মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৬

হৈমন্তী শোভা

শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে
অলস গেঁয়োর মতো এইখানে কার্তিকের ক্ষেতে
মাঠের ঘাসের গন্ধ বুকে তার — চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ,
তাহার আস্বাদ পেয়ে অবসাদে পেকে ওঠে ধান,
দেহের স্বাদের কথা কয় –
বিকালের আলো এসে (হয়তো বা) নষ্ট করে দেবে তার সাধের সময়!
চারি দিকে এখন সকাল –
রোদের নরম রঙ শিশুর গালের মতো লাল!
মাঠের ঘাসের পরে শৈশবের ঘ্রাণ –
পাড়াগাঁর পথে ক্ষান্ত উৎসবের পড়েছে আহ্বান!

চারি দিকে নুয়ে প’ড়ে ফলেছে ফসল,
তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল!
প্রচুর শস্যের গন্ধ থেকে থেকে আসিতেছে ভেসে
পেঁচা আর ইঁদুরের ঘ্রাণে ভরা আমাদের ভাঁড়ারের দেশে!
শরীর এলায়ে আসে এই খানে ফলন্ত ধানের মতো করে
যেই রোদ একবার এসে শুধু চলে যায় তাহার ঠোটের চুমো ধ’রে
আহ্লাদের অবসাদে ভরে আসে আমার শরীর,
চারি দিকে ছায়া — রোদ — ক্ষুদ — কুঁড়া — কার্তিকের ভিড়:
চোখের সকল ক্ষুধা মিটে যায় এই খানে, এখানে হতেছে স্নিগ্ধ কান,
পাড়াগাঁর গায় আজ লেগে আছে রূপাশালি ধান ভানা রূপসীর শরীরের ঘ্রাণ!
আমি সেই সুন্দরীরে দেখে লই — নুয়ে আছে নদীর এপারে
বিয়োবার দেরি না — রূপ ঝরে পড়ে তার –
শীত এসে নষ্ট করে দিয়ে যাবে তারে!

আজও তবুও ফুরায় নি বৎসরের নতুন বয়স,
মাঠে মাঠে ঝ’রে পড়ে কাঁচা রোদ, ভাড়ারের রস!

মাছির গানের মতো অনেক অলস শব্দ হয়
সকালবেলা রৌদ্রে; কুঁড়িমির আজিকে সময়।

গাছের ছায়ার তলে মদ লয়ে কোন্‌ ভাঁড় বেঁধেছিল ছড়া!
তার সব কবিতার শেষ পাতা হবে আজ পড়া;
ভুলে গিয়ে রাজ্য — জয় — সাম্রাজ্যের কথা
অনেক মাটির তলে যেই মদ ঢাকা ছিল তুলে লব তার শীতলতা;
ডেকে লব আইবুড় পাড়াগাঁর মেয়েদের সব –
মাঠের নিস্তেজ রোদের নাচ হবে –
শুরু হবে হেমন্তের নরম উৎসব।

হাতে হাত ধরে ধরে গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে ঘুরে
কার্তিকের মিঠা রোদে আমাদের মুখ যাবে পুড়ে;
ফলন্ত ধানের গন্ধে — রঙে তার — স্বাদে তার ভরে যাবে আমাদের সকলের দেহ;
রাগ কেহ করিবে না — আমাদের দেখে হিংসা করিবে না কেহ।
আমাদের অবসর বেশি নয — ভালোবাসা আহ্লাদের অলস সময়
আমাদের সকলের আগে শেষ হয়
দূরের নদীর মতো সুর তুলে অন্য এক ঘ্রাণ — অবসাদ –
আমাদের ডেকে লয় — তুলে লয় আমাদের ক্লান্ত মাথা — অবসন্ন হাত।

তখন শস্যের গন্ধ ফুরায়ে গিয়েছে ক্ষেতে — রোদ গেছে পড়ে,
এসেছে বিকালবেলা তার শান্ত শাদা পথ ধরে;
তখন গিয়েছে থেমে অই কুঁড়ে গেঁয়োদের মাঠের রগড়
হেমন্ত বিয়ায়ে গেছে শেষ ঝরা মেয়ে তার শাদা মরা শেফালির
বিছানার পর;
মদের ফোঁটার শেষ হয়ে গেছে এ মাঠের মাটির ভিতর!
তখন সবুজ ঘাস হয়ে গেছে শাদা সব, হয়ে গেছে আকাশ ধবল,
চলে গেছে পাড়াগাঁর আইবুড়ো মেয়েদের দল!
         --------------জীবনানন্দ দাশ

আকাশজুড়ে নীল মেঘের ছড়াছড়ি। প্রকৃতিতে মিষ্টি রোদের ঝিলিক। সবুজ পাতায় উপর খেলা করে সকালের সোনারোদ। নরম সকালে দূর্বাঘাসের ডগায় ফুটে ছোট ছোট শিশিরবিন্দু। দিগন্ত প্রসারিত মাঠে হলুদ ধানের জড়াজড়ি।আকাশে বাতাসে হৈমন্তী শোভা ,........... আসছেন ঋতুরাজকন্যা হেমন্ত। কবি জসিমউদ্দীন লিখেছেন-
‘সবুজ হলুদে সোহাগ ঢুলায়ে ধান ক্ষেত,
পথের কিনারে পাতা দোলাইয়া করে সাদা সঙ্কেত।
ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে,
ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়া পাখিগুলি শুয়েছে মাঠের পরে।
কৃষাণ কনের বিয়ে হবে হবে তার হলদি কোটার শাড়ি,
হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কচি রোদ রেখা-নাড়ি।’
ঝিমিয়ে থাকা লাউ গাছটা লকলকিয়ে বাড়তে থাকে। শিমগাছে সাদার ভেতর বেগুনি রঙের ফুল ফোটে। পাকা ধানের গন্ধে মৌ মৌ করে উত্তরের বাতাস। কানা বক মাছ ধরতে আসে নদীর তীরে। মাছরাঙা বসে থাকে পুকুরের গাছের ডালে। কাশফুল শরতের নিজস্ব ফুল হলেও হেমন্তে উঁচু টিলায় সাদা সাদা কাশফুল ফুটতে দেখা যায়। খালে-বিলে, হাওড়-বিলে, পুকুরে শাপলা ফুটে। গ্রাম্য কিশোর-কিশোরীরা দলবেঁধে ফুল তুলতে আসে। শরতে ফোটা শেফালি, স্থলপদ্ম হেমন্তেও রূপের বাহার দেখায়। বাতাসে ফুলের সৌরভ ছড়ায়।
 হেমন্ত কালে মাঠে মাঠে ধান কাটার ধূম৷ চারদিকে নতুন ধানের কেমন আবেশ করা গন্ধ৷ আকাশে ছিন্ন ভিন্ন মেঘের উপস্থিতি৷ ফুলের বনে তখনও শরতের আবেশ৷ এ সময় ফোটে ওঠে হাস্নাহেনা, মধুমঞ্জরি আর কুন্দ৷ হাস্নাহেনার নলাকার সাদাটে ফুল ফোটে সন্ধ্যায়৷ চারদিকে ছড়িয়ে দেয় সুগন্ধি আবেশ৷ সুগন্ধবাহী সাদা ও লাল রঙের মধু মঞ্জুরির ফুল ফোটে ঝুলন্ত থোকায়৷ কুন্দের ডালে দেখা মেলে গন্ধহীন গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা রঙের ফুল৷
hasna
 বাগানে ফোটে  নয়নাভিরাম ছাতিম ফুল। ছাতিমের তীব্র গন্ধবাহী ফুল গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে এর উপস্থিতির জানান দেয়৷ চারদিকে তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে এ সময় ফোটে দেব কাঞ্চনের হালকা বেগুনী বা সাদাটে ফুল৷
  সি্নগ্ধতায় মোড়ানো এই হেমন্ত আসে যেন চুপি চুপি, আমাদের অলক্ষ্যে। কিন্তু হেমন্তের চিরচেনা গন্ধই আমাদের জানিয়ে দেয় তার আগমন বারতা। ছাতিমের প্রলোভনেই কি হেমন্ত আসে? না হেমন্তের হাত ধরে আসে ছাতিম? তবে এ কথা সত্যি, ছাতিমফুল ছাড়া হেমন্ত যেন নিষ্প্রাণ, ছন্দহীন, গন্ধহীন। ভাগ্যিস,  ছাতিম এখনও দুর্লভ হয়ে ওঠেনি।
রাতে পথ চলতে চলতে হঠাৎ হেমন্তের বাতাসে ছাতিমের উদ্দাম গন্ধপ্রবাহ আপনাকে ব্যাকুল করতে পারে। 'শ্যামলী নিসর্গ' গ্রন্থে অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা (বাংলাদেশ ) লিখেছেন, 'ছাতিমই বোধহয় একমাত্র বৃক্ষ যে হেমন্তের অঙ্গনে দাঁড়িয়ে প্রস্ফুটন আর সুগন্ধের পল্গাবনে এই দুরন্ত শীতকে অভ্যর্থনা জানায়। প্রস্ফুটনের এমন অবারিত উচ্ছ্বাস, ফুলের অক্লান্ত নির্ঝর এবং দূরবাহী প্রবল উগ্র গন্ধের ঐশ্বর্য আর কোনো হৈমন্তী তরুরই নেই'।

 বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় 'আরণ্যক' গ্রন্থেও ছাতিমের উল্লেখ করেছেন। 'কিছুদূর উঠতেই কিসের মধুর সুবাসে মনপ্রাণ মাতিয়া উঠিল। গন্ধটা অত্যন্ত পরিচিত ... চারিদিকে চাহিয়া দেখি ধনঝরি পাহাড়ে যে এত ছাতিম গাছ আছে তাহা পূর্বে লক্ষ্য করি নাই। এখন প্রথম হেমন্তে ছাতিম গাছে ফুল ধরিয়াছে, তাহারই সুবাস। ... ছাতিম ফুলের সুবাস আরও ঘন হইয়া উঠিল, ছায়া গাঢ় হইয়া নামিল শৈলসানুর বনস্থলীতে ... ভানুমতী একগুচ্ছ ছাতিম ফুল পাড়িয়া খোপায় গুঁজিল (পৃ. ১৩৯)।'
 ছাতিম ফুল নিয়ে চমৎকার কবিতা লিখেছেন কবি গোলাম মোহাম্মদ।
‘ছাতিম ফুলের গন্ধে ভাসে পথ
উঠোন ভরে ভরলো ঘরের কোণ
জোছনা মেখে হচ্ছে আরো মিহি
সেই সোহাগে উঠলো ভরে মন।
....
গন্ধে কাঁপে ছাতিম ফুলের রাত
হাতের ভেতর মধুমতির হাত।’
গাছের ডালে বসে পাখি গান ধরে।  এসব হেমন্তেরই নিদর্শন। হেমন্ত বাংলার নিজস্ব ঋতু হলেও এটি কখন আসে কখন যায় তা আমরা অনেকেই জানিনা। এটি শরৎ থেকে খুব একটা পৃথক নয়; শীত থেকে আবার খুব একটা দূরেও নয়। হেমন্তের রঙ ধূসর। বর্ষার মতো রুক্ষ নয় তার রূপ। তবে শীতের মতো শান্তও নয়। উদাসীন পথিকের মতো হেমন্তের হাঁটাচলা। আবার হেমন্ত একগুচ্ছ প্রিয় ঝারাপাতার বাহারও বটে। তাইতো হেমন্তের রূপে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু লিখেছেন-
‘আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে
জনশূণ্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে
শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার
রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার।’
অন্যান্য ঋতুর তুলনায় হেমন্তে খুব সামান্যই ফুল ফোটে। অনিন্দ্যসুন্দর হিমঝুরি, দেবকাঞ্চন, রাজ অশোক হেমন্তের প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে।
হেমন্তের সকালে শিশিরভেজা ঘাসের ডগাকে মনে হয় মুক্তোর মালা। বাংলা সাহিত্যের একটা অংশ জুড়ে আছে শিশিরের নরম স্পর্শের বর্ণনা। কখন কোথা থেকে শিশির এসে ঘাসের ডগায় গাছের পাতায় মুক্তোর মালা পরিয়ে দিয়ে যায় তা কেউ জানেনা। আর সূর্যদয়ের সাথে সাথেই প্রকৃতিকে কাঁদিয়ে কোন সুদূরে মিলিয়ে যায় তাও মানুষের দৃষ্টির বাইরে। এ এক অবাক করার বিষয় রহস্যময়ও বটে। হেমন্তের সকালে শিশিরভেজা সকাল, দুপুরের রোদের স্নিগ্ধতা, সন্ধ্যায় বাঁশ ঝাড়ের শিরশির ধ্বনি প্রকৃতিতে ভিন্ন এক মাধুরীর সৃষ্টি করে।
হেমন্তের মেঘমুক্ত আকাশে রাতের জোছনার আলো অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশিই পরিলক্ষিত হয়। এ সময় রাতের পথে, ঘাটে, বনে, বাদাড়ে জোছনার আলো ঠিকরে পড়ে। এ সময় চাঁদের শরীর থেকে মোমের মত গলে পড়ে জোছনার আলো। হেমন্ত আসে ধীর পদক্ষেপে। শীতের পরশ গায়ে মেখে। তাইতো হেমন্তের রাতে শীত শীত অনুভব হয়।
হেমন্ত ঋতুর দু’টি মাস কার্তিক ও অগ্রহায়ণ। ‘কৃত্তিকা’ ও ‘আদ্রা’ তারার নামানুসারে নাম রাখা হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস। নদীমাতৃক  এক সময় বাংলা বছরের গণনা শুরু হতো হেমন্ত মাস দিয়ে। কারণ, ধান কাটার মওসুম এ হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমন-আউশ ধান বেড়ে উঠে শরতে। হেমন্তের প্রথম দিকে পাক ধরে। কার্তিকের শেষ দিকে গ্রামের মাঠে কৃষকেরা দলবেঁধে ধান কাটে।


পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় রে চলে,   আ য় আ য় আয়।
ডালা যে তার ভরেছে আজ পাকা ফসলে,   মরি   হায়   হায়   হায়॥
          হাওয়ার নেশায় উঠল মেতে   দিগ্‌বধূরা ধানের ক্ষেতে--
রোদের সোনা ছড়িয়ে পড়ে মাটির আঁচলে,   মরি   হা য়   হা য়   হায়॥
          মাঠের বাঁশি শুনে শুনে আকাশ খুশি হল।
          ঘরেতে আজ কে রবে গো,   খোলো   খোলো দুয়ার খোলো।
          আলোর হাসি উঠল জেগে   ধানের শিষে শিশির লেগে--
ধরার খুশি ধরে না গো, ওই-যে উথলে,   মরি     হা য়   হা য়   হায়॥


রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬

মাকাল ফল

 


‘ওপরে ভালো ভেতরে কালো’-প্রবাদটার সংক্ষিপ্ত রূপ মাকাল ফল। ছোটবেলায় ঠাকমা -দিদিমার মুখে কতবার একথা শুনেছি।
‘কেন এমন বলা হয়?’ এর জবাবে ঠাকমার কাছে শোনা একটা গল্প বলি :-
'এক গ্রামে এক পরমা সুন্দরী বৌ, তার রূপের ভারী দেমাক ।দেখতে অপূর্ব সুন্দরী কিন্তু তার ব্যবহার খুবই তেতো (খারাপ ), তার বুকের ভিতরটা ছিল বিষে ভরা, এটা বিশেষ কেউ জানতোও না। একদিন সেই সুন্দরী বৌ চুপি চুপি শাশুড়ির খাবারে বিষ মিশিয়ে দিলো ,...... শাশুড়ী না জেনে খেয়েও নিলো সেই খাবার।বিষক্রিয়া শুরু হতেই শাশুড়ির কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল ব্যাপারটা। শাশুড়ি বৌমাকে ডেকে বললো, তুমি এত শ্রীময়ী কিন্তু তোমার বুকের ভিতর কথা কেউ জানে না,আমি অভিশাপ দিচ্ছি তুমি যতই সুন্দরী হও তোমার তিক্ততা আর বিষের কথা আজ থেকে সবাই জানবে  আর ঘৃনায় তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে  নেবে,.........., তারপরে সেখানেই জন্মালো একটি লতা গাছ , আর সেই গাছে যে ফলটি ফললো,সেটি দেখতে আপেলের চেয়ে ও সুন্দর,কিন্তু ভিতরে কালো,তেতো আর বিষাক্ত।  এই ফলটির নাম হলো মাকাল। '



বাংলা নাম: মাকাল
ইংরেজী নাম: Colocynth, Cucumber.
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae
বিভাগ: Angiosperms
শ্রেণী: Eudicots
(unranked): Rosids
বর্গ: Cucurbitales
পরিবার: Cucurbitaceae
গণ: Citrullus
প্রজাতি: C. colocynthis
দ্বিপদী নাম: Citrullus colocynthis (L.) Schrad.
undefined
শুকনো ফল
পরিচিতি: একটি বহুবর্ষজীবী মাকাল ফলের গাছ লতানো আকৃতির উদ্ভিদ। এই গাছ অন্য বড় বৃক্ষকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে। লম্বায় প্রায় ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত হয়।
গাছের পাতা তেখতে হাতের তালুর মত। প্রতিটি পাতায় ৩-৭টি কারে খাঁজ থকে। পাতাগুলো একান্তরভাবে সজ্জিত। প্রতিটি পর্ব থেকে একটি করে পাতা ও আকর্ষি বের হয়। এই আকর্ষির সাহায্যেই মাকাল গাছ অন্য গাছকে আকড়িয়ে ধরে। পাতার কক্ষে ফুল ফোটে। ফূল ছোট সাদা রঙের এবং একলিঙ্গ। ফল দেখতে অনেকটা ডিমের মত কিন্তু আকারে ডিম থেকে বড় হয়। কাঁচা অবস্থায় সবুজ তার পর হলুদ ও পাকলে গাঢ় লাল হয়। ফলে প্রচুর পরিমাণে বীজ থাকে। শাঁস ধূসর বর্ণের এবং স্বাদ খুব তিতা। বর্ষাকালে ফুল ও ফল হয়।

বাংলায়  মাকাল ফল নিয়ে অনেক প্রবাদ প্রচলিত আছে , 'মাকাল ফল' প্রবাদটি কমবেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু ফলটিকে চেনেন তো? অকর্মণ্য মানুষকে 'মাকাল ফল' বলে গালি দিলেও মাকাল ফল কিন্তু অতটা খারাপ নয়! খাওয়া না গেলেও এ ফল একটি উপকারী ভেষজ এবং পরিবেশবান্ধব বিষ। এক সময় মাকাল ফল গ্রামে-গঞ্জে দেখা গেলেও এটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। 

  মাকাল শব্দটি বাংলা প্রবাদে বাজে অর্থে ব্যবহৃত হলেও এর প্রাচিন নাম ছিল মহাকাল যা ভেষজ গুণে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই নামটি বিকৃত হয়ে কালে কালে মাকাল হয়েছে বলে ভারতীয় চিকিৎসকরা মনে করেন।মাকাল ফল এক সময় হাঁপানি, নাক-কানের ঘা এমন কি কুষ্ঠ রোগেও ব্যবহৃত হয়েছে। যুগ যুগ পুরনো মাথা ব্যথার জন্যে তেল দিয়ে মিশ্রিত মাকালের শিকড় খুব উপযোগী। গাছে ধরা অবস্থায় মাকাল ফলের মতো সুন্দর ফল সত্যি খুব কম দেখা যায়, তবে ভেতরটা খুবই কদর্য।

 

মাকাল ফলের ইংরেজি নাম Colocynth, bitter cucumber। এর বৈজ্ঞানিক নাম Citrullus colocynthis। এর আদি নিবাস তুরস্ক। তুরস্ক থেকে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে গাছটি বিস্তার লাভ করে। সারা পৃথিবীতে এর ৪২টি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে আমাদের দেশে দেখতে পাওয়া যায় প্রায় ১২টি প্রজাতি।

 ফলটিকে আরবিতে হানজাল, সংস্কৃতে দেব দালিকা এবং হিন্দিতে ইন্দ্রায়ন বলা হয়। উদ্যানতত্ত্ববিদ উইলিয়াম মিথিউস মাকালকে অন্তঃসারশূন্য ফলে বলে অবিহিত করেছেন।
মাকাল ফলের গাছ একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি জঙ্গল বা বাড়ির বড় বড় গাছকে আশ্রায় করে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। মাকাল গাছ লম্বায় ৩০ থেক ৪০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর পাতায় থাকে অনেকগুলো খাঁজ। মাকাল ফল কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ, কিছুদিন পর হলুদ ও পাকলে লাল বর্ণ ধারণ করে। সাধারণত বর্ষাকালে মাকাল ফলের ফুল ও ফল হয়।


মাকাল ফল ও গাছের বেশ কিছু ভেষজ গুণও আছে। ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়াতে এই গাছের ব্যবহারের উল্লেখ আছে। আধুনিক ওষুধশিল্পে এ ফলের নির্যাস থেকে তৈরি ওষুধ ল্যাক্সেটিভ হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে

।>> পারগেটিভ বা নির্মলকারক হিসেবে: কাঁচা ফলের শুকনো শাঁস শক্তিশালী কোষ্ট পরিস্কারক হসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়ার অফিসিয়াল অনুমোদন প্রাপ্ত। মাকাল খুবই তিতা স্বাদযুক্ত এবং আধুনিক ঔষধ শিল্পে এই ফলের নির্যাস দিয়ে কোষ্ঠ পরিষ্কারক ক্যাপসুল তৈরী করা হয়। শুকনো এবং পাউডার ফর্মে মাত্র ২-৮ দানা কোষ্ঠ পরিষ্কারক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জন্ডিস রোগ নিরাময়ে এই ফলের নির্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দেহের জল নিষ্কাশন করে

কাঁচা ফলের শুকনো শ্বাস শক্তিশালী কোষ্ঠ পরিষ্কারক। মাকাল ফলের নির্যাস দিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ তৈরি করা হয়। এর শেকড় দিয়ে বদহজমের ওষুধ তৈরি করা হয়।

লিভারের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে

জার্মানির এক গবেষণা থেকে জানা যায়, মাকাল ফলের নির্যাস লিপিড পার-অক্সিডেশনে বাধা প্রদান করে, লিভার থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে
দেহে কোনো কারণে জল  জমলে অর্থাত্‍ শোথ রোগে দেহ থেকে জল  দূর করতে মাকাল ফলের নির্যাস খুবই শক্তিশালী ওষুধ হিসেবে কাজ করে।

জরায়ুর সমস্যায়

মাকাল ফল থেকে তৈরি ওষুধ নারীদের জরায়ুর বিভিন্ন সমস্যায় ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে নারীদের ঋতুবদ্ধতা নিরাময়ের ক্ষেত্রে এটি দারুণ কার্যকর।
এছাড়া স্তনের প্রদাহ, প্রস্রাবের সমস্যা, বাতের ব্যথা, কাশি, শিশুদের অ্যাজমা নিরাময়ে মাকাল গাছের ফল-মূল-কাণ্ড বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বীজের তেল সাপের কামড়, পেটের সমস্যা, মৃগীরোগ এবং চুলের বৃদ্ধি ও চুল কালো করতে কার্যকর।

রাসায়নিক উপাদান: ফলে থাকে গ্লাইকোসাইড এবং তিতা উপাদান যেমন- কলোসিন্থ, কলোসিন্থিনিন, ইলাটিরিন, সাইট্রুলুইন, সাইট্রুলুয়েন, সাইট্রুলেন। আরও থাকে সাইট্রুলিক এসিড, ফাইটোস্টেরল, ফ্যাটি এসিডের মিশ্রণ, রেজিন, হেপাটিকোসানল এবং সাইট্রুলোল(JCS, 1965; JPS 1967; JICS, 1955; IJP, 1970; IJC, 1979)। বীজে থাকে ফিক্সড অয়েল, ফাইটোস্টেরোলিন, ফাইটোস্টেরল, হাইড্রোকার্বন এবং স্যাপোনিন। এ ছাড়া গাছের অন্যন্য অংশে থাকে কোলন, এবং দুটি এলকালয়েড, গ্লাইকোসাইড এবং ট্যানিন( Planta Med, 1973 & 1974)। তেলে থাকে সাইট্রুনাল(CA, 1976)মূলে থাকে আলফা-ইলাটেরিন, হেনট্রিয়কনটেক এবং স্যাপোনিন।
ব্যবহার্য অংশ: ফল, বীজ, মূল।


বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়ায়: ইঁদুরের উপর এক গবেষণা থেকে জানা যায়, মাকাল ফলের পেট্রোলিয়াম ইথার নির্যাস থেকে স্টেরয়েড জাতীয় উপাদান আলাদা করে ইঁদুরের দেহে প্রয়োগ করা হয়। এবং পরীক্ষা শেষে দেখা যায় ইঁদুরের প্রোস্টেটের ওজন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমেছে।

স্তন প্রদাহে: এই গাছের মূল বেটে পেস্ট করে স্তনে লাগালে স্তনের প্রদাহ কমে।
এছাড়া গাছের মূল জন্ডিস, পেটে পানি জমা, প্রস্রাবের সমস্যা, বাতব্যথা, কাশি, পেট বড় হয়ে যাওয়া এবং শিশুদের এ্যাজমা নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
বীজের তেল সাপের কামড়, বিছার কামড়, পেটের সমস্যা( আমাশয়, ডায়রিয়া), মৃগীরোগ এবং সাবান উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়।
চুলের বৃদ্ধি ও চুল কালো করে: বীজের তেল চুলের বৃদ্ধি ও চুল কালো করতে কার্যকর।
ফল গুঁড়ো করে নারকেল তেলের সঙ্গে ফুটিয়ে নাক ও কানের ঘায়ে প্রয়োগ করলে আরাম হয়। কথিত আছে_ মাকালের ফল বিষাক্ত। অনেকে বলেন এ ফল ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে কাককে খেতে দিলে কাক মরে যায়। গবাদিপশুর বক্ষপ্রদাহে ও হৃদযন্ত্রের রোগে ফল ব্যবহৃত হয়। মূল সমপরিমাণ ত্রিফলা (আমলকি, বহেরা ও হরীতকী একসঙ্গে ত্রিফলা নামে পরিচিত) ও হলুদ মিশিয়ে যে অরিষ্ট তৈরি হয়, তা মধু মিশিয়ে সেবন করলে গনোরিয়া রোগে উপকার পাওয়া যায়। ফলের রস কিংবা মূলের বাকল তিল তেলের সঙ্গে গরম করে গোসলের সময় তেল হিসেবে ব্যবহার করলে বহুক্ষণ স্থায়ী মাথাধরা আরাম হয়। কানে পুঁজ হলে একই উপায়ে তৈরি করা তেল কানে দিলে আরাম হয়।
সতর্কতা: তবে গর্ভবতী মহিলাদের এই ঔষধ ব্যবহার না করাই ভাল। বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে এটা বিষ হয়ে যায় এবং ইউরোপে মৃত্যুবরণ করার ঘটনাও ঘটেছে। এক বা আধা চামচ পরিমান (প্রায় ৯০টি বিজ) পাউডার খেলে তার মৃত্যু হবে এটা প্রমানিত। এক মহিলা ১২০ দানা (Grains) পাউডার গ্রহণ করেন গর্ভপাতের জন্য এবং তিনি ৫০ ঘন্টার মধ্যে মারা জান। এক ঘটনা থেকে জানা যায়, ৩ আউন্স পরিমাণ পাউডারের বিষাক্ততা থেকে পুরনুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে মাকাল ফলের বিষাক্ত মাত্রা হল ০.৬ থেকে ১ গ্রাম এবং প্রায় ৮ গ্রাম হলে প্রাণনাশক।
এই গাছের সমস্ত অংশ তিতা এবং এর শুকনো পাউডার যখন নাকে বা চোখে প্রবেশ করে তখন চুলকায়।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া,
জাতীয় ই-তথ্যকোষ

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৬

শহুরে জীবনে সবুজের ছোঁয়া ---- Indoor plants


কিছুদিন আগেই আমার সম্পর্কিত বোন সোমার সাথে কথা হচ্ছিল।  কথাপ্রসঙ্গে ও বলছিলো ,ওর ও বললো ওর ও ভীষণ সবুজের শখ, কিন্তু ওর ফ্ল্যাটে জায়গার বড়ো অভাব।  আমার মনে হলো এ সমস্যা শুধু আমার বোন সোমার নয় , আজকের এই নাগরিক সভ্যতায় এ সমস্যা শহরে বাস করা প্রতিটি প্রতিটি মানুষের।
মানুষ স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতিপ্রেমী। সবুজের প্রতি সবার আলাদা একটা আকর্ষণ রয়েছে। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বনানী দেখে বিমুগ্ধ হন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সবুজের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার সহজ স্বীকারোক্তি প্রতিটি প্রকৃতিপ্রেমীর মাঝেই দেখা যায়। যদিও ইট কংক্রিটের প্রাচীরে ঘেরা এ কৃত্রিম শহরে সবুজের দেখা পাওয়া দুষ্কর। ফলে প্রকৃতি প্রেমীর মনের অনুভূতিগুলোও যেন গুমরে কাঁদে এ চার দেয়ালের মাঝেই। ইট-কংক্রিটের ফাঁক গলিয়ে একটু সবুজ উঁকি দিলে, তা-ই পাওয়ার অনাবিল আনন্দে ভরে ওঠে মন। এ পাওয়ার আনন্দকে উপভোগ করতেই আজকাল অনেক মানুষই  কৃত্রিমতার মাঝে প্রাণের স্পন্দন সৃষ্টি করছেন নিজ আঙ্গিনা বা ঘরের কোণটিকে সাজিয়ে।
শুধু সৌন্দর্য নয়, আজকের দূষিত পরিবেশে আপনার ঘরকে দূষণমুক্ত রাখতে কিছু কিছু গাছের ভূমিকা অপরিসীম।  এই সবুজের সমাবেশে কিভাবে আপনার ঘরে ইন্টেরিয়রে প্রকৃতির ছোঁয়া লাগবে তা আলোকপাত করার চেষ্টা করেই এই প্রতিবেদনের অবতারণা।

বেডরুম
নিজের বেডরুম  সবার কাছেই একান্ত  আপন ভুবন হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। নিজের  ছোট্ট এ ভুবনটিকে নিজের মতো করে সাজানোর বাসনা কম-বেশি প্রতিটি মানুষের মধ্যেই থাকে। তবে বেডরুমটিতে  কিভাবে সবুজের ছোঁয়া দেবেন  তা অনেকটাই নির্ভর করবে এটির  আকার কেমন তার ওপর। এটির  আকৃতি যদি একটু বড় হয় তাহলে বড় মাটির টবে রাখতে পারেন ফাইকাস ইলাস্টিকা (রবার গাছ), পাতা বাহার কিংবা একটু বড় আকৃতির ফান। ঘরের জানালার ধার ঘেঁষে একটু জায়গা থাকলে সেখানে রাখা যেতে পারে ইউফরবিয়া, ক্যালাথিয়া কেলিয়াস ব্রম্নমাই বা সারমেটাসা। ঘরের আকৃতি তুলনামূলক ছোট হলে ছোট্ট মাটির টবে রাখতে পারেন ছোট ফার্ন গাছ কিংবা পাথরকুচি । ভিন্নতা আনতে বড় পাতার বাহারি গাছ যেমনু কার্ডিলাইনে টার্মিনালিস, কেলিয়াস ব্রম্নমাই, ফরকেরিয়ার মতো গাছের সমারোহ ঘটাতে পারেন আপনার ছোট্ট ঘরটিতে । কাঁচের জারে বা বোতলে রাখতে পারেন মানি প্লান্ট , বাহারি ক্রোটন কিংবা ফাইকাস জাতীয় গাছ। বাড়িতে বাগান থাকলে বেডরুমের  ফুলদানিটিকে সাজাতে পারেন নিজ বাগানের ফুলে যা আমোদিত করে রাখবে আপনাকে এবং আপনার চারপাশকে।


ড্রইংরুম
একটি সাদামাটা ড্রইংরুমের  আর্টিস্টিক ভাব ফুটে উঠতে পারে মাটির পটারি ও সবুজের  সম্মিলনে। আপনার ড্রইংরুমের  কোণ ঘেঁষে বিভিন্ন আকৃতির মাটির পটারিতে শোভা পেতে পারে অ্যানুথরিয়াম, কার্ডিলাইনে পেপেরোমিয়া, ফাইকাস, বিগোনিয়া রেঙ্ বা সাইপেয়াস। ড্রইংরুমের  জানালায় ঝুলন্ত টবে  রাখতে পারেন অ্যাডিয়ান্টাম, অ্যাসপারাগাস, জেব্রিনা, ট্রাডেসকানসিয়া, সিন্দাপাস নেফ্রোলেপিসের মতো বিশেষ প্রজাতির গাছ। জায়গার অপ্রতুলতা থাকলে দেয়ালের সঙ্গে কার্ভ করে লাগিয়ে নিতে পারেন রড আয়রনের সেলফ। সেলফের ওপর রাখতে পারেন বনসাই, ব্যাম্বো ট্রি কিংবা ছোট্ট ফণিমনসার গাছ।

বারান্দা
বাড়ির সামনে বড় আঙ্গিনা থাকবে, সে আঙ্গিনা ভরে থাকবে শুধুমাত্র ফুলের গাছে। শহুরে জীবনে এ ধরনের চিন্তা যদিও অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে এ অলীক কল্পনাতেও কিছুটা বাস্তবতার  ছোঁয়া লাগতে পারে বারান্দাটা কাজে লাগাতে পারলে। ঘরের সামনের ছোট্ট বারন্দাটিতে রাখতে পারেন গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা , ডালিয়া ইত্যাদি ফুল। ফুলের পাশাপাশি আপনার সংগ্রহে থাকতে পারে পাতাবাহার, মানিপ্লান্ট , পাথরকুঁচি, আলো, ক্যালাডিয়াম, কোডিয়াম ভ্যারিগেটাম, বাহারি ক্রোটন, ইরান্থেমাম, রিয়ো বিগেনিয়া, অ্যাডিয়েন্টাম প্রভৃতি গাছ।
বাগান : আপনার বাড়ির সামনে যদি খালি জায়গা থাকে সেখানে গড়ে তুলতে পারেন চমৎকার ছোট্ট একটি বাগান। সে বাগানে লাগাতে পারেন ফাইকাস গণ ও অ্যাসপারাগাসের বেশ কিছু প্রজাতি যেমন ইলাস্টিকা, ট্রাঙ্গুলারিস, ড্রাসিনা, মহাত্মা ড্রসিনা গ্রীন, অ্যালপাইন, বেঞ্জামিন, লাইরাটা, ফ্যাতসিয়া, জাপনিকা, অ্যারোলিয়া ব্রড লিফ, গ্রেভেলিয়া রোবাস্টার ধরনের গাছ-গাছালি। এগুলোর মধ্যে এমন কিছু গাছ আছে যা বড় টবে রাখা যায়।

উইন্ডো গার্ডেন
অনেক বাড়িতে বাগান না থাকলেও জানালার সামনে বেশ খানিকটা জায়গা খালি থাকে। ঐ জায়গাটিকে গ্রিল দিয়ে ঘিরে তৈরি করতে পারেন উইন্ডো গার্ডেন। এই উইন্ডো গার্ডেনে থাকতে পারে অ্যানথুরিয়াম, কার্ডিলাইনে, পেপে রোমিয়া, ফাইকাস, বিগোনিয়া রেঙ্, সাইপেরাস প্রভৃতি গাছ।

সিঁড়িঘর
সিঁড়ি ঘরে আপনার দরজাটির কোণ ঘেঁষে ভিন্ন আকৃতির পটারি রাখতে পারেন। আর এসব পটারিতে রাখতে পারেন ফণিমনসা, পাতাবাহার, পাথরকুঁচি বা মানিপস্ন্যান্ট। দরজার দু'পাশের দেয়ালে মাটির পাত্র ঝুলিয়ে তাতে লাগাতে পারেন বাহারি রঙের গাছ-গাছালি। রড আয়রনের ছোট্ট তাকও বসাতে পারেন সিঁড়ি ঘরের এক কোণে বা মাঝখানে। তাকে রাখতে পারেন সুদৃশ্য ও ভিন্ন আকারের পাতাবাহার।
একটু চেষ্টা আর বুদ্ধি খাটিয়ে কংক্রিটের খাঁচার ভেতরেও রচনা করা যায় এক টুকরো সবুজ স্বর্গ। সবুজ মানুষের মনে প্রশান্তি  এনে দেয়। সজীব করে দেয় চারপাশ। বাড়ির ব্যালকনি কিংবা উইন্ডো বঙ্ইে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে  প্রথমে যেটা বিবেচনা করতে হবে সেটা হলো নির্বাচিত জায়গাটিতে কতটা সূর্যের আলো পাওয়া যাচ্ছে। পরিচর্যার জন্য বেশি সময় নেয় এমন গাছ পছন্দ না করাই ভাল। এতে বাড়তি সময় নষ্ট হতে পারে। গাছে কি ফুল ফোটাবেন তা আপনার নিজস্ব  ব্যাপার। তবে তার সঙ্গে ঘরের দেয়ালের রঙ, পর্দার রঙ এমনকি আসবাবপত্রের রঙেরও সামঞ্জস্য রাখতে পারেন। তবে সব মিলিয়ে ঘরে একটা ছবির মতো লুক আসবে।

জেনে রাখুন
০ এয়ার কন্ডিশন ঘরে বা পাখার নিচে গাছ রাখবেন না।
০ দুপুরের প্রখর - রোদে, খুব কম আলোয় বা প্রচুর আলোয় গাছ রাখবেন না।
০ সকালের হালকা আলোয় গাছ রাখবেন।
০ গাছে বছরে ২-৩ বার জৈবসার প্রয়োগ করবেন।
০ মানানসই টবে গাছ রাখবেন ও সময়মতো টব পরিবর্তন করবেন।
০ নোংরা, কম বা বেশি জল  দেয়া যাবে না গাছে। জলের  পরিমাণটা যাতে সঠিক থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
০ টবের মাটি সম্পূর্ণ শুকনো যেন না থাকে।
০ প্রতিটি গাছের আলাদা যত্ন নিতে হবে।
০ ধোঁয়া বা গ্যাসের কাছে গাছ রাখবেন না।
০ শুকনো পাতা কেটে ফেলবেন ও গাছে পোকা ধরলে কীটনাশক দিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ।
০ এসব গাছপালা লতাপাতার  যত্নআত্তি বা ঝক্কি-ঝামেলায় যারা নিজেদের জড়াতে চান না, তারা প্লাস্টিকের পাতাবাহার  দিয়েও সাজাতে পারেন আপনার নিজের প্রিয় ঘরকে।
০ ঘরের শোভা সবুজের সমারোহ সৃষ্টি করতে গিয়ে অনেকে রীতিমতো জঙ্গল বানিয়ে ফেলেন। সেখানে মশা, মাকড়সাসহ নানা পোকামাকড়ের বাসা হতে পারে। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশা যেন আপনার ঘরের মধ্যে বাসা বাঁধতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
০ ইনডোর প্লান্টের  মধ্যে এরিকা পাম, বাহারি ফার্ন, মানিপ্লান্ট , ওয়াটার বনসাই ইত্যাদি লাগাতে পারেন।
০ নিচু ব্যালকনিতে যেমন তালগাছ মানাবে না তেমনই ছোট অপরিসর স্থানে ঝাড়ওয়ালা গাছ না লাগানোই ভাল। মাঝারি উচ্চতার, সুন্দর আকৃতির পাতাওয়ালা গাছ বেছে নিন।
০ আপনার ব্যালকনির গ্রিলের সঙ্গে লতিয়ে থাকবে এ রকম গাছও সুন্দর দেখাবে।
০ ব্যালকনিতে কয়েকটি ঝুলন্ত  টবে ঝাড়ওয়ালা গাছ আর তার সঙ্গে কিছু মেটাল, বাঁশ বা সিরামিকের তৈরি উইন্ডচাইম ঝুলিয়ে দিন সঙ্গে। সবুজের সঙ্গে টুংটাং মিষ্টি আওয়াজ শুনতে বেশ ভাল লাগবে।
০ মাটিতে জল  দিতে দিতে সেখানে কেমন যেন কাদাকাদা হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে  মাটি খুঁড়ে তাতে সামান্য বালি মিশিয়ে দিলে ঝরঝরে হয়ে যাবে আর গাছের গোড়া পচবে না।
০ আপনার ব্যালকনিতে টেরাকোটার একটি ছোট গামলা রাখুন। এতে জল  ভরে এর মধ্যে কিছু ছোট প্রজাতির পদ্ম বা শালুক ফুল ভাসিয়ে দিন। দেখবেন ছোট জায়গাটিতেই কেমন রঙ বেরঙের পাখির মেলা বসে গেছে। আপনার বাগানটিতে যথাসম্ভব প্রাকৃতিক রূপ দেয়ার জন্য রকমারি নুড়ি পাথর দিয়ে সাজান। দেখতে ন্যাচারাল সুন্দর লাগবে।

ধনে পাতা


 নিত্যদিনের বিভিন্ন খাবারে ধনেপাতা ব্যবহার করে থাকেন খাবারের গন্ধ এবং স্বাদে একটা পরিবর্তন আনার জন্য। ধনেপাতার বৈজ্ঞানিক নাম হল কোরিয়ানড্রাম স্যাটিভাম।
ধনে পাতার স্বাদ ও গন্ধের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকেন না এমন ব্যক্তি কিন্তু খুব কম-ই আছে। প্রায় সব ধরনের তরকারিতেই ধনে পাতা স্বাদ বৃদ্ধি করে থাকে; সেই সাথে যুক্ত করে অসাধারণ ঘ্রাণ। ধনে পাতা কি শুধু স্বাদে গন্ধেই অনন্য? খাদ্য ও পুষ্টিগুণ বিচারে ধনে পাতার উপকারিতা বর্ণনাতীত।
ধনে পাতার পুষ্টিগুণ





ধনে পাতার উপকারিতা না জেনেই অধিকাংশ মানুষ নিয়মিত বিভিন্ন তরকারিতে এটি খেয়ে আসছে। ধনে পাতায় রয়েছে ১১ জাতের এসেনশিয়াল অয়েল, ৬ ধরণের অ্যাসিড (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড যা ভিটামিন সি নামেই বেশি পরিচিত), ভিটামিন, মিনারেল এবং অন্যান্য উপকারী পদার্থ।
ধনে পাতা কী কী উপকার করে থাকে?

  • ধনে পাতায় উপস্থিত সিনিওল এসেনশিয়াল অয়েল এবং লিনোলিক অ্যাসিড থাকে যার মধ্যে অ্যান্টিরিউম্যাটিক এবং অ্যান্টি-আর্থ্রাইটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এরা ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে।
  • ডিসইনফেকট্যান্ট, ডিটক্সিফাইং বা বিষাক্ততা রোধকারী, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকার কারণে এরা বিভিন্ন স্কিন ডিজঅর্ডার বা ত্বকের অসুস্থতা (একজিমা, ত্বকের শুষ্কতা এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন) সারাতে সাহায্য করে। ত্বক সুস্থ ও সতেজ রাখতে তাই ধনে পাতার উপকারিতা অনেক।
  • ধনে পাতায় থাকে লিনোলিক, অলিক, পাল্মিটিক, স্টেরিক এবং অ্যাসকরবিক অ্যাসিড যা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • বর্নেওল এবং লিনালোল অন্ত্রের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে যকৃত ও বাওয়েল সুস্থ থাকে এবং ডায়রিয়া কমাতেও সাহায্য করে। মাইক্রোবিয়াল এবং ফাঙ্গাল প্রতিক্রিয়ার কারণে ডায়রিয়া হোলে সেটা সারিয়ে তুলে। বমি বমি ভাব, বমি হওয়া এবং অন্যান্য পাকস্থলীর সমস্যা সমাধানে ধনে পাতার উপকারিতা অপরিসীম।
  • ক্যালসিয়াম আয়ন এবং কলিনার্জিক বা অ্যাসেটিকোলিন উপাদান মিলে আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • মুখের আলসার দূর করতে সহায়তা করে।
  • ধনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় এরা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টি হিস্টামিন উপাদান থাকায় এরা অ্যালার্জি বা এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে দূরে রাখে।
  • খাবারের মাধ্যমে সৃষ্ট সবচেয়ে ভয়াবহ রোগ সালমোনেলা। ধনে পাতায় উপস্থিত ডডেসিনাল উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে সালমোনেলা জাতীয় রোগ সারিয়ে তুলতে অ্যান্টিবায়টিকের থেকে দ্বিগুণ কার্যকর।
  • ধনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। হাড় মজবুত এবং সুস্থ রাখতে  ধনে পাতার উপকারিতা অনেক।
  • এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিইনফেকসাস্‌, ডিটক্সিফাইং, ভিটামিন সি এবং আয়রন গুটিবসন্ত প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করে।
  • মহিলাদের মাসিকের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
  • ধনে পাতায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং মিনারেল (যেমনঃ ফসফরাস) চোখের যত্নে খুবই উপকারী। এর মধ্যে থাকা মাইক্রোবিয়াল উপাদান ছোঁয়াচে রোগ (যেমনঃ কনজাংটিভাইটিস) থেকেও চোখকে রক্ষা করে।
  • এরা শরীরের ইনসুলিন নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তে সুগার এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
  • বিভিন্ন ভেষজ পদার্থের সাথে মিশিয়ে যৌনশক্তি বৃদ্ধি করতে ধনে পাতার উপকারিতা অনেক।
সতর্কতা
 কিন্তু কখনও কি কল্পনা করেছেন যে এই সুস্বাদু খাবারটির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে? অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি কথা হল, এই সুপরিচিত সবুজ সবজিটির অনেক ঔষধি গুণাগুণের পাশাপাশি অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বিদ্যমান। যা নিয়মিত খেলে আমাদের শরীর দিনদিন অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
অনেকের ক্ষেত্রে সূর্যরশ্মির সংবেদনশীলতা বা সানলাইট সেনসিটিভিটি দেখা দিতে পারে এবং অত্যাধিক মাত্রায় খাওয়া হোলে সানবার্ন হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে এরকম হতে থাকলে স্কিন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


লিভারের ক্ষতিসাধন অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে এটি লিভারের কার্যক্ষমতাকে খারাপভাবে প্রভাবিত করে থাকে। এতে থাকা এক ধরনের উদ্ভিজ তেল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে ফেলে। এছাড়া এটাতে এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যেটা সাধারণত লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে কিন্তু দেহের মাঝে এর অতিরিক্ত মাত্রার উপস্থিতি লিভারের ক্ষতিসাধন করে। নিম্ন রক্তচাপ অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার ফলে দেহের হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্য নষ্ট করে ফেলে, যার ফলে নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই ধনেপাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে নিম্ন রক্তচাপের উদ্ভব ঘটতে পারে। এছাড়া এটি হালকা মাথাব্যথারও উদ্রেক করতে পারে।
পেট খারাপ স্বাভাবিকভাবে ধনেপাতা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল বিষয়ক সমস্যা দূর করে থাকে কিন্তু বেশি পরিমাণে ধনেপাতা সেবন পাকস্থলীতে হজমক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি করে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এক সপ্তাহে ২০০ এমএল ধনেপাতা আহারে গ্যাসের ব্যথা ওঠা, পেটে ব্যথা, পেট ফুলে ওঠা, বমি হওয়া হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা যায়। ডায়রিয়া ধনেপাতা অল্প খেলে পেটের সমস্যা দূর হয় কিন্তু এটি বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এছাড়া এর ফলে ডিহাইড্রেশন হতে থাকে। ফলে ডায়রিয়ার সমস্যাটি হতেই থাকে। তাই এই ধরনের সমস্যা এড়াতে প্রতিদিনের খাবারে ধনেপাতা কম পরিমাণে ব্যবহার করুন।
নিঃশ্বাসের সমস্যা আপনি যদি শ্বাসকষ্টের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে এই ধনেপাতা আহার থেকে বিরত থাকুন। কেননা এটি আপনার শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা করে থাকে যার ফলে ফুসফুসে অ্যাজমার সমস্যা হতে পারে। এই ধনেপাতা খেলে মাঝে মাঝে ছোট ছোট নিশ্বাস নিতেও সমস্যা তৈরি হয়। বুকে ব্যথা অতিরিক্ত ধনেপাতা আহারে বুকে ব্যথার মত জটিল সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এটা শুধুমাত্র অস্বস্তিকর ব্যথাই সৃষ্টি করে না তা দীর্ঘস্থায়ীও হয়ে থাকে।
এজন্য এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে দৈনন্দিন আহারে কম করে এই ধনেপাতা খেতে পারেন। ত্বকের সংবেদনশীলতা সবুজ ধনেপাতাতে মোটামুটিভাবে কিছু ঔষধি অ্যাসিডিক উপাদান থাকে যেটি ত্বককে সূর্যরশ্মি থেকে বাঁচিয়ে সংবেদনশীল করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত সেবনে সূর্যের রশ্মি একেবারেই ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না ফলে ত্বক ভিটামিন কে থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া ধনেপাতা ত্বকের ক্যান্সার প্রবণতাও তৈরি করে থাকে। অ্যালার্জীর সমস্যা ধনেপাতার প্রোটিন উপাদানটি শরীরে আইজিই নামক অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানকে সমানভাবে বহন করে থাকে।
কিন্তু এর অতিরিক্ত মাত্রা উপাদানগুলোর ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে। ফলে অ্যালার্জীর তৈরি হয়। এই অ্যালার্জীর ফলে দেহে চুলকানি, ফুলে যাওয়া, জ্বালাপোড়া করা, র্যা শ ওঠা এই ধরনের নানা সমস্যা হয়ে থাকে। প্রদাহ অতিরিক্ত ধনেপাতা সেবনের আরেকটি বিশেষ পার্শ্ব প্রতক্রিয়া হল মুখে প্রদাহ হওয়া। এই ঔষধিটির বিভিন্ন এসিডিক উপাদান যেটি আমাদের ত্বককে সংবেদনশীল করে থাকে পাশাপাশি এটি মুখে প্রদাহেরও সৃষ্টি করে। বিশেষ করে এর ফলে ঠোঁট, মাড়ি এবং গলা ব্যথা হয়ে থাকে।
এর ফলে সারা মুখ লাল হয়েও যায়। ভ্রূণের ক্ষতি গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া ভ্রূণের বা বাচ্চার শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকারক। ধনেপাতাতে থাকা কিছু উপাদান মহিলাদের প্রজনন গ্রন্থির কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে ফেলে যার ফলে মহিলাদের বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা লোপ পায় এবং বাচ্চা ধারণ করলেও গর্ভকালীন ভ্রূণের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।

বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৬

নবপত্রিকা (কলাবউ )

আজ সকালে আমার ভাত্রিপ্রতিম বন্ধু অনুপ আমার বাড়িতে এসে বললো ,'দাদা,একটা দরকারে এলাম, আগামীকাল বাড়ীতে লক্ষী পুজো , পারিবারিক রীতি অনুযায়ী আমাদের মূর্তির পরিবর্তে কলাবৌ  লক্ষীরূপে পূজিতা হন।  প্রতি বছরই আমার মেজদা সবকিছু জোগাড় করেন, এ বছর দাদা বাইরে থাকায় দায়িত্ব আমার ঘাড়ে।  আমি জানি এখানে অশোকে গাছ আছে, বাকি সব জোগাড় হয়ে গেছে, অশোক গাছের জন্যই এখানে আসা ' আমি অত্যন্ত ব্যাথিত হয়ে জানালাম যে সাম্প্রতিক ঝরে আমাদের  অশোক গাছটি ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। 

বিজয়া সম্ভাষণ ও চা পর্ব মিটিয়ে অনুপ চলে যেতেই মনে হলো দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিভিন্ন পুজো ,সামাজিক অনুষ্ঠান এ সবের সাথে বিভিন্ন গাছ-গাছালি ,কৃষি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। আমাদের জীবন যতই ইট পাথর লোহার নগরসভ্যতায় জড়িয়ে যাই না কেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষণেই গাছ-গাছালি জড়িয়ে আছে..... এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই এই প্রতিবেদনের অবতারণা।

  কৃত্তিবাস ওঝা বিরচিত রামায়ণে রামচন্দ্র কর্তৃক নবপত্রিকা পূজার উল্লেখ রয়েছে – “বাঁধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস।”
নবপত্রিকা  দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। তবে বাস্তবে নবপত্রিকা নয়টি পাতা নয়, নয়টি উদ্ভিদ। এগুলি হল: কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (ডালিম), অশোক, মান ও ধান।
একটি সপত্র কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে একজোড়া বেল সহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়; তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ ......... 



গ্রীক দেবী ‘রুহী’ বা রোমান দেবী ‘সিবিলি’র মতো দেবী দুর্গাও আমাদের ভূমির সঙ্গে তথা প্রকৃতির সঙ্গে জড়িয়ে মিশিয়ে আছেন | ড: শশিভূষণ দাশগুপ্তের মতে মূলত শস্যের দেবী হিসাবেই দেবী দুর্গা পূজিত হয়ে আসছেন | পণ্ডিত যোগেশচন্দ্র রায়ের মতে রামচন্দ্র যে অকালবোধন করেছিলেন তাও আসলে আরণ্যসভ্যতা থেকে কৃষিসভ্যতায় উত্তরণ | তাঁর মতে প্রাচীনকালে শরৎঋতুই নববৎসরের সূচনা করত‚ কারণ সে সময় দেশ শস্যশ্যামলে ভরে উঠত — কৃষকের ঘর থাকত ভরে |

নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে কল্পিত হয়ঃ
  1. কদলী বা রম্ভা: কদলি গাছ এর অধিষ্টাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী;
  2. কচু: কচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা;
  3. হরিদ্রা: হরিদ্রা গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী উমা;
  4. জয়ন্তী: জয়ন্তী গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কার্তিকী;
  5. বিল্ব: বিল্ব গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা;
  6. দাড়িম্ব: দাড়িম্ব গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা;
  7. অশোক: অশোক গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা;
  8. মান: মান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী চামুণ্ডা;
  9. ধান: ধান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী।
এই নয় দেবী একত্রে "নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা" নামে নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ মন্ত্রে পূজিতা হন।
রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা,
দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী

  ডঃ শশিভূষণ দাশগুপ্ত লিখেছেন, "এই শস্যবধূকেই দেবীর প্রতীক গ্রহণ করিয়া প্রথমে পূজা করিতে হয়, তাহার কারণ শারদীয়া পূজা মূলে বোধহয় এই শস্য-দেবীরই পূজা। পরবর্তীকালের বিভিন্ন দুর্গাপূজার বিধিতে এই নবপত্রিকার বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হইয়াছে। ... বলাবাহুল্য এই সবই হইল পৌরাণিক দুর্গাদেবীর সহিত এই শস্যদেবীকে সর্বাংশে মিলাইয়া লইবার একটা সচেতন চেষ্টা। এই শস্য-দেবী মাতা পৃথিবীরই রূপভেদ, সুতরাং আমাদের জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে আমাদের দুর্গাপূজার ভিতরে এখনও সেই আদিমাতা পৃথিবীর পূজা অনেকখানি মিশিয়া আছে।" ডঃ জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “Another important aspect of the Devi is her concept as the personification of vegetation spirit, which is emphasised by her name Sākambhari already noted. This finds clear corroboration in the present day Navapatrikāpraveśa ceremony in autumnal worship of Durgā in Bengal.” তবে হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য দুর্গাপূজার সঙ্গে শস্যদেবীর পূজার অনুষঙ্গটি স্বীকার করলেও, শাকম্ভরী তত্ত্বটিকে নবপত্রিকার উৎসরূপে মানেননি। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি লিখেছেন, “আমি নবপত্রিকার উৎপত্তি ও প্রয়োজন বিন্দুমাত্র বুঝিতে পারি নাই। নবপত্রিকা নবদুর্গা, ইহার দ্বারাও কিছুই বুঝিলাম না। দেবীপুরাণে নবদুর্গা আছে, কিন্তু নবপত্রিকা নাই।... নবপত্রিকা দুর্গাপূজার এক আগন্তুক অঙ্গ হইয়াছে।... বোধ হয় কোনও প্রদেশে শবরাদি জাতি নয়টি গাছের পাতা সম্মুখে রাখিয়া নবরাত্রি উৎসব করিত। তাহাদের নবপত্রী দুর্গা-প্রতিমার পার্শ্বে স্থাপিত হইতেছে।” উল্লেখ্য, মার্কণ্ডেয় পুরাণে নবপত্রিকার উল্লেখ নেই। কালিকাপুরাণে নবপত্রিকার উল্লেখ না থাকলেও, সপ্তমী তিথিতে পত্রিকাপূজার নির্দেশ রয়েছে।
 রামায়ণ ও কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে এমনকী চণ্ডীতেও দেখা যায় শস্যের দেবী হিসাবে দেবী দুর্গা পূজিত হতেন | দেবীও নিজেকে শাকম্ভরী হিসাবে প্রকাশ করেছেন | আজও তার চিহ্ন দেখতে পাই নবপত্রিকায় — সাধারণত লোকে যাকে কলাবউ বা গণেশের বউ বলে চিহ্নিত করে | প্রকৃতপক্ষে এটি গণেশের বউ নয়‚ দুর্গারই এক মূর্তি — ধরিত্রীমাতা বা শস্যবধূর প্রতীক |

 অর্গলাস্তোত্রম্‌
।। ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ ।।
ওঁ অস্য শ্রীঅর্গলাস্তোত্রমন্ত্রস্য বিষ্ণুর্ঋষিঃ অনুষ্টুপ্ছন্দঃ শ্রীমহালক্ষ্মীর্দেবতা শ্রীজগদম্বাপ্রীত্যর্থং সপ্তশতীপাঠাঙ্গজপে বিনিয়োগঃ।
এই অর্গলাস্তোত্রের ঋষি হলেন বিষ্ণু, ছন্দ হল অনুষ্টুপ ও দেবতা হলেন শ্রীমহালক্ষ্মী। জগজ্জননীর প্রীতির জন্য শ্রীশ্রীচণ্ডীপাঠের অঙ্গরূপে এই স্তোত্র পাঠ করা হয়।
ওঁ মার্কণ্ডেয় উবাচ।
মার্কণ্ডেয় বললেন–
ওঁ জয় ত্বং দেবি চামুণ্ডে জয় ভূতাপহারিণি।[*]
জয় সর্বগতে দেবি কালরাত্রি নমোঽস্তু তে।। ১
হে দেবী চামূণ্ডা, তোমার জয় হোক। হে দেবী, তুমি জীবের দুঃখনাশকারিণী; তুমি সর্বভূতে অবস্থিতা; আবার তুমিই প্রলয়ের অন্ধকার স্বরূপিণী কালরাত্রি। তোমায় নমস্কার করি।
জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।
দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে।। ২
হে দেবী, তুমি সর্বোৎকৃষ্টা জয়যুক্তা দেবী জয়ন্তী; তুমি জন্মমৃত্যুবিনাশিনী মোক্ষপ্রদায়িনী দেবী মঙ্গলা; তুমি সর্বসংহারকারিণী কালী; তুমি সুখদায়িনী ভদ্রকালী; আবার তুমিই প্রলয়কালে ব্রহ্মা প্রমুখের মাথার খুলি হস্তে নৃত্যরতা কপালিনী। তুমি দুর্গা, কারণ বহু কষ্ট স্বীকার করে তবে তোমায় লাভ করা যায়; তুমি চৈতন্যময়ী শিবা; তুমি করুণাময়ী ক্ষমা; তুমি বিশ্বধারিণী ধাত্রী; তুমি দেবগণের পোষণকর্ত্রী স্বাহা ও পিতৃগণের পোষণকর্ত্রী স্বধা। তোমায় নমস্কার করি।
মধুকৈটভবিধ্বংসি[†] বিধাতৃবরদে নমঃ।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৩
হে দেবী, তুমি মধুকৈটভ নামক দুই অসুরকে বিনাশ করেছিলে। তুমি ব্রহ্মাকে বরপ্রদান করেছিলে। তোমায় প্রণাম করি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
মহিষাসুরনির্ণাশি ভক্তানাং সুখদে নমঃ।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৪
হে দেবী, তুমি মহিষাসুরমর্দিনী। আবার তুমিই ভক্তগণে সুখ প্রদান করে থাকো। তোমায় প্রণাম করি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
ধূম্রনেত্রবধে দেবি ধর্মকামার্থদায়িনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৫
হে দেবী, তুমি ধূম্রলোচন অসুরকে বধ করেছিলে। আবার তুমিই ভক্তকে ধর্ম, অর্থ ও কাম প্রদান করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
রক্তবীজবধে দেবি চণ্ডমুণ্ডবিনাশিনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৬
হে দেবী, তুমি রক্তবীজ, চণ্ড ও মুণ্ড অসুরত্রয়কে বধ করেছিলে। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
শুম্ভনিশুম্ভনির্ণাশি ত্রৈলোক্যশুভদে নমঃ।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৭
হে দেবী, তুমি শুম্ভ ও নিশুম্ভ অসুরদ্বয়কে বধ করেছিলে। আবার তুমিই তিন লোকের কল্যাণকারিনী। তোমায় প্রণাম করি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
বন্দিতাঙ্ঘ্রিযুগে দেবি সর্বসৌভাগ্যদায়িনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৮
হে দেবী, ব্রহ্মা প্রমুখ দেবগণ তোমার পদযুগল বন্দনা করেন। তুমি সকল প্রকার সৌভাগ্য প্রদান করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
অচিন্ত্যরূপচরিতে সর্বশত্রুবিনাশিনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ৯
হে দেবী, তোমার রূপ ও কার্য চিন্তার অগম্য। তুমি সকল শত্রুকে বিনাশ করে থাকো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
নতেভ্য সর্বদা ভক্ত্যা চাপর্ণে দুরিতাপহে।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। ১০
হে অপর্ণা[§], তুমি আশ্রিত ভক্তের পাপ নাশ করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো।
স্তুবদ্ভ্যো ভক্তিপূর্বং ত্বাং চণ্ডিকে ব্যাধিনাশিনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি

তথ্যসুত্র ও  ফটো :- গুগল সৌজন্যে

বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬

গুই সাপ বা গোসাপ

" টিকটিকি, গিরগিটি, বহুরূপী, তক্ষক, গোসাপ এঁরা সকলে হলেন কুমিরের জ্ঞাতিবর্গ। পৃথিবীর যে-কোন দেশে যাও, এঁদের কোন না কোনটির সাক্ষাৎ পাবেই। কিন্তু সাক্ষাৎ পেলেই যে তাদের সব সময়ে তাদের চিনতে পারবে, তা মনে করো না। অস্ট্রেলিয়ার সেই কাঁটাওয়ালা ভীষণমূর্তি জানোয়ার যে নিতান্ত নিরীহ গিরগিটি মাত্র, এ কথা আগে থেকে না জানলে কি কেউ বুঝতে পারবে? কেবল চেহারা দেখে যদি এর সম্বন্ধে কোন মতামত দিতে হয়, তাহলে অনেকেই হয়ত বেচারির উপর অবিচার করবে। সমস্ত শরীরটি এর অস্ত্রে আর বর্মে ঢাকা, কিন্তু মেজাজটি যারপরনাই ঠাণ্ডা। দুপুরের রোদে শুকনো বালির উপর এরা পড়ে থাকে, ভয় পেলে তাড়াতাড়ি বালির মধ্যে ঢুকে যায়। অন্য জন্তুর অনিষ্ট করা দূরে থাকুক, সামান্য একটা পাখি দেখলেই এরা পালাবার জন্য ব্যস্ত হয়। এদের প্রধান খাদ্য পিঁপড়ে। সব চাইতে আশ্চর্য এই যে, এক বাটি জলের মধ্যে যদি এই গিরগিটিকে ছেড়ে দাও, তবে দেখতে দেখতে এর গায়ের চামড়া সমস্ত জল শুষে নেবে। শুকনো বালিতে থাকে কিনা সব সময়ে ত স্নানের সুবিধা হয় না, তাই একবার স্নান করলেই সে অনেকদিনের মতো জল বোঝাই করে নেয়।
ওঙ্কার ধামে গোসাপ


 খাঁটি গোসাপ-জাতীয় জন্তু আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। 'হিংস্র' বলতে যা বোঝায় গোসাপেরা ঠিক তা নয় কিন্তু একবার গোঁ ধরলে সেও ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। আমাদের দেশে কথায় বলে 'কচ্ছপের কামাড়', সাহেবেরা বলেন, 'বুলডগের কামড়'— কিন্তু গোসাপ খেপলে পরে তার কামড় ছাড়ানও বড় কম শক্ত নয়। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে যে, গিরগিটিটাকে খুব বড় করতে পারলেই বুঝি ঠিক গোসাপ হয়ে দাঁড়াবে, কিন্তু বাস্তবিক গিরগিটি আর গোসাপের গড়নে কিছু তফাৎ আছে। গোসাপের ঘাড়টা অনেকটা লম্বা গোছের, আর তার জিভটা সাপের মতো চেরা, চলতে ফিরতে লক্‌লক্‌ করে। গোসাপেরা আমিষখোর, সাপ, টিকটিকি, ইঁদুর, ব্যাং, পাখি, এইসব খেয়ে থাকে— তাদের বিশেষ প্রিয় খাদ্য নাকি কুমিরের ডিম। আমাদের দেশে গোসাপ ডাঙায়ও থাকে জলেও নামে, তাই সাঁতারের সুবিধার জন্য তাদের ল্যাজগুলি চ্যাটাল হয়। যেসব গোসাপ কেবল শুকনো ডাঙায় বা গাছে থাকে, তাদের ল্যাজ হয় চাবুকের মতো গোল।"  --------সুকুমার রায়


গুই সাপ বা গোসাপ, ( Monitor Lizard) কোনো সাপ নয়; এটি বড়সড় টিকটিকির মতো দেখতে কিন্তু সাপের মতো দ্বিখণ্ডিত জিভসম্পন্ন প্রাণী। এটি ভ্যারানিডি (Varanidae) গোত্রের সরীসৃপ। "গুই"/"গো" নামটি এসেছে "গোধিকা" থেকে।
বৃহত্তম গুই সাপ হল ইন্দোনেশিয়ার কোমোডো ড্রাগন। সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে কোমোডো ড্রাগনেরও বিষ আছে।
গুই সাপ বিভন্ন প্রকার হয়:
  • জলগোধিকা (water monitor)
  • স্থলগোধিকা (land monitor)
  • স্বর্ণগোধিকা (yellow monitor)
  •  
হিন্দু শাস্ত্রমতে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় এই স্বর্ণগোধিকা বা সোনা গোসাপ দেখা ঠিক শুভ নয়।                                                                               

শিবঝুল\ ব্রহ্মজটা

শিবঝুল
ফুলটির বাংলা নাম শিবঝুল। আবার জটার ন্যায় দেখতে তাই অন্য নাম শিবজট। ইংরেজি নাম Red Hot Cat Tail, Chenille Plant, Philippines Medusa এবং Fox Tail. বৈজ্ঞানিক নাম Acalypha hispida. এটি Euphorbiaceae পরিবারের সদস্য। 

দ্রুত বর্ধনশীল গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এটি প্রায় ৬-৮ ফুট উচুঁ ও ৩-৬ ফুট বিস্তৃত হতে পারে। পাতা বড়, ডিম্বাকার এবং উজ্জ্বল সবুজ। গ্রীষ্ম ও শরতে পাতার ফাঁকে ফাঁকে সুদৃশ্য লম্বা ঝুলন্ত পুষ্পদন্ডে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লাল বা গোলাপী রংয়ের ফুল ফোটে। বীজ এবং কলমের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি।
আদি নিবাস হাওয়াই দ্বীপ ও ওসেনিয়া কিন্তু পরবর্তীতে উত্তর আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও বেলিজ এ প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

এটা বাগানে অথবা টবে লাগিয়ে ঘরেও রাখা হয়। তবে এই উদ্ভিদের প্রায় প্রতিটি অংশই প্রাণীদের জন্য বিষাক্ত তাই চাষের সময় সচেতন থাকতে হয়। উদ্ভিদটি একলিঙ্গী এবং স্ত্রী ও পুরুষ উদ্ভিদ স্পষ্টতই আলাদা।
ফুলের প্রকৃতি ও উজ্জ্বল রংয়ের কারণে শোভাবর্ধনকারী এই উদ্ভিদ পুষ্পপ্রেমীদের অত্যন্ত প্রিয়।
ছি ছি সখা কি করিলে,
কোন্ প্রাণে পরশিলে
কামিনীকুসুম;
ছিল বন আলো করিয়া—
মানুষপরশ-ভরে
শিহরিয়া সকাতরে
ওই যে শতধা হয়ে পড়িল গো ঝরিয়া।
জান তো কামিনী সতী,
কোমল কুসুম অতি
দূর হ’তে দেখিবারে, ছুঁইবারে নহে সে—
দূর হ’তে মৃদু বায়, গন্ধ তার দিয়ে যায়,
কাছে গেলে মানুষের শ্বাস নাহি সহে সে।
মধুপের পদক্ষেপে পড়িতেছে কেঁপে কেঁপে,
কাতর হতেছে কত প্রভাতের সমীরে!
--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


কামিনী  ফুল যখন ফোটে তখন পরিপূর্ণ পুষ্পিত ডাল অসংখ্য ফুলের ভারে নুয়ে পড়ে। সুগন্ধি ছড়িয়ে দেয় বাতাসে। বৃষ্টিস্নাত দিনে কিংবা অবাধ্য বাতাসের ঝাপটায় কামিনী গাছ থেকে দলবেঁধে ঝরে পড়ে সাদা সাদা পাপড়ি। গাছের দিকে তাকালে দেখা যায় তখনো পাতার ফাঁকে স্নিগ্ধ হাসছে গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল। ফুলের পাপড়ি ঝরে ঝরে গাছের তলাটি দেখে তখন মনে হবে কেউ যেন মায়াবী সাদা চাদর বিছিয়ে দিয়েছে। এ ফুলটিকে একটু ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছায় হাত বাড়ালে নিমিষেই ঝরে যাবে সব পাপড়ি, শুধু আঙুলে লেগে থাকবে  মিষ্টি গন্ধ।

এ ফুলের আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। কারো কারো মতে চীন। বৈজ্ঞানিক নাম Murraya exotica. এটি Rutaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। অন্যান্য স্থানীয় নামের মধ্যে Orange Jasmine, Chinese box উল্লেখযোগ্য।
কিছুটা বড় আকারের পাতা ও ফুলের থোকার আরেকটি ভারতীয় প্রজাতি Murraya paniculate আছে। বীজ ও কলমের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয়।
ছোটখাটো ধরনের গাছ, ৩ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। ফুলের পাঁচ পাপড়ির মাঝে একটি হলদে পরাগ কেশর থাকে। দুধ সাদা এই ফুল গুচ্ছবদ্ধ, অনেকটা লেবু ফুলের মতো। বর্ষার ফুল হলেও বছরে বেশ কয়েকবার কামিনী ফোটে।
শুধু ফুলের সৌরভ কিংবা রূপ নয়, কামিনীর পাতার সৌন্দর্য মুগ্ধ হওয়ার মতো। ঘন বিন্যস্ত ছোট চিরসবুজ পাতাগুলো বেশ দৃষ্টিনন্দন। তাই এর বাণিজ্যিক ব্যবহারও লক্ষণীয়। পুষ্পস্তবক তৈরি ও বিয়ের সজ্জায় কামিনী পাতার ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়।

"There has fallen a splendid tear From the passion flower at the gate. She is coming, my love, my dear; She is coming, my life, my fate."

‘হঠাৎ কিসের মন্ত্র এসে
ভুলিয়ে দিলে এক নিমেষে
বাদল বেলার কথা,
হারিয়ে পাওয়া আলোটিরে
নাচায় ডালে ফিরে ফিরে
ঝুমকো ফুলের লতা।’


   
দেখতে অনেকটাই কানের অলংকার ঝুমকোর মতো। সেই সুবাদে ফুলটির পরিচিতি ঝুমকো লতা বলে। আবার স্থানীয়ভাবে এর পরিচিতি রাধিকা নাচন। হালকা বেগুনি রঙের আভায় ফোটা ঝুমকো লতা সত্যি বাহারি এক ফুল।
   কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর প্রিয়াকে বলছেন,
"নাই পরিলে নোটন খোঁপায়
ঝুমকো জবার ফুল,
এমনি এসো লুটিয়ে পিঠে
আকুল এলোচুল।"
ঝুমকো লতানো উদ্ভিদের ফুল। ডালপালা ও পাতা শক্ত ও দৃঢ়। সাধারণত ফুল ফোটে গ্রীষ্মে ও বর্ষায়। পৃথিবী জুড়ে ঝুমকো ফুলের প্রায় পাঁচশটি প্রজাতি আছে। ইংরেজীতে Passion flower বা Love-in-a-mist বলে। বৈজ্ঞানিক নাম Passiflora spp. মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি দেখা যায় আমাদের দেশে। এখানে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় নীল ও বেগুনি রঙের সুগন্ধি ফুলগুলো।

এদের আদি নিবাস ব্রাজিল। তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় এদের বেশ দেখা যায়। দাবা কলমের মাধ্যমে এদের বংশবিস্তার হয়। ফুলের অতুলনীয় সৌন্দর্য, রূপ আর মিষ্টি মাদকময় গন্ধের জন্য ঝুমকো লতা সবার প্রিয়।

আমাদের ওঙ্কার ধামে প্রায় ৩ রকম প্রজাতির পাসসিফ্লরা বা ঝুমকোলতা ছিল  ,  পরে বিভিন্ন কারনে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। অজ্ঞাত কারণে আর কিছুতেই বাঁচাতে পারছিলাম না আমার প্রিয় ঝুমকোলতাদের। গতবছর বর্ষায় আমি,স্বাতী আর আমার মেয়ে তিতলি একটা আশ্রমে গিয়েছিলাম ,( প্রসঙ্গত জানাই ছুটি পেলেই আমরা তিনজনে বেরিয়ে পড়তাম কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য না নিয়েই , সঙ্গী আমার হুন্ডাই ,সারাদিন ইচ্ছেমতো ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় বা রাত্রে ফিরতাম ) আশ্রমে একটি চালা জুড়ে ফুল ফুটে আলো হয়ে আছে  ঝুমকোলতা।

  তিতলি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল ,'এটা কি গাছ বাবা,কি সুন্দর ফুল,...!  এই গাছ কিন্তু আমার চাই,' জোগাড় হলো ২ টি চারা , তিতলি নিজের হাতে লাগলো আমাদের সিঁড়ির পাশে।  আমি সাধারণত একটু লেট -রাইজার , বাগানে কোনো নতুন ফুল ফুটলে আমাকে ডেকে তুলে না দেখানো পর্যন্ত শান্তি হতো না আমার তিতলি মায়ের।  এই বছর বর্ষায় একদিন সকাল ৮ টা নাগাদ ব্যালকনিতে গিয়ে দেখি তিতলির লাগানো ঝুমকোলতায় ৫ তা ফুল ফুটেছে,...........

 এটা দেখলে যে আনন্দ করে আমাকে ডেকে দেখাতো সেই আমার তিতলিমা আজ বহু দূরে, অমৃতলোকে, ওর প্রিয়  মেঘ,চাঁদ,ফুল,পাখি আর প্রজাপতিদের দেশে ,........!!!
   স্বাতী কে ডেকে দেখলাম ফুলগুলো, আমাদের দু জনের চোখেই জলের ধারা,............ আমি জানি আমার মেয়ে তিতলি ও দেখছে ওর নিজের হাতে লাগানো ঝুমকোলতাদের , হয়তো আমাকে ডেকে বলছে 'বাবা দ্যাখো আমার গাছে প্রথম ফুল ফুটেছে ' শুধু আমরা শুনতে পাচ্ছি ,........... বা এগুলোই আমার মেয়ে তিতলি। মনে পড়লো ইংরেজ কবি লর্ড টেনিসনের কবিতাটা,

 "There has fallen a splendid tear
From the passion flower at the gate.
She is coming, my love, my dear;
She is coming, my life, my fate."

ভালো থাকিস আমার সোনা মা, তোর প্রিয় ফুলেদের দেশে ফুলেদের সাথে ,........................

মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬

লঙ্কা জবা

পাতায় পাতায় ঘাসে ঘাসে নবীন প্রাণের পত্র আসে,
পলাশ-জবায় কনক-চাঁপায় অশোকে-অশ্বত্থে॥
                                           ------রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


আমাদের দেশে জবা ফুলের নানা জাতের মধ্যে লঙ্কা জবা বাগানে শোভাবর্ধক হিসেবে রোপণ করা হয়। আমাদের দেশের প্রায় সবখানেই অনায়াসে এ ফুল জন্মে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলেই এ ফুল বেশি চোখে পড়ে। এদের ফুল দেখতে লাল লঙ্কা বা পাকা মরিচের মত বলে একে মরিচ জবা বলেও ডাকা হয়। অনেকে কলি জবা নামেও ডাকে। মরিচ জবার ইংরেজি নাম Turk's cap, Wax mallow, Texas mallow, Sleeping hibiscus ও বৈজ্ঞানিক নাম Malvaviscus aboreus.
ক্রান্তীয় আমেরিকার প্রজাতি। ডালপালা এবং পাতা অবিকল জবার মতোই। ২.৫ মিটার উচু, ঝোপালো গাছ, ডালপালা এলানো স্বভাবের। প্রায় সারা বছরই ফুল ফোটে, বেশি ফোটে শরতে ও শীতের শুরুতে। ফুল ঝুলন্ত, আকৃতি মরিচের মতো, ৫-৬ সেমি লম্বা, গাঢ় লাল ও সাদা দুইটি ভ্যারাইটি।

শীতের প্রথম দিকে যখন অন্যান্য ফুল পাওয়া যায় না তখন লঙ্কা জবা ফোটে। তাই এর চাহিদাও থাকে বেশি। পূজোর ফুল হিসেবে এবং মালা তৈরির জন্য এ ফুলের খুব সমাদর। ফোটা ফুল বেশ কিছু দিন গাছে টিকে থাকতে পারে। একই সাথে অনেক ফুল ফোটে, তাই খুব সহজেই এরা নজর কাড়তে পারে।

" মনের রঙ লেগেছে বনের পলাশ জবা অশোকে
রঙের ঘোর জেগেছে পারুল কনক-চাঁপার চোখে॥"
                                         ---------- নজরুল ইসলাম 

নাইট কুইন\ নিশিপদ্ম

"ভেঙ্গেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়
তিমিরবিদার উদার অভ্যুদয়, তোমারি হউক জয়।।
হে বিজয়ী বীর, নব জীবনের প্রাতে
নবীন আশার খড়্গ তোমার হাতে-
জীর্ণ আবেশ কাটো সুকঠোর ঘাতে, বন্ধন হোক ক্ষয়।।
এসো দুঃসহ, এসো এসো নির্দয়, তোমারি হউক জয়।
এসো নির্মল, এসো এসো নির্ভয়, তোমারি হউক জয়।"

  দু'হাজার বছর আগে বেথেলহ্যাম নগরী। তখন নগরীর প্রত্যেক বাড়িতে নাইট কুইন গাছ ছিল। এক রাতে ঘটল আশ্চর্যজনক ঘটনা। প্রতিটি বাড়ি নাইট কুইন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল। এ ঘটনায় কৌতূহলী নগরবাসী এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে দৌড়াতে লাগল। তারা কেউই বুঝে উঠতে পারল না প্রকৃতি কেন এই অজানা উৎসবে মেতে উঠেছে। পরে অবশ্য সবাই আসল ঘটনা বুঝতে পেরেছিল। সেই রাতে বেথেলহ্যামের এক ঘোড়ার আস্তাবলে জন্ম হয়েছিল এক মহাপুরুষের, তিনি যিশু খ্রিস্ট। বেথেলহ্যামের সব নাইট কুইন সে রাতে মেতে উঠেছিল যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসবে। এ জন্য আজো অনেকের কাছে এ ফুলটি 'বেথেলহ্যাম ফ্লাওয়ার' নামে পরিচিত।


রানীর মতো সৌন্দর্য নিয়ে রাতের গভীরে যে অপূর্ব সাদা ফুল অসাধারন মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে ফোটে তার নাম নাইট কুইন। রাত বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে কলি থেকে একটি একটি করে পাপড়ি মেলতে থাকে। সে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছড়াতে থাকে মৃদু অথচ মন কেড়ে নেয়া সুগন্ধ। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ নাইট কুইন ফুলের সুগন্ধ ও সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে প্রতীক্ষা করে।
নাইট কুইন একটি দুর্লভ ফুল। অনেক সাধনা করে, অনেক অপেক্ষার প্রহর গুনে ফোটাতে হয় নাইট কুইন। কিন্তু তাও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। যে রাতে ফুটে সে রাতেই ঝরে পড়ে। ফুলটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি গন্ধেও অতুলনীয়। সাদা রং এর ফুলের ভেতর ঘিয়ে রং এর আবরণ ও সুমিষ্ট গন্ধ নাইট কুইনকে দিয়েছে রাজকীয় চেহারা। এজন্য নাইট কুইন ফুলকে রাতের রাণী বলা হয়।
নাইট কুইনের বৈজ্ঞানিক নাম Epiphyllum oxypetalum এবং ইংরেজিতে Dutchman's pipe ও queen of the night নামে পরিচিত। বিরল ক্যাকটাস জাতীয় এ ফুলটির আদি নিবাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল এবং মেক্সিকো হলেও এখন দেশের অনেক পুষ্পপ্রেমির বাড়িতে এ ফুল শোভা পায়।
এই ফুলের বৈশিষ্ট অন্যান্য যেকোনো ফুলের তুলনায় একটু আলাদা। বছরের মাত্র একদিনে এবং রাতের কোনো এক সময় ফোটাই এর স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। নাইট কুইন নিজেকে আত্মপ্রকাশ ও বিকশিত করে রাতেই এবং সেই রাতের অন্ধকারেই হয় তার জীবনাবসান। এর ফলে ফুলটিকে সচরাচর দেখা যায় না। তাছাড়া চারা থেকে ফুলটি ফুটতে সময় নেয় তিন-চার বছরেরও বেশী।  ফুলটি সাধারণত বর্ষায় ফোটে।

নাইট কুইন ফুলের আর একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো এ ফুলের গাছ পাথরকুচি গাছের মতো পাতা থেকে অঙ্কুরিত হয়। একটি পাতা নরম মাটিতে রেখে দিলে ধীরে ধীরে সে পাতা থেকে অঙ্কুর বের হয় এবং পরে তা গাছে পরিণত হয়। একটি পাতা থেকে একাধিক গাছ জন্মাতে পারে। পাতা থেকে শুধু নাইট কুইন ফুলের গাছই জন্মায় না, সেই পাতা থেকেই প্রস্ফুটিত হয় অসাধারণ নাইট কুইন ফুল। প্রথমে পাতার যে কোনো দিকে ছোট একটি গুটির মতো বের হয়। এই গুটি আস্তে আস্তে বড় হয়। ১৪ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সেই গুটি কলিতে রূপান্তরিত হয়। আর কলি পুষ্ট হওয়ার পর যে রাতে ফুল ফুটবে সেদিন বিকালেই কলিটি অদ্ভুত সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে। তখন এর দিকে তাকালে খুব সহজেই বোঝা যায় রাতের রাণী আসছে। পৃথিবী অন্ধকারে ছেয়ে গেলে আস্তে আস্তে পাপড়ি মেলতে শুরু করে নাইট কুইনের কলি। রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একটি দুটি করে পাপড়ি মেলতে থাকে। সেই সঙ্গে মিষ্টি এক ধরনের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এ গন্ধে তীব্রতা না থাকলেও আছে এক ধরনের অদ্ভুত মাদকতা, যা যে কোনো মানুষকে মোহিত করার জন্য যথেষ্ট। পরিপূর্ণ অন্ধকার যখন রাতকে আনন্দিত করে নাইট কুইন তখন অন্ধকারের বুক চিরে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মেলে ধরে। রাত যত বাড়তে থাকে তার রূপ ততই খুলতে থাকে। পূর্ব আকাশে আলোকছটা দেখা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে মৃত্যু ঘণ্টা বেজে ওঠে নাইট কুইনের। কারণ রাতের রানী দিনের আলো সইতে পারে না।
   হিন্দু দেবতা ব্রক্ষার নামানুসারে এর নাম ব্রহ্মাকামালাম এবং বিশ্বাস করা হয় যে এই ফুল ফোটার সময় কোন কিছু প্রার্থনা করলে তা পূরণ হয়। প্রচলিত ভাষায় নাইট কুইনকে সৌভাগ্যের প্রতীকও বলা হয়। সামান্য একটি পাতা থেকে পল্লবিত এক ক্যাকটাস ও তার পাতায় মাত্র একরাত্রের জন্য ফোটা মৃদু সুবাসিত এই শুভ্র ফুল দেখার আনন্দ প্রকৃতিপ্রেমিদের জন্য অতুলনীয়।
তথ্য অ ছবি ঃ-গুগল সৌজন্যে 

অশোক

'তোমার অশোকে কিংশুকে
অলক্ষ্য রঙ লাগল
আমার অকারণের সুখে।'
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শোক নাশ করে বলেই এর নাম অশোক। চৈত্র মাসের শুক্লাষষ্ঠীতে পুত্রবতী মায়েরা পুত্রের কল্যাণ কামনা করে অশোক ফুল দিয়ে পূজা করেন, একে অশোকষষ্ঠী বলে। পুত্রবিয়োগের শোক থেকে রক্ষা পেতে ছয়টি অশোক ফুল জলে ভিজিয়ে জলপান করেন হিন্দু নারীরা। এ ছাড়া চৈত্রের শুক্লাঅষ্টমীতে পালিত হয় অশোকাষ্টমী। পূজা-অর্চনায়, বিশেষ করে শারদীয় দুর্গাপূজায় এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
রামায়ণে আছে, রাবণ সীতাকে হরণ করে রেখেছিলেন অশোকগাছের তলে। কথিত আছে, গৌরী অশোক গাছের তলায় তপস্যা করে শিবের পুণ্যমনোরথ হয়েছিলেন।
অশোক গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Saraca indica, এটি Fabaceae গোত্রের উদ্ভিদ। অশোক এর আরও একটি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায় যার নাম হলুদ অশোক। ইংরেজি নাম Yellow Ashok, Yellow Saraca এবং বৈজ্ঞানিক নাম Saraca thaipingensis. অন্যান্য নাম হেমাপুষ্প, অঞ্জনপ্রিয়া, মধুপুষ্প।
 ‘আসত তারা কুঞ্জবনে চৈত্র জ্যোৎস্নারাতে
অশোক শাখা উঠত ফুটে প্রিয়ার পদাঘাতে’

অশোক মাঝারি আকৃতির এ অঞ্চলের নিজস্ব চিরসবুজ বৃক্ষ। পঁচিশ থেকে ত্রিশ মিটার উঁচু হয়। পাতা যৌগিক। একটি পাতায় দশটি পত্রক থাকে। পাতার রং গাঢ় সবুজ। লম্বা, চওড়া ও বর্শা ফলকাকৃতির। কচিপাতা নরম, ঝুলন্ত ও তামাটে। বসন্তকাল ফুল ফোটার সময়। আষাঢ়ের শুরু পর্যন্ত গাছে ফুল থাকে। ফুল ছোট, পুংকেশর দীর্ঘ ও মঞ্জরিতে অনেক ফুল জন্মায়। ফুলের রঙ কমলা থেকে লাল। ফুল ফুটলে মিষ্টি গন্ধে চারপাশ ভরে যায়। ফল শিম জাতীয়, মাংসল ও লাল। ফলে খয়েরি রঙের বীজ থাকে।
বাগানে শোভাবর্ধক হিসেবে এ গাছ বেশি লাগানো হয়। তবে অশোকের ভেষজ গুণও রয়েছে। শুকনো ফুল রক্ত আমাশয়ে এবং বীজ মূত্রনালির রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

কৃতজ্ঞতা : গুগল 
"শ্রাবনের মেঘগুলি জড়ো হলো আকাশে
অঝোরে নামবে বুঝি শ্রাবন ঝরায়ে
কবিতার বই সবে খুলেছি
হিমেল হাওয়ায় মন ভিজেছে
জানালার পাশে চাঁপা মাধবী
বাগানবিলাসী, হেনা দুলেছে
আজ কেন মন উদাসী হয়ে
দূর অজানায় চায় হারাতে........"
বহুশ্রুত এই গানে উল্লেখিত বাগানবিলাস হলো আমাদের খুবই পরিচিত অনিন্দ্য সুন্দর একটা ফুল বোগেনভোলিয়া।


আমাদের নাগরিক জীবনে এক ঝলক স্নিগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দিতে বাগানবিলাসের জুড়ি নেই। আপনি হয়তো রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, তখন দেখলেন কোন বাড়ির গেটের উপর থেকে ঝুলে আছে লাল বাগানবিলাসের ঝোপ। আপনার পথচলার সব ক্লান্তি নিমেষেই দূর হয়ে যাবে তাতে। আবার শহর থেকে অনেক দূরের গ্রামীণ জনপদেও সে দূর্লভ বা অনাদৃতা নয়। অবশ্য এই সুন্দরী' কাগজফুল\ গেইট ফুল’ নামেই বেশি পরিচিত। বাড়ির  সদর দরজায় বেশি মানানসই বলেই হয়তো সবাই  একে এই নামেই ডাকে।
আমাদের বাড়ির খুব কাছেই জিরাট ও কালিয়াগড়ের প্রাচীনতম দেবালয় সিদ্ধেশ্বরী  মন্দির।  পাশেই বর্তমান সেবাইত চট্টোপাধ্যায় বাড়ি। মনে পরে খুব ছেলেবেলায় মায়ের সাথে মন্দিরে যাওয়ার সময় ওই বাড়ির গেটে প্রথম দেখেছিলাম এই শ্বেতাম্বরী সুন্দরী কে , গেট আলো করে ফুটে থাকতো সাদা বোগেনভোলিয়া বা বাগানবিলাস। মুগ্ধ হয়েছিলাম ,...... ভালোবাসার সূচনা সেই সময় থেকেই।


বাগানবিলাস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের লতা-গুল্ম জাতীয় একটি সুদৃশ্য ফুলগাছ। মূলতঃ উষ্ণমণ্ডলীয় দেশসমূহ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে গৃহসজ্জ্বা কিংবা বাড়ীর চারপাশের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে লতাজাতীয় গুল্ম হিসেবে বাগানবিলাস লাগানো হয়। বিশ্বের সর্বত্র গরম আবহাওয়ায় ছায়াচ্ছন্ন পথ তৈরী ও বারান্দার শোভা বর্ধনে বাগানবিলাস লাগানো হয়।

বাগানবিলাসের ইংরেজি নাম Bougainvillea এবং উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bougainvillea glabra. দক্ষিন আমেরিকার ব্রাজিল, পেরু, আর্জেন্টিনা এই দেশগুলো বাগানবিলাসের আদি নিবাস। ফ্রান্সের বিখ্যাত নাবিক দ্য বোগেনভিলা ১৭৬৬-১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে জলপথে পৃথিবী ভ্রমণ করেন। সেই সময় তিনি ব্রাজিলের জঙ্গলে এই ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন এবং এই ফুলটি সংগ্রহ করেন। সে থেকেই তার নামানুসারে এর নাম হয় বোগেনভেলিয়া। আমাদের দেশের মাটি,জলবায়ু আর মানুষের সাথে বাগানবিলাস এমনভাবে মিশে গেছে যে, এখন এই সময়ে এসে এই ফুলকে দেখলে কোনকালে যে এটা বিদেশি ফুল ছিল তেমনটা আর মনেই হয় না। বোগেনভিলার বাংলা নাম বাগানবিলাস প্রবর্তন করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তৎকালীন কোন এক অভিজাত, বিলাসী লোকের বাড়ির বাগানে রবি ঠাকুর প্রথম দেখেন এই ফুল। অপূর্ব এই ফুলের রঙ ও রূপে কবি যারপরনাই মুগ্ধ হন।তিনি কৌতূহলে এর নাম জানতে চান। অপরূপ সুন্দর এই ফুলের বিদেশি নাম শুনে কবি কিছুটা অখুশি  হন। তখন তিনি এর নাম দেন ‘বাগানবিলাস’। সেই থেকে বিদেশি ফুল ‘বোগেনভিলিয়া ’ হয়ে গেল আমাদের নিজস্ব ফুল ‘বাগানবিলাস’।

বাগানবিলাস ফুলের বৈশিষ্ট্য হল এ গাছ ছাদের প্রচণ্ড গরম ও রোদ সহ্য করতে পারে। তাই তো ছাদ, কার্নিশ, ব্যালকনি, গ্যারেজ সাজাতে এর জুড়ি নেই। লম্বায় এই গাছ ১-১২ মিটার পর্যন্ত হয়। এটা নির্ভর করে গাছটি কত উঁচু অবলম্বন ধরে বেড়ে উঠছে সম্পূর্ণ তার উপর। বাগানবিলাস কাঁটাযুক্ত গাছ; এর কাঁটাগুলো ভালোই তীক্ষ্ণ।
বাগানবিলাসের এতো কদর মূলত এর ফুলের কারণেই। ফুল খুবই ছোট এবং গন্ধহীন। ফুলগুলোর একটা থেকে আরেকটার দূরত্ব থাকে খুব কম; অর্থাৎ এরা থাকে খুব ঘন। প্রতিটি ফুলে তিনটি বৈচিত্র্যপূর্ণ রঙিন পাতাকৃতি পাপড়ি তিন দিক থেকে একে অপরকে ঘিরে থাকে। ঘেরাওয়ের ভিতরে থাকে পুংকেশর, স্ত্রীকেশর ইত্যাদি। সেই পাপড়ির আবার বিভিন্ন রঙ-গোলাপী, ম্যাজেন্টা, বেগুনী, লাল, কমলা, হলুদ, সাদা। এক গাছেই আবার কয়েক রঙ এর সমাহার ও থাকতে পারে। পৃথিবী ব্যাপি বাগানবিলাসের ১৮টি প্রজাতির সন্ধান মেলে। আমাদের দেশে লাল রঙের প্রজাতিটি বেশি দেখা গেলেও হলুদ, সাদা, কমলা এবং মিশ্র রঙের একটি প্রজাতি ও দেখা যায়।
বাগানবিলাসের নতুন ডালে ফুল হয় বেশি। তাই এই গাছ বছরে একবার ছেঁটে দিতে হয়। গাছ ছাঁটার উপযোগী সময় হল মে মাস। উষ্ণ আবহাওয়ায় সারা বছরই বাগানবিলাস ফুল দেয়। তবে শরতের শেষ এবং শীতের শুরুতে বাগানবিলাসের গাছে গাছে ফুলের সমাহার দেখা যায়। এ গাছের বংশবৃদ্ধি করা সম্ভব কাটিং, গুটি কলম ও চোখ কলম করে। তবে আমাদের দেশে বাগানবিলাসের চারার জন্য প্রধানত গুটিকলম ও দাবা কলমই করা হয়ে থাকে।

 বিভিন্ন প্রজাতির বাগানবিলাস রাষ্ট্রীয় প্রতীক হিসেবে গুয়াম দ্বীপপুঞ্জ,মাতসু দ্বীপপুঞ্জ, তাইওয়ানের পিংটুং কাউন্টি; মালয়েশিয়ার ইপোহ; ফিলিপাইনের তাগবিলরন; ক্যালিফোর্নিয়ার কেমারিলো, নাগুনা নিগুয়েল, স্যান ক্লিমেন্টে; চীনের গুয়াংডং প্রদেশের শেনঝেন, হুইঝো, ঝুহাই এবং জিয়াংমেন; ওকিনাওয়ার নাহায়ে প্রচলিত রয়েছে।


প্রকৃতিবিদগণ বাগানবিলাসকে ‘অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট’ বা ‘শোভাবর্ধক উদ্ভিদ’ হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। এর কোন ভেষজ গুণের কথা আজ পর্যন্ত শোনা যায়নি।
তবে অন্যান্য টক্সিকোডেনড্রোন প্রজাতির গাছের ন্যায় বাগানবিলাস গাছের বিষাক্ত রসের সংস্পর্শে চামড়ায় ফুসকুড়ির পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।
     আমাদের ওঙ্কার ধামে বেশ কয়েকটি বাগানবিলাস আছে , তার মধ্যে আমাদের গেটের গোলাপী রঙের গাছটির বয়স প্রায় ২৫ বছর। এই গাছটির জন্যই এলাকায় ওঙ্কার ধাম ফুলগাছ ওলা বাড়ী ও দোকান নামে পরিচিত।  পরে আমার মেয়ে তিতলির শখে সাদা ও হলুদ রঙের দুটি গাছ লাগানো হয়।

  এর পাপড়িগুলো খুব পাতলা আর রঙিন কাগজের মতো দেখতে বলে কোথাও কোথাও এটি পরিচিত ‘কাগজ ফুল’ নামেও। তবে বোগেনভিলা, বাগানবিলাস, গেইট ফুল বা কাগজ ফুল যেখানে যে নামেই ডাকা হোক না কেন নিসর্গ প্রেমীদের কাছে এর আবেদন চিরন্তন ও সর্বজনীন।

"ইরান তুরানের গোলাপ নয়
জাপান দেশের চেরী ফুল
নাইবা দিলাম,
মার্কিন দেশের রডোডেনড্রন ,
এই তো আমি খুজে পেয়েছি
অজপাড়াগায়ের গাছায় আগাছায় পড়ে থাকা
জংলী এক ফুল,
দন্ডকলসের ফুল আর পরাগ উড়ান রেনু
ভাটিকেশরের মুল আর লজ্জাবতী ফুল
গন্ধ বিলাসী গন্ধ পিয়াসী বকুল
ফাগুন রাঙ্গানো পলাশ শিমুল জারুল,
সব তোমার , তোমায় দিলাম ঘ্রানহীন পাপড়ি
আর সবুজ সুতায় বোনা কলমীলতা
শালুক বোনা শাপলা জড়ান মালা,
হিজল তমাল কাঠালচাপায় ভরবে
তোমার মন ! তাও যদি নয় তবে
আমি একশো একটি ফুল বাগিচা পাঠিয়ে দিলাম
উড়িয়ে দিও তাতে,
ভারাক্রান্ত যত
মন অথবা মস্তিস্কের ক্ষত, "

সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৬


একটুখানি সোনার বিন্দু , একটুখানি মুখ ,
     একা একটি বনফুল ফোটে-ফোটে হয়েছে ,
     কচি কচি পাতার মাঝে মাথা থুয়ে রয়েছে ।
চার দিকে তার গাছের ছায়া , চার দিকে তার নিষুতি,
     চার দিকে তার ঝোপেঝাপে আঁধার দিয়ে ঢেকেছে—
বনের সে যে স্নেহের ধন আদরিণী মেয়ে ,
    তারে বুকের কাছে লুকিয়ে যেন রেখেছে ।

একটুখানি রূপের হাসি আঁধারেতে ঘুমিয়ে আলা ,
     বনের স্নেহ শিয়রেতে জেগে আছে ।
সুকুমার প্রাণটুকু তার কিছু যেন জানে না ,
     চোখে শুধু সুখের স্বপন লেগে আছে ।
একটি যেন রবির কিরণ ভোরের বেলা বনের মাঝে
     খেলাতেছিল নেচে নেচে ,
নিরালাতে গাছের ছায়ে , আঁধারেতে শ্রান্তকায়ে
     সে যেন ঘুমিয়ে পড়েছে ।
বনদেবী করুণ-হিয়ে তারে যেন কুড়িয়ে নিয়ে
     যতন করে আপন ঘরেতে ।
থুয়ে কোমল পাতার'পরে মায়ের মতো স্নেহভরে
     ছোঁয় তারে কোমল করেতে ।
ধীরি ধীরি বাতাস গিয়ে আসে তারে দোলা দিয়ে ,
     চোখেতে চুমো খেয়ে যায় ।
ঘুরে ফিরে আশেপাশে বার বার ফিরে আসে ,
     হাতটি বুলিয়ে দেয় গায় ।

একলা পাখি গাছের শাখে কাছে তোর বসে থাকে ,
     সারা দুপুরবেলা শুধু ডাকে ,
যেন তার আর কেহ নাই , সারা দিন একলাটি তাই
     স্নেহভরে তোরে নিয়েই থাকে ।
ও পাখির নাম জানি নে , কোথায় ছিল কে তা জানে ,
     রাতের বেলায় কোথায় চলে যায় ,
দুপুরবেলা কাছে আসে- সারা দিন বসে পাশে
     একটি শুধু আদরের গান গায় ।
রাতে কত তারা ওঠে , ভোরের বেলা চলে যায়-
     তোরে তো কেউ দেখে না , জানে না ।
এক কালে তুই ছিলি যেন ওদেরই ঘরের মেয়ে ,
     আজকে রে তুই অজানা অচেনা ।

নিত্যি দেখি রাতের বেলা একটি শুধু জোনাই আসে ,
     আলো দিয়ে মুখপানে তোর চায় ।
কে জানে সে কী যে করে! তারা-জন্মের কাহিনী তোর
     কানে বুঝি স্বপন দিয়ে যায় ।
ভোরের বেলা আলো এল , ডাকছে রে তোর নামটি ধরে ,
     আজকে তবে মুখখানি তোর তোল্‌ ,
     আজকে তবে আঁখিটি তোর খোল্‌ ,
লতা জাগে , পাখি জাগে গায়ের কাছে বাতাস লাগে ,
     দেখি রে — ধীরে ধীরে দোল্‌ দোল্‌ দোল্‌ ।।
                   ----------রবীন্দ্রনাথ 

নীল আকাশে কে ভাসাল সাদা মেঘের ভেলা

"আজি শরৎ তপনে প্রভাত স্বপনে কী জানি পরান কী যে চায়।
ওই শেফালির শাখে কী বলিয়া ডাকে বিহগ বিহগী কী যে গায় গো।।
আজি মধুর বাতাসে হৃদয় উদাসে, রহে না আবাসে মন হায়
কোন্‌ কুসুমের আশে কোন্‌ ফুলবাসে সুনীল আকাশে মন ধায় গো।।
আজি কে যেন গো নাই, এ প্রভাতে তাই জীবন বিফল হয় গো
তাই চারি দিকে চায়, মন কেঁদে গায় “এ নহে, এ নহে, নয় গো’।
কোন্‌ স্বপনের দেশে আছে এলোকেশে কোন্‌ ছায়াময়ী অমরায়।
আজি কোন্‌ উপবনে, বিরহবেদনে আমারি কারণে কেঁদে যায় গো।।
আজি যদি গাঁথি গান অথিরপরান, সে গান শুনাব কারে আর।
আমি যদি গাঁথি মালা লয়ে ফুলডালা, কাহারে পরাব ফুলহার।।
আমি আমার এ প্রাণ যদি করি দান, দিব প্রাণ তবে কার পায়।
সদা ভয় হয় মনে পাছে অযতনে মনে মনে কেহ ব্যথা পায় গো।।"

নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো ভাসছে সাদা মেঘ,হালকা হাওয়ায় কাশ ফুলের দোলা,বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ, জানিয়া দিলো মা আসছেন। 
ফটোঃ- রীতা নন্দী
 বাতাসে  শিউলি ফুলের গণ্ধ । হৃদয়ের গভীর গহনে সুর বাজে , 'আজি ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরির খেলা/ নীল আকাশে কে ভাসালো সাদা মেঘের ভেলা।' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাণে বেজে ওঠা তান বেজেছিল কাজী নজরুল ইসলামের মনেও। লিখেছিলেন তিনি, 'এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে/ এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ রথে।'
ফটোঃ- রীতা নন্দী
 ঋতুবদলের স্রোতে সেই শরৎ ফিরে এসেছে আবার। গ্রামাঞ্চল আর বহমান নদ-নদীর পাড়জুড়ে সাদা কাশ দুলে দুলে উঠছে। রৌদ্রালোকে আর বাতাসে বার্তা বইছে, শ্রাবণ ফুরিয়ে গেছে, এসেছে শরৎ।  ঋতুচক্রে বিচিত্র সব অনুভূতি-জাগানিয়া এই শরতের রঙ আজ গায়ে মেখেছে বাংলার প্রকৃতি। ভাদ্র মাসের নানা বৈশিষ্ট্য। তালপাকা গরম পড়ে এ মাসে। ভ্যাপসা, গুমোট তাপে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। অল্পবিস্তর বৃষ্টি হলেও দুঃসহ গরমে বাড়ে দুর্ভোগ। গ্রামগঞ্জে কাজের বেশ অভাব থাকে এ সময়ে। দিনমজুর ও সাধারণ মেহনতি মানুষকে তাই যথেষ্ট ভুগতে হয়।
ফটোঃ- রীতা নন্দী
 তবুও শরৎবন্দনা ছড়িয়ে আছে বাংলা সাহিত্যে। সেই বন্দনায় কবির লেখনীতে আক্ষেপও রয়েছে, 'এ সখী হামারি দুখের নাহি ওর/ এ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর।' শরতের আভাস স্পষ্ট করে পেতে অপেক্ষা করতে হবে সামনের আশ্বিন অবধি। নিত্যদিনের জীবনযাপনের ক্লান্তি ও বেঁচে থাকার প্রতিযোগিতার ফাঁকে কখন ভাদ্র এলো বা না এলো, সে খবর রাখার ফুরসত অনেকেরই নেই।   এই নীরব উপেক্ষা-অবহেলার পরও প্রকৃতি তার নিজের নিয়মে চলতে থাকে। বদলাতে থাকে। প্রকৃতির রূপবদলে সব সময়ই ফুলের ভূমিকা অনেকখানি। এই শরতে নানা রকম ফুলের বর্ণিল উচ্ছ্বাস, প্রস্ফুটন আর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সচরাচর বর্ষার ফুল ফোটাই অব্যাহত থাকে এই শরতে।  'শরতের ফুল মূলত _ কাশ,
ফটোঃ- রীতা নন্দী
 শিউলি
ফটোঃ- শ্রী মুখার্জি
  পদ্ম
ফটোঃ- গুগল সৌজন্যে
 শরতের শেষ দিকে ফোটে ছাতিম ফুল।
ফটোঃ- রীতা নন্দী
 খালে-বিলে-ঝিলে ফোটে  লাল শাপলা-শালুক।
ফটোঃ- গুগল সৌজন্যে
 আরও ফোটে কলমি ফুল।
ফটোঃ- তিতলি
  এই দুর্লভ দৃশ্য শুধু এই শরতে দেখা মেলে। কৃষ্ণচূড়া ফুল এখনও ফুটবে কিছু কিছু।
 এ সময়ের ফুলের মধ্যে রয়েছে হলুদ রঙা সোনালু ,



  জারুল, শ্বেতকাঞ্চন, এলামেন্ডা ইত্যাদি। 

বর্ষার ফুলের মধ্যে কামিনী তো আছেই। দু-চারটি গন্ধরাজও । ফুরুস (চেরি) ও থাকে  এই সময়টায়।'
  শরৎ মানেই ভিজে বাতাসে ভেসে আসা হাস্নুহানার বুনো গন্ধ।

 এই শরতে উদযাপিত হয় আমাদের  সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গোৎসব। মণ্ডপে মণ্ডপে বাজে ঢাক। সেই ঢাকের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয় কাশফুল। শীতের আগমনী বার্তা শুরু হয় এই শরতেই। এ ঋতুর শেষ দিকে ঘাসের ডগায় পড়তে থাকে শিশির বিন্দু।
  উমা আমাদের ঘরের মেয়ে,আমাদের বিশ্বাস দুর্গাপূজার কদিন উমা ছেলে- মেয়েদের নিয়ে আসে বাপের বাড়ি। প্রতি বছরের মত এ বছর," এসেছে শরৎ  হিমের পরশ লেগেছে হাওয়ার পরে ",.........।। আমার জীবনে সব ঋতু হারিয়ে গেছে   গত কয়েক মাস আগে হারিয়ে গেছে আমার স্বপ্ন,আমার জীীবন, আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন, আমার একমাত্র মেয়ে তিতলি,............ ও এখন চাঁদের দেশে মেঘ চাঁদ আর তারাদের সাথে । তোর প্রিয় চাঁদ আর তারাদের সাথে ভাল থাকিস মা ,............।


 শরতে উমা এসেছে বাপের বাড়ী , আমার উমা আসেনি আর কোনদিন আসবে না,........... আমার উমা তিতলি আর কোনদিন আর ওর বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বায়না করবে না,......... আমার জীবনে আর শরৎ  আসবে না কখনও।