মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অপরাজিতা

‘আমি বিজন বনের অপরাজিতা
আমার কথা কহি গানে...!’

 নীল ফুলের কথা ভাবলে মনের মধ্যে প্রথমেই আসে অপরাজিতার নাম। লতানো গাছে সবুজ পাতার কোলে এক টুকরো প্রগাঢ় নীলের সম্ভাষণ ভালোলাগার অনুভূতিকে নিমেষে ছুঁয়ে যায়। ফুলে কোনো গন্ধ নেই, তবু রঙের বাহার আর মিষ্টি শোভায় অনন্য সে অপরাজিতা।
অপরাজিতা papilionaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত যার ইংরেজি নাম Butterfly Pea. গাঢ় নীল ফুলটিকে ডাকা হয় নীলকণ্ঠ নামেও। নীল ছাড়াও চোখে পড়ে সাদা এবং হালকা বেগুনি রঙের ফুল। ফুলের ভেতরের দিকটা সাদা বা ঈষৎ হলুদ রঙের। সাধারণত বর্ষাকালে গাছের ডাল স্যাঁতসেঁতে মাটিতে রোপণ করতে হয়। আবার ছোট ছোট ধূসর ও কালো রঙের বিচি রোদে শুকিয়ে নরম মাটিতে লাগালেও গাছ হয়। বাড়ির আঙিনায়, টবে বা বাগানেও এ গাছ লাগানো যায়। আশপাশের উঁচু গাছ বেয়ে এটি তরতর করে বেড়ে ওঠে, ফুলে-পাতায় বিকশিত হয়। হালকা সবুজ রঙের পাতার গড়ন উপবৃত্তাকার। ঝোপজাতীয় গাছে প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। বহুবর্ষজীবী এ লতা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। আমাদের দেশে নীল, সাদা ও বেগুনি রঙের অপরাজিতা ফুল দেখা যায়। লতাজাতীয় গাছে এক পাপড়ি ও দুই স্তর পাপড়িতে এ ফুল হয়। মালাক্কা দ্বীপ থেকে এসেছে বলে অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম Clitoria ternatea. অপরাজিতা ফুলের বয়স অন্তত পাঁচ কোটি বছর। বাংলার  বিভিন্ন অঞ্চলে এ ফুলের দেখা মেলে।
নীল রঙের ফুল আমাদের দেশে ও বিশ্বে লাল, সাদা, গোলাপি, গাঢ় লাল ইত্যাদি ফুল থেকে কম। পৃথিবীর বিবর্তনের ধারায় নীল রঙ এসেছে সবার শেষে। আমরা এর নীল রঙের বৈভবে মুগ্ধ কিন্তু অপরাজিতা নামটিও সুপ্রাচীন ও মাধুর্যে অজেয় বা অদ্বিতীয়া। অপরাজিতা কেবল সৌন্দর্যে নয়, ওষুধি গুণেও অতুলনীয়। এর ফুল, পাপড়ি, মূল ও গাছের লতা নানা ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার্য।
নীল অপরাজিতা বার মাসই ফোটে। তবে শীতে কমে যায়। নীল ফুলের গাছ যত তাড়াতাড়ি শাখা-প্রশাখা ছড়ায় সাদা তত তাড়াতাড়ি নয়। অপরাজিতা ফুল গুচ্ছে ফোটে না। পাতাভর্তি লতার ফাঁকে ফাঁকে এক একটি ফুল ফোটে, যেন এরা একা থাকতে ভালোবাসে।

অপরাজিতা 
আমার প্রিয় ফুলগুলির মধ্যে অন্যতম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন