বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

চা (ক্যামেলিয়া সিনেনসিস) এর কথা

চা (ইংরেজি: Tea) বলতে সচরাচর সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট এক ধরণের উষ্ণ পানীয়কে বোঝায় যা চা পাতা জলে ফুটিয়ে বা গরম জলে  ভিজিয়ে তৈরী করা হয়। চা গাছ থেকে চা পাতা পাওয়া যায়। চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। 'চা পাতা' কার্যত চা গাছের পাতা, পর্ব ও মুকুলের একটি কৃষিজাত পণ্য যা বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করাহয়।
চায়ের ইতিহাস পৃথিবীতে যত রকম পানীয় আছে তার মধ্যে জলের  পরই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় চা। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার ধরনে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। তবে এসব ব্যবধানকে বহু আগেই অতিক্রম করেছে চা নামক এ পানীয়টি। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষের কাছে এক কাপ চা প্রশান্তির সমার্থক হিসেবে খ্যাত। জনপ্রিয় এ পানীয়টির ইতিহাস যতটা দীর্ঘ ঠিক ততটা জটিলও। বিভিন্ন সভ্যতার বিভিন্ন সংস্কৃতিতে চা পানের প্রথা ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগে কয়েক হাজার বছর। ধারণা করা হয়, ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১০৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী কোনো এক সময় শাংদের রাজত্বকালে ঔষধি পানীয় হিসেবে চীনে প্রথম উৎপত্তি লাভ করে চা। তবে চা পানের প্রথম বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় হুয়া তো-এর একটি লেখায়। ওই লেখা অনুসারে খ্রিস্টাব্দের তৃতীয় শতাব্দীতে প্রথম চা পান করা হয়। এর অনেক পর ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজ পুরোহিত ও বণিকদের চায়ের সঙ্গে পরিচয় করে দেয় চীনারা। সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে ব্রিটেনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে চা। তত দিনে চায়ের রমরমা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে চীনারা। আর এ ব্যবসাতে ভাগ বসাতেই ভারতে চা নিয়ে আসে ব্রিটিশরা। পাশাপাশি চায়ের উৎপাদনেও কাজ শুরু করে তারা। চায়ের উৎপত্তি নিয়ে আরেকটি মজার গল্পও প্রচলিত আছে। ২৭৩৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে শেনাং নামের চীনের এক সম্রাট একটি নিয়ম করেছিলেন। নিয়মটি ছিল, প্রজাদের অবশ্যই জল  ফুটিয়ে পান করতে হবে। এ রকম এক সময় শেনাংয়ের জন্য যে জল  ফোটানো হচ্ছিল তাতে কিছু পাতা উড়ে এসে পড়ে। এতে জলের  রং পাল্টে যায়। আগ্রহের বশে সেই জল  পান করে মুগ্ধ হয়ে যান সম্রাট শেনাং। এ ধরনের আরো বেশ কিছু কাহিনী প্রচলিত আছে জনপ্রিয় এ পানীয়টির উৎপত্তি নিয়ে। তবে এসব কাহিনীর কোনোটিরই ঐতিহাসিক কোনো সত্যতা পাওয়া যায় না।

ইংরজিতে চা-এর প্রতিশব্দ হলো টি। গ্রীকদেবী থিয়ার নামানুসারে এর নাম হয় টি। চীনে ‘টি’-এর উচ্চারণ ছিল ‘চি’। পরে হয়ে যায় ‘চা’।
 চা  এর একধরণের স্নিগ্ধ, প্রশান্তিদায়ক স্বাদ রয়েছে এবং অনেকেই এটি উপভোগ করে। প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া অনুসারে চা-কে পাঁচটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন - কালো চা, সবুজ চা, ইষ্টক চা, উলং বা ওলোং চা এবং প্যারাগুয়ে চা। এছাড়াও, সাদা চা, হলুদ চা, পুয়ের চা-সহ আরো বিভিন্ন ধরণের চা রয়েছে। তবে সর্বাধিক পরিচিত ও ব্যবহৃত চা হল সাদা, সবুজ, উলং এবং কাল চা। প্রায় সবরকম চা-ই ক্যামেলিয়া সিনেনসিস থেকে তৈরি হলেও বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুতের কারণে এক এক ধরণের চা এক এক রকম স্বাদযুক্ত।
কিছু কিছু চায়ে ক্যামেলিয়া সিনেনসিস থাকে না। ভেষজ চা হল একধরণের নিষিক্ত পাতা, ফুল, লতা ও উদ্ভিদের অন্যান্য অংশ যাতে কোন ক্যামেলিয়া সিনেনসিস নেই। লাল চা সাধারণত কাল চা (কোরিয়া, চীন ও জাপানে ব্যবহৃত হয়) অথবা দক্ষিণ আফ্রিকার রুইবস গাছ থেকে তৈরি হয় এবং এতেও কোন ক্যামেলিয়া সিনেনসিস নেই।



চা মৌসুমী অঞ্চলের পার্বত্য ও উচ্চভূমির ফসল। একপ্রকার চিরহরিৎ বৃক্ষের পাতা শুকিয়ে চা প্রস্তুত করা হয়। চীন দেশই চায়ের আদি জন্মভূমি। বর্তমানে এটি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পানীয়রূপে গণ্য করা হয়।
১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। আর ভারতবর্ষে এর চাষ শুরু হয় ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা বাংলাদেশের সিলেটে  চায়ের গাছ খুঁজে পায়। এরপর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিক চা-চাষ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র বিশ্বে ৩৮,০০,০০০ টন চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে।


চা প্রধান কান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের ফসল হলেও উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলেও এটি কিছু কিছু চাষ করা যায়। প্রথম অবস্থায় পাহাড়ের ঢালু জমি পরিষ্কার করা হয়। এর চারা আলাদা বীজতলায় তৈরী করা হয়।
চারাগুলো যখন ২০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়, তখন সেগুলোকে চা-বাগানে সারিবদ্ধভাবে রোপণ করা হয়। সাধারণতঃ দেড় মিটার পরপর চারাগুলোকে রোপণ করা হয়ে থাকে। এরপর গাছগুলোকে বৃদ্ধির জন্য যথামাত্রায় সার প্রয়োগ ও জল সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। এভাবে দুই থেকে তিন বছর পরিচর্যার পর পাতা সংগ্রহের উপযোগী করে তোলা হয়। কিন্তু গাছগুলো পাঁচ বছর না হওয়া পর্যন্ত যথাযথভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। একটি চা গাছ গড়পড়তা ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত উৎপাদনের উপযোগী থাকে। তারপর পুণরায় নতুন গাছ রোপণ করতে হয়।প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এমন পাহাড়িয়া বা উচ্চ ঢালু জমি চা চাষের জন্য সবিশেষ উপযোগী। জল  নিষ্কাশনের বন্দোবস্ত থাকলে উচ্চ সমতল ভূমিতেও চা চাষ করা সম্ভবপর। হিউমাস সারযুক্ত এবং লৌহমিশ্রিত দো-আঁশ মাটি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু চা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। চা চাষের জন্য ১৭৫ - ২৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত আবশ্যক। এজন্য মৌসুমী ও নিরক্ষীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় চা চাষের উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে।


পৃথিবীতে আসাম এবং চীনজাতীয় - এ দুই প্রকারের চা গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে -
আসামজাতীয় চা গাছ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অধিক চাষ করা হয়। এ ধরণের গাছ বেশ বড় এবং বহু পাতাযুক্ত হয়। এটি বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ করার জন্যে বিশেষ উপযোগী। এ গাছ প্রায় ৬ মিটার বা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতার নাগাল পাওয়া এবং পাতা সংগ্রহের জন্য গাছগুলোকে ১.২ মিটার বা ৪ ফুটের অধিক বড় হতে দেয়া হয় না। ছেঁটে দেয়ার ফলে চা গাছগুলো ঘণঝোঁপে পরিণত হয়।
অন্যদিকে চীনজাতীয় গাছ আকারে বেশ ছোট হয়। এতে পাতার সংখ্যাও অনেক কম থাকে। এ গাছ না ছাঁটলেও পাতা তোলার মতো উচ্চতাসম্পন্ন হয়ে থাকে।
 চা গাছ রোপণ, আগাছা পরিস্কারকরণ, সার প্রয়োগ করা, গাছ ছাঁটা, কচি পাতা চয়ন করা, চা-পাতা শুকানো, সেঁকা, চা-প্যাকিং ইত্যাদি বহুবিধ ধরণের কর্মকাণ্ডে দক্ষ-অদক্ষ প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। পাতা চয়নের কাজে দক্ষ মহিলা শ্রমিক নিয়োজিত থাকে। বিষয়টি বেশ ধৈর্য্যের বিধায়, বাগান কর্তৃপক্ষ মহিলা শ্রমিকদেরকেই পাতা চয়নের জন্য নিয়োগ দিয়ে থাকে। এছাড়াও, চা চাষাবাদের জন্য প্রচুর জৈব ও রাসায়নিক সারসহ প্রয়োজনীয় কীটনাশক সরবরাহ করা হয়।


চীনজাতীয় গাছের পাতা স্বাদ ও গন্ধের জন্য সুখ্যাত। কিন্তু আসামজাতীয় গাছের পাতা রঙের জন্য বিখ্যাত। এই দুই ধরণের চা-পাতার উন্নত সংমিশ্রণের উপরই এর গুণাগুন নির্ভর করে। স্বভাবতঃই চা মিশ্রণ একটি নিপুণতা ও অত্যন্ত কঠিন কাজ। তাই এটি অভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা সম্পাদনা করতে হয়। এরূপভাবে চা মিশ্রণে নৈপুণ্যতা লাভের প্রেক্ষাপটে লিপটন, ব্রুকবণ্ড প্রভৃতি চা প্রস্তুতকারক কোম্পানীগুলো বিশ্ববাজার দখল ও খ্যাতি লাভ করেছে।
চা গাছ হতে পাতা সংগ্রহ করতে ব্যক্তিকে যথেষ্ট নৈপুণ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়। কারণ দু'টি পাতা ও একটি কুঁড়ি একসঙ্গে তুলতে না পারলে চায়ের উৎকর্ষ ও আমেজ অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে যায়। চীন ও জাপানে বছরে গড়পড়তা তিনবার চা-পাতা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় খুব ঘন ঘন পাতা সংগ্রহ করা যায়। এদেশগুলোতে বছরে গড়ে ষোল থেকে বিশ বার পর্যন্ত চা পাতা সংগ্রহ করতে দেখা যায়।


২০০৩ সালে বিশ্বে চা উৎপাদিত হয়েছিল ৩.২১ মিলিয়ন টন। ২০০৮ সালে বিশ্বের চা উৎপাদন ৪.৭৩ মিলিয়ন টনেরও বেশি হয়েছিল। সর্ববৃহৎ চা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে - গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, ভারত, কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং তুরস্ক অন্যতম।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক চা উৎপাদন (টন হিসেবে) নিম্নের ছকে দেখানো হলো। জানুয়ারি, ২০১১ সালে উপাত্তগুলো জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থার কাছ থেকে নেয়া হয়েছে -
নং দেশ ২০০৮ ২০০৯ ২০১০ ২০১১
 চীন ১২,৭৪,৯৮৪ ১৩,৭৫,৭৮০ ১৪,৬৭,৪৬৭ ১৬,৪০,৩১০
 ভারত ৯,৮৭,০০০ ৯,৭২,৭০০ ৯,৯১,১৮০ ১০,৬৩,৫০০
 কেনিয়া ৩,৪৫,৮০০ ৩,১৪,১০০ ৩,৯৯,০০০ ৩,৭৭,৯১২
 শ্রীলঙ্কা ৩,১৮,৭০০ ২,৯০,০০০ ২,৮২,৩০০ ৩,২৭,৫০০
 তুরস্ক ১,৯৮,০৪৬ ১,৯৮,৬০১ ২,৩৫,০০০ ২,২১,৬০০
 ভিয়েতনাম ১,৭৩,৫০০ ১,৮৫,৭০০ ১,৯৮,৪৬৬ ২,০৬,৬০০
 ইরান ১,৬৫,৭১৭ ১,৬৫,৭১৭ ১,৬৫,৭১৭ ১,৬২,৫১৭
 ইন্দোনেশিয়া ১,৫০,৮৫১ ১,৪৬,৪৪০ ১,৫০,০০০ ১,৪২,৪০০
 আর্জেন্টিনা ৮০,১৪২ ৭১,৭১৫ ৮৮,৫৭৪ ৯৬,৫৭২
১০  জাপান ৯৬,৫০০ ৮৬,০০০ ৮৫,০০০ ৮২,১০০
সর্বমোট বিশ্বে ৪২,১১,৩৯৭ ৪২,৪২,২৮০ ৪৫,১৮,০৬০ ৪৩,২১,০১১
 ২০১০ সালে পাকিস্তানের কায়দে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোবিজ্ঞানীরা ব্যবহৃত চায়ের পাতা থেকে জৈব জ্বালানি তৈরির একটি উপায় বের করেছেন। তাঁরা এ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ফেলে দেয়া চা পাতা থেকে গ্যাসিফিকেশন পদ্ধতিতে ২৮% হাইড্রোকার্বন গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব। এই গ্যাস কয়লার মতোই সরাসরি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। তবে অন্যান্য গবেষকদের মতে এ উপায়ে জৈব জ্বালানি তৈরির খরচ অনেক বেশি।

 দার্জিলিং পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে ক্যামেলিয়ার কোমল কুঁড়ি দিয়ে উৎপাদিত হয় বিশ্ববিখ্যাত দার্জিলিং-চা। চা-শিল্প বিকাশের শুরু হতে আজ পর্যন্ত অনেক গবেষণা, অনেক প্রতিযোগিতা হয়েছে, কিন্তু দার্জিলিং চায়ের মতো চা তৈরি করা দূরে থাক, সৌরভে গুণগত উৎকর্ষতায় এর ধারে কাছেও আসতে পারেনি কোনো চা-উৎপাদনকারী। দার্জিলিং-চা আসলে এক ধরনের শ্যাম্পেন, এতে মাদকতা আছে। দু’চার দফায় পান করার পর আসক্তি জমে। কেন এতো সৌরভ, কেন এত মনকাড়া মনোরম আকর্ষণ ........!এ প্রশ্নের জবাব নেই। চায়ের বীজ,  সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ভূমির উচ্চতা  পাহাড়ের খাড়াই  বৃষ্টিপাত  সূর্যের তীব্রতা, মৃত্তিকার বুনন , মাটির অ¤তা  উর্বরতা  তাপমাত্রা  আকাশের পরিচ্ছন্নতা, মেঘের স্থায়িত্ব, বাতাসের গতি, অভিজ্ঞ শ্রমিক, যন্ত্রপাতি, ব্যবস্থাপনা প্রত্যেক উপাদানের উপর চা-বিশারদরা আলাদাভাবে গবেষণা করে দেখেছেন ফলাফল, nil । নিল মানে আকাশের নীল রঙ নয়, কালির আঁচড়ে অংকের অক্ষরে গোল গোল শূন্যতায় ভরা নিল (হরষ)। দার্জিলিং চায়ের আদলে চা তৈরির লক্ষ্যে চা-বৈজ্ঞানিকরা চীনা বীজ দিয়ে আসামের সমতলে চা উৎপাদন করেছেন। ফলাফল শূন্য। দার্জিলিং উপত্যকায় আসাম মনিপুরী হাইব্রিড বীজের চা আবাদ করেছেন, ফলাফল শূন্য। ভারতের, নীলগিরিতে, ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং, কেনিয়ার কেরিচো, চীনের উ-লাঙ অঞ্চলের সুউচ্চ পাহাড়ে চীনা জাতের চা আবাদ করে দেখেছেন, ফলাফল শূন্য।
অন্য সব উপাদান ঠিক রেখে খোদ দার্জিলিং বাগানে অর্থোডক্স মেশিনের স্থলে আধুনিক সিটিসি (পঃপ) মেশিনে চা উৎপাদন করে দেখেছেন, কিন্তু সেই সৌরভ, সেই এ্যরোমা অন্য কোথাও নেই। দার্জিলিং অঞ্চলের অভিজ্ঞ শ্রমিককে একই ব্যবস্থাপনায় ভিন্ন অঞ্চলের চা-বাগানে নিয়োগ করে অর্থোডক্স-চা উৎপাদন করা হলো, ফলাফল আবারও শূন্যতায় ভরা। আকাক্সক্ষায়িত সেই সৌরভ নেই কোথাও। সমূদ্রপৃষ্ঠ হতে ২০০০ মিটার উচ্চতায় চীনা বীজ দিয়ে দাজির্লিং চা-আবাদ হয়। ভারতের মোট উৎপাদনের ৩% চা দার্জিলিং-চা। দার্জিলিংয়ে মোট ৮৩টি চা-বাগানে ২০,০০০ হেক্টর জমিতে বছরে গড়ে ১২ মিলিয়ন (এক কোটি বিশ লক্ষ) কেজি দার্জিলিং-চা উৎপাদিত হয়।
শুধুমাত্র দার্জিলিং উপত্যকায় চীনা জাতের গাছ দিয়ে উঁচু পাহাড়ে চাষ করলে চয়নকৃত শারদীয় চয়নে (ধঁঃঁসহ ভষঁংয) সুমিষ্ট ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়। দার্জিলিং চা-বাগানে বিরামহীনভাবে সারা বছর পাতা চয়ন সম্ভব হয় না। শীতের মৌসুমে যখন পাতা সুপ্ত অবস্থায় থাকে তখন পাতা চয়ন বন্ধ থাকে। মার্চে ক্যামেলিয়া সাইনেনসিসের বুকে নতুন কুঁড়ি গজায়। শীতের শেষে মৌসুমের প্রথমে হালকা বৃষ্টির পর প্রথম ফ্লাস  কুঁড়ি চয়ন হয়। মে-জুনে দ্বিতীয় ফ্লাস। দ্বিতীয় চালানের চা সর্বোৎকৃষ্ট হয়। দার্জিলিংয়ে মধ্য জুন হতে মৌসুম শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এ-ভাবে চলে। এ-সময়ে আর্দ্রতা  বেশি থাকে। একই সময়ে দার্জিলিংয়ে ৩০০ সেন্টিমিটার থেকে ৫০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এ চা মান সম্পন্ন চা। অক্টোবর মাসে আরও এক দফা কুঁড়ি বের হয়। এই চা সর্বোৎকৃষ্ট চা। অক্টোবরে চয়নকৃত চা শারদীয় ফ্লাস  হিসাবে সুপরিচিত। দার্জিলিংয়ে প্রত্যেক চা-বাগানে নিজস্ব কারখানা আছে। সেখানে অর্থোডক্স পদ্ধতিতে চা উৎপাদিত হয়ে থাকে। যেন চায়ের সৌরভ যথাযথ অক্ষুণœ থাকে সেদিকে উৎপাদক সদা সর্তক। দার্জিলিং চায়ের লিকার  বাদামি কালো  হয়ে থাকে। অর্থোডক্স পদ্ধতিতে রুলিং টেবিলে মোচড়ানো সবুজ পাতার অধিকাংশই কুঁড়ি । লিকার হালকা সোনালি বর্ণের ভিন্নতর সৌরভের হয়।
ইউ.কে টি কাউন্সিল-এর বার্ষিক রির্পোট অনুযায়ী ইংল্যান্ডে আমদানিকৃত চায়ের ৮৬.৭% চা-ব্যাগ, ২.১% ইনস্ট্যান্ট চা এবং ১১.২% লিফ চা হিসাবে প্যাকিং হয়। ইংল্যান্ডে স্পেশাল চায়ের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ইংল্যান্ডে ৬০,০০,০০০ (ষাট লক্ষ) কেজি চা পান করে থাকে যা দার্জিলিং-চা হিসেবে বাজারে চালু রয়েছে। ইংল্যান্ড চা-বাজারে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা খ্যাতনামা চা-বাগানের চায়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। খাঁটি দার্জিলিং, খাঁটি আসাম, আল্-গ্রে, ব্রেকফাষ্ট চায়ের জন্য বিপুল সংখ্যক ক্রেতা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। হেরর্ল্ড, প্রতি ১২৫ গ্রাম ওজনের কৌটার মূল্যে ২৫ পাউন্ড । টাকার মূল্যে কেজি ২৫,০০০/- টাকা, স্বর্ণের দামে দাম।
তবে আশ্চর্যের বিষয়, দার্জিলিংয়ে উৎপাদিত চায়ের তুলনায় অনেক বেশি দার্জিলিং-চা শুধুমাত্র ইংল্যান্ডের বাজারে বিক্রয় হয়ে থাকে। ভারত সরকার দার্জিলিং চায়ের মান অক্ষুণ রাখার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিয়েছেন। টি-বোর্ড অব ইন্ডিয়া দার্জিলিং চায়ের জন্য একটি আধুনিক লোগো  তৈরি করেছেন, যাতে লেখা রয়েছে ১০০% দার্জিলিং চায়ের নিশ্চয়তা, গ্রেড, উৎপাদনের তারিখসহ যাবতীয় বিবরণ। ভারত সরকার আশা করেন দার্জিলিং চায়ের কৌটায় ভিন্ন গুণাবলীর চা দার্জিলিং-নামে বাজারজাতকরণের প্রচলন এতে ধীরে ধীরে কমে আসবে।
ইংল্যান্ড ব্যবসায়ীদের আরও একটি প্রবণতা রয়েছে। তা হলো শ্রীলংকা , কেনিয়া ও খাঁটি আসাম-চা আমদানি করে দার্জিলিং চায়ের সাথে বেন্ড করে খ্যাতনামা বিপণন কোম্পানির নিজ ব্রান্ডে বাজারজাতকরণ প্রবণতা। দার্জিলিং চায়ের সৌরভ উত্তম কিন্তু লিকার হালকা। কেনিয়া, আসাম, শ্রীলংকায় উৎপাদিত চায়ের লিকার উজ্জ্বল, গাঢ়। এ-দুয়ের সংমিশ্রণে তৈরি করে নতুন দার্জিলিং। বিশ্বের উন্নত দেশ বৃটেন, সভ্য দেশ বৃটেন।
সে দেশে যখন দার্জিলিং চায়ের এহেন করুণ অবস্থা তবে অন্যান্য দেশের অবস্থা কী হবে? ভারতীয়রাও কম কিসে? তাঁরা মনে করেন, দার্জিলিং চায়ের হালকা লিকারকে উজ্জ্বলতায় ভরে তুলতে বিলাতিদের এতই যখন টকটকে সোনালি রঙের আসাম-চা বেন্ডিয়ের প্রয়োজন তবে সেই কাজটুকুর জন্য শ্রীলংকা, কেনিয়া ছুটাছুটির প্রয়োজন কী? ভারতবর্ষে বসে জাহাজীকরণের আগেই তো তা সেরে দেয়া যায়! ইংল্যান্ডে রপ্তানির আগে রপ্তানিকারক কর্তৃক এক দফায় এবং ইংল্যান্ড পৌছে শ্রীলংকা ও কেনিয়ার চায়ের সাথে আরো একদফায়, এবং জার্মান ও ফ্রান্সে বাজারজাতকরণের পূর্বে খ্যাতিমান ব্রান্ড প্যাকিং করার সময় আর এক দফায় মোট তিন দফা বেন্ডিং হয়ে নতুন দার্জিলিং চা ইউরোপিয়ান বাজারে ঠাঁই করে নেয়। ইউরোপিয়ানরা নতুন উজ্জ্বল দার্জিলিং চা পান করে ইদানিং এতে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছেন। ফলে খাঁটি দার্জিলিংয়ের সৌরভের চেয়ে নূতন দার্জিলিং চায়ের উজ্জ্বলতা তারা বেশি পছন্দ করেন।
দার্জিলিং চা নিয়ে চা বৈজ্ঞানিকদের গবেষণার অন্ত নেই। কেন এতো সৌরভ, কেন এতো মন মাতানো সুমিষ্ট স্বাদ এ প্রশ্নের জবাব আজও পাওয়া যায়নি। একদল চা বিশারদ মনে করেন, সূর্যের বেগুনী রশ্মির প্রভাবে চায়ের কুঁড়িতে ক্যাফেন ও পলিফ্যানলের তারতম্যের ফসল সুমিষ্ট সৌরভ। তাছাড়া হিমালয় বিধৌত কাঞ্চনজঙ্ঘার শীতল বায়ু, পরিচ্ছন্ন আকাশ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তবে, এই অভিমতের স্বপক্ষে কোন দালিলিক প্রমাণ নেই। অনেকে মনে করেন দার্জিলিং মৃত্তিকা এবং চীনা জাতীয় চা বীজ অন্যতম কারণ। মানবজাতির প্রতি পরম আশীর্বাদ  অপূর্ব সৌরভময় দার্জিলিং চা। ১০০ বছরের সাধনা; তৎপরবর্তী যুগ যুগ গবেষণার পরও এর রহস্য আজো উদঘাটিত হয়নি। নতুন দার্জিলিংয়ে অভ্যস্ত হওয়ার পরিবর্তে দার্জিলিং পাহাড়ে আরো অধিক হারে চা সম্প্রসারণের মাধ্যমে খাঁটি দার্জিলিংয়ের উৎপাদন বাড়ানো উচিত।
 আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চা এক অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চা ছাড়া যেন আমরা আমাদের জীবন কল্পনাও করতে পারি না। সকাল এবং বিকেলে চা না হলেই যেন নয়। এমনকি অনেকে রাতেও চা পান করেন। যেহেতু চা আমাদের প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনের নিত্যসঙ্গী, সেহেতু এই চা আমাদের স্বাস্থের জন্য কতটুকু উপকারী এবং কতটুকু ক্ষতি করছে তা জানা অবশ্যম্ভাবী। আজ আসুন জেনে নিই চা পানের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।


গ্রিন টি/সবুজ চাঃ
ফিগার ঠিক রাখতে অনেকেই গ্রীন টি-এর প্রতি বেশি ঝুঁকছেন৷ গ্রীন টি প্রথমে ছিলো ওষুধ তারপর পানীয়তে পরিণত হয়েছে৷ এই চা কেবল পিপাসাই মেটায় না দূর করে ক্লান্তিও৷ জাপানের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা দিনে দুই কাপের বেশি গ্রীন টি পান করেন তারা মানসিকভাবে অনেক বেশি ফিট৷ সবুজ চায়ে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন খনিজ উপাদান যা প্রতিটি মানুষের শরীরেই প্রয়োজন৷ নিয়মিত সবুজ চা পান করলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও কিছুটা কমিয়ে দেয়৷
আরও কিছু উপকারিতা:
১. কিডনি রোগের জন্য উপকারী।
২. হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
৩. পোকামাকড় কামড়ালে যদি ঐ স্থান চুলকায় ও ফুলে যায় তাহলে সবুজ চায়ের পাতা দিয়ে ঢেকে দিলে আরাম বোধ হয়।
৪. রক্তে কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমায়।
৫. ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী।
৬. এর লিকার দাঁতের ক্ষয়রোধ ও মাড়ি শক্ত করে।
৭. কাটা জায়গায় গ্রিন টির লিকার লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
৮. নিয়মিত চা পানে রক্ত চলাচল ভাল হয়৷
৯. পেট পরিষ্কার রাখে আর মস্তিষ্ককে রাখে সচল ৷


আদা চাঃ
আদা চা খুবই উপকারী। বিশেষ করে সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে এটি ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
১. বমি ভাব দূর করে।
২. গরম আদা চা পান করলে গলাব্যথা কমে যায়।
৩. এসিডিটির বিরুদ্ধেও আদা চা কাজ করে।
৪. আদা চা পান করলে হজমের সমস্যা কমে।


দুধ চাঃ
ক্লান্তিতে খুবই কার্যকর। নিয়মিত চা ও কফি পানে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। চা বা কফি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৫ গুণ কমিয়ে দেয়। এছাড়া এ সময় স্ট্রোকের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়েনা বলে এক গবেষণায় দেখা গেছে।
চা সম্পর্কে ভুল ধারণাঃ
চা সম্পর্কে আমাদের অনেকের ভুল ধারণা আছে। যেমনঃ চা খেলে রাতে ঘুম আসে না, চা লিভারের ক্ষতি করে, চা চামড়া কালো করে ইত্যাদি। যদিও চা খেলে গায়ের রং কালো হবে না। কারণ ত্বকের রঙ নির্ভর করে ম্যালানোসাইট কোষের সক্রিয়তার উপর। চা পান করলে লিভারের কোন ক্ষতি হয় না । তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, অতিরুক্ত চা পান করলে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হবে। যেমনঃ অবসাদ আসতে পারে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
সঠিক সময়ে চা পানঃ
আমরা সকালের খাবার  বা দুপুরের খাবারের পরেও চা বা কফি পান করি। অনেকেরই এটা প্রতিদিনের অভ্যাস। কেননা চা, কফি পান করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে এই অভ্যাস স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
সঠিক সময়ে বা উপায়ে চা পান না করলে তা শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটায়। উপকারিতার পাশাপাশি শরীরে অন্য খাবার গুলো থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া থেকে বঞ্চিত এবং হজমে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। খাবার খাওয়ার আগে চা পান করলেও হজম বাঁধাগ্রস্থ হয় যাতে খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায় না। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চা পান করা উচিত না। এতে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো হতে পারে।
১. চা খাবার থেকে আয়রন শোষণ করে। কারণ চা বা কফিতে রয়েছে পলিফেনন জেস্টানিন নামক উপাদান যা আয়রন শোষণ করে বা জেস্টানিনরে সঙ্গে আয়রন মিশে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
২. চা শরীরে থায়ামিন বা ভিটামিন বি শোষণ রোধ করে যা বেরিবেরি রোগের অন্যতম কারণ।
৩. চা খাবার থেকে আমিষ ও ভিটামিন শোষণ করে এবং শরীর এই খাবারগুলোকে হজম করতে পারে না।
৪. চা এর মধ্যে অ্যাসিডাম টেনিকামস ও জেসথিয়োফিলিনস নামক উপাদান রয়েছে যা পাকস্থলীর হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত করে।
কখন পান করবেনঃ
কিছু নিয়ম মেনে চললে চা পানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। যেমনঃ
১. খাবার খাওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে অথবা খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে চা পান করা।
২. সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবারের ১ থেকে ২ ঘণ্টা পরে চা বা কফি পান করা।
৩. যাদের রক্তশূন্যতা আছে, কম বয়স্ক মেয়েরা বা যেসব নারীরা বৃদ্ধ নয় তাদের এই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
৪. যাদের হজমে ও অম্লত্বর সমস্যা রয়েছে তাদেরও এই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।


  চা-ই একমাত্র পানীয়, যা হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখে।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধমনির ভেতরের দেয়ালে কোলেস্টেরল জমার প্রক্রিয়ায় বাধা দেয় এবং ক্যানসার কোষের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে চেষ্টা করে। চা একেকজন একেকভাবে পান করেন। কেউ লিকার চা পছন্দ করেন, কেউ দুধ চা, কেউ বা লেবু চা।

সাধারণের ধারণা, লিকার চা পান করা সবচেয়ে উপকারী। কিন্তু এই সময়ের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ধারণাটি ঠিক নয়। বিষয়টি একটু পরিষ্কার করে বলা প্রয়োজন। চায়ের পাতা ফুটন্ত জলে  অত্যন্ত তিন মিনিট ভিজিয়ে রাখলেই লিকার চা তৈরি হয়ে যায়। এই লিকার চায়ের মধ্যে থাকে ট্যানিন নামক রাসায়নিক পদার্থ, ক্যাফেইন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অন্যান্য উপাদান।

লিকার চায়ে ট্যানিন ও ক্যাফেইনের  মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। লিকার চায়ের মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন অস্থিরতা, বমি, পাকস্থলীতে বাড়তি এসিড নিঃসরণজনিত অস্বস্তি, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদির মতো আরো অনেক সাধারণ উপসর্গের উদ্রেগ করতে পারে। এই বিচারে লেবু চা লিকার চায়ের তুলনায় কিছুটা ভালো। কারণ, লেবুর সাইট্রিক এসিড চায়ের ট্যানিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অতিরিক্ত ট্যানিনকে তলানি হিসেবে জমা করে।


তা ছাড়া লেবু চায়ে লেবু থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন-সি’র উপকারটুকুও পাওয়া যায়, যদি চায়ের লিকার সামান্য পরিমাণ পরিমাণ গরম থাকে। কারণ, অতিরিক্ত গরমে ভিটামিন-সি নষ্ট হয়ে যায়। তবে চিনি ও  লেবুর রসের সঙ্গে চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বিক্রিয়া ঘটে বলে সাম্প্রতিককালে গবেষকরা মনে করেন।

ধারণা করা হচ্ছে, দুধের প্রোটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সঙ্গে বন্ধনযুক্ত হয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। দুধ চায়ের সুবিধা হচ্ছে, দুধ মেশানোর পর চায়ের ক্ষতিকর পদার্থগুলো বিক্রিয়ার পর থিতিয়ে নিচে জমে থাকে। এই কারণে দুধ চা থেকে ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে কম।

কাজেই দেখা যাচ্ছে, ক্ষতির বিবেচনায় লিকার চা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। আর উপকারিতার বিবেচনায় দুধ চা সবচেয়ে বেশি উপকারী। এদিকে লেবু চায়ের অবস্থান মাঝামাঝি। লেবু চায়ে ক্ষতিকর উপাদান খুব কম থাকলেও দুধের পুষ্টিটুকু পাওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং লিকার চা সবচেয়ে ভালো—এই প্রচলিত ধারণা ঠিক নয়।

তথ্য ও ছবি :-গুগল সৌজন্যে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন