সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

নয়নতারা

"এক মুঠো শুভ্র নয়নতারা দিয়েছিলে এই আমারে..
সেইতো বর্ষা ভেজা সকালবেলা কলেজ যাবার প্রহরে..!
ঠোঁটের মায়া লেপটে এক পলকে নিয়েছ স্বাদ..
আমার আঁখি-পাপড়ি থেকে চুঁয়ে চুঁয়ে ঝড়া বৃষ্টিজলের!
তখন,কান পেতে শুনেছি কবিতা 
অনুভূতির সমুদ্রে শিউরে ওঠা হৃদয় - প্রবালের! "
                                              - নওশীন শিকদার

 নয়নতারা ফুলের নাম শোনার পর থেকেই তার প্রতি আমার একটা দুর্বলতা কাজ করতো সব সময়। দৃষ্টিনন্দন ফুল,আমি মুগ্ধ................
 নয়নতারা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত। তবে আমাদের দেশে এটি নয়নতার নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম (Catharanthus roseus) এটি Apocynaceae (dogane অথবা oleander পরিবার) পরিবারের উদ্ভিদ। উচ্চতায় ৬০-৮০ সেন্টিমিটার (২ ফুট) পর্যন্ত হয়। সুন্দর সবুজ চকচকে পাতাযুক্ত গুল্ম ধরনের গাছ। ফুল ফোটে সারা বছর। গাছও লাগানো যায় সব ঋতুতে। ফুল বিভিন্ন রঙের হতে পারে যেমন, সাদা, বেগুনি, রোজিয়া ও গোলাপী বর্ণের হয়। অসাধারণ ছোট একটি ফুল। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। যে কোন মানুষকেই এই ফুল আকর্ষণ করতে সক্ষম। কলম করে এটি লাগানো যায়। গাছটি গরু ছাগলে খায় না। বুনো জংলি এই গাছটি সহজে মরেও না, আর অনাদরে অবহেলায়ও এটি বাঁচতে পারে। এই উদ্ভিদের ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে। এ গাছ থেকে বের করা রস আফ্রিকাতে এক সময় ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা হত। এতে কিছু এলকালয়েড় রয়েছে যা বর্তমানে ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
 জানা যায়,এর আদি উৎপত্তিস্থল মাদাগাস্কার।
আদি নিবাস মাদাগাস্কার তবে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফ্রিকা মহাদেশসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে এর দেখা পাওয়া যায়। এটি একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। বর্ষজীবী। কখনো কখনো অনেক বছর বেঁচে থাকতেও দেখা যায়। তবে পুরনো হয়ে গেলে ও যত্নে না রাখলে গাছটি শক্ত হয়ে যায়, ফুলও ধরে না। ২/৩ ফুটের বেশি বাড়তে দেখা যায় না। পাতা বিপরীত, মসৃণ, আয়তাকার বা ডিম্বাকৃতি। পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট ফুল। গোলাপি, হালকা গোলাপি ও সাদা রঙের ফুল ফোটে। তবে গন্ধ নেই ফুলে। কাণ্ড কোনাচে ধরণের,রঙ বেগুনি বা সাদা,বারমাসি উদ্ভিদ, বীজের সাহায্যে বংশ বৃদ্ধি হয়।
নয়নতারা ওয়েস্ট ইণ্ডিজের প্রজাতি। ৬০-৮০ সেমি উঁচু। এদের কাণ্ড কোনাচে বেগুনি। এদের পাতা আয়তাকার,গোড়ার দিকে অনেকটা ডিম্বাকার, ৪-৭ সেমি লম্বা, মসৃণ। এসব গাছে প্রায় সারা বছরই ফুল ফোটে। ফুল সাদা বা গোলাপি রঙের,পুরো ফুল একরঙা হলেও ফুলের মধ্যবিন্দুটি অন্য রংয়েরও হয়। যেমন সাদার মাঝে লাল,গোলাপীর মাঝে হলুদ।ফুলটি গন্ধহীন। ফুলের মাপ ৩-৩.৫ সেমি চওড়া, দলনল সরু, ২.৫ সেমি লম্বা, ৫ পাপড়ির মাঝখানে একটি গাঢ় রঙের ফোঁটা। এদের বীজ চাষ করা হয়। বাগান করে চাষ করায় জনপ্রিয়তা রয়েছে,যেকোন ফুল বা ফলের বাগানে এমনকি বাসার ছাদে বা বারান্দায়ও লাগানো যায়।
 গাছটির পাতা, ফুল ও ডালে বহু মূল্যবান রাসায়নিক উপাদান পাওয়া যায়। ৭০ টিরও বেশি উপক্ষার পাওয়া যায় এ গাছ থেকে। ভিনক্রিস্টিন ও ভিনব্লাস্টিন নামের উপক্ষার দুটি লিউকেমিয়া রোগে বিশেষ ব্যবহার রয়েছে। ডেলটা-ইহোহিম্বিন নামের এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া যায়।
 ক্রিমি রোগে, মেধাবৃদ্ধিতে, লিউকোমিয়া, মধুমেহ, রক্ত প্রদরে, রক্তচাপ বৃদ্ধিতে, সন্ধিবাত, বহুমূত্র সহ নানা রোগে এর ব্যবহার রয়েছে। বোলতা প্রভৃতির হুলের জ্বালায়/কীট দংশনে দ্রুত উপশম পেতে নয়নতারা ফুল বা পাতার রস ব্যবহারের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন