"ফাগুন হাওয়ায় রঙে রঙে
পাগল ঝোরা লুকিয়ে ঝরে
গোলাপ জবা পারুল পলাশ
পারিজাতের বুকের পরে"।
শিমুল পলাশের মতোই মান্দার ও জানায় বসন্তের আগমনবার্তা,......... মান্দার পাতা ঝরায় বসন্তে এবং ফুল ও ফোটে ঠিক এই সময়ে। লম্বা ডাটায় অনেক লাল রংয়ের ফুল ফোটে। গাছটি সাদামাটা হলেও এর ফুল গুলো চমৎকার।অনেকটাই পলাশ ফুলের মত দেখতে এই ফুলগুলি টকটকে লাল।হলুদ পারিজাত ও দেখতে পাওয়া যায়।
পারিজাত (ইংরেজি: Erythrina variegata; বৈজ্ঞানিক নাম: Erythrina variegata) ইরিথ্রিনা গণভূক্ত পুষ্পবৃক্ষবিশেষ। এটি মান্দার নামেও পরিচিত। উষ্ণমণ্ডলীয় এবং নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলীয় উভয় পরিবেশেই এ বৃক্ষটি জন্মে। উত্তরাঞ্চলীয় আফ্রিকার দেশসমূহ, ভারতীয় উপমহাদেশ, অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল, ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগরতীরবর্তী পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা থেকে শুরু করে ফিজির পূর্বাংশে পারিজাতের দেখা মেলে।
চমকপ্রদ, মনোরম, নয়ন মনোহর ও জনপ্রিয় ফুল গাছ হিসেবে এর পরিচিতি রয়েছে। এটি ঝড়-ঝঞ্চা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। আমেরিকার উপকূলবর্তী এলাকায় ঊনবিংশ শতকের প্রথমদিকে প্রায়শঃই উদ্ভিদপ্রেমীদের চোখে পড়তো যা পরবর্তীতে বাড়ী অঙ্গসৌষ্ঠবের লক্ষ্যে রোপন করা হয়।
বীজ কিংবা শাখা-কলমের মাধ্যমে এ গাছ জন্মানো যায়। পূর্ব রাত্রে বীজ ১০ মিনিট জলে ভিজিয়ে মাটিতে পুঁততে হয়। ৮ থেকে ১০ দিন পর চারা জন্মায় এবং ৮ থেকে ১০ সপ্তাহের মধ্যেই ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার বড় হয়।২-৫ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের ২-৩ মিটার লম্বা শাখাকে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা পূর্বে কেটে রাখতে হয়। এরফলে মাশরুম জন্মাবে না। প্রতি দুই মিটার অন্তর খুঁটির সাথে লাগাতে হয়।
কম্বোডিয়ায় পারিজাত বৃক্ষটি রোলাস ট্রি, ওকিনাওয়ায় দেইগো, ফিজিতে দ্রালা, আসামে মদর, ফিলিপাইনে ডেপডেপ,তিব্বতে মন দা রা বা, থাইল্যান্ডে থং ল্যাং এবং ভিয়েতনামে ভং নেম নামে পরিচিত।
কাঁটাবিশিষ্ট গাছ হিসেবে এটি ২৭ মি (৮৯ ফু) পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এর শাখাগুলো ধূসর রঙের। পাতা পালকের ন্যায় খুবই পাতলা এবং ২০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ত্রিভূজাকৃতিবিশিষ্ট প্রশস্ত হতে পারে। শীতের শুরুতে পাতাগুলো ঝরে পড়ে এবং মার্চ-এপ্রিল মাসে নতুন পাতা গজায়। পাতা ঝরে পড়ার পর ফুলের আবির্ভাব ঘটে। গন্ধবিহীন ফুলগুলো গাঢ় লাল কিংবা উজ্জ্বল লোহিত বর্ণের ১৫ সেন্টিমিটার লম্বাটে এবং বীজ ঘন বাদামী কিংবা কালচে রঙের হয়।
বীজদণ্ডটি ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ২.৫ সেন্টিমিটার প্রশস্ত হয়। মে-জুন মাসে ফল পরিপক্ক হয়। ফলগুলো কয়েক মাস পর্যন্ত গাছে ঝুলে থাকতে পারে। বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৮০০ থেকে ১৫০০ মিলিমিটার, গড় তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস উপযোগী আবহাওয়ায় এটি জন্মায়। চারা গাছগুলো কুয়াশায় নষ্ট হয়ে যায়। পারিজাত আগুন প্রতিরোধক, বাতাস ও ঝড়ের বিপরীতে টিকে থাকতে সক্ষম এবং বন্যায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। মাটির গভীরে ভালভাবে জন্মায়।
বীজ গুলো দেখতে অনেকটা সীমের মত। শুকিয়ে গেলে কালচে বাদামী হয়ে যায। মাঝারি আকারের আকারের এই গাছটি সাধারণত ১৫ মিটারের মত উঁচু হতে দেখা যায়। গাছের গায়ে কালো-কালো গোটা-গোটা কাঁটা থাকে। গাছের গোঢ়ারদিকের কাঁটাগুলি গাছ বড় হলে ঝরে যেতে দেখা যায় অনেক সময়।
জাপানের ওকিনাওয়া প্রিফেকচারে ১৯৬৭ সাল থেকে প্রাদেশিক ফুল হিসেবে মর্যাদা পেয়ে আসছে। ভিয়েতনামে ভাঁজ করে মাংসের সাথে পারিজাতের পাতা ব্যবহার করা হয়। সিদ্ধ চিকিৎসায় রজঃস্রাব বা মাসিক নিয়মিতকরণে এবং লিঙ্গ উত্থানে ব্যবহার করা হয়। এর পাতা পশুদের অন্যতম পছন্দের খাবার হিসেবে বিবেচিত। গ্রামাঞ্চলে কৃষকরা জমির আইলে সীমানা খুঁটি এবং বাড়ির বেড়ার জন্য এই গাছ লাগিয়ে থাকে।
পুরাণে উল্লিখিত সমুদ্রমন্থনের কাহিনি অনেকেরই জানা রয়েছে। অমৃতের সন্ধানে দেবতা ও অসুররা মন্দার পর্বতকে মন্থনদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে সমুদ্র থেকে তুলে এনেছিলেন একের পরে এক আশ্চর্য সব বস্তু। সেই মন্থনে উদ্ভাসিত হয়েছিলেন লক্ষ্মীদেবী, ঐরাবত হস্তী, উচ্চৈশ্রবা অশ্ব, অপ্সরাকুল, কামধেনু, চন্দ্র ইত্যাদি, এবং অবশ্যই হলাহল বিষ ও অমৃত। এ সব ছাড়াও সেই মন্থনে উঠে এসেছিল এক আশ্চর্য বৃক্ষ, যার নাম পারিজাত। পরবর্তী কালে স্বর্গের বর্ণনায় বার বার পুরাণে উল্লিখিত হয়েছে পারিজাতের নাম। ইন্দ্রের নন্দন কাননে প্রধান গাছটিই হল পারিজাত, এমন কথা হিন্দু পুরাণে গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে উল্লিখিত। ‘হরিবংশ পুরাণ’-এ উল্লিখিত রয়েছে, পারিজাত একটি ‘কল্পতরু’, এর কাছে যা প্রার্থনা করা যায়, তা-ই নাকি পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে এ কথাও বলা হয়েছে, বেশিরভাগ পারিজাত স্বর্গে থাকলেও মর্ত্যভূমে একটি মাত্র গাছ নাকি রয়ে গিয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের বরবাঁকি জেলার কিন্তুরে একটি বাওবাব জাতীয় গাছকে পারিজাত বলে সম্বোধন করা হয়। কিন্তুর খুব প্রাচীন জায়গা। মহাভারত-এর অন্যতম চরিত্র পাণ্ডবমাতা কুন্তির নাম থেকে এই স্থানের নামকরণ হয় বলে মনে করা হয়। কিংবদন্তি অনুযায়ী, এখানকার অসংখ্য প্রাচীন মন্দিরের একটি নাকি স্বয়ং কুন্তি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। মনে করা হয়, কুন্তিকে এখানেই দাহ করা হয়েছিল এবং তাঁর চিতাভস্ম থেকেই জন্ম নেয় এই পারিজাত বৃক্ষ। অন্য এক কাহিনি-মতে, কৃষ্ণ তাঁর পত্নী সত্যভামা, মতান্তরে রুক্মিনীর জন্য এই বৃক্ষ স্বর্গ থেকে নিয়ে আসেন। এই সব কাহিনির সত্যতা নিরূপণ দুরুহ। তবে এটুকু বলাই যায়, গাছটি সত্যিই প্রাচীন। স্থানীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই বৃক্ষের স্পর্শে বেদনা, দুঃখ ও ক্লান্তির উপশম ঘটে। গঙ্গা দশেরা তিথি নাগাদ এই বৃক্ষে ফুল ফোটে। গাছটিতে কোনও ফল ধরে না। এই গাছ থেকে অন্য গাছও জন্মায় না। এর পাতাগুলির চেহারাও অন্য রকম। সুবিশাল এই বৃক্ষকে ঘিরে স্থানীদের অসংখ্য বিশ্বাস আবর্তিত হয়। নববিবাহিতরা এই বৃক্ষকে প্রদক্ষিণ করতে আসেন। প্রতি মঙ্গলবার পারিজাতকে ঘিরে একটি মেলা বসে। গাছটিকে পুজো করতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। কেবল কিংবদন্তি নয়, পারিজাতকে ঘিরে কৌতূহল প্রকাশ করেন উদ্ভিদবিজ্ঞানীরাও। আজও বিস্তর গবেষণা চলে এই গাছটিকে নিয়ে। গাছটিকে সম্মান জানিয়েছে ভারত সরকারও। প্রকাশিত হয়েছে পারিজাতের ছবিওয়ালা ডাকটিকিটও।
অন্যান্য ভাষায় এর নাম: Indian Coral Tree, Lenten tree, Tiger claw
বৈজ্ঞানিক নাম: Erythrina variegata
গোত্র: Fabaceae
তথ্য সহায়তা :-গুগল
ফটো:-অনির্বাণ মুখার্জী ও গুগল
পাগল ঝোরা লুকিয়ে ঝরে
গোলাপ জবা পারুল পলাশ
পারিজাতের বুকের পরে"।
শিমুল পলাশের মতোই মান্দার ও জানায় বসন্তের আগমনবার্তা,......... মান্দার পাতা ঝরায় বসন্তে এবং ফুল ও ফোটে ঠিক এই সময়ে। লম্বা ডাটায় অনেক লাল রংয়ের ফুল ফোটে। গাছটি সাদামাটা হলেও এর ফুল গুলো চমৎকার।অনেকটাই পলাশ ফুলের মত দেখতে এই ফুলগুলি টকটকে লাল।হলুদ পারিজাত ও দেখতে পাওয়া যায়।
পারিজাত (ইংরেজি: Erythrina variegata; বৈজ্ঞানিক নাম: Erythrina variegata) ইরিথ্রিনা গণভূক্ত পুষ্পবৃক্ষবিশেষ। এটি মান্দার নামেও পরিচিত। উষ্ণমণ্ডলীয় এবং নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলীয় উভয় পরিবেশেই এ বৃক্ষটি জন্মে। উত্তরাঞ্চলীয় আফ্রিকার দেশসমূহ, ভারতীয় উপমহাদেশ, অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল, ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগরতীরবর্তী পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা থেকে শুরু করে ফিজির পূর্বাংশে পারিজাতের দেখা মেলে।
চমকপ্রদ, মনোরম, নয়ন মনোহর ও জনপ্রিয় ফুল গাছ হিসেবে এর পরিচিতি রয়েছে। এটি ঝড়-ঝঞ্চা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। আমেরিকার উপকূলবর্তী এলাকায় ঊনবিংশ শতকের প্রথমদিকে প্রায়শঃই উদ্ভিদপ্রেমীদের চোখে পড়তো যা পরবর্তীতে বাড়ী অঙ্গসৌষ্ঠবের লক্ষ্যে রোপন করা হয়।
বীজ কিংবা শাখা-কলমের মাধ্যমে এ গাছ জন্মানো যায়। পূর্ব রাত্রে বীজ ১০ মিনিট জলে ভিজিয়ে মাটিতে পুঁততে হয়। ৮ থেকে ১০ দিন পর চারা জন্মায় এবং ৮ থেকে ১০ সপ্তাহের মধ্যেই ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার বড় হয়।২-৫ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের ২-৩ মিটার লম্বা শাখাকে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা পূর্বে কেটে রাখতে হয়। এরফলে মাশরুম জন্মাবে না। প্রতি দুই মিটার অন্তর খুঁটির সাথে লাগাতে হয়।
কম্বোডিয়ায় পারিজাত বৃক্ষটি রোলাস ট্রি, ওকিনাওয়ায় দেইগো, ফিজিতে দ্রালা, আসামে মদর, ফিলিপাইনে ডেপডেপ,তিব্বতে মন দা রা বা, থাইল্যান্ডে থং ল্যাং এবং ভিয়েতনামে ভং নেম নামে পরিচিত।
কাঁটাবিশিষ্ট গাছ হিসেবে এটি ২৭ মি (৮৯ ফু) পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এর শাখাগুলো ধূসর রঙের। পাতা পালকের ন্যায় খুবই পাতলা এবং ২০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ত্রিভূজাকৃতিবিশিষ্ট প্রশস্ত হতে পারে। শীতের শুরুতে পাতাগুলো ঝরে পড়ে এবং মার্চ-এপ্রিল মাসে নতুন পাতা গজায়। পাতা ঝরে পড়ার পর ফুলের আবির্ভাব ঘটে। গন্ধবিহীন ফুলগুলো গাঢ় লাল কিংবা উজ্জ্বল লোহিত বর্ণের ১৫ সেন্টিমিটার লম্বাটে এবং বীজ ঘন বাদামী কিংবা কালচে রঙের হয়।
বীজদণ্ডটি ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ২.৫ সেন্টিমিটার প্রশস্ত হয়। মে-জুন মাসে ফল পরিপক্ক হয়। ফলগুলো কয়েক মাস পর্যন্ত গাছে ঝুলে থাকতে পারে। বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৮০০ থেকে ১৫০০ মিলিমিটার, গড় তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস উপযোগী আবহাওয়ায় এটি জন্মায়। চারা গাছগুলো কুয়াশায় নষ্ট হয়ে যায়। পারিজাত আগুন প্রতিরোধক, বাতাস ও ঝড়ের বিপরীতে টিকে থাকতে সক্ষম এবং বন্যায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। মাটির গভীরে ভালভাবে জন্মায়।
বীজ গুলো দেখতে অনেকটা সীমের মত। শুকিয়ে গেলে কালচে বাদামী হয়ে যায। মাঝারি আকারের আকারের এই গাছটি সাধারণত ১৫ মিটারের মত উঁচু হতে দেখা যায়। গাছের গায়ে কালো-কালো গোটা-গোটা কাঁটা থাকে। গাছের গোঢ়ারদিকের কাঁটাগুলি গাছ বড় হলে ঝরে যেতে দেখা যায় অনেক সময়।
জাপানের ওকিনাওয়া প্রিফেকচারে ১৯৬৭ সাল থেকে প্রাদেশিক ফুল হিসেবে মর্যাদা পেয়ে আসছে। ভিয়েতনামে ভাঁজ করে মাংসের সাথে পারিজাতের পাতা ব্যবহার করা হয়। সিদ্ধ চিকিৎসায় রজঃস্রাব বা মাসিক নিয়মিতকরণে এবং লিঙ্গ উত্থানে ব্যবহার করা হয়। এর পাতা পশুদের অন্যতম পছন্দের খাবার হিসেবে বিবেচিত। গ্রামাঞ্চলে কৃষকরা জমির আইলে সীমানা খুঁটি এবং বাড়ির বেড়ার জন্য এই গাছ লাগিয়ে থাকে।
পুরাণে উল্লিখিত সমুদ্রমন্থনের কাহিনি অনেকেরই জানা রয়েছে। অমৃতের সন্ধানে দেবতা ও অসুররা মন্দার পর্বতকে মন্থনদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে সমুদ্র থেকে তুলে এনেছিলেন একের পরে এক আশ্চর্য সব বস্তু। সেই মন্থনে উদ্ভাসিত হয়েছিলেন লক্ষ্মীদেবী, ঐরাবত হস্তী, উচ্চৈশ্রবা অশ্ব, অপ্সরাকুল, কামধেনু, চন্দ্র ইত্যাদি, এবং অবশ্যই হলাহল বিষ ও অমৃত। এ সব ছাড়াও সেই মন্থনে উঠে এসেছিল এক আশ্চর্য বৃক্ষ, যার নাম পারিজাত। পরবর্তী কালে স্বর্গের বর্ণনায় বার বার পুরাণে উল্লিখিত হয়েছে পারিজাতের নাম। ইন্দ্রের নন্দন কাননে প্রধান গাছটিই হল পারিজাত, এমন কথা হিন্দু পুরাণে গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে উল্লিখিত। ‘হরিবংশ পুরাণ’-এ উল্লিখিত রয়েছে, পারিজাত একটি ‘কল্পতরু’, এর কাছে যা প্রার্থনা করা যায়, তা-ই নাকি পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে এ কথাও বলা হয়েছে, বেশিরভাগ পারিজাত স্বর্গে থাকলেও মর্ত্যভূমে একটি মাত্র গাছ নাকি রয়ে গিয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের বরবাঁকি জেলার কিন্তুরে একটি বাওবাব জাতীয় গাছকে পারিজাত বলে সম্বোধন করা হয়। কিন্তুর খুব প্রাচীন জায়গা। মহাভারত-এর অন্যতম চরিত্র পাণ্ডবমাতা কুন্তির নাম থেকে এই স্থানের নামকরণ হয় বলে মনে করা হয়। কিংবদন্তি অনুযায়ী, এখানকার অসংখ্য প্রাচীন মন্দিরের একটি নাকি স্বয়ং কুন্তি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। মনে করা হয়, কুন্তিকে এখানেই দাহ করা হয়েছিল এবং তাঁর চিতাভস্ম থেকেই জন্ম নেয় এই পারিজাত বৃক্ষ। অন্য এক কাহিনি-মতে, কৃষ্ণ তাঁর পত্নী সত্যভামা, মতান্তরে রুক্মিনীর জন্য এই বৃক্ষ স্বর্গ থেকে নিয়ে আসেন। এই সব কাহিনির সত্যতা নিরূপণ দুরুহ। তবে এটুকু বলাই যায়, গাছটি সত্যিই প্রাচীন। স্থানীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই বৃক্ষের স্পর্শে বেদনা, দুঃখ ও ক্লান্তির উপশম ঘটে। গঙ্গা দশেরা তিথি নাগাদ এই বৃক্ষে ফুল ফোটে। গাছটিতে কোনও ফল ধরে না। এই গাছ থেকে অন্য গাছও জন্মায় না। এর পাতাগুলির চেহারাও অন্য রকম। সুবিশাল এই বৃক্ষকে ঘিরে স্থানীদের অসংখ্য বিশ্বাস আবর্তিত হয়। নববিবাহিতরা এই বৃক্ষকে প্রদক্ষিণ করতে আসেন। প্রতি মঙ্গলবার পারিজাতকে ঘিরে একটি মেলা বসে। গাছটিকে পুজো করতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। কেবল কিংবদন্তি নয়, পারিজাতকে ঘিরে কৌতূহল প্রকাশ করেন উদ্ভিদবিজ্ঞানীরাও। আজও বিস্তর গবেষণা চলে এই গাছটিকে নিয়ে। গাছটিকে সম্মান জানিয়েছে ভারত সরকারও। প্রকাশিত হয়েছে পারিজাতের ছবিওয়ালা ডাকটিকিটও।
অন্যান্য ভাষায় এর নাম: Indian Coral Tree, Lenten tree, Tiger claw
বৈজ্ঞানিক নাম: Erythrina variegata
গোত্র: Fabaceae
তথ্য সহায়তা :-গুগল
ফটো:-অনির্বাণ মুখার্জী ও গুগল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন