০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। বাকল বাদামি ধূসর, খসখসে এবং অনিয়মিত ফাটলযুক্ত। কাঠ শক্ত। আসবাবপত্র তৈরি, ঘরবাড়ি ও কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে কাঠ ব্যবহৃত হয়। গাছ চেনার একটি সহজ উপায় হচ্ছে- বসন্তে গাছ পাতাশূণ্য হয়ে যায়, এছাড়া গাছের ফল দেখেও চেনা যায়- ৮-১০ সেমি লম্বা এবং ৪-৬ সেমি চওড়া সাদা চ্যপ্টা শুকনো ফল গাছে ঝুলতে থাকে, ফলের মাঝখানে বোতামের মতো গোল গোল বীজের দাগ। "শিরিষের ডালপালা লেগে আছে বিকেলের মেঘে, পিপুলের ভরা বুকে চিল নেমে এসেছে এখন; বিকেলের শিশুসূর্যকে ঘিরে মায়ের আবেগে করুণ হয়েছে ঝাউবন। নদীর উজ্জ্বল জল কোরালের মতো কলরবে ভেসে নারকোলবনে কেড়ে নেয় কোরালীর ভ্রূণ; বিকেল বলেছে এই নদীটিকেঃ ‘শান্ত হতে হবে-’ অকূল সুপুরিবন স্থির জলে ছায়া ফেলে এক মাইল শান্তি কল্যাণ হ’য়ে আছে। তার মুখ মনে পড়ে এ-রকম স্নিগ্ধ পৃথিবীর পাতাপতঙ্গের কাছে চলে এসে; চারিদিকে রাত্রি নক্ষত্রের আলোড়ন এখন দয়ার মতো; তবুও দয়ার মানে মৃত্যুতে স্থির হ’য়ে থেকে ভুলে যাওয়া মানুষের সনাতন মন।" ~জীবনানন্দ দাশ |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন