বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

মৌমাছি,

"মৌমাছি, মৌমাছি,
কোথা যাও নাচি' নাচি'
দাঁড়াও না একবার ভাই।"
"ওই ফুল ফুটে বনে,
যাই মধু আহরণে,
দাঁড়াবার সময় তো নাই।"


মৌমাছি বা মধুমক্ষিকা বা মধুকর (ইংরেজি: Bee) বোলতা এবং পিঁপড়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত মধু সংগ্রহকারী পতঙ্গবিশেষ। মধু ও মোম উৎপাদন এবং ফুলের পরাগায়ণের জন্য প্রসিদ্ধ। পৃথিবীতে ৯টি স্বীকৃত গোত্রের অধীনে প্রায় বিশ হাজার মৌমাছি প্রজাতি আছে, যদিও এর বেশিরভাগেরই কোন বর্ণনা নেই এবং এর প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশী হতে পারে। এন্টার্কটিকা ব্যতীত পৃথিবীর সকল মহাদেশে যেখানেই পতঙ্গ-পরাগায়িত সপুষ্পক উদ্ভিদ আছে, সেখানেই মৌমাছি আছে। বাংলাদেশে সচরাচর যে মৌমাছি দেখা যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম Apis cerana (এপিস সেরানা)৤ এই অঞ্চলে আরো তিন প্রজাতির মৌমাছি দেখা যায় যথা এপিস মেলিফেরা, এপিস ডরসাটাএপিস ফ্লোরিয়া
ওঙ্কার ধামে মৌচাক ফটোঃ- তিতলি


প্রত্যেকটি মৌচাকে মৌমাছিরা বসতিবদ্ধ হয়ে একটি বড় পরিবার বা সমাজ গড়ে বাস করে ৷ আকার ও কাজের ভিত্তিতে মৌমাছিরা তিন সম্প্রদায়ে বিভক্ত:
১৷ রাণী মৌমাছি যা একমাত্র উর্বর মৌমাছি
২৷ ড্রোন বা পুরুষ মৌমাছি
৩৷ কর্মী মৌমাছি বা বন্ধ্যা মৌমাছি

পৃথিবীতে মৌমাছির প্রায় বিশ হাজার প্রজাতি আছে।  ভারতে বেশ কয়েক প্রজাতির মৌমাছি দেখা যায়। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:
  • রক বী বা পাথুরে মৌমাছি (এপিস ডর্সাটা): এরা ভালো মধু সংগ্রাহক এবং এদের প্রতি উপনিবেশ থেকে গড়ে ৫০-৮০ কেজি ফলন পাওয়া যায়৷
  • লিটল বী বা ক্ষুদে মৌমাছি : (এপিস ফ্লোরিয়া): এরা খুব কম মধু উপন্ন করে এবং প্রতি উপনিবেশ থেকে প্রায় ২০০-৯০০ গ্রাম মধু পাওয়া যায়৷
  • ইণ্ডিয়ান বী বা ভারতীয় মৌমাছি (এপিস সেরানা ইণ্ডিকা): এরা বছরে প্রতি উপনিবেশ থেকে গড়ে ৬-৮ কেজি মধু দেয়৷
  • ইউরোপিয়ান বী বা ইউরোপিয় মৌমাছি [ইটালিয়ান মৌমাছি] (এপিস মেলিফ্লেরা): প্রতি উপনিবেশ থেকে গড়ে ২৫-৪০ কেজি মধু পাওয়া যায়৷
এগুলি ছাড়াও কেরলে আর একটি প্রজাতি পাওয়া যায় যারা "হুলবিহীন মৌমাছি" নামে পরিচিত৷ এরা আদৌ হুলবিহীন নয়, প্রকৃতপক্ষে এদের হুল পূর্ণ বিকশিত হয় না৷ তবে এরা খুব ভালো পরাগসংযোজক৷ এরা বছরে ৩০০-৪০০ গ্রাম মধু উৎপাদন করে৷

মৌচাক হলো মৌমাছির আবাসস্থল এটি তৈরী হয় মোম জাতীয় পদার্থ দিয়ে । মৌচাকে ক্ষদ্র ক্ষুদ্র ষড়ভূজ প্রকোষ্ঠ থাকে মৌমাছি এসব প্রকোষ্ঠে মধু সঞ্চয় করে এছাড়া ফাঁকা প্রকোষ্ঠে মৌমাছি ডিম পাড়ে, লার্ভা ও পিউপা সংরক্ষণ করে মৌমাছি নিজেই দেহাভ্যন্তরে মোম তৈরী করে এই মোম প্রকৃতপক্ষে ফ্যাটি এসিডের ইস্টার এর রাসায়নিক সংকেত হলো C15H31COOC30H61.

সুন্দরবনের গাছে মৌচাক।
‘শ্রমিক মৌমাছির’ দেহে আটটি ক্ষুদ্র গ্র্যাণ্ড থেকে মোমশ্বল্ক নি:সৃত হয় । নি:সরণের সময় মোমশ্বল্ক থাকে স্বচ্ছ যা কালক্রমে সাদা ও পরে ঈষদচ্ছ বর্ণ ধারণ করে । সহস্রাধিক মোমশ্বল্ক থেকে এক গ্রাম মোম পাওয়া সম্ভব ।
ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানোর সময় মৌমাছিরা তাদের পা এবং বুকের লোমের ফুলের অসংখ্য পরাগরেণু বয়ে বেড়ায়। এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে পরলে পরাগায়ণ ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে উৎপন্ন হয় ফল। এভাবে মৌমাছিরা পরাগায়ণের মাধ্যমে হিসাবে কাজ করে ফল ও ফসলের উৎপাদন বাড়ায়।
তথ্যসুত্র গুগল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন