গাছ লাগালে বর্ষা হবে,
ফলবে সোনার ফসল,
গাছ কাটলেই প্রতি ধাপে
জীবন হবে অচল।
গাছের ছায়ায় সুশীতল হয়
আর শান্ত পরিবেশ।
গাছ লাগালে বাঁচবে জীবন
নইলে জীবন শেষ।
গাছের শিকড় আঁকড়ে ধরে,
রোধ করে মাটির ক্ষয়।
সবাই শোন গাছ কেটো না
পৃথিবী হবে লয়।
জীবনের প্রতি নিঃশ্বাসে
আছে গাছের মহান দান।
এসো আমরা সবাই বলি
একটি গাছ একটি প্রাণ।
PC:-Rita Nandi |
মানুষেরই কিছু অবিমৃশ্যকারী কাজের ফল জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বের উপর যার প্রভাব মারাত্মক৷ অবশ্য আজ মানুষ ধীরে ধীরে তার কাজের পরিণাম উপলব্ধি করতে পারছে, তাই পরিবেশ সুরক্ষায় সুচেতনার জাগরণও ঘটছে৷ শিশুদের মধ্যেও যে পরিবেশ সংরক্ষণের চেতনা জাগছে৷
কিন্তু মুশকিল হলো, এই শিশুরাই আমাদের মতো বড়দের কাজকর্ম দেখে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে৷ মাটিতে মিশে না যাওয়া ( নন বায়ো ডিগ্রেডেবল) আবর্জনা পরিবেশের ভীষণ ক্ষতি করে৷ একথা আমরা বাচ্চাদেরও শেখাই৷ কিন্তু তারপরই আমাদের বাচ্চারা দেখে, আমরা পলিথিন প্যাকেটে করে বাজার থেকে জিনিসপত্র নিয়ে আসছি, আর সেই পলিথিন যত্রতত্র ফেলে দিচ্ছি৷ এ থেকে শিশুরা শিখছে, ‘এমন অনেক বিষয় আছে, যেগুলি সম্বন্ধে যা শেখানো হয়, তার উল্টোটাই করতে হয়'৷ সমুদ্রসৈকত হোক বা পাহাড়, আমরা পিকনিক করতে যাই, আর বিভিন্ন ক্ষতিকর আবর্জনা আমরা সেখানে ফেলে আসি৷ এমনকি আজ হিমালয়ের উচ্চতম স্থানগুলিও রেহাই পাচ্ছে না৷ একটা ব্যক্তিগত কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার কথা বলি৷ আমার বাচ্চাকে শিখিয়েছি, গাছ কাটতে নেই, লাগাতে হয়৷
বছর তিনেক আগে হঠাৎ দেখলাম আমাদের আসাম রোড (এস টি কে কে রোড ) চওড়া করার জন্য শতাব্দী প্রাচীন ( হয়ত বা কয়েক শতাব্দী প্রাচীন ) বিরাট বিরাট শিরীষ গাছগুলিকে নির্মমভাবে কেটে ফেলা হলো কোনো নতুন গাছ না লাগিয়েই৷ আমার মেয়ে তিতলি আমাকে প্রশ্ন করেছিল, ‘‘বাবা , গাছ কাটা তো খারাপ কাজ, তাহলে এতগুলো গাছ কেটে ফেলল কেন?'' বিশ্বাস করুন, আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি৷ কীভাবে তাকে আমি বলব যে, বড় হলে আমাদের মধ্যে একটা জিনিস জন্ম নেয় যার নাম ‘হিপোক্রেসি'৷ যতক্ষণ না আমরা এই হিপোক্রেসির হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছি, ততক্ষণ আমাদের কথা আর কাজের মধ্যে রয়ে যাবে বিস্তর ফারাক৷ আমরা অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে চলি, ‘কর্তব্য বিষয়ে ভালো ভালো কথার জন্ম হয়েছে আমার বলার জন্য, আর অন্যদের করার জন্য', অন্তত আমার দেশে৷ তাই আমরা স্লোগান দিই, ‘গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান'৷ কখনোই বলি না, ‘এসো গাছ লাগাই, প্রাণ বাঁচাই'৷ আমাদের বাসের পিছনে লেখা থাকে না, ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলি', লেখা থাকে ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলুন'৷ অর্থাৎ আমার কোনো দায় নেই! আজ আমাদের এস টি কে কে রোড ঝাঁ চকচকে,গাড়ী চলে সাবলীল ভাবে ,বান্ডেল থেকে কাটোয়া পর্যন্ত রাস্তা শুয়ে আছে একটা বড়ো অজগরের মতো,গাড়ি চলছে সাঁ সাঁ করে ,.........ঠা ঠা রোদ্দুরে অজগরের পিঠ চক চক করছে ,আমরা হারিয়ে ফেলেছি আমাদের সেই ছায়া - সুনিবিড় পথ। খামারগাছী পেরোলেই চোখে পড়ে রাস্তার ধারে পরে আছে শিরীষ ,বাবলা,জারুল,কৃষ্ণচূড়াদের টুকরো টুকরো লাশ।
তবুও আশার কথা, সর্বত্রই কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ থাকেন, কথা নয়, কাজই যাঁদের জীবনাদর্শ৷ তাঁদের কাজের ফলেই সভ্যতা কালো থেকে আলোর দিকে, মন্দ থেকে ভালোর দিকে এগিয়ে চলে৷ তাঁদের কথা মনে রেখেই আমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততির জন্য আগামীদিনে একটু অন্যরকম পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে সাহস পাই৷ আর সর্বোপরি কবি তো বলেইছেন, ‘‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ''৷
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতো ব্ড় পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দয়েলপাখি – চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ
দেখেছিল; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে –
কৃষ্ণা-দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায় –
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিল – একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।
------জীবনানন্দ দাশ
গাছের খোঁজে গাছের কাছে
- সায়াদাত চমননিজস্ব একটি গাছের খোঁজে শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গেছে-
শত জনমের আকাঙ্ক্ষা ছিলো আমার একটি স্বতন্ত্র গাছ থাকবে
যে গাছে অবলা ইচ্ছেগুলো সগৌরবে প্রতিফলিত হবে বারেবারে
নিশিদিন এক করে গাছের সাম্রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছি, এখনো ঘুরে বেড়াই
অথচ একান্ত নিজের কোনো গাছ আজ অবধি পেলাম না ।
সারি সারি গাছ সমুন্নত বুকে শির উঁচু করে চারিধারে ঘুরে বেড়ায়
আমার স্বপ্নে দেখা ফলবতী গাছ আসবাব হয়ে অন্য কারো শোবার
ঘরের শোভা বাড়াচ্ছে অথবা অন্যের চুলোর লাকড়ি হয়ে জ্বলছে-
খুব বেশি চাওয়ার ছিলো না আমার -
শুধু একটা একান্ত আপন স্বতন্ত্র গাছই চেয়েছি মাত্র।
আজো নির্ঘুম রাতে অদৃশ্য হাতে ঝাড়ু দেয়া পরিচ্ছন্ন আকাশের
নিচে বসে ভাবনার পৃথিবীতে গাছের অবয়ব আঁকি -
ঘুঁটঘুঁটে অমাবস্যায় গাছেদের খুব কাছে যেতে ইচ্ছে জাগে
তবু অজান্তেই সুখের মোড়কে পুষে রাখি দুঃখের দহন-জ্বালা।
একান্ত নিজের একটি গাছের স্বপ্ন আমি দেখতেই পারি-
এতে কারো ক্ষতি-টতি হবে না নিশ্চয়!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন