"বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া,
বলি থাম একটু দাড়া।
পুকুরের ঐ কাছে না
লিচুর এক গাছ আছে না
হোথা না আস্তে গিয়ে
য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে
গাছে গো যেই চড়েছি
ছোট এক ডাল ধরেছি,
ও বাবা মড়াত করে
পড়েছি সরাত জোরে।
পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই,
সে ছিল গাছের আড়েই।
ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,
ধুমাধুম গোটা দুচ্চার
দিলে খুব কিল ও ঘুষি
একদম জোরসে ঠুসি।
আমিও বাগিয়ে থাপড়
দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড়
লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল,
দেখি এক ভিটরে শেয়াল!
ও বাবা শেয়াল কোথা
ভেলোটা দাড়িয়ে হোথা
দেখে যেই আঁতকে ওঠা
কুকুরও জাড়লে ছোটা!
আমি কই কম্ম কাবার
কুকুরেই করবে সাবাড়!
‘বাবা গো মা গো’ বলে
পাঁচিলের ফোঁকল গলে
ঢুকি গিয়ে বোসদের ঘরে,
যেন প্রাণ আসলো ধড়ে!
যাব ফের? কান মলি ভাই,
চুরিতে আর যদি যাই!
তবে মোর নামই মিছা!
কুকুরের চামড়া খিঁচা
সেকি ভাই যায় রে ভুলা-
মালীর ঐ পিটুনিগুলা!
কি বলিস ফের হপ্তা!
তৌবা-নাক খপ্তা…!"
নজরুল ইসলাম
লিচু (বৈজ্ঞানিক নাম Litchi chinensis) একটি নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফল । রসালো ১-১.৫ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট ফল। গাছ ১০-৩৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট হয়ে থাকে।
লিচু হলো বিশ্বের সবচেয়ে রোমান্টিক ফল। প্রায় দুই হাজার বছর ধরে ফলটি এ মর্যাদা পেয়ে আসছে। সত্যি বলতে কি, বিশ্বে প্রথম ফল চাষের বই লেখা হয়েছিল ১০৫৬ সালে, সেটিও ছিল লিচুকে নিয়ে। বিশ্বের অনেক রাজা-বাদশাহ রানী-বেগমদের মন জয় করতে যুগে যুগে লিচু ফল উপহার দিয়েছেন। অষ্টম শতকে চীনা সম্রাট হুয়ান সাংও একই কাজ করে বেগমের মন জয় করেছিলেন, দক্ষিণ চীন থেকে লিচু বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সুদূর উত্তর চীনে।
বিজ্ঞানীরা নানা জাতের লিচু উদ্ভাবন করেছেন। এ দেশে যেসব জাতের লিচু পাওয়া যায় সেগুলো হলোন্ধ বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-৩, মঙ্গলবাড়ি, মোজাফ্ফরপুরী, বেদানা লিচু, বারি লিচু-১, বারি লিচু-২, বারি লিচু-৩ ইত্যাদি। বোম্বাই লিচু টকটকে লাল, মাদ্রাজি আগাম জাত, সবচেয়ে ভালো জাত চায়না-৩। এই জাতের গাছে প্রতি বছরই ভালো ফল ধরে। বেদানা নাবী জাত। বারি লিচু-১ আগাম জাত, বারি লিচু-৩ মাঝ মৌসুমি জাত। কিন্তু বারি লিচু-২ নাবী জাত। লাগানোর জন্য এসব জাত থেকে যেকোনো জাত নির্বাচন করা যেতে পারে।
চারা কলম
বীজ থেকে ও অঙ্গজ পদ্ধতিতে লিচুর চারা তৈরি করা যায়। কিন্তু বীজ থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে ৭-১২ বছর সময় লাগে। এ জন্য বীজ থেকে সাধারণত চারা উৎপাদন করা হয় না। চারা উৎপাদনের জন্য গুটিকলম লিচুর ক্ষেত্রে সর্বাধিক উপযোগী। তবে এ পদ্ধতি ছাড়া জোড়কলম, কুঁড়ি সংযোজন, ছেদ কলম প্রভৃতির মাধ্যমে সফলভাবে চারা উৎপাদন করা যায়। গুটি কলম তৈরি করার সময় কাটা জায়গায় অনুমোদিত হরমোন মিশিয়ে লাগালে মূল গঠন ভালো হয়।
চাষাবাদ
পরিকল্পিতভাবে লিচুবাগান করতে হলে বাগান তৈরির বা চারা রোপণের কয়েক বছর আগে দ্রুতবৃদ্ধিশীল লম্বা-দৃঢ় জাতের কিছু গাছ যেমনন্ধ ইউক্যালিপ্টাস, জাম, শিমুল প্রভৃতি রোপণ করতে হবে। অথবা যে জমির চার দিকে বা আশপাশে এ ধরনের গাছ আছে সে জমি বাগানের জন্য নির্বাচন করতে হবে। এতে ফল ঝরা, ফল ফাটা প্রভৃতি হন্সাস পায় এবং ঝড় বাতাসে গাছের ক্ষতি কম হয়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে জমি তৈরি করে জমি সমান করতে হবে। মে-জুন মাসে জমি তৈরি করা ভালো। জমিতে বর্গাকার বা ষড়ভুজি রোপণপ্রণালী অনুসরণ করে ১০ মিটার দূরে দূরে ১ মিটার ১ মিটার ১ মিটার আকারের গর্ত খনন করতে হবে। রোপণের কয়েক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসে গর্ত করা উচিত। গর্ত করার পর গর্তের ওপরের মাটির সাথে গর্তপ্রতি ২০-২৫ কেজি জৈবসার, ২ কেজি হাড়ের গুঁড়ো বা ৫ কেজি কাঠের ছাই মিশিয়ে গর্ত ভরে দিতে হবে। তারপর তাতে পানি দিয়ে কিছু দিন রেখে দিয়ে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের দিকে গর্তের মাটির সাথে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও এমওপি মিশিয়ে গর্তের মাঝখানে লিচুর চারা বা গুটিকলম লাগাতে হবে। লাগানোর পরপরই গাছের গোড়ায় জল সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনবোধে কিছু পাতা ছাঁটাই করা ভালো।
প্রতি বছর তিনবার অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি, মে ও অক্টোবর-নভেম্বরে সার প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের বছর সার কম দিলেও বয়স বাড়ার সাথে সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সারের পরিমাণ হলঃ-
এক থেকে তিন বছর বয়সী গাছের জন্য গাছপ্রতি জৈবসার ১০-২০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, এমওপি ১৫০-২০০ গ্রাম।
চার-ছয় বছর বয়সী গাছের জন্য গাছপ্রতি জৈবসার ২০-৩০ কেজি, ইউরিয়া ৬০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ২৫০-৩০০ গ্রাম।
৭-১০ বছর বয়সী গাছের জন্য গাছপ্রতি জৈবসার ৩০-৪৫ কেজি, ইউরিয়া ৭৫০ গ্রাম, টিএসপি৭০০ গ্রাম, এমওপি ৫০০ গ্রাম।
১০ বছরের বেশি বয়সী গাছের জন্য গাছপ্রতি জৈবসার ৫০-৬০ কেজি, ইউরিয়া ১০০০ গ্রাম, টিএসপি ৭৫০ গ্রাম, এমওপি ৬০০ গ্রাম।
গাছে যদি জিঙ্কের অভাব দেখা দেয় অর্থাৎ পাতা যদি তামাটে রঙ ধারণ করে তবে প্রতি বছর ৫০০ লিটার জলের সাথে ২ কেজি চুন ও ৪ কেজি জিঙ্ক সালফেট গুলে বসন্তকালে গাছে ছিটাতে হবে। ফল ঝরা কমাতে এটা সাহায্য করবে। ফল ফেটে যাওয়া কমাতে প্রতি ১০ লিটার জলে ১০ গ্রাম বোরিক পাউডার গুলে ফলে স্প্রে করা যেতে পারে।
আবহাওয়া ও মাটির ধরন অনুসারে শীতকালে ১০-১২ দিন ও গ্রীষ্মকালে ৭-১০ দিন অন্তর সেচ দিতে হয়। তবে সারা বছর ১২৫ সেন্টিমিটারের বেশি সুষমভাবে বৃষ্টিপাত হলে সেচ না দিলেও চলে। ফল ধরার পর নিয়মিত জল সেচ দিলে ফলন বেড়ে যায়। ফল না ধরা পর্যন্ত লিচুবাগানে খরিপ ঋতুতে শসা, কুমড়া, ঝিঙ্গা, উচ্ছে বা করলা, মাষকলাই, গো মোটর প্রভৃতি এবং রবি ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি চাষ করা যায়। ফলসা, আনারস, কলা, পেঁপে প্রভৃতি ফলও আন্ত:শস্য হিসেবে চাষ করা যায়।
ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে লিচুগাছে ফুল আসে ও মে-জুন মাসে লিচুর পাকা ফল সংগ্রহ করা হয়। এ সময় ফলের খোসা লালচে রঙ ধারণ করে ও কাঁটাগুলো চ্যাপ্টা হয়ে খোসা প্রায় মসৃণ হয়ে যায়। কয়েকটি পাতাসহ গোছা ধরে লিচু সংগ্রহ করা হয় এতে ফল বেশি দিন ধরে ঘরে রাখা যায়। বৃষ্টি হলে তার পর পরই কখনো লিচু সংগ্রহ করা ঠিক নয়। সাধারণত লিচুগাছে তিন থেকে ছয় বছর পর ফল ধরে। তবে ২০-৩০ বছর বয়স পর্যন্ত লিচুগাছে ফলন বাড়তে থাকে। সাধারণত প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ৮০-১৫০ কেজি বা ৩২০০-৬০০০টি লিচু পাওয়া যায়। অবস্খাভেদে এর তারতম্যও লক্ষ করা যায়।
তথ্য সহায়তা: মৃত্যুঞ্জয় রায়
লিচুর কলম রোপণ
লিচুর বংশবিস্তার করা হয় প্রধানত গুটি কলম করে। লিচু ফলের মওসুম শেষেই শুরু হয়ে যায় ফলগাছ রোপণ মওসুম। অন্যান্য ফলগাছের মতো লিচুর কলম কিন' বর্ষার শুরুতেই রোপণ করা ঠিক নয়। এ জন্য একটু অপেক্ষা করতে হয়।
বর্ষার পর যখন মাটিতে রসের আধিক্য কমতে থাকে তখনই লিচুর কলম রোপণ করতে হয়।
আসলে লিচুর গুটি কলম অন্যান্য ফলগাছের গুটি কলমের মতো নয় বলেই মাটিতে বেশি রস থাকলে রোপণ করা উচিত নয়। তবে যেসব জায়গা উঁচু, মাটি বেলে দো-আঁশ ধরনের, যে মাটিতে জল দীর্ঘক্ষণ জমে থাকে না এবং সারা দিন রোদ পড়ে সেসব জায়গাই লিচুর কলম রোপণের জন্য উপযুক্ত।
কলম রোপণ উপযোগী জমিতে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করতে হয়। এরপর আগাছা বা ফসলের অবশিষ্টাংশ যদি থাকে সেসব বাছাই করে ২০ ফুট দূরে দূরে বর্গাকার পদ্ধতিতে গর্ত খনন করতে হয়। ক্ষেতের আশপাশের আগাছাও পরিষ্কার করতে হয়।
এরপর তিন ফুট চওড়া ও তিন ফুট গভীর করে গর্ত খনন করার পর মাটি গর্তের চার পাশে নয়-দশ দিন ফেলে রাখতে হয়। এ সময়ে মাটির সাথে জৈব সার মেশাতে এবং গর্তটি খোলা রেখে দিতে হয়। রোপণের দুই-তিন দিন আগে রাসায়নিক সার হিসেবে ইউরিয়া ১০০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম ও পটাশ সার ১০০ গ্রাম মেশানোর পর গর্ত ওই মাটি দিয়েই ভরাট করতে হয়। ভরাট করার সময় জমির লেভেল থেকে কমপক্ষে ১৫-২০ সেন্টিমিটার উঁচু ঢিবির মতো করতে হয়। ঢিবির মধ্যখানে হাত দিয়ে বা নিড়ানি দিয়ে গুটি কলমের মাটির পাত্র বা পলিব্যাগের আকারে ছোট গর্ত করে তাতে লিচুর গুটি কলমের মাটির বলটি বসিয়ে চার দিকে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।
কলমটি যাতে বাতাসে হেলে না পড়ে সে জন্য কলম গাছের গোড়া থেকে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার দূরে একটি খুঁটি পুঁতে খুঁটিটি হেলিয়ে গাছের সাথে বেঁধে দিতে হয়। কিছুটা পানি গাছের পাতায় ছিটিয়ে দিয়ে গাছটি গরু-ছাগল থেকে রক্ষার জন্য বেড়া দিতে হয়।
বর্ষার শেষে যখন বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকে সেই সময় অর্থাৎ আশ্বিন মাসই লিচুর কলম রোপণের উপযুক্ত সময়।
তবে মধ্য আশ্বিনের মধ্যেই লিচুর কলম রোপণ কাজ শেষ করা ভালো। যত দেরি হয় ততই শীত এগিয়ে আসতে থাকে এবং মাটি ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া গাছের শিকড়ের বৃদ্ধি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় গাছ মাটি থেকে খাবার নিতে পারে না। তাই গাছের বৃদ্ধিও বন্ধ হয়ে যায়।
রোপণের পর নতুন পাতাও গজায় না। অন্য দিকে বর্ষার শুরুতেই বা বর্ষার মধ্যেই যদি লিচুর গুটি কলম রোপণ করা হয় তাহলে মাটিতে অতিরিক্ত রসের কারণে লিচুর গুটি কলমের নরম শিকড়গুলো পচে যায়। এতে লিচুর কলম মরে যায়। সুস্থ-সবল গুটি কলম থেকে সুস্থ-সবল লিচুর গাছ এবং ভালো ফলন পেতে চাইলে বর্ষার পরই লিচুর গুটি কলম রোপণ করতে হয়।
আমাদের ওঙ্কার ধামের কাছেই একটি বিশাল লিচু বাগান আছে,যা এলাকায় ডাক্তার বাগান নামে পরিচিত।বাগানের বর্তমান কর্ণধার ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি আমার দাদার মত , ওনার বাগানের আম,লিচু ও গ্লাদিওলাস ফুলের যথেষ্ট খ্যাতি আছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন