আমি যদি দুষ্টুমি ক'রে
চাঁপার গাছে চাঁপা হয়ে ফুটি,
ভোরের বেলা মা গো, ডালের 'পরে
কচি পাতায় করি লুটোপুটি,
তবে তুমি আমার কাছে হারো,
তখন কি মা চিনতে আমায় পারো।
তুমি ডাক, "খোকা কোথায় ওরে।'
আমি শুধু হাসি চুপটি করে।
যখন তুমি থাকবে যে কাজ নিয়ে
সবই আমি দেখব নয়ন মেলে।
স্নানটি করে চাঁপার তলা দিয়ে
আসবে তুমি পিঠেতে চুল ফেলে;
এখান দিয়ে পুজোর ঘরে যাবে,
দূরের থেকে ফুলের গন্ধ পাবে --
তখন তুমি বুঝতে পারবে না সে
তোমার খোকার গায়ের গন্ধ আসে।
দুপুর বেলা মহাভারত-হাতে
বসবে তুমি সবার খাওয়া হলে,
গাছের ছায়া ঘরের জানালাতে
পড়বে এসে তোমার পিঠে কোলে,
আমি আমার ছোট্ট ছায়াখানি
দোলাব তোর বইয়ের 'পরে আনি --
তখন তুমি বুঝতে পারবে না সে
তোমার চোখে খোকার ছায়া ভাসে।
সন্ধেবেলায় প্রদীপখানি জ্বেলে
যখন তুমি যাবে গোয়ালঘরে
তখন আমি ফুলের খেলা খেলে
টুপ্ করে মা, পড়ব ভুঁয়ে ঝরে।
আবার আমি তোমার খোকা হব,
"গল্প বলো' তোমায় গিয়ে কব।
তুমি বলবে, "দুষ্টু, ছিলি কোথা।'
আমি বলব, "বলব না সে কথা।'
স্বর্ণচাঁপা (Michelia champaca) নজরকাড়া রঙ আর মন ভরানো সুবাসের জন্য বিখ্যাত। এ কারণে আমাদের প্রিয় ফুলগুলোর মধ্যেও অন্যতম। স্থানীয়ভাবে এরা চাঁপা, চাম্পা, চম্পা ইত্যাদি নামেও পরিচিত।
এরা মূলত পাহাড়ের গাছ। সমতলেও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে। গাছের কাণ্ড সরল, উন্নত, মসৃণ ও ধূসর। ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা চ্যাপ্টা, উজ্জ্বল-সবুজ, একান্তরে ঘনবদ্ধ। ফুল একক, কাক্ষিক এবং ম্লান-হলুদ, রক্তিম কিংবা প্রায় সাদা। পাপড়ি সংখ্যা প্রায় ১৫। আমাদের দেশে সাদা রঙের ফুলও আছে। পরিপূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত চাঁপা ফুল তীব্র সুগন্ধি। গ্রীষ্মের প্রথম ভাগ থেকে বর্ষা-শরৎ অবধি ফুল থাকে। ফুল শেষ হলে গুচ্ছবদ্ধ ফল ধরে। দেখতে অনেকটা আঙ্গুরের মতো। কাক ও শালিকের প্রিয় খাদ্য। চাঁপা ফুল ভেষজগুণেও অনন্য। বাকল ও ফুল বাত রোগের ওষুধ। ফুলের আরক চক্ষুরোগে ব্যবহার্য। বীজ পা-ক্ষতে উপকারী। কাঠ মজবুত। হিন্দু ও বৌদ্ধদের কাছে এ গাছ অত্যন্ত পবিত্র। শ্রীলংকায় বুদ্ধমূর্তি তৈরিতে এর কাঠ ব্যবহার হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন