সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৬


একটুখানি সোনার বিন্দু , একটুখানি মুখ ,
     একা একটি বনফুল ফোটে-ফোটে হয়েছে ,
     কচি কচি পাতার মাঝে মাথা থুয়ে রয়েছে ।
চার দিকে তার গাছের ছায়া , চার দিকে তার নিষুতি,
     চার দিকে তার ঝোপেঝাপে আঁধার দিয়ে ঢেকেছে—
বনের সে যে স্নেহের ধন আদরিণী মেয়ে ,
    তারে বুকের কাছে লুকিয়ে যেন রেখেছে ।

একটুখানি রূপের হাসি আঁধারেতে ঘুমিয়ে আলা ,
     বনের স্নেহ শিয়রেতে জেগে আছে ।
সুকুমার প্রাণটুকু তার কিছু যেন জানে না ,
     চোখে শুধু সুখের স্বপন লেগে আছে ।
একটি যেন রবির কিরণ ভোরের বেলা বনের মাঝে
     খেলাতেছিল নেচে নেচে ,
নিরালাতে গাছের ছায়ে , আঁধারেতে শ্রান্তকায়ে
     সে যেন ঘুমিয়ে পড়েছে ।
বনদেবী করুণ-হিয়ে তারে যেন কুড়িয়ে নিয়ে
     যতন করে আপন ঘরেতে ।
থুয়ে কোমল পাতার'পরে মায়ের মতো স্নেহভরে
     ছোঁয় তারে কোমল করেতে ।
ধীরি ধীরি বাতাস গিয়ে আসে তারে দোলা দিয়ে ,
     চোখেতে চুমো খেয়ে যায় ।
ঘুরে ফিরে আশেপাশে বার বার ফিরে আসে ,
     হাতটি বুলিয়ে দেয় গায় ।

একলা পাখি গাছের শাখে কাছে তোর বসে থাকে ,
     সারা দুপুরবেলা শুধু ডাকে ,
যেন তার আর কেহ নাই , সারা দিন একলাটি তাই
     স্নেহভরে তোরে নিয়েই থাকে ।
ও পাখির নাম জানি নে , কোথায় ছিল কে তা জানে ,
     রাতের বেলায় কোথায় চলে যায় ,
দুপুরবেলা কাছে আসে- সারা দিন বসে পাশে
     একটি শুধু আদরের গান গায় ।
রাতে কত তারা ওঠে , ভোরের বেলা চলে যায়-
     তোরে তো কেউ দেখে না , জানে না ।
এক কালে তুই ছিলি যেন ওদেরই ঘরের মেয়ে ,
     আজকে রে তুই অজানা অচেনা ।

নিত্যি দেখি রাতের বেলা একটি শুধু জোনাই আসে ,
     আলো দিয়ে মুখপানে তোর চায় ।
কে জানে সে কী যে করে! তারা-জন্মের কাহিনী তোর
     কানে বুঝি স্বপন দিয়ে যায় ।
ভোরের বেলা আলো এল , ডাকছে রে তোর নামটি ধরে ,
     আজকে তবে মুখখানি তোর তোল্‌ ,
     আজকে তবে আঁখিটি তোর খোল্‌ ,
লতা জাগে , পাখি জাগে গায়ের কাছে বাতাস লাগে ,
     দেখি রে — ধীরে ধীরে দোল্‌ দোল্‌ দোল্‌ ।।
                   ----------রবীন্দ্রনাথ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন