বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আমার কথা

গাছপালা আর পশুপাখির প্রতি অদম্য আকর্ষণ আমার সেই ছোটবেলা থেকেই।আমাদের বাড়ী' ওঙ্কার ধাম 'ছিল বড়ো উঠোনওয়ালা খোলামেলা ,পিছনে বড়ো বাঁশ -বাগান , যার কারণে সেই সময় এই শখ গুলোর কিছুটা হলেও পুরন করতে পেরেছিলাম।এই শখ গুলো আমার পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ,আমার দাদু আর মা এর ছিল গাছের শখ দাদুর ছিল মূলত ফলের গাছের শখ ,আম ,জাম ,কাঁঠাল,লিচু,বাতাবি লেবু,মুসাম্বি লেবু,পাতি লেবু,কাগজী লেবু,গন্ধরাজ লেবু,আমড়া ,বিলিতি আমড়া ,কুল,ফলসা,আমলকী ,হরিতকি,তেঁতুল,নারিকেল,সুপুরি,তাল ,সবেদা আরও অনেক ফলের গাছ ছিল। আর মায়ের ছিল ফুলগাছের ,ফুলের মধ্যে ছিল গোলাপ,করবী ,কাঠ চাপা ,কুর্চি ,গন্ধরাজ,কামিনী,সোনালু,আশোক ,জয়তি ,কাঞ্চন,কাঠ মল্লিকা, টগর আরো অনেক রকম ফুল।
আমার বাবা আর দিদার ছিল পশু-পাখি পোষার শখ। ছোটবেলায় আমাদের কুকুর ঢেলা কে আমরা ঢেলাদাদা বলতাম। আমাদের বাড়ীর পিছন দিকে গোয়াল ছিল তাতে ছিল৪\৫ তা গরু ,টাটকা দুধ পেয়েছি চিরকাল। এছাড়াও আমাদের বাড়িতে প্রচুর পাখি আসে রোজ,ছোটবেলা থেকে দেখেছি,পাশেই পুকুরের ধারে গম্ভীরমুখে  বসে থাকতো মাছরাঙা ,কি অপূর্ব রূপ,...... মুগ্ধ হওয়ার মতোই ,এছাড়াও আসতো টিয়া,কুবোপাখী ,কোকিল,ফিঙে,দোয়েল,পায়রা,বৌ কথা কও ,বসন্ত বৌরি,শালিক  আরো কত কি।   ছাতারে পাখিগুলো খুব ঝগড়ুটে,এক মুহূর্ত চুপ থাকতে পারে না,সবসময় কাচর মাচর করে যাচ্ছে ,আর চড়ুই পাখির কথা আর কি বলবো,ওদের মতো দুস্টু পাখি কমই দেখেছি। আর আছে টুনটুনি,ভারী চঞ্চল,সবসময় ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে উড়ে বাড়াচ্ছে।
আমি হাই স্কুলে যেতে বাবা আমাকে একটা খরগোশ উপহার দিলেন,কি নরম ,ঠিক তুলোর বলের মতো,সারাদিন ছোট্ট ছোট্টো লাফ দিয়ে ঘুরে বেড়াতো সারা বাড়ি ,আর সন্ধে হলেই খাঁচায়। দিদার পোষা হাঁস ছিল,বিকেলবেলা পুকুরপাড়ে গিয়ে চৈ চৈ বলে ডেকে তোলা ও একটা কাজ।আর ছিল সুন্দরী,দিদির বেড়াল,সাদা,কালো,স্লেট আরো কত রঙের পোঁচ ওর গায়ে।গাছপালা আর পশুপাখির প্রতি অদম্য আকর্ষণ আমার রক্তে।
একটু বড়ো হতেই আমার একটা ছোট্ট বাগান হলো,আমার নিজের বাগান।খুব যে দু:স্প্রাপ্য গাছপালা ছিল একথা বলবো না, খুব সাধারণ সব গাছ, কিন্তু ভালবাসা ছিল অনেক।আমার মা আর আমি প্রায় রাতেই টর্চ লাইট নিয়ে বাগানে নেমে যেতাম  কি কি ফুল ফুটলো, তা দেখার জন্য। নার্সারী থেকে গাছ নিয়ে যেতাম, বেশির ভাগই গোলাপ।
তারপর ছুটির সময়টা লেগে থাকা সেই আহলাদী গোলাপকে বাচিয়ে রাখার চেষ্টায় .......সরস্বতী পুজো,লক্ষী পুজো বা স্বাধীনতা দিবসগুলোতে বাগানের ফুল গুলোকে বাচানোর জন্য আমি অনেক রাত পর্যন্ত বসে থেকেছি কতদিন!
তারপরও একবার দেয়াল টপকে এসে আমার চন্দ্র মল্লিকা, আর ডালিয়ার গাছ সহ উপরে নিয়ে গিয়েছিল খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেই দিন।
চারা গাছ থেকে বড় করে তোলা, তারপর তাতে ফুল ফোটানো যে কি অনন্দের তা বলে বোঝানো যাবে না। গাছগুলোকে তখন আত্মজের মতোই লাগে!!

 ছুটির দিনে দুপুরবেলা আর গরমকালে স্কুল থেকে ফিরেই খেলাধুলার  পর পুকুরে নেমে সাঁতার আর হুড়োহুড়ি ,তারপর মা হাতে লাঠি নিয়ে আসতেই জল থেকে উঠতে হতো।
সন্ধ্যেবেলা হারিকেনের আলোয় পড়তে বসতাম , হারিকেনের আলো বাড়ানোর নব টা কার দিকে থাকবে তাই নিয়েই  দিদির সাথে রোজ ঝগড়া হতো,মায়ের পায়ের শব্দ পেলেই শুরু হতো পড়া।  কিছুক্ষন পরেই শুরুহত সারাদিনের হৈ -হুল্লোড়ের ফল ,নিদ্রাদেবীর আগমন,..... ঢুলতে ঢুলতেই পড়া চলত বাবা অফিস থেকে না ফেরা পর্যন্ত ,বাবার ট্রেন এর শব্দ পেলেই আমাদের পড়ার জোর বেড়ে যেত ,বাবা বাড়ি ফিরে দেখলেন পড়ছি ,....... ব্যাস কাজ শেষ।
  এসে গেল আমার কিশোরবেলা ,আরও বেশি করে সংগী হলো আমার প্রিয় গাছেরা ,ফুলেরা ,পাখিরা,পোষ্যরা ,......... আমি তখন ক্লাস এইট ,স্কুলে পরিচয় হলো একজনের সাথে,নবদা,আমার চেয়ে ২ বছরের সিনিয়ার ,ক্লাস টেন এ পরে। জানলাম ,নবদার ও বাগান আছে ,আমাদের বাড়ির কাছেই,রুকেশপুর গ্রাম এ।  একদিন গিয়ে হাজির হলাম ,সঙ্গী আমার প্রিয় বন্ধু সুনীল। গঙ্গার পাড়ে একটা ছোট্ট মাটির ঘর,মাথায় টালির চাল ,সামনেই গোলাপ বাগান, বড়ো  নয় ,সাকুল্যে ২০\২৫ টা  গাছ আলো করে ফুটে আছে বেশ কিছু গোলাপ। ঠিক পাশ দিয়েই বয়ে চলে গঙ্গা, গোলাপ ফুলগুলোয় প্রজাপতির জটলা, পাশেই একটা কিশোর রাবার গাছ। সেই প্রথম আমার রাবার গাছ দেখা , পাখির কিচিরমিচির ডাক আর গঙ্গার ফুরফুরে হাওয়ায় সে যেন এক শান্তিনিকেতন। বিকেলবেলা সাইকেল নিয়ে প্রায়ই চলে যেতাম নবদার  বাগানে।
       


 

হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে-উড়ে ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে!
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে!
পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে
বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!
হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর উড়ে-উড়ে কেঁদো নাকো ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে!


পান্ডুলিপি কাছে রেখে ধূসর দীপের কাছে আমি
নিস্তব্ধ ছিলাম ব'সে;
শিশির পড়িতেছিলো ধীরে-ধীরে খ'সে;
নিমের শাখার থেকে একাকীতম কে পাখি নামি

উড়ে গেলো কুয়াশায়, — কুয়াশার থেকে দূর-কুয়াশায় আরো।
তাহারি পাখার হাওয়া প্রদীপ নিভায়ে গেলো বুঝি?
অন্ধকার হাৎড়ায়ে ধীরে-ধীরে দেশলাই খুঁজি;
যখন জ্বালিব আলো কার মুখ দেখা যাবে বলিতে কি পারো?

কার মুখ? —আমলকী শাখার পিছনে
শিঙের মত বাঁকা নীল চাঁদ একদিন দেখেছিলো তাহা;
এ-ধূসর পান্ডুলিপি একদিন দেখেছিলো, আহা,
সে-মুখ ধূসরতম আজ এই পৃথিবীর মনে।

তবু এই পৃথিবীর সব আলো একদিন নিভে গেলে পরে,
পৃথিবীর সব গল্প একদিন ফুরাবে যখন,
মানুষ র'বে না আর, র'বে শুধু মানুষের স্বপ্ন তখনঃ
সেই মুখ আর আমি র'বো সেই স্বপ্নের ভিতরে।

(মহাপৃথিবী, ১৯৪৪) জীবনানন্দ দাশ
স্বপ্ন আমার হারিয়ে গেছে .........

বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

প’রো ললাটে কাঁচপোকার টিপ,

Photo:-Debanjon Bera

"প’রো ললাটে কাঁচপোকার টিপ,
তুমি আল্‌তা প’রো পায়ে হৃদি নিঙাড়ি’।।
প্রজাপতির ডানা-ঝরা সোনার টোপাতে,
ভাঙা ভুরু জোড়া দিও রাতুল শোভাতে।
বেল-যূথিকার গ’ড়ে মালা প’রো খোঁপাতে
দিও উত্তরীয় শিউলি-বোঁটার রঙে ছোপাতে,
রাঙা সাঁঝের সতিনী তুমি রূপ-কুমারী।"
Photo:-Shree Mukherjee (Titli)


মৌমাছি,

"মৌমাছি, মৌমাছি,
কোথা যাও নাচি' নাচি'
দাঁড়াও না একবার ভাই।"
"ওই ফুল ফুটে বনে,
যাই মধু আহরণে,
দাঁড়াবার সময় তো নাই।"


মৌমাছি বা মধুমক্ষিকা বা মধুকর (ইংরেজি: Bee) বোলতা এবং পিঁপড়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত মধু সংগ্রহকারী পতঙ্গবিশেষ। মধু ও মোম উৎপাদন এবং ফুলের পরাগায়ণের জন্য প্রসিদ্ধ। পৃথিবীতে ৯টি স্বীকৃত গোত্রের অধীনে প্রায় বিশ হাজার মৌমাছি প্রজাতি আছে, যদিও এর বেশিরভাগেরই কোন বর্ণনা নেই এবং এর প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশী হতে পারে। এন্টার্কটিকা ব্যতীত পৃথিবীর সকল মহাদেশে যেখানেই পতঙ্গ-পরাগায়িত সপুষ্পক উদ্ভিদ আছে, সেখানেই মৌমাছি আছে। বাংলাদেশে সচরাচর যে মৌমাছি দেখা যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম Apis cerana (এপিস সেরানা)৤ এই অঞ্চলে আরো তিন প্রজাতির মৌমাছি দেখা যায় যথা এপিস মেলিফেরা, এপিস ডরসাটাএপিস ফ্লোরিয়া
ওঙ্কার ধামে মৌচাক ফটোঃ- তিতলি


প্রত্যেকটি মৌচাকে মৌমাছিরা বসতিবদ্ধ হয়ে একটি বড় পরিবার বা সমাজ গড়ে বাস করে ৷ আকার ও কাজের ভিত্তিতে মৌমাছিরা তিন সম্প্রদায়ে বিভক্ত:
১৷ রাণী মৌমাছি যা একমাত্র উর্বর মৌমাছি
২৷ ড্রোন বা পুরুষ মৌমাছি
৩৷ কর্মী মৌমাছি বা বন্ধ্যা মৌমাছি

পৃথিবীতে মৌমাছির প্রায় বিশ হাজার প্রজাতি আছে।  ভারতে বেশ কয়েক প্রজাতির মৌমাছি দেখা যায়। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:
  • রক বী বা পাথুরে মৌমাছি (এপিস ডর্সাটা): এরা ভালো মধু সংগ্রাহক এবং এদের প্রতি উপনিবেশ থেকে গড়ে ৫০-৮০ কেজি ফলন পাওয়া যায়৷
  • লিটল বী বা ক্ষুদে মৌমাছি : (এপিস ফ্লোরিয়া): এরা খুব কম মধু উপন্ন করে এবং প্রতি উপনিবেশ থেকে প্রায় ২০০-৯০০ গ্রাম মধু পাওয়া যায়৷
  • ইণ্ডিয়ান বী বা ভারতীয় মৌমাছি (এপিস সেরানা ইণ্ডিকা): এরা বছরে প্রতি উপনিবেশ থেকে গড়ে ৬-৮ কেজি মধু দেয়৷
  • ইউরোপিয়ান বী বা ইউরোপিয় মৌমাছি [ইটালিয়ান মৌমাছি] (এপিস মেলিফ্লেরা): প্রতি উপনিবেশ থেকে গড়ে ২৫-৪০ কেজি মধু পাওয়া যায়৷
এগুলি ছাড়াও কেরলে আর একটি প্রজাতি পাওয়া যায় যারা "হুলবিহীন মৌমাছি" নামে পরিচিত৷ এরা আদৌ হুলবিহীন নয়, প্রকৃতপক্ষে এদের হুল পূর্ণ বিকশিত হয় না৷ তবে এরা খুব ভালো পরাগসংযোজক৷ এরা বছরে ৩০০-৪০০ গ্রাম মধু উৎপাদন করে৷

মৌচাক হলো মৌমাছির আবাসস্থল এটি তৈরী হয় মোম জাতীয় পদার্থ দিয়ে । মৌচাকে ক্ষদ্র ক্ষুদ্র ষড়ভূজ প্রকোষ্ঠ থাকে মৌমাছি এসব প্রকোষ্ঠে মধু সঞ্চয় করে এছাড়া ফাঁকা প্রকোষ্ঠে মৌমাছি ডিম পাড়ে, লার্ভা ও পিউপা সংরক্ষণ করে মৌমাছি নিজেই দেহাভ্যন্তরে মোম তৈরী করে এই মোম প্রকৃতপক্ষে ফ্যাটি এসিডের ইস্টার এর রাসায়নিক সংকেত হলো C15H31COOC30H61.

সুন্দরবনের গাছে মৌচাক।
‘শ্রমিক মৌমাছির’ দেহে আটটি ক্ষুদ্র গ্র্যাণ্ড থেকে মোমশ্বল্ক নি:সৃত হয় । নি:সরণের সময় মোমশ্বল্ক থাকে স্বচ্ছ যা কালক্রমে সাদা ও পরে ঈষদচ্ছ বর্ণ ধারণ করে । সহস্রাধিক মোমশ্বল্ক থেকে এক গ্রাম মোম পাওয়া সম্ভব ।
ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানোর সময় মৌমাছিরা তাদের পা এবং বুকের লোমের ফুলের অসংখ্য পরাগরেণু বয়ে বেড়ায়। এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে পরলে পরাগায়ণ ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে উৎপন্ন হয় ফল। এভাবে মৌমাছিরা পরাগায়ণের মাধ্যমে হিসাবে কাজ করে ফল ও ফসলের উৎপাদন বাড়ায়।
তথ্যসুত্র গুগল

মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আসুন গাছ লাগাই, সবুজ স্বপ্ন দেখি।বসবাসযোগ্য করে তুলি আমাদের ধরনীকে......সবুজে থাকুন, সবুজে বাঁচুন


photo:-Rita Nandi

একটি গাছ একটি প্রাণ
শোন রে মানুষ ভাই,
পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে,
গাছ লাগানো চাই।
গাছ লাগালে বর্ষা হবে,
ফলবে সোনার ফসল,
গাছ কাটলেই প্রতি ধাপে
জীবন হবে অচল।
গাছের ছায়ায় সুশীতল হয়
আর শান্ত পরিবেশ।
গাছ লাগালে বাঁচবে জীবন
নইলে জীবন শেষ।
গাছের শিকড় আঁকড়ে ধরে,
রোধ করে মাটির ক্ষয়।
সবাই শোন গাছ কেটো না
পৃথিবী হবে লয়।
জীবনের প্রতি নিঃশ্বাসে
আছে গাছের মহান দান।
এসো আমরা সবাই বলি
একটি গাছ একটি প্রাণ।
PC:-Rita Nandi



মানুষেরই কিছু অবিমৃশ্যকারী কাজের ফল জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বের উপর যার প্রভাব মারাত্মক৷ অবশ্য আজ মানুষ ধীরে ধীরে তার কাজের পরিণাম উপলব্ধি করতে পারছে, তাই পরিবেশ সুরক্ষায় সুচেতনার জাগরণও ঘটছে৷ শিশুদের মধ্যেও যে পরিবেশ সংরক্ষণের চেতনা জাগছে৷
কিন্তু মুশকিল হলো, এই শিশুরাই আমাদের মতো বড়দের কাজকর্ম দেখে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে৷  মাটিতে মিশে না যাওয়া ( নন বায়ো ডিগ্রেডেবল) আবর্জনা পরিবেশের ভীষণ ক্ষতি করে৷ একথা আমরা বাচ্চাদেরও শেখাই৷ কিন্তু তারপরই আমাদের বাচ্চারা দেখে, আমরা পলিথিন প্যাকেটে করে বাজার থেকে জিনিসপত্র নিয়ে আসছি, আর সেই পলিথিন যত্রতত্র ফেলে দিচ্ছি৷ এ থেকে শিশুরা শিখছে, ‘এমন অনেক বিষয় আছে, যেগুলি সম্বন্ধে যা শেখানো হয়, তার উল্টোটাই করতে হয়'৷ সমুদ্রসৈকত হোক বা পাহাড়, আমরা পিকনিক করতে যাই, আর বিভিন্ন ক্ষতিকর আবর্জনা আমরা সেখানে ফেলে আসি৷ এমনকি আজ হিমালয়ের উচ্চতম স্থানগুলিও রেহাই পাচ্ছে না৷ একটা ব্যক্তিগত কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার কথা বলি৷ আমার বাচ্চাকে শিখিয়েছি, গাছ কাটতে নেই, লাগাতে হয়৷
     বছর তিনেক আগে হঠাৎ দেখলাম আমাদের আসাম রোড (এস টি কে কে রোড )  চওড়া করার জন্য শতাব্দী প্রাচীন ( হয়ত বা কয়েক শতাব্দী প্রাচীন ) বিরাট বিরাট শিরীষ গাছগুলিকে নির্মমভাবে কেটে ফেলা হলো কোনো নতুন গাছ না লাগিয়েই৷ আমার মেয়ে তিতলি আমাকে প্রশ্ন করেছিল, ‘‘বাবা , গাছ কাটা তো খারাপ কাজ, তাহলে এতগুলো গাছ কেটে ফেলল কেন?'' বিশ্বাস করুন, আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি৷ কীভাবে তাকে আমি বলব যে, বড় হলে আমাদের মধ্যে একটা জিনিস জন্ম নেয় যার নাম ‘হিপোক্রেসি'৷ যতক্ষণ না আমরা এই হিপোক্রেসির হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছি, ততক্ষণ আমাদের কথা আর কাজের মধ্যে রয়ে যাবে বিস্তর ফারাক৷ আমরা অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে চলি, ‘কর্তব্য বিষয়ে ভালো ভালো কথার জন্ম হয়েছে আমার বলার জন্য, আর অন্যদের করার জন্য', অন্তত আমার দেশে৷ তাই আমরা স্লোগান দিই, ‘গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান'৷ কখনোই বলি না, ‘এসো গাছ লাগাই, প্রাণ বাঁচাই'৷ আমাদের বাসের পিছনে লেখা থাকে না, ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলি', লেখা থাকে ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলুন'৷  অর্থাৎ আমার কোনো দায় নেই! আজ আমাদের এস টি কে কে রোড ঝাঁ চকচকে,গাড়ী চলে সাবলীল ভাবে ,বান্ডেল থেকে কাটোয়া পর্যন্ত রাস্তা শুয়ে আছে একটা বড়ো অজগরের মতো,গাড়ি চলছে সাঁ সাঁ করে ,.........ঠা ঠা রোদ্দুরে অজগরের পিঠ চক চক করছে ,আমরা হারিয়ে ফেলেছি আমাদের সেই ছায়া - সুনিবিড় পথ। খামারগাছী পেরোলেই চোখে পড়ে রাস্তার ধারে পরে আছে শিরীষ ,বাবলা,জারুল,কৃষ্ণচূড়াদের টুকরো টুকরো লাশ।
       তবুও আশার কথা, সর্বত্রই কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ থাকেন, কথা নয়, কাজই যাঁদের জীবনাদর্শ৷ তাঁদের কাজের ফলেই সভ্যতা কালো থেকে আলোর দিকে, মন্দ থেকে ভালোর দিকে এগিয়ে চলে৷ তাঁদের কথা মনে রেখেই আমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততির জন্য আগামীদিনে একটু অন্যরকম পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে সাহস পাই৷ আর সর্বোপরি কবি তো বলেইছেন, ‘‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ''৷



বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতো ব্ড় পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দয়েলপাখি – চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ
দেখেছিল; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে –
কৃষ্ণা-দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায় –
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিল – একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।
                                 ------জীবনানন্দ দাশ

গাছের খোঁজে গাছের কাছে
- সায়াদাত চমন

  নিজস্ব একটি গাছের খোঁজে শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গেছে-
শত জনমের আকাঙ্ক্ষা ছিলো আমার একটি স্বতন্ত্র গাছ থাকবে
যে গাছে অবলা ইচ্ছেগুলো সগৌরবে প্রতিফলিত হবে বারেবারে
নিশিদিন এক করে গাছের সাম্রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছি, এখনো ঘুরে বেড়াই
অথচ একান্ত নিজের কোনো গাছ আজ অবধি পেলাম না ।

সারি সারি গাছ সমুন্নত বুকে শির উঁচু করে চারিধারে ঘুরে বেড়ায়
আমার স্বপ্নে দেখা ফলবতী গাছ আসবাব হয়ে অন্য কারো শোবার
ঘরের শোভা বাড়াচ্ছে অথবা অন্যের চুলোর লাকড়ি হয়ে জ্বলছে-
খুব বেশি চাওয়ার ছিলো না আমার -
শুধু একটা একান্ত আপন স্বতন্ত্র গাছই চেয়েছি মাত্র।

আজো নির্ঘুম রাতে অদৃশ্য হাতে ঝাড়ু দেয়া পরিচ্ছন্ন আকাশের
নিচে বসে ভাবনার পৃথিবীতে গাছের অবয়ব আঁকি -
ঘুঁটঘুঁটে অমাবস্যায় গাছেদের খুব কাছে যেতে ইচ্ছে জাগে
তবু অজান্তেই সুখের মোড়কে পুষে রাখি দুঃখের দহন-জ্বালা।

একান্ত নিজের একটি গাছের স্বপ্ন আমি দেখতেই পারি-
এতে কারো ক্ষতি-টতি হবে না নিশ্চয়!

সজনে


"এখানে আকাশ নীল- নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুল
ফুটে থাকে হিম শাদা- রং তার আশ্বিনের আলোর মতন;"



 সজনে (ইংরেজি: drumstick tree বা horseradish tree বা ben oil tree বা benzoil tree) (Moringa oleifera) হচ্ছে বৃক্ষ জাতীয় গাছ। এটির শাক হিসেবে ব্যবহৃত পাতা ভিটামিন এ-এর এক বিশাল উৎস। সজনের পাতা এবং ফল উভয়ের মধ্যেই বিপুল পরিমাণে পুষ্টি আছে। এতসব পুষ্টিগুণ একসাথে আছে বলেই এর মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং জীবন ধারনের পুষ্টি দুটোই পাওয়া যায়। আফ্রিকায় সজনে সাফল্যের পেছনে এটাই মূল কারণ। দুয়েকটি নির্দিষ্ট ভিটামিন বা মিনারেল নয়; বরং বহু ধরনের ভিটামিন, মিনারেল, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের সমাহার এই সজনে।

১। সজনের পাতা:- শাকের মত রান্না করে (কিন্তু ভাজা নয়) আহারের সময় অল্পপরিমাণে খেলে অগ্নিবল বৃদ্ধি হয় ও আহারে প্রবৃত্তি নিয়ে আসে, তবে পেটরোগাদের ঝোল করে অল্প খাওয়া ভাল। এটা গরীবের খাদ্য, কারন তার মধ্যে আছে ভিটামিন এ.বি.সি নিকোটিনিক এসিড, প্রোটিন, চর্বিজাতীয় পদার্থ, কর্বোহাইড্রেট এবং শরীরের পোষণ-উপযোগী আরও প্রয়োজনীয় উপাদান, এসব তথ্য নব্য বৈজ্ঞানিকের সমীক্ষায় যানা গেছে। এই শাক কোল, ভীল, মুন্ডা প্রভৃতি আদিবাসিদের নিত্য প্রিয় ভোজ্য শাক। 

২। সজনের ফুল:- শাকের মত রান্না করে বসন্তকালে খাওয়া ভাল। এটা একটা বসন্তপ্রতিষেধক দ্রব্য। সর্দিকাসির দোষে, শোথে, প্লীহা ও যকৃতের কার্যকারিত্ব শক্তি কমে গেলে, ক্রিমির আধিক্য থাকলে এবং টনিকের একটি অন্যতম উপাদান হিসাবে ইউনানি চিকিৎসক সমপ্রদায় এর শুষ্কফুল ব্যবহার করেন। 

৩। সজনের ফল (ডাঁটা):- “ধুকড়ির মধ্যে খাসা চালের” মত আমাদের দেশে সজনের ডাঁটা। নব্য বৈজ্ঞানিকের বিশ্লেষণ বিচারে পাতা ও ফল (ডাঁটা) অল্পাধিক সমগুণের অধিকারী হলেও ডাঁটাগুলি Amino Acid সমৃদ্ধ, যেটা দেহের সাময়িক প্রয়োজন মেটায়। সর্বক্ষেত্রে সব দ্রব্যেরই ব্যবহার করা উচিত পরিমিত ও সীমিত। উইনানী চিকিৎসকগণের মতে- বাত ব্যাধি রোগগ্রস্ত ব্যক্তিদের ও যাঁরা শিরাগত বাতে কাতর, তাঁদের আ হার্যের সঙ্গে এটি ব্যবহার করা ভাল।
৪। বীজের তেল:-এদেশে সজনের বীজের তেলের ব্যবহার হয় না, তাই পরীক্ষাও তেমন হয়নি, তবে আমাদের এ দেশের বীজের তেমন তেল পাওয়া যায় না, আমদানী হয় আফ্রিকা থেকে- নাম তার ‘বেন অয়েল’। ঘড়ি মেরামতের কাজে লাগে, বাতের ব্যথায়ও মালিশে ভাল কাজ হয়। এ ভিন্ন গাছের ও মূলের (ত্বক) গুণের অন্ত নেই।
রোগ নিরাময়েঃ
১। হাই ব্লাড প্রেসারঃ সজনের পাকা পাতার টাটকা রস (জলে বেটে নিংড়ে নিতে হবে) দুই বেলা আহারের ঠিক অব্যবহিত পূর্বে ২ বা ৩ চা-চামচ করে খেলে সপ্তাহের মধ্যে প্রেসার কমে যায়। তবে যাঁদের প্রস্রাবে বা রক্তে সুগার আছে, এটা খাওয়া নিষেধ
২। অর্বুদ রোগে (Tumour): ফোঁড়ার প্রথমাবস্থায় গ্রন্থিস্ফীতিতে (Glandular swelling) অথবা আঘাতজনিত ব্যথা ও ফোলায়- পাতা বেটে অল্প গরম করে লাগালে ফোঁড়া বা টিউমার বহুক্ষেত্রে মিলিয়ে যায় এবং ব্যথা ও ফোলার উপশম হয়।
৩। সাময়িক জ্বর বা জ্বরভাবে:- এর সঙ্গে সর্দির প্রাবল্য থাকলে অল্প দুটো পাতা ঝোল করে বা শাক রান্না করে খেলে উপশম হয়।
৪। হিক্কায় (Hiccup):- হিক্কা হতে থাকলে পাতার রস ২/৫ ফোঁটা করে দুধের সঙ্গে ২/৩ বার খেতে দিলে কমে যায়।
৫। অর্শে (Piles):- অর্শের যন্ত্রনা আছে, অথচ রক্ত পড়ে না- এ ক্ষেত্রে নিন্মাঙ্গে তিলতৈল লাগিয়ে পাতা-সিদ্ধ ক্কাথ দ্বারা সিক্ত করতে হবে।
৬। সন্নিপাত জন্য চোখে ব্যথা, জল বা পিচুটি পড়াঃ- এ সব ক্ষেত্রে পাতা- সিদ্ধ জল দিয়ে ধুইলে উপকার পাওয়া যায়।
৭। দাঁতের মাড়ি ফোলায়ঃ- শ্লেস্মাঘটিত কারনে দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে পাতার ক্কাথ মুখে ধারন করলে উপশম হয়।
৮। কুষ্ঠে (Leprosy):- কুষ্ঠের প্রথম অবস্থায় বীজের তৈল ব্যবহার করতে পারলে ভাল হয়। অভাবে বীজ বেটে কুষ্ঠের ক্ষতের উপর প্রলেপ দিলেও চলে।
৯। অপচী রোগে (Scrofula):- সজনেবীজ চূর্ণ করে নস্য নিতে হয়।


Image
গাছটার বৈজ্ঞানিক নাম মরিংগা ওলেইফেরা। ইংরেজিতে গাছটিকে বলে  মিরাকল ট্রি বা অলৌকিক গাছ। ইংরেজি এর আরো দুটি নাম আছে- ড্রামস্টিক ও হর্সর‌্যাডিশ ট্রি।

এই গাছের প্রতি গ্রাম পাতায় গাজরের চারগুন বেশি  ভিটামিন এ, দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পটাসিয়াম, কমলালেবুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন, দইয়ের চেয়ে ২ গুণ বেশি প্রোটিন আছে।

চার হাজার বছর ধরে রন্ধন এবং নানা চিকিৎসায় এ গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রায় ৩০০ রকমের অসুখের চিকিৎসা হয় এই গাছ দিয়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় বহু বছর ধরে বাড়ির আনাচে-কানাচে, বনে-জঙ্গলে, পুকুরের ধারে এই গাছ দেখা যায়।

 সম্প্রতি সেনেগাল, মালির মতো আফ্রিকান দেশগুলোতে এর চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। চাষও খুব সহজ। গাছের একটা ডাল পুতে দিলেই হলো। এই গাছ বাড়েও খুব দ্রুত। দুই তিন বছরে ফুল দেয়। এর ফুল, পাতা, ফল সব কিছুই সুস্বাদু।


এতক্ষণ যে বিস্ময়গাছটির গুণগান করা হলো তার বাংলা নামটা চেনেন না, এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। চেনা জিনিসের মূল্য হয়তো আমরা কম দেই, কিন্তু সারা বিশ্বই আজ এই গাছ নিয়ে গবেষণা করছে, এই গাছের জয় জয়কার চারদিকে। এই বিস্ময়বৃক্ষটি আমাদের সবার পরিচিত সজিনা বা সজনে গাছ।

আমরা হয়তো কম-বেশি সবাই সজিনার ডাল বা তরকারি খেয়েছি। কিন্তু সজনে পাতাও যে শাক হিসেবে খাওয়া যায়, এটা সবাই জানি না। তেল-রসুন দিয়ে রান্না সজিনে খেতে শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিকরও। সজিনা পাতা ও সজিনাতে প্রচুর আঁশ আছে, যা খাদ্যনালী ও অন্ত্রের পরিপাক তন্ত্রকে পরিষ্কার করে। বিশেষ করে তৈলাক্ত অনেক খাবার আমরা খাই, যার তেল রক্তনালীতে আটকে থাকে। সেগুলো বের করতে সজিনা সাহায্য করে। সজিনার মধ্যে আইসোথিয়োকাইনেটস নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে,  যা গ্যাস্ট্রিক, আলসার এবং গ্যাস্ট্রিকজনিত ক্যানসার ঠেকাতে সহায়তা করে।
- See more at: http://bangladeshshomoy.com/news.php?id=33514#sthash.NAQG9OIo.dpuf

বিস্ময়কর বৃক্ষ সজনে Image
গাছটার বৈজ্ঞানিক নাম মরিংগা ওলেইফেরা। ইংরেজিতে গাছটিকে বলে  মিরাকল ট্রি বা অলৌকিক গাছ। ইংরেজি এর আরো দুটি নাম আছে- ড্রামস্টিক ও হর্সর‌্যাডিশ ট্রি।

এই গাছের প্রতি গ্রাম পাতায় গাজরের চারগুন বেশি  ভিটামিন এ, দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পটাসিয়াম, কমলালেবুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন, দইয়ের চেয়ে ২ গুণ বেশি প্রোটিন আছে।

চার হাজার বছর ধরে রন্ধন এবং নানা চিকিৎসায় এ গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রায় ৩০০ রকমের অসুখের চিকিৎসা হয় এই গাছ দিয়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় বহু বছর ধরে বাড়ির আনাচে-কানাচে, বনে-জঙ্গলে, পুকুরের ধারে এই গাছ দেখা যায়।

 সম্প্রতি সেনেগাল, মালির মতো আফ্রিকান দেশগুলোতে এর চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। চাষও খুব সহজ। গাছের একটা ডাল পুতে দিলেই হলো। এই গাছ বাড়েও খুব দ্রুত। দুই তিন বছরে ফুল দেয়। এর ফুল, পাতা, ফল সব কিছুই সুস্বাদু।


এতক্ষণ যে বিস্ময়গাছটির গুণগান করা হলো তার বাংলা নামটা চেনেন না, এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। চেনা জিনিসের মূল্য হয়তো আমরা কম দেই, কিন্তু সারা বিশ্বই আজ এই গাছ নিয়ে গবেষণা করছে, এই গাছের জয় জয়কার চারদিকে। এই বিস্ময়বৃক্ষটি আমাদের সবার পরিচিত সজিনা বা সজনে গাছ।

আমরা হয়তো কম-বেশি সবাই সজিনার ডাল বা তরকারি খেয়েছি। কিন্তু সজনে পাতাও যে শাক হিসেবে খাওয়া যায়, এটা সবাই জানি না। তেল-রসুন দিয়ে রান্না সজিনে খেতে শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিকরও। সজিনা পাতা ও সজিনাতে প্রচুর আঁশ আছে, যা খাদ্যনালী ও অন্ত্রের পরিপাক তন্ত্রকে পরিষ্কার করে। বিশেষ করে তৈলাক্ত অনেক খাবার আমরা খাই, যার তেল রক্তনালীতে আটকে থাকে। সেগুলো বের করতে সজিনা সাহায্য করে। সজিনার মধ্যে আইসোথিয়োকাইনেটস নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে,  যা গ্যাস্ট্রিক, আলসার এবং গ্যাস্ট্রিকজনিত ক্যানসার ঠেকাতে সহায়তা করে।

পানি বিশুদ্ধ করতে আমরা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম নানা পদ্ধতি ব্যবহার করি। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সজিনার দানা পানি বিশুদ্ধকরণে সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উপায়। উপস্যুলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা সন্দর্ভে বলা হয়েছে, সজিনার দানা পানি দূষণ রোধ করে, পানিতে কোনো রকম দূষণীয় ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোনো অণুজীব উপদান দ্রবীভূত হতে দেয় না। আমেরিকা, নামিবিয়া, ফ্রান্স ও বতসোয়ানার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সজিনার আণবিক্ষণিক প্রোটিন উপাদান পানি বিশুদ্ধকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। একইভাবে সজিনা শরীরকে বিশুদ্ধ রাখে। সজিনাকে আজকের বিশ্বে ‘সুপার ফুড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

 এই সুপার ফুডের অন্তত ছয়টি গুণ আছে, যা একে তারকাখ্যাতি দিয়েছে-

১. পুষ্টির ভান্ডার : লেখার শুরুতেই সজিনার পুষ্টি গুণের কথা বলা হয়েছে। প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি এতে আয়রনও আছে। আয়রনের দিক থেকে এটি পালং শাকের চেয়ে ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী।


২. এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি : সজিনার পাতাকে এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি বলা যায়। এর মধ্যে ভিটামিন সি, বেটা-কেরোটিন, কিউরেকটিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড বিদ্যমান। উল্লেখ্য, এসব উপাদানই মানবদেহের জন্য উপকারী। বিশেষ করে, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রক্তের চাপ ও শর্করা কমাতে বিশেষ কাজে দেয়। এশিয়ান প্যাসিফিক জার্নাল অব ক্যানসার প্রিভেনশন দারি করছে, সজিনার পাতায় বিদ্যমান এন্টি-অক্সিডেন্ট ক্যানসার কোষ সৃষ্টিতে বাধা দেয়।


৩. ডায়েবেটিস প্রতিরোধক : এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং আইসোথিয়োকাইনেটস নামের উপাদানগুলো নিয়মিত গ্রহণে ডায়েবেটিস কমে যায়। প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম সজিনার পাতা খেয়ে ডায়বেটিস ২১ শতাংশ হ্রাস পায়। তিন মাস এক চা চামচ করে সজিনার পাতার গুড়া খেয়ে ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।


৪. তেলেসমাতি : সজিনার বীজের তৈরি তেলে সত্যিই তেলেসমাতি আছে। অন্য যেকোনো ভেজিটেবেল অয়েল-এর চেয়ে এর গুণাগুণ বেশি। দীর্ঘদিনের লিভারের রোগীর জন্য এ তেল খুব উপকারী। সজিনা গ্রহণে খাদ্যের গুণগত মান অটুট থাকে। পচনশীল খাবারকে দীর্ঘস্থায়ীত্ব দিতেও সজিনার তেলের তুলনা নেই। বাতের ব্যথা-বেদনায় যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনি শীতের আর্দ্রতা থেকে ত্বককে রক্ষা করা, রূপচর্চাতেও এই তেল কাজে লাগে।


৫. কোলেস্টেরল কিলার : ঘাতক কোলেস্টেরলকে হত্যা করে সজিনা আপনার হৃদপি-ের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। থাইল্যান্ডে বহু বছর ধরে সজিনাকে হৃদরোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ৩ মাসের ব্যবহারে এটি কোলেস্টেরল লেভেল অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে।


৬. আর্সেনিক দূষণ আর নয় : পানিতে আর্সেনিক দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এই সমস্যা নিরোধে সজিনার বীজ কিংবা পাতা ভূমিকা রাখে। এমনকি আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করতে সজিনা বীজ বা পাতা ব্যবহার কার্যকরী।


এত উপকারী এবং সহজে প্রাপ্য সজিনার ব্যবহার এখনো আমাদের কাছে সীমিত পরিসরেই রয়ে গেছে। সজিনার ডাল আর তরকারির পাশাপাশি খুব সহজেই এর কচিপাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। পালং, মূলা শাকের মতোই এটিকে রান্না করা যায়। এমনকি সালাদে টমেটো, শসার সঙ্গে সজনে পাতা ব্যবহার করা যায়। যেকোনো স্যুপেও কয়েকটি সজিনা পাতা বাড়তি স্বাদ আর পুষ্টি এনে দেবে। পাতা গুঁড়া বা বীজের তেল অবশ্য আমাদের দেশে সেভাবে ব্যবহৃত হয় না। সজিনার তেল অবশ্য বেশ দামি, অলিভ অয়েলের চেয়েও। আমরা চাইলে সজিনার তেল ও গুঁড়াকে বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত করার কথা ভাবতে পারি। ইউনানী ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহু বছর ধরেই এর ব্যবহার চলে আসছে। আমরা নতুন করে এই সুপার ফুড আর বিস্ময়কর বৃক্ষের কথা ভাবতে পারি।
- See more at: http://bangladeshshomoy.com/news.php?id=33514#sthash.NAQG9OIo.dpuf

বিস্ময়কর বৃক্ষ সজনে Image
গাছটার বৈজ্ঞানিক নাম মরিংগা ওলেইফেরা। ইংরেজিতে গাছটিকে বলে  মিরাকল ট্রি বা অলৌকিক গাছ। ইংরেজি এর আরো দুটি নাম আছে- ড্রামস্টিক ও হর্সর‌্যাডিশ ট্রি।

এই গাছের প্রতি গ্রাম পাতায় গাজরের চারগুন বেশি  ভিটামিন এ, দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পটাসিয়াম, কমলালেবুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন, দইয়ের চেয়ে ২ গুণ বেশি প্রোটিন আছে।

চার হাজার বছর ধরে রন্ধন এবং নানা চিকিৎসায় এ গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রায় ৩০০ রকমের অসুখের চিকিৎসা হয় এই গাছ দিয়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় বহু বছর ধরে বাড়ির আনাচে-কানাচে, বনে-জঙ্গলে, পুকুরের ধারে এই গাছ দেখা যায়।

 সম্প্রতি সেনেগাল, মালির মতো আফ্রিকান দেশগুলোতে এর চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। চাষও খুব সহজ। গাছের একটা ডাল পুতে দিলেই হলো। এই গাছ বাড়েও খুব দ্রুত। দুই তিন বছরে ফুল দেয়। এর ফুল, পাতা, ফল সব কিছুই সুস্বাদু।


এতক্ষণ যে বিস্ময়গাছটির গুণগান করা হলো তার বাংলা নামটা চেনেন না, এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। চেনা জিনিসের মূল্য হয়তো আমরা কম দেই, কিন্তু সারা বিশ্বই আজ এই গাছ নিয়ে গবেষণা করছে, এই গাছের জয় জয়কার চারদিকে। এই বিস্ময়বৃক্ষটি আমাদের সবার পরিচিত সজিনা বা সজনে গাছ।

আমরা হয়তো কম-বেশি সবাই সজিনার ডাল বা তরকারি খেয়েছি। কিন্তু সজনে পাতাও যে শাক হিসেবে খাওয়া যায়, এটা সবাই জানি না। তেল-রসুন দিয়ে রান্না সজিনে খেতে শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিকরও। সজিনা পাতা ও সজিনাতে প্রচুর আঁশ আছে, যা খাদ্যনালী ও অন্ত্রের পরিপাক তন্ত্রকে পরিষ্কার করে। বিশেষ করে তৈলাক্ত অনেক খাবার আমরা খাই, যার তেল রক্তনালীতে আটকে থাকে। সেগুলো বের করতে সজিনা সাহায্য করে। সজিনার মধ্যে আইসোথিয়োকাইনেটস নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে,  যা গ্যাস্ট্রিক, আলসার এবং গ্যাস্ট্রিকজনিত ক্যানসার ঠেকাতে সহায়তা করে।

পানি বিশুদ্ধ করতে আমরা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম নানা পদ্ধতি ব্যবহার করি। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সজিনার দানা পানি বিশুদ্ধকরণে সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উপায়। উপস্যুলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা সন্দর্ভে বলা হয়েছে, সজিনার দানা পানি দূষণ রোধ করে, পানিতে কোনো রকম দূষণীয় ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোনো অণুজীব উপদান দ্রবীভূত হতে দেয় না। আমেরিকা, নামিবিয়া, ফ্রান্স ও বতসোয়ানার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সজিনার আণবিক্ষণিক প্রোটিন উপাদান পানি বিশুদ্ধকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। একইভাবে সজিনা শরীরকে বিশুদ্ধ রাখে। সজিনাকে আজকের বিশ্বে ‘সুপার ফুড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

 এই সুপার ফুডের অন্তত ছয়টি গুণ আছে, যা একে তারকাখ্যাতি দিয়েছে-

১. পুষ্টির ভান্ডার : লেখার শুরুতেই সজিনার পুষ্টি গুণের কথা বলা হয়েছে। প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি এতে আয়রনও আছে। আয়রনের দিক থেকে এটি পালং শাকের চেয়ে ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী।


২. এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি : সজিনার পাতাকে এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি বলা যায়। এর মধ্যে ভিটামিন সি, বেটা-কেরোটিন, কিউরেকটিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড বিদ্যমান। উল্লেখ্য, এসব উপাদানই মানবদেহের জন্য উপকারী। বিশেষ করে, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রক্তের চাপ ও শর্করা কমাতে বিশেষ কাজে দেয়। এশিয়ান প্যাসিফিক জার্নাল অব ক্যানসার প্রিভেনশন দারি করছে, সজিনার পাতায় বিদ্যমান এন্টি-অক্সিডেন্ট ক্যানসার কোষ সৃষ্টিতে বাধা দেয়।


৩. ডায়েবেটিস প্রতিরোধক : এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং আইসোথিয়োকাইনেটস নামের উপাদানগুলো নিয়মিত গ্রহণে ডায়েবেটিস কমে যায়। প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম সজিনার পাতা খেয়ে ডায়বেটিস ২১ শতাংশ হ্রাস পায়। তিন মাস এক চা চামচ করে সজিনার পাতার গুড়া খেয়ে ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।


৪. তেলেসমাতি : সজিনার বীজের তৈরি তেলে সত্যিই তেলেসমাতি আছে। অন্য যেকোনো ভেজিটেবেল অয়েল-এর চেয়ে এর গুণাগুণ বেশি। দীর্ঘদিনের লিভারের রোগীর জন্য এ তেল খুব উপকারী। সজিনা গ্রহণে খাদ্যের গুণগত মান অটুট থাকে। পচনশীল খাবারকে দীর্ঘস্থায়ীত্ব দিতেও সজিনার তেলের তুলনা নেই। বাতের ব্যথা-বেদনায় যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনি শীতের আর্দ্রতা থেকে ত্বককে রক্ষা করা, রূপচর্চাতেও এই তেল কাজে লাগে।


৫. কোলেস্টেরল কিলার : ঘাতক কোলেস্টেরলকে হত্যা করে সজিনা আপনার হৃদপি-ের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। থাইল্যান্ডে বহু বছর ধরে সজিনাকে হৃদরোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ৩ মাসের ব্যবহারে এটি কোলেস্টেরল লেভেল অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে।


৬. আর্সেনিক দূষণ আর নয় : পানিতে আর্সেনিক দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এই সমস্যা নিরোধে সজিনার বীজ কিংবা পাতা ভূমিকা রাখে। এমনকি আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করতে সজিনা বীজ বা পাতা ব্যবহার কার্যকরী।


এত উপকারী এবং সহজে প্রাপ্য সজিনার ব্যবহার এখনো আমাদের কাছে সীমিত পরিসরেই রয়ে গেছে। সজিনার ডাল আর তরকারির পাশাপাশি খুব সহজেই এর কচিপাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। পালং, মূলা শাকের মতোই এটিকে রান্না করা যায়। এমনকি সালাদে টমেটো, শসার সঙ্গে সজনে পাতা ব্যবহার করা যায়। যেকোনো স্যুপেও কয়েকটি সজিনা পাতা বাড়তি স্বাদ আর পুষ্টি এনে দেবে। পাতা গুঁড়া বা বীজের তেল অবশ্য আমাদের দেশে সেভাবে ব্যবহৃত হয় না। সজিনার তেল অবশ্য বেশ দামি, অলিভ অয়েলের চেয়েও। আমরা চাইলে সজিনার তেল ও গুঁড়াকে বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত করার কথা ভাবতে পারি। ইউনানী ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহু বছর ধরেই এর ব্যবহার চলে আসছে। আমরা নতুন করে এই সুপার ফুড আর বিস্ময়কর বৃক্ষের কথা ভাবতে পারি।
- See more at: http://bangladeshshomoy.com/news.php?id=33514#sthash.NAQG9OIo.dpuf

বিস্ময়কর বৃক্ষ সজনে Image
গাছটার বৈজ্ঞানিক নাম মরিংগা ওলেইফেরা। ইংরেজিতে গাছটিকে বলে  মিরাকল ট্রি বা অলৌকিক গাছ। ইংরেজি এর আরো দুটি নাম আছে- ড্রামস্টিক ও হর্সর‌্যাডিশ ট্রি।

এই গাছের প্রতি গ্রাম পাতায় গাজরের চারগুন বেশি  ভিটামিন এ, দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পটাসিয়াম, কমলালেবুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন, দইয়ের চেয়ে ২ গুণ বেশি প্রোটিন আছে।

চার হাজার বছর ধরে রন্ধন এবং নানা চিকিৎসায় এ গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রায় ৩০০ রকমের অসুখের চিকিৎসা হয় এই গাছ দিয়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় বহু বছর ধরে বাড়ির আনাচে-কানাচে, বনে-জঙ্গলে, পুকুরের ধারে এই গাছ দেখা যায়।

 সম্প্রতি সেনেগাল, মালির মতো আফ্রিকান দেশগুলোতে এর চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। চাষও খুব সহজ। গাছের একটা ডাল পুতে দিলেই হলো। এই গাছ বাড়েও খুব দ্রুত। দুই তিন বছরে ফুল দেয়। এর ফুল, পাতা, ফল সব কিছুই সুস্বাদু।


এতক্ষণ যে বিস্ময়গাছটির গুণগান করা হলো তার বাংলা নামটা চেনেন না, এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। চেনা জিনিসের মূল্য হয়তো আমরা কম দেই, কিন্তু সারা বিশ্বই আজ এই গাছ নিয়ে গবেষণা করছে, এই গাছের জয় জয়কার চারদিকে। এই বিস্ময়বৃক্ষটি আমাদের সবার পরিচিত সজিনা বা সজনে গাছ।

আমরা হয়তো কম-বেশি সবাই সজিনার ডাল বা তরকারি খেয়েছি। কিন্তু সজনে পাতাও যে শাক হিসেবে খাওয়া যায়, এটা সবাই জানি না। তেল-রসুন দিয়ে রান্না সজিনে খেতে শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিকরও। সজিনা পাতা ও সজিনাতে প্রচুর আঁশ আছে, যা খাদ্যনালী ও অন্ত্রের পরিপাক তন্ত্রকে পরিষ্কার করে। বিশেষ করে তৈলাক্ত অনেক খাবার আমরা খাই, যার তেল রক্তনালীতে আটকে থাকে। সেগুলো বের করতে সজিনা সাহায্য করে। সজিনার মধ্যে আইসোথিয়োকাইনেটস নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে,  যা গ্যাস্ট্রিক, আলসার এবং গ্যাস্ট্রিকজনিত ক্যানসার ঠেকাতে সহায়তা করে।

পানি বিশুদ্ধ করতে আমরা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম নানা পদ্ধতি ব্যবহার করি। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সজিনার দানা পানি বিশুদ্ধকরণে সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উপায়। উপস্যুলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা সন্দর্ভে বলা হয়েছে, সজিনার দানা পানি দূষণ রোধ করে, পানিতে কোনো রকম দূষণীয় ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোনো অণুজীব উপদান দ্রবীভূত হতে দেয় না। আমেরিকা, নামিবিয়া, ফ্রান্স ও বতসোয়ানার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সজিনার আণবিক্ষণিক প্রোটিন উপাদান পানি বিশুদ্ধকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। একইভাবে সজিনা শরীরকে বিশুদ্ধ রাখে। সজিনাকে আজকের বিশ্বে ‘সুপার ফুড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

 এই সুপার ফুডের অন্তত ছয়টি গুণ আছে, যা একে তারকাখ্যাতি দিয়েছে-

১. পুষ্টির ভান্ডার : লেখার শুরুতেই সজিনার পুষ্টি গুণের কথা বলা হয়েছে। প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি এতে আয়রনও আছে। আয়রনের দিক থেকে এটি পালং শাকের চেয়ে ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী।


২. এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি : সজিনার পাতাকে এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি বলা যায়। এর মধ্যে ভিটামিন সি, বেটা-কেরোটিন, কিউরেকটিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড বিদ্যমান। উল্লেখ্য, এসব উপাদানই মানবদেহের জন্য উপকারী। বিশেষ করে, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রক্তের চাপ ও শর্করা কমাতে বিশেষ কাজে দেয়। এশিয়ান প্যাসিফিক জার্নাল অব ক্যানসার প্রিভেনশন দারি করছে, সজিনার পাতায় বিদ্যমান এন্টি-অক্সিডেন্ট ক্যানসার কোষ সৃষ্টিতে বাধা দেয়।


৩. ডায়েবেটিস প্রতিরোধক : এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং আইসোথিয়োকাইনেটস নামের উপাদানগুলো নিয়মিত গ্রহণে ডায়েবেটিস কমে যায়। প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম সজিনার পাতা খেয়ে ডায়বেটিস ২১ শতাংশ হ্রাস পায়। তিন মাস এক চা চামচ করে সজিনার পাতার গুড়া খেয়ে ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।


৪. তেলেসমাতি : সজিনার বীজের তৈরি তেলে সত্যিই তেলেসমাতি আছে। অন্য যেকোনো ভেজিটেবেল অয়েল-এর চেয়ে এর গুণাগুণ বেশি। দীর্ঘদিনের লিভারের রোগীর জন্য এ তেল খুব উপকারী। সজিনা গ্রহণে খাদ্যের গুণগত মান অটুট থাকে। পচনশীল খাবারকে দীর্ঘস্থায়ীত্ব দিতেও সজিনার তেলের তুলনা নেই। বাতের ব্যথা-বেদনায় যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনি শীতের আর্দ্রতা থেকে ত্বককে রক্ষা করা, রূপচর্চাতেও এই তেল কাজে লাগে।


৫. কোলেস্টেরল কিলার : ঘাতক কোলেস্টেরলকে হত্যা করে সজিনা আপনার হৃদপি-ের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। থাইল্যান্ডে বহু বছর ধরে সজিনাকে হৃদরোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ৩ মাসের ব্যবহারে এটি কোলেস্টেরল লেভেল অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে।


৬. আর্সেনিক দূষণ আর নয় : পানিতে আর্সেনিক দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এই সমস্যা নিরোধে সজিনার বীজ কিংবা পাতা ভূমিকা রাখে। এমনকি আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করতে সজিনা বীজ বা পাতা ব্যবহার কার্যকরী।


এত উপকারী এবং সহজে প্রাপ্য সজিনার ব্যবহার এখনো আমাদের কাছে সীমিত পরিসরেই রয়ে গেছে। সজিনার ডাল আর তরকারির পাশাপাশি খুব সহজেই এর কচিপাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। পালং, মূলা শাকের মতোই এটিকে রান্না করা যায়। এমনকি সালাদে টমেটো, শসার সঙ্গে সজনে পাতা ব্যবহার করা যায়। যেকোনো স্যুপেও কয়েকটি সজিনা পাতা বাড়তি স্বাদ আর পুষ্টি এনে দেবে। পাতা গুঁড়া বা বীজের তেল অবশ্য আমাদের দেশে সেভাবে ব্যবহৃত হয় না। সজিনার তেল অবশ্য বেশ দামি, অলিভ অয়েলের চেয়েও। আমরা চাইলে সজিনার তেল ও গুঁড়াকে বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত করার কথা ভাবতে পারি। ইউনানী ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহু বছর ধরেই এর ব্যবহার চলে আসছে। আমরা নতুন করে এই সুপার ফুড আর বিস্ময়কর বৃক্ষের কথা ভাবতে পারি।
- See more at: http://bangladeshshomoy.com/news.php?id=33514#sthash.NAQG9OIo.dpuf
ইচ্ছে করে ডেকে বলি, ওগো কাশের মেয়ে-
"আজকে আমার চোখ জুড়ালো তোমার দেখা পেয়ে
তোমার হাতে বন্দী আমার ভালবাসার কাশ
তাইতো আমি এই শরতে তোমার কৃতদাস"
--নির্মলেন্দু গুণ
ফটোঃ-রিতা নন্দী
-রিতা নন্দী
ফুলের নাম- কাশ, Kans grass
বৈজ্ঞানিক নাম- Saccharum spontaneum
পরিবার- Poaceae
আমাদের নিজস্ব সম্পদ। কাশফুলের জন্মস্থান  ভারত, বাংলাদেশ,পাকিস্থান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপে। ঘাসজাতীয়, আখ বা ইক্ষুর আত্মীয়। আমাদের দেশে শরৎ মানেই কাশ আর শিউলি ফুল। নদী তীরবর্তী স্থান কাশ জন্মানোর আদর্শ স্থান হলেও এখন প্রায় সব জায়গাতেই জন্মাতে দেখা যায়।

"নদীর পাড়েতে কাশবন সাদা,
মুগ্ধতা চোখে চাওয়া,
হয়নি তো কভু অসীমে তাকিয়ে,
উদাসী মনের হাওয়া।"

বর্ষার বৃষ্টি বা বন্যার জল  নেমে যাওয়ার পর কাশের ঘাস জন্মে আর শরতে ফোটে  শুভ্র, সাদা ফুল। কাশ খুব দ্রুত জন্মে নিজেদের একটা কলোনী তৈরি করে, যা কাশবন নামেই আমাদের কাছে পরিচিত।
কাশ যেহেতু আখ(Saccharum officinarum) এর আত্মীয় সেহেতু আখের কিছুটা গুণ এর মধ্যেও আছে। কাশ ঘাসের গোড়ার দিকের অংশ মিষ্টি স্বাদের। ফিলিপাইনে এর মূলের রস ডাইইউরেটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূলের রস বা জ্যুস জ্বর সারাতে পারে। এছাড়া মূলের রসের সংকোচক, উপশমকারী, শীতলকারক, বিরেচক, সবলকারক গুণ রয়েছে। ব্যথা কমাতে কান্ডের শাঁসের গরম সেঁক উপকারী।
পাশ্চাত্যে কাশফুল নেই। সেখানে কাশের মতো দেখতে Pampas grass(Cortaderia selloana) আছে।এই ঘাসগুলো হঠাৎ দেখে মনে হবে আমাদের দেশি কাশফুল। আসলে তা নয়। এরা অন্য গণের বাসিন্দা। এদের স্বভাব বৈশিষ্ট্য ও ভিন্ন। কাশের তুলনায় এই ফুলগুলো বেশ ঘন। ফুল সাদা বা ক্রিম কালার। হাইব্রিড জাত আছে গোলাপি, নীল ফুলের।
ফটোঃ- রিতা নন্দী



ময়ূর


       " হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মত নাচেরে।
        শত বরনের ভাব উচ্ছ্বাস  কলাপের মতো করেছে বিকাশ,
        আকুল পরান আকাশে চাহিয়া উল্লাসে কারে যাচে রে॥
ওগো, নির্জনে বকুলশাখায় দোলায় কে আজি দুলিছে, দোদুল দুলিছে।
        ঝরকে ঝরকে ঝরিছে বকুল,  আঁচল আকাশে হতেছে আকুল,
        উড়িয়া অলক ঢাকিছে পলক– কবরী খসিয়া খুলিছে।
        ঝরে ঘনধারা নবপল্লবে,  কাঁপিছে কানন ঝিল্লির রবে–
        তীর ছাপি নদী কলকল্লোলে এল পল্লির কাছে রে॥"
আমাদের জাতীয় পাখি ময়ূর (ফ্যাজিয়ানিডি) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত অত্যন্ত সুন্দর পাখি। এশিয়ায় Pavo (পাভো) গণে মোট দুই প্রজাতির এবং আফ্রিকায় Afropavo (আফ্রোপাভো) গণে একটি ময়ূরের প্রজাতি দেখা যায়। এশিয়ার প্রজাতি দু'টি হল নীল ময়ূর আর সবুজ ময়ূর। আফ্রিকার প্রজাতিটির নাম কঙ্গো ময়ূর (Afropavo congensis)। নীল ময়ূর ভারতের জাতীয় পাখি। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে এদের দেখা যায়। সবুজ ময়ূর মায়ানমার থেকে জাভা পর্যন্ত বিস্তৃত। আশঙ্কাজনক হারে বিশ্বব্যাপী কমে যাচ্ছে বলে এরা বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত। ঐতিহাসিকভাবে প্রজাতিটি মায়ানমারের জাতীয় প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। 
এসব ময়ূরের পাশাপাশি সাদা ময়ূরও দেখা যায়। এদের দেহ শুধু সাদাই নয়, চোখও নীল। প্রকৃতপক্ষে নীল ময়ূরই সাদা ময়ূর, জিনগত মিউটেশনের কারণে এদের এমনটি দেখায়।


ময়ূরের সব প্রজাতি সাধারণত বনে বাস করে এবং মাটিতে বাসা বাঁধে। তবে মাঝে মাঝে লোকালয়েও দেখা যায়। বিশেষ করে সংরক্ষিত এলাকায় এরা মানুষের খুব কাছে চলে আসে। এরা সর্বভূক। চারা গাছের অংশ, কীটপতঙ্গ, বীজের খোসা, ফুলের পাপড়ি এবং ছোট ছোট সন্ধিপদ প্রাণী খায়। এরা ডিম পাড়ে ও ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। ছোট বাচ্চাগুলো মুরগির বাচ্চার মতই মায়ের সাথে ঘুরে ঘুরে খাবার খায়। বিপদ দেখলেই মায়ের ডানার নিচে এসে লুকায়। ছোট বাচ্চারা মুরগির বাচ্চার মতই মায়ের পালকের আড়ালে, আবার কখনোবা পিঠের উপর লাফিয়ে ওঠে।

স্ত্রী ময়ূরকে আকৃষ্ট করার জন্য পুরুষ ময়ূর পেখম তোলে। এ কারণেই এরা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। তবে ভারতীয় ময়ূরের মত সাদা ময়ূরের পেখমে সোনালী পালক বা নীল রংয়ের বড় ফোঁটা নেই। সাদা ময়ূর সম্পূর্ণ সাদা। স্ত্রী ময়ূরও পেখম তোলে তবে তা শত্রুকে ভয় দেখানোর জন্য। স্ত্রী ময়ূরের পেখম আকারে অনেক ছোট।

 ময়ূর বন্য পাখি এবং মাটির গর্তে বাস করে কিন্তু গাছে বিশ্রাম করে।এরা টিরেস্ট্রিয়াল খাদক শ্রেণীর অন্তরভুক্ত। এটা বিশ্বাস করা হয় যে ময়ূরের সকল প্রজাতি পলিগামাস। সাধারনত শত্রুর কাছ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য Galliformes বর্গের প্রাণীদের মত এরাও এদের মেটাটারসাল (পায়ের নখর) ব্যাবহার করে।

হুগলী জেলার বান্ডেল এর কাছে দেবানন্দপুর ,রাজহাট হুগলির রাজহাট পঞ্চায়েত এলাকা দিয়ে প্রবাহিত কুন্তী নদী। নদীটি ত্রিবেণীর কাছে গঙ্গা থেকে বেরিয়েছে। বরাবর এই নদীতে জোয়ার-ভাটা খেলে। রাজহাটে কুন্তী নদীর উপরে সেতুটির পাশে একটি ঘাট আছে। গঙ্গার জল বলে এখানেও বহু মানুষ পুণ্যস্নানে আসেন। কিছু দিন আগে ঘাটটির সংস্কার হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, ত্রিবেণী থেকে সুগন্ধা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীপথ কচুরিপানা ও জলজ উদ্ভিদে ভরে গিয়েছে। ফলে, একদা স্রোতস্বিনী নদীতে এখন জলই দেখা যায় না।
 বদ্ধ নদীর জল দুর্গন্ধময় এবং দূষিত।দীর্ঘদিন ধরে এই কুন্তী নদীর পার বরাবর ময়ুর এর আস্তানা , নদী  ও অন্যান্য দূষণের জন্য এখন সংখ্যায় অনেক কমে গেলেও কিছু আছে।  ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা ও যায়।
 ময়ুর চিরকালই সৌন্দর্যের প্রতীক ,বিভিন্ন সুন্দর জিনিস ময়ুর আর নামে নামকরণ করা হয়েছে , সম্রাট শাহজাহান নির্মিত ময়ুর সিংহাসন ,ময়ুরপঙ্খী নাও ইত্যাদি। বিভিন্ন কারণে খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে আমাদের এই সুন্দর জাতীয় পাখিটি।
তথ্য সহায়তা ও চিত্র :- গুগল সৌজন্যে

নয়নতারা (Noyontara)




নয়নতারা (Noyontara)


নয়নতারা গাছের আদি জন্মস্থান আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত মাদাগাসকারা দ্বীপ। এটি ২-৩ ফুট উঁচু একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। তবে অনেকদিন বেঁচে থাকতেও দেখা যায়। পাতা বিপরীতমুখী, মসৃণ, আয়তকার ও অনেকটা ডিম্বাকার। ফুলে পাঁপড়ি ৫টি। সাধারণত গোলাপী ও সাদা বর্ণের ফুল হয়। সারা বছর ফুল ও ফল হয়। ফল অনেকটা সরিষা শুঁকিয়ে (ফল) মত হয়। তবে একটু মোটা ও খাটো। ভিতরে অনেক বীজ থাকে। তিতা স্বাদের জন্য গরু-ছাগল এই গাছ খায় না।
ভেজষ গাছ হিসাবে নয়নতারা বিশেষ পরিচিতি আছে। এই গাছের নিস্কাষিত রস হতে তৈরী ঔসধ আগে আফ্রিকাতে ডায়াবেটিকস রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হতো।এতে কিছু এলকালয়েড আছে যা বর্তমান যুগে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

অন্যাণ্য স্থানীয় নামঃ Cape periwinkle, Madagascar periwinkle, periwinkle, sadabahar, sadaphuli, sadasuhagi, sadsuhagan
বৈজ্ঞানিক নামঃ Vinca rosea
পরিবারঃ Apocynaceae (dogbane, or oleander family)

সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

হিজল গাছ



"এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে— সবচেয়ে সুন্দর করুণ:
সেখানে সবুজ ডাঙা ভ’রে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল;
সেখানে গাছের নাম : কাঁঠাল, অশ্বথ, বট, জারুল, হিজল;
সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ"
— জীবনানন্দ দাশ
 
  ফুলের নাম- হিজল
বৈজ্ঞানিক নাম- Barringtonia acutangula
পরিবার- Lecythidaceae
মাঝারি আকারের ডালপালা ছড়ানো দীর্ঘজীবী গাছ। সংস্কৃত নাম নিচুল। এ ছাড়া জলন্ত, নদীক্রান্ত নামেও হিজল গাছ পরিচিত।
বাকল ঘন ছাই রঙের ও পুরু। হিজলের বিষাক্ত অংশ হলো ফল, যা মারাত্মক বমনকারক। হিজল গাছের আদি নিবাস দক্ষিণ এশিয়া, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। সাধারণত জলজ, কাদা-মাটিতে  এই গাছ জন্মায় । বীজ থেকে গাছ হয়। উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ মিটার। হালকা গোলাপি রঙের ১০-১২ সেমি লম্বা পুষ্পদণ্ডের মাঝে অসংখ্য ফুল ঝুলন্ত অবস্থায় ফোটে। গভীর রাতে ফুল ফোটে, সকালে ঝরে যায়। ফুলে একধরনের মিষ্টি মাদকতাময় গন্ধ আছে।


 'Life isn't about waiting for the storm to pass...It's about learning to dance in the rain.'-Vivian Greene


হিজল গাছের প্রাণশক্তি প্রবল। বন্যার জল  কিংবা তীব্র খরাতেও টিকে থাকে। এমনকি জলের  নিচে কয়েক মাস নিমজ্জিত থাকলেও হিজলগাছ বেঁচে থাকে। তাই সুন্দরবনের  হাওর অঞ্চলে এ গাছের ডাল মাছের অভয়রাণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত  হয়।
তথ্যসূত্র- উইকিপিডিয়া
ছবি-গুগল সৌজন্যে 

মধুমঞ্জরী লতা, মধুমালতী, মাধুরীলতা

"স্মরণচিহ্ন কত যাবে উন্মুলে মোর দেয়া নাম লেখা থাক ওর ফুলে মধুমঞ্জরীলতা"
                                                                               -----রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ছবি :-দেবাশীষ চ্যাটার্জী 



এই ফুলের নাম নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি। এই ফুল একেক জনের কাছে একেক নামে পরিচিত। সবচেয়ে প্রচলিত ভুলটি হচ্ছে আমরা একে মাধবীলতা নামে ডাকি। আসলে এর কোনো বাংলা নাম ছিলো না। শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ মধুমঞ্জরী লতা নাম দিয়ে গাছটিকে আপন করে নিলেন।
"স্মরণচিহ্ন কত যাবে উন্মুলে মোর দেয়া নাম লেখা থাক ওর ফুলে মধুমঞ্জরীলতা"
এর অপূর্ব রূপ আর 'মধুগন্ধেভরা ' প্রাণ আমার বড়ো প্রিয়।
ফুলের নাম- মধুমঞ্জরী লতা, মধুমালতী, মাধুরীলতা
বৈজ্ঞানিক নাম- Quisqualis indica
ছবি:- শ্রী মুখার্জী 

 অন্যান্য নাম- রঙ্গন কা বেল, রেঙ্গুন ক্রিপার মালয়শীয় প্রজাতি। কাষ্ঠলতা, পত্রমোচী। বাড়ির ফটক বা ঘরের উপর বেশ জাকিয়ে বসে। শীতে পাতা কমে যায়। সাদা ও লাল থোকা থোকা ফুল। পাপড়ির নলটি বেশ লম্বা। বছরে কয়েক দফা ফুল ফোটে। ঘন সবুজ পাতার মাঝখানে ঝুলন্ত সাদা-লাল ফুল সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সন্ধ্যায় নতুন ফুল ফোটে আর হালকা সুবাস ছড়ায়।

এই বন্য-সুন্দরী বিশেষ যত্নের প্রত্যাশী নয় ,সন্ধ্যার মুখে সাদা রঙের ফুল ফোটে ,পরদিন সকালে রোদের ছোঁয়া পেতেই লাল হয়ে যায়। একই থোকায় আগের দিনের ফোটা লাল ফুল আর সদ্য ফোটা সাদা ফুল মৃদু সুবাস ছড়িয়ে যেন বলতে থাকে ,"ভালোবাসি ভালোবাসি "
তথ্য সহায়তা :-গুগল
 

ম্যাগনোলিয়া গ্রান্ডিফ্লোরা\ উদয়পদ্ম

আর এক স্নিগ্ধ-শীতল সুন্দরীর কথা বলি।  অবশ্য ইনি ও বিদেশিনী , মার্কিন সুন্দরী , স্নিগ্ধ নির্মল সৌন্দর্য্য ও মিষ্টি হাসিতে বাঙালীর মন জয় করেছেন , আমাদের আদরের নাম হিমচাঁপা। 

গ্রীষ্মের কড়া রোদ্দুরে প্রকৃতির নিষ্প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে নির্মল হেসে ওঠে হিমচাঁপা। দুঃসহ উত্তাপে একটুকু ‘হিম’ যেমন পরম আশীর্বাদরূপে প্রতিভাত, তেমনি হিমচাঁপার দর্শনও যে কারও মনে জাগিয়ে তোলে স্নিগ্ধ-শীতল অনুভূতি।


কালচে সবুজ পাতার কোলে দৃষ্টিনন্দন সাদা ফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ হওয়ার মতো। ডুলিচাঁপা (Magnolia pterocarpa) আমাদের দেশের বুনো ম্যাগনোলিয়া আর হিমচাঁপা ভিনদেশি ম্যাগনোলিয়ার মধ্যে অন্যতম। কবিগুরু তাকে ডেকেছেন ‘উদয়পদ্ম’ নামে। 



ছয় থেকে বারোটি পাপড়িতে বিন্যস্ত বৃহৎ সাদা ফুলে কিছুটা লেবুর সুগন্ধ। ঘন সন্নিবেশিত পাপড়িতে হিমচাঁপার প্রথম প্রস্ফুটন অপূর্ব, মনোরম। তাই এর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনার সতর্ক দৃষ্টি থাকতে হবে গাছের দিকে। সাত-সকালে সদ্য ফোটা উদয়পদ্ম দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপড়িগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং মলিন হয়ে যায়। হিমচাঁপা চিরসবুজ গাছ। সারা বছরব্যাপী পাতা ঝরে ও নতুন পাতা গজায়। কালচে সবুজ পাতাগুলো বড়-লম্বাটে, বিন্যাসে একক ও আয়তাকার। শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ হিসেবে আমেরিকাসহ ইউরোপ-এশিয়ার নানা দেশে হিমচাঁপা বেশ জনপ্রিয়। আমাদের উদ্যানেও এটি জায়গা করে নিয়েছে।

এরা মূলত আমেরিকার ফ্লোরিডা ও টেক্সাসের প্রজাতি। আদি জন্মস্থানে গাছ বড় হলেও আমাদের দেশে ৬ থেকে ১০ মিটার উঁচু হয়। গাছের গড়ন হালকা ও কিছুটা লম্বাটে। বসন্তের শেষভাগে ছোট ডালের মাথায় কলি ধরতে শুরু করে। হিমচাঁপার ফল ডিম্বাকার। কিছুটা গোলাপি রঙের, ৮ থেকে ১০ সেমি লম্বা। ফল বীজে পরিপূর্ণ। বীজ পাখিদের প্রিয়, পাখি ও অন্যান্য প্রাণির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বংশবৃদ্ধি সাধারণত কলম ও দাবা কলমের মাধ্যমে। লবণাক্ত মাটি, বায়ুপূর্ণ সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাতেও এটি ভালো হয়।



হিমচাঁপার বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনোলিয়া গ্রান্ডিফ্লোরা (Magnolia grandiflora)। নামের দ্বিতীয়াংশের উৎপত্তি ল্যাটিন grandis থেকে যার অর্থ বড় আর flora মানে ফ্লাওয়ার বা ফুল। ফুলের আকারের জন্য এমন নাম হতে পারে। হিমচাঁপা গাছের কাঠ ভারী ও শক্ত। আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য। আমেরিকার গৃহ যুদ্ধকালে কনফেডারেট আর্মি হিমচাঁপাকে তাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে।

তথ্য ও ছবি :-গুগল সৌজ্যনে 

মিনজিরি

মিনজিরি একটি ফুলের নাম। এর অন্যান্য নামের মধ্যে Siamese Senna, Siamese cassia, Seemia, Kassod উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক নাম Senna siamea এটি Caesalpiniaceae (Gulmohar family) পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটি লম্বায় প্রায় ১৫-২০ মিটার হয়ে থাকে। এর আদি নিবাস ধরা হয় বার্মা, ইন্ডিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়াকে। মাঝারি আকারের, ১২ থেকে ১৪ মিটার উঁচু হয়। চিরসবুজ গাছ। গ্রীষ্ম থেকে শীত পর্যন্ত ফুল হয়। শরতে বেশি হয়। ডালের আগায় হলুদ ফুলের বড় বড় থোকা থাকে। গাছটি ভঙ্গুর। বৃষ্টি বাতাসে ভেঙ্গে যায়।

পুন্নাগ\সুলতান চাঁপা


এই ফুলটির বাংলা নাম পুন্নাগ । আরেকটি নাম হলো সুলতান চাঁপা। এটি একটি চির সবুজ বৃক্ষ। ৮ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর বৈজ্ঞানিক নামঃ Calophyllum inophyllum এবং অন্যান্য নামের মধ্যে Beauty Leaf, Alexandrian laurel, Sultan Champa উল্লেখযোগ্য।

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর

লজ্জাবতী

লাজে রাঙ্গা হল কনে বউ গো,................
ছোটবেলায় আমাদের বাগানের পিছনের মাঠে অনেক লজ্জাবতী লতা গাছ ছিল , দুপুরবেলা লুকিয়ে বাগানে গিয়ে লজ্জাবতীদের লজ্জা দেওয়াতে ছিল ভারী মজা।  কাঁটা গাছে ছোট ছোট তুলোর বলের মতো ফুল ফুটতো , সাদা আর হালকা লাল।  ওদের লজ্জা দিতে গিয়ে কত কাঁটার খোঁচা যে খেয়েছি, তার ঠিক নেই। মাঝে মাঝে বড় মন খারাপ করে ওদের জন্য।


লজ্জাবতী কোনো মেয়েকে দেখলে আমরা অনেকেই সোহাগভরা কণ্ঠে বলে থাকি_ লজ্জাবতী লতা। কিন্তু মানুষের মতো গাছও যে লজ্জা পেতে পারে_ এ কথা হঠাৎ শুনলে বিস্মিত হলেও আমরা অনেকেই এ গাছটির সঙ্গে পরিচিত। সামান্য স্পর্শ পেলে নববধূূর মতো নেতিয়ে পড়ে এ গাছটি। ছোট গুল্মজাতীয় গাছটির নাম লজ্জাবতী। এর পাতা স্পর্শ করলেই আশ্চর্যজনকভাবে তা বন্ধ হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ পর আবার আগের অবস্থায় ফিরে সতেজ হয়ে ওঠে। অত্যন্ত দ্রুত অনুভূতিসম্পন্ন এ গাছ। 

লজ্জাবতীর বোটানিক্যাল বা বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ‘মিমোসা পুডিকা’। আদি নিবাস মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে। তবে বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সবখানেই এ গাছ ছড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে গাছটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। এটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। কাণ্ড খাড়া, শাখান্বিত এবং ছোট ছোট কাঁটা আছে। সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে এ গাছে ছোট ও গোলাকার ফুল ফোটে। ফুলের রঙ হয় গোলাপি ও সাদা। গাছের পাতাগুলো দেখতে ছোট এবং রঙ গাঢ় সবুজ। গাছটি দেড় থেকে দু’ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। 

বহু প্রাচীনকাল থেকেই লজ্জাবতী গাছ অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। কাঁচা গাছ বেটে শরীরে লাগালে লাবণ্য ফিরে আসে। গাছ শুকিয়ে গুঁড়া করে ১০ গ্রাম গুঁড়া দু’কাপ জলের  সঙ্গে মিশিয়ে ১৫ দিন সেবন করলে চর্মরোগ সেরে যায়। গাছের শিকড় বেটে দুধ ও জলের  সঙ্গে মিশিয়ে সেবন করলে অর্শ্বরোগে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া কুষ্ঠ, বসন্ত, একশিরা, ভগন্দর ও পাণ্ডু রোগ নিরাময়েও লজ্জাবতীর রয়েছে বিরাট অবদান।
বেশিরভাগ মানুষের কাছে এ গাছ কাঁটাওয়ালা আগাছা হিসেবে পরিচিত হলেও থাই লজ্জাবতী গাছকে কাজে লাগিয়ে এখন জৈব সারও তৈরি করা হচ্ছে। এ সার ফসলের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। এতে রয়েছে নাইট্রোজেন ২.০৩ থেকে ২.০৬, ফসফরাস ০.১৭৫ থেকে ০.২৩, পটাশিয়াম ১.২৩৭ থেকে ১.৭৪১ ভাগ। লজ্জাবতী গাছের শিকড়ে জন্মানো লালচে রঙের গুটি বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সঞ্চয় করে আম বাগানের মাটিতে সরবরাহ করা হয়। এটি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। থাইল্যান্ডে ভুট্টার জমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণে এভাবেই লজ্জাবতী গাছ লাগানো হয় এবং মাটির উর্বরতা ঠিক রাখা হয়।
আমাদের গ্রামগঞ্জে বাড়ির আনাচে-কানাচে একসময় প্রচুর দেখা যেত এ গাছ। বর্তমানে বাসস্থানের প্রয়োজনে ও বন ধ্বংসের কারণে অসংখ্য প্রজাতির গাছপালার সঙ্গে এ লজ্জাবতী গাছটিও হারিয়ে যেতে বসেছে।
তথ্য সহায়তা ও ছবি :-গুগল সৌজন্যে

নীলমণি লতা

পুজো এসে গেছে , বাতাসে মর্তের পারিজাত শিউলি ফুলের গন্ধ,........বড়ো ফাঁকা লাগছে , সব আছে তবু কি যেন নেই ,কে যেন নেই ,....... আমার গাড়ীটা গ্যারেজে দিয়েছি, ধোয়া-মোছা করার খুব দরকার, গ্যারেজের পিছন দিকে  গাছের ছায়ায় কাজ চলছে, আমি পায়ে পায়ে দেখতে গেলাম,বড়ো সুন্দর পরিবেশ,একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে কাজ চলছে, কানে আসছে  মৌটুসী পাখির কিচির মিচির ডাক। চারদিকে কত বুনো গাছ,লতা পাতা ,তারমধ্যে একজন কে দেখে চমকে উঠলাম ,........! বুনো লতা পাতার মধ্যে অযত্নে অবহেলায় ফুটে রয়েছে নীলমণিলতা।

  এই মার্কিনী সুন্দরীর তো এখানে থাকার কথা নয় ,.....! সময় ও নয় ,এখন তো সবে শরৎ ,এখনই ফাল্গুনমাধুরী,.....!!! যাই হোক সুন্দরীর দেখা যখন পেলাম, 'বুকের ভিতর বসন্ত-উৎসব।  মনে মনে গেয়ে  উঠলাম ,.......................
"ফাল্গুনমাধুরী তার চরণের মঞ্জীরে মঞ্জীরে
নীলমণিমঞ্জরির গুঞ্জন বাজায়ে দিল কি রে।
আকাশ যে মৌনভার
বহিতে পারে না আর,
নীলিমাবন্যায় শূন্যে উচ্ছলে অনন্ত ব্যাকুলতা,
তারি ধারা পুষ্পপাত্রে ভরি নীল নীলমণি লতা। "

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে এভাবেই ধরা দিয়েছে অপরূপ রূপসী ফুল নীলমণি লতা।  সত্যিই নীলমণি লতা অত্যন্ত সুন্দর স্নিগ্ধ একটি ফুল।
শান্তিনিকেতনের উত্তরায়নের কোণে রবীন্দ্রনাথের বাড়ির আঙিনায় একটি বিদেশি চারা রোপণ করেছিলেন কবির বন্ধু পিয়ার্সন। অনেকদিন পর সে গাছকে সুসজ্জিত করে ফোটে নীলচে বেগুনি রঙের ফুল। তার নীলাভ শোভা আর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তার নাম দেন নীলমণি লতা। তারপর ফুলটিকে নিয়ে লেখেন একটি গান।

নীলমণি লতা খুব আকর্ষণীয় একটি ফুল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Petrea volubilis, পরিবার ভার্বেনেসি। ইংরেজি নাম Blue Bird Vine, Purple Wreath, Queen’s Wreath, Sand paper Vine । ফুলটির নামকরণ করা হয়েছে আঠার শতকের বিশিষ্ট উদ্ভিদ সংগ্রাহক রবার্ট জেমস পিটারের নাম থেকে।
নীলমণি লতার কথা স্পেনের অনেক লোককাহিনী ও উপকথায় পাওয়া যায়। পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায় এটি অনেক সাধু-সন্ন্যাসীদের আশ্রমেও ছিল।
নীলমণি লতা মূলত উত্তর আমেরিকার ফুল। লতানো গাছ নীলমণি লতার। শাখার অগ্রভাগে গুচ্ছাকারে ফুল ফোটে। ফুলটি তারার মতো দেখতে। পাপড়ি রয়েছে পাঁচটি। পাপড়িগুলোর নিচেই থাকে হালকা নীল রঙের পাঁচটি বৃন্ত।
প্রতিটি পুষ্পমঞ্জরিতে থাকে ১৫-৩০টি করে ফুল। পাপড়ির গোড়া একটা খাটো নলের সঙ্গে যুক্ত। ফুল ফোটার পর ঝরে যায় দ্রুত। ফুল থেকে ফল হয়। ফল হয় শক্ত, শাঁস কম। গাছ লম্বা হয় ১৩ মিটার পর্যন্ত। অনেক লতা একসঙ্গে জড়াজড়ি করে তৈরি করে ঝোপ।
নীলমণি লতা সারা বছরই ফোটে। তবে বসন্তে সবটুকু উজাড় করে মেলে ধরে নিজেকে। শীতকালে ফুলটি খানিকটা গুটিয়ে নেয় নিজেকে। শীতে তাই তার দেখা মেলে অল্পস্বল্প। মূলত মার্চ-এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত প্রকৃতিকে রূপের ছটায় সুশোভিত করে ফোটে নীলমণি লতা।


বিশ্বে ১৩০ প্রজাতির নীলমণি লতা রয়েছে। বাংলা নাম নীলমণি হলেও ফুলটি কিন্তু সাদা রঙেরও হয়। তবে আমাদের দেশে সাদা ফুলটি পাওয়া যায় না বললেই চলে। নীল রঙের ফুলটি নীলাভ হলেও বেগুনি রঙের ছোঁয়া আছে তাতে। নীল-বেগুনির মিশেলে অন্যরকম এই রঙের খেলাই ফুলটিকে এত বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে।


নীলমণির পাতা লম্বায় ৬-২১ সেন্টিমিটার এবং চওড়ায় ২-১১ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। পাতার রং হালকা সবুজ। পাতা হয় খসখসে। কখনো কখনো শিরা বরাবর ঢেউ খেলানো। পাতার আকৃতি উপবৃত্তকার। সামনের দিক আস্তে আস্তে সরু কিন্তু ভোঁতা হয়ে আসে। নীলমণি লতার বংশবিস্তার হয় কলমের মাধ্যমে। ফুলটির ঘ্রাণ আছে, তবে তা একদমই হালকা।
রবীন্দ্রনাথের প্রিয় একটি ফুল ছিল নীলমণি লতা। দেখতে সে সত্যিই ভারি মিষ্টি। শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত আমরা আজ আর প্রকৃতির দিকে ফিরে তাকানোর সময় পাই না। তবে নীলমণি লতার দিকে একবার তাকালে যে কেউই উপলব্ধি করতে বাধ্য, প্রকৃতির কী বিচিত্র সৌন্দর্য সম্ভার থেকে নিজেদের বঞ্চিত করি আমরা।




রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

শিউলী


কাঞ্চন ফুল

“ ফাল্গুনে বিকশিত
কাঞ্চন ফুল ,
ডালে ডালে পুঞ্জিত
আম্রমুকুল ।
চঞ্চল মৌমাছি
গুঞ্জরি গায় ,
বেণুবনে মর্মরে
দক্ষিণবায় ”'

 



এই ফুলটার বাংলায় নাম কাঞ্চন। অন্যান্য নামের মধ্যে Dwarf White orchid tree, Dwarf white bauhinia ,Safed Kachnar ,Chingthrao angouba ,Vellai mandaarai , Mandaaram ,Kanchan , Mati-katota ,Sivamalli উল্লেখযোগ্য।
বৈজ্ঞানিক নামঃ Bauhinia acuminata এটি Caesalpiniaceae (Gulmohar family) পরিবারের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ ।

আমাদের দেশীয় ফুল কাঞ্চনের নাম জানে না বা শুনেনি এমন মানুষ হয়ত খুজে পাওয়া মুশকিল। দেবকাঞ্চন আর রক্তকাঞ্চন দেখতে প্রায় একই রকম হওয়ায় এদের আলাদা করতে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়।
রক্তকাঞ্চন আর দেবকাঞ্চন ফুল আর গাছের পার্থক্য করা বেশ ঝামেলার। শুধু গাছ বা পাতা দেখে চেনা একটু মুশকিলই বটে। দুটি গাছে পাতা দেখতে প্রায় একই রকম। তারপরেও কিছু পার্থক্য গাছে আছে।আর এক প্রকার কাঞ্চন হলো শ্বেতকাঞ্চণ।

 


*দেবকাঞ্চন গাছের পাতা বড়, রক্তকাঞ্চনের পাতা তারচেয়ে ছোট।
*দেবকাঞ্চন গাছ রক্তকাঞ্চনের চেয়ে বড় হয়।
*রক্তকাঞ্চন গাছ বেশি দেখা যায়, দেবকাঞ্চন তেমন দেখা যায় না। নার্সারী বা রোড আইল্যান্ডে ছেঁটে ছোট করে রাখতে দেখা যায় রক্তকাঞ্চনকে কিন্তু দেবকাঞ্চন খুব বেশি চোখে পড়ে না।
*দেবকাঞ্চন ফুল ফোঁটে হেমন্তে আর রক্তকাঞ্চন বসন্তের ফুল।
*ফুলের পার্থক্য হচ্ছে- দেবকাঞ্চন ফুল অসমান, লম্বাটে পাপড়ির। আর রক্তকাঞ্চন ফুল পাপড়ি প্রশস্থ, ৫ পাপড়ির মধ্যে একটি বড় ও গাঢ় রঙের, তাতে কারুকাজ করা।
  নোটে দেবকাঞ্চন, রক্তকাঞ্চন আর শ্বেতকাঞ্চন ফুলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো-ফুলের নাম- দেবকাঞ্চন
বৈজ্ঞানিক নাম- Bauhinia purpureaপরিবার- Casesalpinaceaeঅন্যান্য নাম- Butterfly tree, Pink butterfly tree, Purple bauhinia, Purple butterfly tree, Purple orchid tree দেবকাঞ্চনদেবকাঞ্চন
হিমালয়ের পাদদেশে ও আসামের পাহাড়ের প্রজাতি। মাঝারী আকারের অর্ধ-চিরসবুজ গাছ, ৮-১০মি উঁচু, মাথা ছড়ান। পাতা মাথার দিকে ২-বিভক্ত, লতির আগা চোখা বা ভোতা। ফুল ৬-৮ সেমি চওড়া, সুগন্ধি, সাদা বা বেগুনি। ফুল কয়েকটি একত্র, একটি ডাঁটায়, ফোটে হেমন্তে, সারা গাছ ভরে, অসমান ও লম্বাটে ৫ টি পাপড়ি, মুক্ত। শুঁটি ১০-৩০*২ সেমি, শিমের মতো। বীজ ১২-১৬ টি। চৈত্রমাসে নিষ্পত্রগাছে ঝুলন্ত ফলগুলি সশব্দে ফেটে বীজ ছড়ায়। বীজে চাষ। ফুলের নাম- রক্তকাঞ্চনবৈজ্ঞানিক নাম- Bauhinia variegataপরিবার- Casesalpinaceaeঅন্যান্য নাম- Orchid Tree, Varigated Bauhinia • হিন্দি: Kachnar कचनारরক্তকাঞ্চনরক্তকাঞ্চনভারতীয় প্রজাতি। দেবকাঞ্চনের চেয়ে আকারে ছোট, পাতার গড়ন তদ্রুপ, অর্থাৎ আগার দিকে ২-বিভক্ত, আকারে ছোট। বসন্তে প্রায় নিষ্পত্র গাছ বেগুনি রঙের সুগন্ধি ফুলে ছেয়ে থাকে। ৫ পাপড়ির মধ্যে একটি বড় ও গাঢ় রঙের, তাতে কারুকার্য। ফল শিমের মতো। একটি সাদা ফুলের প্রকারও আছে, ভারি সুন্দর। বীজে চাষ। কলমেও ধরে।

 

শ্বেতকাঞ্চন ( Dwarf White Bauhinia, White Orchid-tree and Snowy Orchid-tree) (বৈজ্ঞানিক নাম: Bauhinia acuminata) হচ্ছে Fabaceae পরিবারের একটি গুল্ম প্রজাতি। এদের বিস্তৃত চাষাবাদের জন্য আদি নিবাস বোঝা না গেলেও মনে করা হয় এরা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া (জাভা, বোর্নিও, Kalimantan, Lesser Sunda Islands), এবং ফিলিপাইন থেকে এসেছে। শ্বেতকাঞ্চন ৩ মিটার পর্যন্ত উচু পত্রমোচী গাছ। পাতা ১০-১৫ সেমি দীর্ঘ এবং ৭-১২ সেমি প্রস্থ। পাতার আগা দুই ভাগে বিভক্ত, মসৃণ, নিচের শিরা সামান্য রোমশ। বসন্তের শেষ থেকে শরত পর্যন্ত ফুল হয়। পাতার কক্ষের একটি থোকায় কয়েকটি ফোটে, সাদা, গন্ধহীন, ৫ সেমি চওড়া, পাপড়ি সংখ্যা পাঁচটি এবং পাপড়ি মুক্ত। শুঁটি শিমের মতো চ্যাপ্টা, বিদারী ও ধুসর। বীজ কয়েকটি। বীজে চাষ। ছেঁটে ছেঁটে রাখা যায়।

 

এই প্রজাতির কাঞ্চন সাদা ছাড়াও ঘিয়ে রঙের হয়ে থাকে। ওঙ্কার ধামে এই দুই প্রজাতিরই  কাঞ্চন আছে। 

তথ্যসূত্র ও ছবি :-গুগল সৌজন্যে