জ্যাকারান্ডা দেশি গাছ নয়, জন্মস্থান ব্রাজিল। এ সুদর্শন গাছটি আমাদের বাংলায় প্রায় ৭০-৮০ বছর আগে এলেও ততটা বিস্তার লাভ করেনি। প্রধান কারণ হিসেবে জলাবদ্ধতাকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা আমাদের জলীয় ভিজে আবহাওয়াকে এ গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা মনে করেন। জ্যাকারান্ডা মাঝারি আকৃতির পত্রমোচি বৃক্ষ। কাণ্ড মসৃণ ও হালকা ধূসর রঙের। পাতা চিরল চিরল, কারুকার্যময় ও বিন্যাস বিপ্রতীপ। গ্রীষ্মের প্রথম ভাগেই নতুন পাতা গজাতে শুরু করে।
তার পর পরই প্রায়-পাতাহীন ডালের আগায় গুচ্ছবদ্ধ ফুল ফুটতে শুরু করে। পরিপূর্ণ প্রস্টম্ফুটিত জ্যাকারান্ডার জৌলুস সত্যিই মনোমুগ্ধকর। তা ছাড়া এ ফুল চটজলদি ঝরেও পড়ে না। অনেক দিন ধরেই এর শোভা উপভোগ করা যায়। ফুলের রঙ বেগুনি, দেখতে নলাকার, ২ ইঞ্চি লম্বা। এ গাছের কাঠ দামি ও সুগন্ধি। ভেতরের আঁশ বেগুনি ও কালো রেখায় চিত্রিত। জন্মস্থানে এই গাছের পাতা বক্ষরোগ ও ক্ষতের চিকিৎসায় কাজে লাগে। বাকলের নির্যাস থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন রোগের মহৌষধ। দেশের যেসব স্থানে বন্যার পানি জমে না, সেসব স্থানে এবং পাহাড়ি এলাকায় এই গাছ বেশি পরিমাণে রোপণ করা প্রয়োজন। আমাদের জাতীয় সড়ক পথের ধারে এক সারি জ্যাকারান্ডা রোপণ করে তার প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যেতে পারে।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু শহরে পরিকল্পিতভাবে জ্যাকারান্ডা লাগানো হয়েছে। সেখানে জ্যাকারান্ডার নীলচে-বেগুনি রঙের পাশে সিলভার ওকের হলুদ-সোনালি বর্ণ বৈচিত্র্য তৈরি করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রশাসনিক রাজধানী প্রিটোরিয়া জ্যাকারান্ডার শহর নামে পরিচিত। অবশ্য বাণিজ্যিক রাজধানী কেপটাউনেও অসংখ্য গাছ রয়েছে। জ্যাকারান্ডা অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশগুলোতে ভালো জন্মে। এ গাছ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি ও জাম্বিয়ায় বেশ সহজলভ্য। আলঙ্করিক বৃক্ষ হিসেবে বর্তমানে সারা বিশ্বেই এটি বেশ জনপ্রিয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন