বসন্তের শুরুতে বৃক্ষচূড়ায় রাশি রাশি রুদ্রপলাশের ফুল দেখে মানুষ অভিভূত হয়ে পড়ে। এর আদিবাস পশ্চিম আফ্রিকা হলেও আমাদের দেশে এর পরিচিতি
আছে। দূর থেকে দেখতে থোকা থোকা টিউলিপ সদৃশ বলে এর ইংরাজি নাম আফ্রিকান
টিউলিপ। এই ফুলের কুঁড়িতে পলাশ (Butea monosperma)এর আদল আছে, রংটাও তার
মতো এবং স্বভাবে যেন রুদ্র বা উগ্র তাই হয়তো একে
রুদ্রপলাশ নামে ডাকা সার্থক হয়েছে । উপযুক্ত আবহাওয়ায় হাওয়াই দ্বীপে সারা বছর
ধরেই ফুটতে থাকে এই ফুল যার আরো কিছু অর্থবহ নাম আছে।
গাছের চূড়ায় অগ্নি শিখার মতো মনে হয় বলে একে ফ্লেমিং ট্রি বা ফ্লেম অফ দি ফরেস্ট বলা হয়, যা কৃষ্ণচূড়া বা আরো কিছু গাছের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। এর একটি নাম ‘ফাউনটেন ট্রি’। এর ফুলের কুঁড়ির ভেতরে থাকে জল। বয়স তিন চার বছর হলেই ফুল ধরে গাছে, আর তখন সেগুলি বেশ নিচু থাকে বলে আফ্রিকার ছেলেমেয়েরা এই কুঁড়ি নিয়ে খেলার সুযোগ পায়। আগায় সামান্য ছিদ্র করে টিপে দিলে তীরবেগে বেরিয়ে আসে জল যাকে তারা ব্যবহার খেলনা ‘ওয়াটার-গান” হিসেবে। এ ছাড়াও যখন ফুল ফোটে তখন সেগুলি জোড়া লাগা পাপড়ির কারণে বৃষ্টি বা শিশিরের জল ধারণ করে, যে জল ‘ফাউন্টেন’ থেকে পান করে পাখিরা।
রুদ্রপলাশ পাখিদের জন্যে এটি একটি অনুপম আস্তানা। কিছু পাখি এর বীজ খায় যা দেখতে মনে হয় স্বচ্ছ কাগজের মধ্যে আটকানো একটি হার্ট। এই হার্ট দেখে মনে হয় কেউ যেন মার্কার পেন দিয়ে শেপটা যত্ন করে এঁকে দিয়েছে। এর নৌকোর মতো সিডপডের খোলে ৫০০ র মতো বীজ হয় যা হালকা হবার কারণে উড়ে যেতে পারে দূরে যেখান থেকে আবার নতুন গাছের জন্ম হয়। তবে কোনো কারণে এই গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হলে ‘সাকার রুট’ থেকে আবার নতুন গাছ তৈরি হতে পারে।
গাছের চূড়ায় অগ্নি শিখার মতো মনে হয় বলে একে ফ্লেমিং ট্রি বা ফ্লেম অফ দি ফরেস্ট বলা হয়, যা কৃষ্ণচূড়া বা আরো কিছু গাছের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। এর একটি নাম ‘ফাউনটেন ট্রি’। এর ফুলের কুঁড়ির ভেতরে থাকে জল। বয়স তিন চার বছর হলেই ফুল ধরে গাছে, আর তখন সেগুলি বেশ নিচু থাকে বলে আফ্রিকার ছেলেমেয়েরা এই কুঁড়ি নিয়ে খেলার সুযোগ পায়। আগায় সামান্য ছিদ্র করে টিপে দিলে তীরবেগে বেরিয়ে আসে জল যাকে তারা ব্যবহার খেলনা ‘ওয়াটার-গান” হিসেবে। এ ছাড়াও যখন ফুল ফোটে তখন সেগুলি জোড়া লাগা পাপড়ির কারণে বৃষ্টি বা শিশিরের জল ধারণ করে, যে জল ‘ফাউন্টেন’ থেকে পান করে পাখিরা।
রুদ্রপলাশ পাখিদের জন্যে এটি একটি অনুপম আস্তানা। কিছু পাখি এর বীজ খায় যা দেখতে মনে হয় স্বচ্ছ কাগজের মধ্যে আটকানো একটি হার্ট। এই হার্ট দেখে মনে হয় কেউ যেন মার্কার পেন দিয়ে শেপটা যত্ন করে এঁকে দিয়েছে। এর নৌকোর মতো সিডপডের খোলে ৫০০ র মতো বীজ হয় যা হালকা হবার কারণে উড়ে যেতে পারে দূরে যেখান থেকে আবার নতুন গাছের জন্ম হয়। তবে কোনো কারণে এই গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হলে ‘সাকার রুট’ থেকে আবার নতুন গাছ তৈরি হতে পারে।
এর কাঠ খুব নরম। পোর্টো রিকোর একটি
স্বাস্থ্যবান গাছ বছরে দুই ইঞ্চি করে বেড়ে যেতে পারে। আর এতো দ্রুত বেড়ে
যায় বলে কাঠের ঘন হবার সুযোগ থাকে কম। কাঠ নরম হবার কারণে এর কাণ্ডের চাক
খোদাই করে তৈরি হয় আদিবাসীদের বাদ্যযন্ত্রের খোল যা মিউজিক্যাল
ইন্সট্রুমেন্টের দোকানেও পাওয়া যায়। গাছের ওপরের দিকের ডালে শাদা রঙের কিছু
দাগ দেখা যায় যেগুলি লেন্টিসেল, এক ধরণের ছিদ্র যার ভেতর দিয়ে গাছের শ্বাস
নেবার বন্দোবস্ত থাকে। এ গাছের পাতাগুলি যৌগিক। সংখ্যায় ৭ থেকে ১৭ যাই হোক
কিনারের দিকে একটি পাতা অতিরিক্ত থাকবেই যে কারণে সব সময় এর পাতা হয় বিজোড়
সংখ্যার। পাতার গোড়ায় ছোট ছোট দুচারটে গ্রন্থিও দেখা যায় যা একটু উঁচু হয়ে
থাকে।
রুদ্রপলাশের নরম শরীরে বারবেট বা কাঠঠোকরা
জাতীয় পাখি গর্ত করে বাসা তৈরি করে, বাচ্চা ওঠায়। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার
হল, যেখানটায় গর্ত করে ঠিক তার নিচে বা আশেপাশেও কাঠের কোনো টুকরো পড়ে
থাকতে দেখা যায় না। নিরাপত্তার কারণে, যাতে কোনো হিংস্র প্রাণি নীড়ের হদিস
না পায় সেজন্যে কাঠের ছোট ছোট টুকরোগুলো তারা অনেক দূরে নিয়ে ফেলে দেয়।
কিছু পাখি এই টুকরোগুলো খেয়েও ফেলে যা দূরে গিয়ে উগলে দেয়। বারবেটের জন্যে
বাসা বানানো কোনো ব্যাপারই নয়, এক বাসা সে কখনো দুইবার ব্যবহার করে না, এসব
পরিত্যক্ত বাসা তখন যেসব পাখি গর্ত করে বাসা তৈরি করতে পারে না তারাই
ব্যবহার করে, যার মধ্যে রয়েছে কিছু টিয়া জাতীয় পাখি।
এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম স্প্যাথোডিয়া
ক্যাম্পানিউলেটা (Spathodea Campanulata). এর ফুলের বৃতি বা ক্যালিক্স-এর
আকৃতি কিছুটা বাঁকা স্পেড বা কোদালের মতো বলে জেনাস-এর এই নাম। আর ঘন্টা বা
বাটির মতো বলে ক্যাম্পানিউলেটা। এই গণ-এ মাত্র একটি মাত্র উদ্ভিদই নজরে
আসে। অস্ট্রেলিয়াতে হলুদ বা স্বর্ণাভ ফুলের একটি কাল্টিভার বা আবাদিত গাছ
উদ্ভাবিত হয়েছে যাকে Spathodea companulata ‘Aurea’ নাম দেয়া হয়েছে।
আফ্রিকার গোল্ডকোস্টেই এই গাছ প্রথম চোখে
পড়ে প্রকৃতিবিদদের। ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সুদান, জাম্বিয়া ইত্যাদি আফ্রিকান
দেশের নেটিভ গাছ হলেও ন্যাচারালাইজড্ বা পরিবেশানুগ হয়েছে ভারত,
শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপোর, আমেরিকার ফ্লোরিডা, হাওয়াই এবং অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও
বেশ কিছু দেশে। হাওয়াই এবং অস্ট্রেলিয়াতে এদের উইড বা স্লিপার উইড (Sleeper
Weed) হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। ‘স্লিপার উইড’ বলতে বোঝায় সেই সব গাছ যা
সুপ্ত অবস্থায় থাকে অনেক বছর তারপর বন্যা ক্ষরা অগ্নিকাণ্ড প্লাবন ইত্যাদি
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে অকস্মাৎ আত্মপ্রকাশ করে। অস্ট্রেলিয়ান উইডস কমিটি
একে নজরে রাখছে।
এই গাছ কিছু শহরের রাস্তার ধারে বা বাগানে
লাগানো হয়েছে সিঙ্গাপোর ফ্লোরিডা ইত্যাদি অঞ্চলে। বিশ ত্রিশ বছর পর প্রায়ই
রোগগ্রস্ত হতে দেখা যায় এই গাছকে, ভেতরটা ফাঁপা হয়ে যায় এবং ডালপালা ঝড়ে
ভেঙে পড়ে। এর শেকড়ও ভূমির উপরিভাগ দিয়ে ছড়িয়ে পড়তে চায়, এসব কারণে এদের
সরাসরি কোনো বিল্ডিং বা ফুটপাথের পাশে লাগানো বিপজ্জনক। তবু ভারত-বাংলাদেশে
এই গাছ তো আগ্রাসী নয়, নির্মল সৌন্দর্যের জন্যে কিছু রুদ্রপলাশ গাছ পার্কে
বাগানে থাকলে কোনো ক্ষতি নেই, বরং এখানে তারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে
আমাদের শিল্প-মানসে সৌন্দর্য বিকিরণ করে।
ফটো -গুগল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন